24/10/2022
🔆চিকিৎসা বিজ্ঞানের আশীর্বাদঃ ফিজিওথেরাপি
ফিজিওথেরাপি হলো একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর সব কথা শুনে-বুঝে, রোগীকে ভালোভাবে দেখে এবং প্রয়োজনে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর সঠিক রোগ, আঘাত বা অঙ্গ বিকৃতির ধরন নির্ণয় করে রোগীকে বিভিন্ন ধরনের ফিজিক্যাল মেথড যেমন ম্যানুয়াল টেকনিক, তাপ ও ব্যায়ামের মাধ্যমে চিকিৎসা করে থাকেন।
আমরা যত আধুনিক প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে চলছি তত বেশি পরিমাণ স্বাস্থ্যগত সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছি। দেখা গেছে শরীরের বিভিন্ন রোগ শুধু ওষুধ দিয়ে নিরাময় করা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে যে সব রোগের উৎস বিভিন্ন মেকানিক্যাল সমস্যা, সেসব ক্ষেত্রে ওষুধের ভূমিকা তুলনামূলকভাবে কম। যেমন- বাত, কোমর ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, হাঁটু ব্যথা, আঘাতজনিত ব্যথা, হাড় ক্ষয়জনিত রোগ, জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া, স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, মুখ বেঁকে যাওয়া, সেরিব্রাল পালসি, স্পোর্টস ইনজুরি ইত্যাদি।
✅✅অর্থপেডিক সমস্যা ও ব্যথার রোগীদের জন্য ফিজিওথেরাপি
নানা ধরনের বাত, যেমন—স্পন্ডিলাইটিস, স্পন্ডাইলোসিস, স্পন্ডিলিসথেসিস; অর্থাৎ ঘাড়, কোমর ও মেরুদণ্ডের ব্যথায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা বেশ কাজে দেয়। পাশাপাশি অস্থিসন্ধির বাত, হাঁটুর ব্যথা, ফ্রোজেন শোল্ডার বা কাঁধে ব্যথা এবং পায়ের গোড়ালির সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অপরিহার্য। হাড়ের রোগ অস্টিওপোরোসিস, মাংসপেশির রোগ সারকোপেনিয়াতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই।
✅✅স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যায় ফিজিওথেরাপি
স্ট্রোক, স্পাইনাল কর্ড ও নার্ভ ইনজুরির কারণে সৃষ্ট প্যারালাইসিস এবং অন্যান্য শারীরিক জটিলতায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার বিকল্প নেই। এ ধরনের সমস্যায় নিউরোলজিক্যাল ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। আঘাত অথবা শল্যচিকিৎসায় স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতায় ভুগে পঙ্গুত্ববরণ করে অনেকে। এ ধরনের রোগীর শরীর অবশ হয়ে যায় বা মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। এসব রোগীর শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ানো এবং অস্থিসন্ধি সচল রাখা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় সক্ষম করে তুলতেও ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই।
✅✅ক্যান্সার ও ফিজিওথেরাপি
ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী অসুস্থতার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি। চিকিৎসাধীন অনেক ক্যান্সার রোগী দুর্বলতা ও ক্লান্তি বোধ করে। ফিজিওথেরাপি ক্যান্সার রোগীকে সামগ্রিক পেইন ম্যানেজমেন্ট করতে পারে, দীর্ঘস্থায়ী নিষ্ক্রিয়তা কমাতে পারে, ক্যান্সারের ওষুধ ও কেমোথেরাপির কারণে স্নায়ুর ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারে এবং এর জন্য রোগীর বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে ডি-কন্ডিশনের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। ক্যান্সার রোগীদের বিশেষ প্রয়োজনীয়তাগুলো বোঝে এমন একটি উন্নত স্বাস্থ্যসম্মত পুনর্বাসন ক্লিনিক খোঁজা এবং রিহ্যাবিলিটেশনের জন্য ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা দিয়ে অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট খুঁজে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
✅✅শিশুরোগ ও ফিজিওথেরাপি
অনেক শিশু জন্মগতভাবে প্যারালাইসিস বা সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম, অটিজম ও মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে জন্মায়। ফলে তাদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্ত হয়। আবার দেখা যায়, অনেক শিশুর হাত-পা বেঁকে যায় কিংবা বিকলাঙ্গতা দেখা দেয়। এসব শিশুর ফিজিওথেরাপি অত্যাবশ্যক এবং তা অবশ্যই শিশু ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে হওয়া বাঞ্ছনীয়।
✅✅স্পোর্টস ইনজুরি ও ফিজিওথেরাপি
খেলা ও ফিজিওথেরাপি যেন অবিচ্ছেদ্য। একে অন্যের পরিপূরক। খেলাধুলা করলে ইনজুরি হতেই পারে। তাই স্পোর্টস ইনজুরি প্রতিরোধ এবং ইনজুরিতে পড়া খেলোয়াড়কে বিভিন্ন ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে খেলার উপযোগী করতে স্পোর্টস ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞরা ভূমিকা রাখছেন।
✅✅হৃদরোগ, শল্যচিকিৎসার পর ফিজিওথেরাপি
বুকে কফ জমা, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদেরও ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন পড়ে। হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে রোগীর অক্সিজেন ধারণক্ষমতা ঠিক রাখতে ফিজিওথেরাপি দিতে হয়। রোগীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় এ ক্ষেত্রে অ্যারোবিক এক্সারসাইজের প্রেসক্রিপশন মেনে ফিজিওথেরাপি করতে হয় এবং ভুল হলে রোগীর জীবন হুমকির মুখে পড়ে। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) রোগীদেরও ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হয়।
অন্যান্য শল্যচিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে মাংসপেশি ও অস্থিসন্ধির স্বাভাবিক ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হয়, এমন রোগীদের সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ফিজিওথেরাপি ভালো কাজ দেয়। এর জন্য শল্যচিকিৎসার ওপর ভিত্তি করে বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।
✅✅পোড়া রোগীদের ফিজিওথেরাপি
আমাদের দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। আগুনে পোড়া রোগীর দীর্ঘদিন ধরে মাংসপেশি সংকুচিত হয়ে থাকে, অস্থিসন্ধির স্বাভাবিক ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় যদি নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নেওয়া হয়, ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা যায়।
✅✅পুনর্বাসন ও বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ফিজিওথেরাপি
⭕দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রবীণ, যাঁরা হাড়ের জয়েন্ট ও মাংসপেশির ব্যথা, শারীরিক দুর্বলতাসহ বিভিন্ন রকম বার্ধক্যজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। বার্ধক্যে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা হয়। মাংসপেশি ক্ষয় হয়। এ কারণে অনেকে চলাফেরার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এসব মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের ক্ষমতা বজায় রাখতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই।
⭕সড়ক দুর্ঘটনার কারণে হাত-পা হারানো ব্যক্তির কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজনের প্রয়োজন হয়। গাছ কিংবা ওপর থেকে পড়ে গিয়ে কিংবা কোনো দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডের স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিজনিত কারণে অনেকেই পঙ্গুত্বের শিকার হয়। এসব মানুষের চলাফেরা স্বাভাবিক করতে ফিজিওথেরাপি একমাত্র পদ্ধতি। অর্থোপেডিক ও নিউরোলোজি ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেওয়া বেশি কার্যকর।
✅✅নারীস্বাস্থ্য ও ফিজিওথেরাপি
দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ জনগোষ্ঠী নারী। হরমোন, স্ট্রাকচারাল মেকআপ, গর্ভাবস্থা ও প্রসবের কারণে নারীদের শরীরে ব্যথা এবং নানা ধরনের সমস্যায় ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হয়। জেনিটাল অঙ্গে ব্যথা ও দুর্বলতা, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হওয়া, প্রসবপূর্ব ও প্রসবোত্তর পেশির ব্যথা, স্তন ক্যান্সারে অস্ত্রোপচারের পর পুনর্বাসন, লিম্ফেডেমা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সমস্যায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কার্যকর। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে পেলভিক ফ্লোরকে শক্তিশালী করলে গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের সময় ও পেলভিক ফ্লোর সম্পর্কিত সমস্যা প্রতিকার ও প্রতিরোধে নারীদের জন্য অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে মেনোপজের পর স্বাভাবিকভাবেই হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। এ ক্ষেত্রে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট হাড় শক্তিশালী করতে এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারেন।
ক্যান্সার এবং এর বিভিন্ন চিকিৎসা বিভিন্ন ধরনের কষ্টদায়ক শারীরিক ও মানসিক প্রভাবের সাথে যুক্ত, যা চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর বছরের পর বছর ধরে রোগীদের প্রভাবিত করতে পারে। ব্যায়াম করা ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের তাদের অসুস্থতার ফর্ম এবং পর্যায় নির্বিশেষে তাদের জীবনের মান উন্নত করবে। ক্যান্সারের পথের মধ্যে ব্যায়াম-চালিত ফিজিওথেরাপির অন্তর্ভুক্তি বৈকল্য কমাতে এবং প্রতিরোধ করতে পারে। বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি লিম্ফোডিমা এবং ক্লান্তির মতো কষ্টদায়ক উপসর্গগুলিও উপশম করতে পারে, যা ক্যান্সারে আক্রান্ত সমস্ত রোগীদের 75-95% দুর্বল করে দেয়।
প্রমাণ দেখায় যে ব্যায়াম ক্যান্সারের পুনরাবৃত্তি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস করে। পাকস্থলী, স্তন এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারে মৃত্যুহার যথাক্রমে 50 শতাংশ, 40 শতাংশ এবং 30 শতাংশ হ্রাস করা যেতে পারে। এছাড়াও, প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে রোগের প্রকোপ 57% কমে গেছে যারা সপ্তাহে তিন ঘন্টা মাঝারি-তীব্র ব্যায়াম করেছিলেন।
অত্যধিক ওজন বৃদ্ধি এবং হ্রাস অনেক রোগীর জন্য সমস্যা হতে পারে, তাদের ক্যান্সার নির্ণয়, পর্যায় এবং ফর্মের উপর নির্ভর করে। বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট একটি ভাল ওজন বজায় রাখা এবং ক্যান্সার রোগীদের পেশী নষ্ট হওয়া এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ।
ফিজিওথেরাপি ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি প্রতিরোধ করে, শরীরকে শক্তিশালী করে এবং একজন ব্যক্তির কাজে ফিরে যাওয়ার ক্ষমতা উন্নত করতে পারে। কিছু ক্যান্সারের থেরাপি হাড়ের সামঞ্জস্য কমাতে পারে যা অস্টিওপোরোসিস, ভঙ্গুরতা, ব্যথা এবং অক্ষমতার ঝুঁকি বাড়ায়। ফিজিওথেরাপি ব্যায়াম করা হাড়ের ক্ষয় এবং কম হাড়ের ঘনত্বের রোগীদের ঝরে পড়ার ঝুঁকি কমাতে পারে।
ক্যান্সার রোগীদের শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক ব্যথা নিয়ন্ত্রণের সমস্যা থাকতে পারে। ফলস্বরূপ, ব্যথা উদ্বেগ, নিষ্ক্রিয়তা এবং আরও দুর্বলতার একটি দুষ্ট চক্রের দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং তাই হাসপাতালে থাকার সময়কাল বাড়িয়ে দেয়। ফিজিওথেরাপিকে দেখানো হয়েছে যে একজন ডাক্তার হিসাবে কম রাতের সাথে হাসপাতালে থাকার সংখ্যা কমিয়ে দেয় যা জীবনের বৃহত্তর মানের প্রতিনিধিত্ব করে এবং খরচ সাশ্রয় করে এবং তাই ক্যান্সার রোগীদের জন্য ফিজিওথেরাপির বিভিন্ন সুবিধা প্রমাণ করে।
ফিজিওথেরাপির প্রধান উপায়গুলির মধ্যে একটি হল ক্যান্সার-সম্পর্কিত ক্লান্তির চিকিত্সা করা, যারা থেরাপির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে একটি। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট একজন রোগীকে মূল্যায়ন করতে পারেন, এবং ঠিক করতে পারেন তারা ঠিক কোন সমস্যার সম্মুখীন হন। এই সমস্যাগুলিকে মোকাবেলা করার মধ্যে যেকোন পেশী বা হাড়ের অবনতির জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য শক্তি প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে; গতিবেগ এবং শ্বাসকষ্ট সম্পর্কিত শক্তি সমস্যা সমাধানের জন্য বায়বীয় প্রশিক্ষণ; কার্ডিওভাসকুলার এবং সহনশীলতা প্রশিক্ষণ; বা কাইনসিওলজি, আন্দোলন বিজ্ঞান যা রোগীদের কীভাবে দুর্বলতাগুলি সমাধান করতে হয় এবং তাদের শারীরিক ক্ষমতার সবচেয়ে দক্ষ ব্যবহার করতে শিখতে সাহায্য করতে পারে।
ব্যথা ব্যবস্থাপনা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যেখানে ফিজিওথেরাপিস্ট প্রায় যেকোনো রোগীকে সহায়তা করতে পারেন। ক্যান্সার শারীরিক যন্ত্রণার কারণ হতে পারে এমন অনেক উপায় রয়েছে। সেখানেই ক্যান্সার নিজেই পাওয়া যায়। গতিশীলতা হ্রাসের ফলে জয়েন্ট বা পেশীতে শক্ত হয়ে যেতে পারে তা অন্য। পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি হল স্নায়ুর কর্মহীনতা যা ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ুর কারণে ব্যথা হয়। ফিজিওথেরাপির এই সমস্যাগুলিকে ম্যাসেজ বা মবিলাইজেশন থেরাপির মতো থেরাপির মাধ্যমে চিকিত্সা করা এবং রোগীদের কীভাবে ব্যথা প্রতিরোধ করা যায় তার পরামর্শ দেওয়া উচিত।
