11/12/2021
★★ যারা নরমাল ডেলিভারি করাতে আগ্রহী ★★
আমি আমার ১২ বছরের প্রফেশনাল লাইফে প্রেগন্যান্সির শুরুতেই মেয়েদের মুখে সবচেয়ে বেশি যে কথাটা শুনেছি, তা হলো...
'আপু/ম্যাম, আমি কিন্তু নরমাল ডেলিভারি করাতে চাই।'
কিন্তু খুব মজার ব্যাপার হলো,
নিয়মিত চেক আপে থাকাকালীন ও সবকিছু স্বাভাবিক হলেও বহু মেয়েরা নরমাল ডেলিভারি প্রসেস এর সময় বোল্ড ডিসিশন থেকে ছিটকে পরে!
কি সেই সব কারন, জানবো আজ :)
★প্রথমে জেনে নিন স্বাভাবিক কিছু কারন যেসব অবস্থায় নরমাল ডেলিভারি করানো সঠিক নয় ★
★ মায়ের উচ্চতা ৪'১০" কিম্বা এর কম।
★ মায়ের জরায়ুতে কিম্বা মুখে টিউমার, সিস্ট, পায়ুপথে টিউমার।
★ মায়ের কোমরের হাড় অতিরিক্ত চাপা।
★ এজমা সমস্যা ভুক্তভোগী (যার প্রসব ব্যাথায় এটাক হতে পারে)
★ পিঠের, কোমরের হাড়ে কোনো রোগ, অপারেশন হয়েছে এমন রোগি।
★ পুরো প্রেগন্যান্সিতে সব রিপোর্ট স্বাভাবিক থাকবার পরেও ২৮-৩৫+ সপ্তাহের যেকোনো সময় ডায়বেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার ধরা পরতে পারে, নিয়ন্ত্রণহীন থাকতে পারে, এবং নীচে উল্লেখিত যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে।
ডায়বেটিস ও ব্লাড প্রেশার অনিয়ন্ত্রিত থাকলে এসব ক্ষেত্রে...
★ প্রি-একলামশিয়া(ব্লাড প্রেশার বেশি+শরীরে পানি জমে ফুলে যাওয়া+ মাথা ঘাড় ব্যাথা)
★ একলামশিয়া(খিচুনি)
★ সময়ের তুলনায় কম ওজনের শিশু/বড় শিশু। ★জরায়ুর ভেতরের তরল অতিরিক্ত কমে/বেড়ে যাওয়া।
★ শিশুর মুভমেন্ট কমে যাওয়া।
★ ফুলের পজিশন সঠিক না থাকার কারনে অধিক রক্তপাত।
★ শিশুর জন্মগত ক্রুটি।
এছাড়া-
★ ডেলিভারি ডেট পার হয়ে যাবার পরেও স্বাভাবিক প্রসব ব্যাথা না ওঠা।
★ বাড়িতে প্রসবের চেষ্টা করে ব্যার্থ হওয়া।
★ মায়ের জ্বর/কোনো ইনফেকশন থাকা।
★ অতিরিক্ত পানি ভেংগে যাওয়া কিন্তু ব্যাথা না থাকা।
★ প্রসবকালীন সময়ে বেবি আটকে যাওয়া।
★ দীর্ঘ সময় ধরে প্রসব ব্যাথা থাকা কিন্তু ডেলিভারি না হওয়া।
★ বেবির মাথা জরায়ু মুখে না থেকে অন্য অংগ সামনে থাকা।
★ অতিরিক্ত সময় ধরে প্রসবের চেষ্টা করে বেবি মাথায় চাপ পড়া, অক্সিজেন এর অভাবে ডেলিভারির সময় কিম্বা পরবর্তীতে শিশু মৃত্যু।
★ টুইন কিম্বা মাল্টিপল প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে বেবির পজিশন না বুঝেই ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি চেষ্টা করা।
উপরে উল্লেখিত সবগুলি কারন ও অবস্থার জটিলতা সম্পর্কে অবগত হয়েও যারা নরমাল ডেলিভারির জন্য জোর করে চেষ্টা করেন, তাদের মধ্যেই শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার বেশি।
................
এবার আসুন,
উপরে উল্লেখিত কারন এক্টিও যার নেই তার জন্য নরমাল ডেলিভারি করাবার ব্যাপারে কি কি বিষয় অবগত থাকতে হবে।
প্রথম বেবির ক্ষেত্রে--
★ প্রসব ব্যাথা স্বাভাবিক ভাবে শুরু হয় কোমরের পেছন থেকে, নীচে দুই থাই হয়ে তলপেটে ছড়ায়। এই ব্যাথা শুরুতে কম থাকবে, তীব্রতা ক্রমশ বাড়বে।
★ জরায়ু মুখ খোলার সাথে ব্যাথার ধরন, তীব্রতা বাড়তে থাকবে।
★ প্রসব স্বাভাবিক গতিতে এগোতে থাকলে, বেবি মুভমেন্ট স্বাভাবিক থাকলে এই ব্যাথা ২৪-৭২ অব্দি স্থায়ী হতে পারে। এবং জরায়ু মুখ পুরোপুরি খুলে গেলে প্রসব ব্যাথা অস্বাভাবিক ও অসহনীয় অবস্থায় চলে যায়।
★ ব্যাথা বাড়ার সাথে সাথে জরায়ুমুখ দিয়ে স্বাভাবিকভাবেই কিছু রক্ত ও তরল বের হতে থাকে।
★ চিকিৎসক কিম্বা নার্স প্রতি ৬ ঘন্টা পর জরায়ুমুখ চেক করেন, ডেলিভারি সঠিকভাবে এগোচ্ছে কিনা বোঝার জন্য। যা শেষ দিকে প্রতি ১০-৩০ মিনিট পর পর ও দেখা হয়।
★ প্রতি ঘন্টায় বেবি হারটবিট, মায়ের ব্লাড প্রেশার, প্রস্রাব সঠিক ভাবে হচ্ছে কিনা চেক করা হয়।
★ ডেলিভারি সময়ে বেবির মাথা বের হবার জন্য যথেস্ট জায়গা না থাকলে যোনিমুখ এর পাশে কিছু অংশ কেটে দেওয়া হয়, যা পরে সেলাই করে দেওয়া হয় (এপিশিওটোমি)
★ ডেলিভারি পেইন ও জরায়ু মুখ সময়ের সাথে সঠিকভাবে না বাড়লে প্রয়োজনীয় ইঞ্জেকশন, স্যালাইন, মেডিসিন দেওয়া হয়।
★ প্রসব ব্যাথা বাড়াবার জন্য মা'কে ডেলিভারি রুমে দ্রুত হাটতে বলা হয়, ব্যায়াম করানো হয়।
★ প্রচুর পানি ও তরল খেতে বলা হয়। ইউরিন ক্লিয়ার করতে বলা হয়।
★★ আগে নরমাল ডেলিভারি হয়ে থাকলে এই ব্যাথার সময়কাল কম হয় (সাধারণত ১০-১৮ ঘন্টা)
এবং জরায়ুমুখ প্রশস্ত থাকলে এপিসিওটোমি দেবার প্রয়োজন নাও হতে পারে।
(এর বাইরে সব ব্যাপার এক)
.................
এখন আসি মূল বক্তব্যে...
★ স্বাভাবিক প্রসবের ব্যাথার তীব্রতা হলো, পিরিয়ড এর ব্যাথার প্রায় ১০ গুন বেশী! অল্পবয়সী মেয়েরা, মনে করে অল্প ব্যাথাতেই ডেলিভারি হয়ে যাবে, যা ভুল।
★ প্রেগন্যান্ট মেয়ের সাথে থাকা মা-বোন-ভাবীরা তাকে সাহস ও উৎসাহ দেওয়ার বদলে তার থেকে বেশি অস্থির হয়ে যায়, কখন ডেলিভারি হবে!
★ ব্যাথার তীব্রতায় মেয়েটির খাওয়ার ইচ্ছা, রুচি কমে যায় কিন্তু তাকে জোর করে হলেও প্রচুর তরল খাবার খাওয়ানো উচিত। এতে সে শেষ মুহুর্ত অব্দি জোর পায়। যা কখনই করানো হয়না। অধিকাংশ মেয়েকে আমরা পানিশূন্য, অবশ, অভুক্ত অবস্থায় পাই!
★ স্বাভাবিক প্রসব ব্যাথা তীব্র ও অসহনীয়।
কিন্তু কাছের মানুষের সাহস যোগানো, পাশে থাকা তার কষ্ট কিছু হলেও লাঘব করে। যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই করা হয়না।
(ডাক্তার, নারস এর সব দায়িত্ব এখন বলে বসে সবাই আড্ডা মারে নাইলে পান চিবায়!)
★ প্রেগন্যান্সির শুরু থেকেই ঘরের বয়স্ক ও অভিজ্ঞদের কাছ থেকে নরমাল প্রসব কেমন হয় ইত্যাদি বিষয় এ কথা বলে ধারনা রাখতে হয়। যা করা তো হয়'ই না, বরং ভুল ধারনা দেওয়া হয়।
★ কখন ব্যাথা বাড়াবার মেডিসিন, ইঞ্জেকশন,স্যালাইন দিতে হবে, কখন ডেলিভারি রুমে নিতে হবে, কখন চেক আপ করতে হবে তা অবশ্যই রোগী ও তার স্বজন থেকে বেশি বুঝবেন দায়িত্বরত ডাক্তার কিম্বা অভিজ্ঞ নার্স।
তাদের মাথার কাছে গিয়ে প্রতি ৫ মিনিট অন্তর (কেনো কিছু করা হচ্ছে না!) কম্পলেন করতে থাকা হলো নিরবুদ্ধিতা!
★ প্রয়োজন মনে না হয়ে বারবার যোনিমুখে চেক করা রোগীর ইনফেকশন বাড়ানো কিম্বা বিরক্তি তৈরি করা। যা অধিকাংশ স্বজন বুঝতে অপারগ।
★ প্রসব সঠিকভাবে এগুচ্ছে কিনা বুঝবার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী যোনিমুখে চেক করতে দিতে হবে। যে মেয়েরা এতে বিরক্ত ও অনেক ব্যাথা অনুভব করে, তার জন্য নরমাল ডেলিভারি নয়!
★ যথেস্ট শারীরিক ও মানসিক জোর ও ফিটনেস যার নেই, শেষ মুহুরতে যেয়ে "আমি আর পারবো না" বলার ব্যাপার হতে পারে, তার জন্য আগেই বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো।
প্রসব ব্যাথা সহ্য করে, বেবির অবস্থা খারাপ করে সিজারিয়ান এর সিদ্ধান্ত নেওয়া বোকামি।
...........
শেষ কথা,
নিজ চিকিৎসক এর উপর আস্থা, ভরসা রাখা।
স্বাভাবিক উপায়ে প্রসব হবে কি হবে না বোঝার জন্য অবশ্যই শুরু থেকে শেষ অবধি একজন অভিজ্ঞ গাইনোকলোজিস্ট এর তত্বাবধানে থাকতে হবে ও তার অভিজ্ঞতার আলোকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
"এই তো হয়ে গেছে!
আরেকটু হলেই ডেলিভারি হয়ে যাবে"...
এমন আশা করতে করতে ২দিন কাটিয়ে বাচ্চা ও মায়ের অবস্থা খারাপ ও শোচনীয় করে প্রায় প্রতিটি গ্রাম, শহরতলিতে " পল্লী চিকিৎসক/আয়া/অনভিজ্ঞ নার্স/কোয়াক ইত্যাদির পাল্লায় অসচেতন ও জ্ঞানহীন সাধারণ মানুষ নিয়মিত ধোকা খাচ্ছে।
শেষ মুহুর্তে হস্পিটালে নিয়ে এসে নিজেদের বাচ্চা কিম্বা মায়ের জীবন নিয়ে টানাটানি হচ্ছে।
তাই,
পুরো প্রেগন্যান্সিতে "আপা, ভাবী, মাতব্বর স্বজন, অতি পন্ডিত অল্পজ্ঞানী কোয়াক" ইত্যাদির পাল্লায় না পড়ে, নিজেরা বেশি না বুঝে একজন চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী থাকুন।
"প্রতিদিন ড্রেস বদলের মতো ডাক্তার বদল" এর অভ্যাস ত্যাগ করুন!
চিকিৎসা বিদ্যায় আপনার চেয়ে আপনার ডাক্তার অবশ্যই বেশি জানেন ও বোঝেন, এই মানসিকতা রাখুন!
৯/১০ মাস নিজের শরীরে বহন করে আসা একটি প্রাণের প্রতি মায়া, ভালোবাসা রাখুন।
নিজের মেয়ে/বোন/স্ত্রী যিনি এই যন্ত্রনা সহ্য করবেন, তার প্রতি মানবিক হোন। তার মতামতের গুরুত্ব দিন।
শেষ সময়ে এসে,
নিজেদের নির্বুদ্ধিতা কিম্বা সিদ্ধান্তের ভুলে শিশু কিম্বা মা'কে হারানোর মতো শোক কিছুর সাথেই তুলনীয় নয়!
ভালোবাসার, আকাংখার সন্তান'টি আপনাদের।
সুস্থ মা ও সুস্থ বেবি ডেলিভারি হওয়াই হোক সঠিক উদ্দেশ্য।
পদ্ধতি যাই হোক।
ধন্যবাদ ও শুভকামনা :)
ডাঃ নাজিয়া বিনতে আলমগীর।
গাইনি ও প্রসূতি বিদ্যা বিভাগ।
আপনার বাসা থেকে যদি পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্যে স্যাম্পল কালেকশন করতে হয় তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন চট্টগ্রামের প্রথমসারির কয়েকটা ল্যাব থেকে পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারবেন।
টিএসআরএম হেলথ কেয়ার।
অনলাইন হোম কেয়ার সার্ভিস
হেল্পলাইন 01645584499
পেইজে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন
https://www.facebook.com/tsrmhc/