13/05/2023
উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করুন:
# উচ্চ রক্তচাপ
স্বাভাবিকভাবে মানব দেহে স্বাভাবিকতার চেয়ে অধিক রক্তের চাপ থাকাকেই উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। সাধারনত একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের রক্তচাপ যদি ক্রমাগত ভাবে ১৪০/ ৯০ মিমি পারদের বেশী থাকে তখন আমরা উচ্চ রক্তচাপ বলি।অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা উচ্চ রক্তচাপের কারণ জানি না। তবে এর একটা বংশগত প্রভাব আছে। এ ছাড়া জীবনযাপন পদ্ধতি ও খাদ্যের সাথেও এর সম্পর্ক রয়েছে। কায়িক পরিশ্রমের অভাব, চর্বি যুক্ত খাবার, ধূমপান ও মদ্যপান উচ্চ রক্তচাপের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
# আপনার মধ্যে কি নিচের উপসর্গ বা লক্ষণ আছে :
* মাথাব্যথা, ক্লান্তি বা দিশেহারাভাব, দৃষ্টির সমস্যা
* মাথা ঘোরা দ্রুত বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
* বুকে ব্যথা, প্রস্রাবে রক্ত (প্রস্রাব হলুদ নয়, লাল বর্ণের হওয়া)
* অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে উঠা
# উচ্চ রক্তচাপের জটিলতা-
* মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে যাওয়া বা বন্ধ হওয়া
* হার্ট এ্যাটাক বা হৃদপিন্ড আক্রান্ত (হৃদপিণ্ডের কোষে রক্ত না যাওয়া) বা হার্ট ফেইলিওর (হৃদপিণ্ডের দুর্বলতা)
* রক্তনালী বা ধমনী ফেটে যাওয়া বা বন্ধ হওয়া
* স্মৃতি ভ্রষ্টতা
* বৃক্কের (কিডনী) ক্ষমতা হ্রাস
* চোখে ঝাপসা দেখা
# উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করবেন কিভাবে?
* পারিবারিক ইতিহাস থাকলে অধিকতর সাবধানতা
* নিয়ন্ত্রিত ওজন-
* সুষম খাবার গ্রহণ প্রয়োজনের অধিক খাবার (ক্যালরি) না খাওয়া, ফল, শাক, মাছ, দানাদার ফল ও সবজি গ্রহণ
* চিনি, লবণ ও মিষ্টি পরিহার, অন্যান্য শর্করা খাবার (চাল, আটা ও মিষ্টি ফল পরিমাণমত খাওয়া) কম খাওয়ার বিনিময়ে আঁশযুক্ত খাবার (ডাল, সবজী, টক ফল বেশী খাওয়া), গোশত ও তৈলাক্ত খাবার পরিহার, মাছ ও উদ্ভিজ তেল ব্যবহার, নির্দিষ্ট সময় খাবার খাওয়া
* নিয়মিত ব্যয়াম (দৈনিক ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে পাঁচদিন বা ৫০ মিনিট করে সপ্তাহে ৩ দিন)
* সব ধরনের তামাক ও মদ্যপান পরিহার
* বয়স ও উচ্চতার আলোকে শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখা
* নিয়মিত রক্তচাপ মাপা
* কিছু ঔষধ (হরমোন, ব্যাথানাশক, স্টেরয়েড, নাকের ড্রপ, জন্ম নিয়ন্ত্রনের বড়ি)যতদূর সম্ভব পরিহার করা
# স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ:
স্ট্রোক রক্ত জমাট বাধা জনিত সমস্যা। স্ট্রোকের প্রধানলক্ষনই হল পক্ষাঘাত, দৃষ্টির সমস্যা বা কথা বলতে না পারা। স্মৃতিভ্রষ্টতাও হতে পারে। মস্তিষ্কের ভিতর রক্তনালী ফেটে যাবার কারণেই এই সমস্যা হয়। আপনি কি কারো মধ্যে কখনও নিচের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখেছেন।
* শরীরের এক দিকের হাত, পা বা মুখ ইত্যাদি হঠাৎ অবশ বা দুর্বল
হয়ে যাওয়া (পক্ষাঘাত)
* হঠাৎ কাউকে চিনতে না পারা, কোন কিছু বুঝতে না পারা, কথা
বলতে না পারা বা মানসিক জড়তা
* মাথা শূন্য শূন্য ভাব, বমি হওয়া
* হঠাৎ এক বা দুই চোখেই দেখতে না পাওয়া
* হঠাৎ শারীরিক ভারসাম্য হারান, হাঁটতে অসুবিধা হওয়া
* হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বারবার খিচুনী হওয়া
* মল ও মূত্র নিয়ন্ত্রণে সমস্যা এ সবই হল স্ট্রোক এর লক্ষণ।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হল বুকে তীব্র ব্যাথা বা চাপ চাপ ভাব, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন। বুকের ব্যাথা, হাতের আঙ্গুলের দিকে বা বুকের পিছনে, গলা ও চোয়ালের দিকেও যেতে পারে।
# কিভাবে এই রোগ প্রতিরোধ করবেন:
* রক্তে চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ
* উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
* বহুমূত্র (ডায়াবেটিস মেলাইটাস) নিয়ন্ত্রণ
* মদ ও তামাক, জর্দা, গুল, সিগারেট, বিড়ি পরিহার করা
* বয়স ও উচ্চতার আলোকে শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখা
* সুষম (বয়স অনুযায়ী) খাবার গ্রহণ প্রয়োজনের অধিক খাবার (ক্যালরি) না খাওয়া, ফল, শাক, মাছ, দানাদার ফল ও সবজি গ্রহণ করতে হবে। চিনি, লবণ, মিস্টি পরিহার করা। চর্বিজাতীয় ও তেলে ভাজা খাবার বাদ দিতে হবে।
* নিয়মিত শারীরিক ব্যয়াম বা পরিশ্রম করা
* শব্দযুক্ত স্থান পরিহার করা
* অতিরিক্ত চাপের মধ্যে কাজ না করা- আনন্দে থাকা
* মানসিক দুশ্চিন্তা ও হতাশা দূর করা
* অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম, ব্যাথা নাশক, ঔষধ পরিহার করা
* রাতে প্রয়োজনীয় ঘুম (দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা)