04/05/2025
"একই পরীক্ষা বিভিন্ন ল্যাবে ফলাফল ভিন্নতার কারন কি ??
অনেক সময় দেখা যায় একই পরীক্ষা ল্যাবভেদে ফলাফল ভিন্নতা দেখা যায় সেটা নিয়ে সাধারণ মানুষ, রোগী ও মেডিকেল প্রফেশনালদের মাঝে উদ্বেগ, সিদ্ধান্তহীনতা, অবিশ্বাস ও সন্দেহ তৈরি হয়। কি কি কারণে এ রকম হতে পারে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. পরীক্ষার পদ্ধতির পার্থক্য (Methodological Variation): প্রতিটি ল্যাব একে অপরের থেকে ভিন্ন পরীক্ষার কিট, রিএজেন্ট বা মেথড ব্যবহার করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ল্যাব colorimetric পদ্ধতি ব্যবহার করে, আরেকটি ব্যবহার করতে পারে enzymatic বা immunoassay পদ্ধতি — ফলে ফলাফলে তারতম্য আসতে পারে।
২. যন্ত্রপাতির পার্থক্য (Instrumental Variation):
একটি ল্যাবে উন্নত ও আধুনিক অটোমেটেড মেশিন ব্যবহার করা হলেও অন্য ল্যাবে পুরনো বা কম সেনসিটিভ মেশিন থাকতে পারে। যন্ত্রের ক্যালিব্রেশন, মেইনটেন্যান্স বা প্রিসিশন ঠিক না থাকলে ফলাফলে বিভন্নতা দেখা যায়।
৩. কর্মীদের দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ (Human Skill Variation):
পরীক্ষা পরিচালনার ক্ষেত্রে টেকনিশিয়ানের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান নমুনা পরিচালনা ও রিপোর্টিংয়ে কম ভুল করে, যেখানে কম অভিজ্ঞ কেউ ভুল করতে পারে।
৪. নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পদ্ধতির ভিন্নতা (Pre-analytical Variation): নমুনা ভুল টিউবে সংগ্রহ করা, পর্যাপ্ত না নেওয়া, অতিরিক্ত সময় ফেলে রাখা, কিংবা সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ না করা — এসব কারণে নমুনার মান নষ্ট হতে পারে, যা পরীক্ষার ফলকে প্রভাবিত করে।
৫. পরিবেশগত পার্থক্য (Environmental Factors):
তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ইত্যাদির ভিন্নতা পরীক্ষার উপর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন ম্যানুয়াল পদ্ধতি বা নির্দিষ্ট সংবেদনশীল কিট ব্যবহৃত হয়।
৬. কোয়ালিটি কন্ট্রোল ব্যবস্থার পার্থক্য (Quality Control Differences): একটি ল্যাব নিয়মিত ইন্টারনাল ও এক্সটারনাল কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম অনুসরণ করে, যেখানে অন্য ল্যাব কন্ট্রোল স্যাম্পল ব্যবহার না-ও করতে পারে। এতে ফলাফলের নির্ভুলতা ও পুনরুত্পাদনযোগ্যতায় প্রভাব পড়ে।
৭. রেফারেন্স রেঞ্জ বা ইউনিট ব্যবহারে ভিন্নতা: একটি ল্যাব mg/dL ব্যবহার করে, অন্যটি mmol/L — এতে একই ফলাফলের ভিন্ন উপস্থাপন হতে পারে। এছাড়া রেফারেন্স রেঞ্জও ল্যাবের কিট অনুযায়ী আলাদা হতে পারে।
৮. নমুনার গুণগত সমস্যা: নমুনা যদি হেমোলাইজড হয় (রক্তকণিকা ভেঙে যায়), লিপেমিক বা আইকটেরিক হয়, তবে তা কিছু বায়োকেমিক্যাল পরীক্ষার ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে।
৯. রিপোর্টিং বা ইন্টারপ্রেটেশনের ভিন্নতা: একই ফলাফলের ক্লিনিক্যাল ব্যাখ্যা ল্যাব ভেদে ভিন্ন হতে পারে, বিশেষ করে যদি কোনো স্ট্যান্ডার্ড গাইডলাইন অনুসরণ না করা হয়।
১০. SOP না মানা বা নিয়ম লঙ্ঘন: Standard Operating Procedure (SOP) ঠিকভাবে অনুসরণ না করলে পরীক্ষা পরিচালনার প্রতিটি ধাপে বিভন্নতা ঘটতে পারে।
১১. সময়গত পার্থক্য: রক্ত বা ইউরিন পরীক্ষার ক্ষেত্রে সকালে এবং বিকেলে সংগৃহীত নমুনায় স্বাভাবিকভাবেই কিছু পার্থক্য থাকতে পারে (diurnal variation)। এটি ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে।
১২. মানবিক ভুল(Human Error): লেবেলিং, নমুনা পরিবর্তন, ভুল রিপোর্ট টাইপ করা ইত্যাদি সাধারণ Human Error-এর মাধ্যমে বিভন্নতা সৃষ্টি হতে পারে।
এইসব কারণগুলোর জন্যই একই রোগীর একই পরীক্ষার ফলাফল বিভিন্ন ল্যাবে ভিন্ন হতে দেখা যায়। তাই মানসম্মত ল্যাব নির্বাচন, সঠিক টেস্ট পদ্ধতি অনুসরণ, ও কোয়ালিটি কন্ট্রোল নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।