13/03/2024
ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথি কি
হোমিওপ্যাথি
হোমিওপ্যাথি হল সদৃশ বিধান অর্থাৎ রোগীর লক্ষণ এর সদৃশ ওষুধের লক্ষণ। এই বিধান অনুসারে ওষুধ সেবন করা হলেই মানুষ সুস্থতা লাভ করে। রোগ চাপা পড়ে না ,সাময়িক উপশম লাভ করে না, বরং স্থায়ীভাবে আরোগ্য লাভ করে।
রোগ মুক্তির প্রাকৃতিক নীতি
রোগ থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক নীতি হলো যে ভেষজ উপাদান দেহে যে রোগ লক্ষণগুলো তৈরি করে, সেই ভেষজ উপাদান থেকে তৈরিকৃত শক্তিকৃত ওষুধ সূক্ষ্ম মাত্রায় প্রয়োগ করা হলে সেই লক্ষণগুলো ভালো হয়ে যায়।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগ মুক্তির প্রাকৃতিক নীতি অবলম্বন করা হয় অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে যে ওষুধগুলো প্রয়োগ করা হয় সেগুলো সুস্থ মানব দেহে পরীক্ষিত। সুস্থ সবল মানুষ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ স্থুল মাত্রায় গ্রহণ করেন । এর ফলে তার দেহ মনে নানা রকমের লক্ষণ প্রকাশ পায় । এই লক্ষণগুলো মেটেরিয়া মেডিকা নামক পুস্তকে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়। পরবর্তীতে কোন মানুষের দেহে যখন এই লক্ষণ প্রকাশ পায়, তখন এই ওষুধ শক্তিকৃত অবস্থায় সুক্ষ্মমাত্রায় প্রয়োগ করা হলে সে সুস্থ হয়ে যায়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে হ্যানিম্যানের অবদান
হোমিওপ্যাথির জনক মহাত্মা সেমুয়েল হ্যানিম্যান নিজের শরীরে প্রায় শতাধিক ওষুধ পরীক্ষা করেন। সেগুলোর লক্ষণ মেটেরিয়া মেডিকা পুস্তকে লিপিবদ্ধ করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোন মানুষ নিজের শরীরে এত বেশি ওষুধ পরীক্ষা করেননি। তাই বলা যায়, মানব জাতি স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য হ্যানিম্যানের কাছে ঋণী।
হোমিওপ্যাথির নিয়ম-নীতি
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি কতগুলো মূলনীতি দ্বারা পরিচালিত হয়। সেগুলো হলো -
১/ সদৃশ ওষুধ
২/ একবারে একটি মাত্র ওষুধ
৩/ শক্তিকৃত ওষুধ
৪/ সুক্ষ্ম মাত্রার ওষুধ
ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথি
ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথি হল হ্যানিমেনিয়ান হোমিওপ্যাথি। অর্থাৎ মহাত্মা সেমুয়েল হ্যানিম্যান এর দর্শন এবং হোমিওপ্যাথির মূলনীতি অনুসারে যখন হোমিওপ্যাথি চর্চা করা হয় তখন তাকে বলা হয় ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথি।
ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক
ক্লাসিকাল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হোমিওপ্যাথিক দর্শন অনুসারে এবং তার মূলনীতি অনুসারে হোমিওপ্যাথি চর্চা করেন। তিনি রোগীকে সদৃশ ওষুধ প্রয়োগ করেন। একবারে একটি মাত্র ওষুধ প্রয়োগ করেন। শক্তিকৃত ওষুধ প্রয়োগ করেন এবং সেই ওষুধ তিনি সূক্ষ্ম মাত্রায় প্রয়োগ করেন। এর ফলে রোগী অতি দ্রুত আরোগ্য লাভ করে।
ক্লাসিকাল হোমিওপ্যাথি চেম্বার
ক্লাসিকাল হোমিওপ্যাথিক চেম্বারে হোমিওপ্যাথির দর্শন এবং মূলনীতিগুলো অনুসরণ করা হয়। সেখানে শুধু শক্তিকৃত হোমিওপ্যাথিক ওষুধের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়। তাই ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথিক চেম্বারে কোন ধরনের ফাইল, প্যাটেন্ট এবং মিশ্র ওষুধ থাকে না।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার নামে প্রতারণা
বর্তমানে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ক্ষেত্রেও নানা রকমের ভেজাল দেখা দিয়েছে। অনেক মানুষ হোমিওপ্যাথির নামে মিশ্রপ্যাথি বা ভেজালপ্যাথির চর্চা করতেছে। তারা রোগীকে একবারে একটিমাত্র সদৃশ শক্তিকৃত হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দেয় না। একবারে অনেকগুলো ওষুধ দিয়ে দেয় এবং প্রচুর পরিমাণ ওষুধ দিয়ে দেয়। নিজেকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নামে পরিচয় দেয় অথচ রোগীকে এলোপ্যাথিক, ইউনানী আয়ুর্বেদিক ইত্যাদি নানা ধরনের বিসদৃশ প্যাটেন্ট ফাইল, ট্যাবলেট, ক্যাপসুল প্রয়োগ করেন। যারা এগুলো করেন, তারা প্রকৃত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নন। তারা মূলত হোমিওপ্যাথির নামে মানুষের সাথে প্রতারণা করেন।
ক্লাসিকাল হোমিওপ্যাথির প্রয়োজনীয়তা
এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা বহুদিন ধরে নানা রকমের অসুস্থতায় ভুগতেছেন, নানা রকমের চিকিৎসা গ্রহণ করতেছেন। কিন্তু কোনভাবেই সুস্থ হইতে পারতেছেন না । এই ধরনের রোগীরা সুস্থতার জন্য একজন প্রকৃত ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কারন ক্লাসিকাল হোমিওপ্যাথি বা হ্যানিমেনিয়ান হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমেই জটিল সব রোগে আক্রান্ত রোগী সত্যিকার অর্থে আরোগ্য লাভ করতে পারে।