লিম্ফেডেমা, তরল জমার কারণে শরীরের অঙ্গগুলির ফুলে যাওয়া, কিছু ক্যান্সারের চিকিত্সার আরেকটি পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া। সাধারণত এটি বাহুতে বা ক্যান্সার-আক্রান্ত শরীরের অংশে ঘটে। লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই তরলটি ধরে রাখা হয়, যা সার্জারি বা রেডিয়েশন থেরাপি, সংক্রমণ বা ক্যান্সারের কারণে ঘটতে পারে। ফিজিওথেরাপিস্টরা নিজেরাই তরল নিষ্কাশন করে, রোগীকে বিভিন্ন ব্যায়াম শেখান এবং ব্যান্ডেজ করার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে এর সমাধান করতে পারেন।
যদিও ফিজিওথেরাপি নিজেই ক্যান্সারের সাথে মোকাবিলা করার জন্য ব্যবহার করা হয় না, এটি রোগীদের তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করার জন্য একটি খুব দরকারী উপায় হতে পারে। এটি শুধুমাত্র তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং তাদের শক্তি ও স্বাধীনতা দিয়ে ক্যান্সারের সাথে মোকাবিলা করার কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করার ক্ষমতা দেয়। যদিও ক্যান্সারের সাথে মোকাবিলা করার সম্ভাব্য পথের সংখ্যা প্রায়শই ভয়ঙ্কর বলে মনে হতে পারে, ফিজিওথেরাপি রোগীদের যতটা সম্ভব এই বিকল্পগুলির মধ্যে অনেকগুলি অনুসরণ করার জন্য শক্তির ভিত্তি তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে, যা তাদের রোগকে পরাজিত করার জন্য সম্ভাব্য সমস্ত পথ খুঁজতে সক্ষম করে।
কার্ডিওলজী বা হার্ট বা হৃদপিন্ড – এর চিকিৎসা বা অপারেশনের আগে ও পরে রোগীর ফুসফুসের অক্সিজেন ধারণক্ষমতা প্রয়োজন মত আছে কিনা বা কফ্ জমা আছে কিনা বা অপারেশনের পরে যে সকল শারীরিক অসমর্থতা বা অক্ষমতা দেখা দেয় যার কারণে শারীরিক বিকলঙ্গত্ব হয়ে থাকে।
এমন কি ফিজিওথেরাপির অভাবে একজন রোগী অপারেশন পরবর্তী সময়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পুর্ণ ব্যবহার করায় বাধাগ্রস্থ হতে পারে। অপারেশন পরবর্তী পর্যায়ে রোগী যখন ‘ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে’ (আই.সি.ইউ. অথবা সি.সি.ইউ-তে) থাকে তখন যদি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রদান করা না হয় তাহলে সেই রোগীর অবশ্যই পরবর্তী সময়ে বক্ষব্যধি (শ্বাসকষ্ট) বা শারিরীক বিকলঙ্গত্ব বা ডিফরমিটি স্থায়ীভাবে দেখা দেওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে এবং সেইজন্য ফিজিওথেরাপি অনস্বীকার্য চিকিৎসা।
অপারেশনের পরবর্তি সময়ে রোগীর হাটা-চলা, অপারেশনের অংশ বা সেই সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কোনওধরণের বিকলাঙ্গত্ব ব্যতীতই যাতে সঠিকভাবে সুস্থ্যভাবে ব্যবহার করিতে পারে তাহার নিশ্চয়তার জন্য অবশ্যই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রয়োজন।
✅✅স্ট্রোকের রোগীর ক্ষেত্রে একজন ফিজিওথেরাপিস্টের ভুমিকা হল – স্ট্রোক আক্রান্ত একজন রোগীকে সর্বচ্চো পরিমান শারিরীক ভাবে স্বচ্ছল এবং তার কাজকর্মে স্বাধীন করা ।
আর এইসব অর্জন করা হয় চারটি ধাপে –
১। কিছু টেকনিক ব্যবহার করে পুনরায় মুভমেন্ট শিখানোর মাধ্যমে,
২।কিছু স্ট্যাটেজি ব্যবহার করে যা তাদের খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে ,
৩। পরবর্তী সমস্যা প্রতিরোধ করে এবং
৪। সক্ষমতা ও ফাংশন ধরে রাখার মাধ্যমে ।
তবে স্ট্রোক রোগীকে ভাল করতে হলে, শুধু ট্র্যাডিশনাল ফিজিওথেরাপি দিলেই হবে না । অনেকগুলো ইভিডেন্স বেইজড ট্রিটমেন্ট এপ্রোচ আছে, সবগুলোর উপরই ভাল ধারনা রাখতে হবে ।
⭕স্ট্রোকের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কয়েকটি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে করতে হয়, যেমন —–
১। আই সি এফ (ICF – Internation classification of functioning , Disability and Health ) গাইডলাইন ফলো করা গুরুত্বপূর্ন। ২০১১ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা আইসিএফকে তুলে ধরে । আইসিএফ মূলত তিনটি বিষয়ের উপর ফোকাস করা হয় Body Function ( Impairment) , Individual (Activity Limitation) & Societal ( Participation Restriction ) । যেমম একজন স্ট্রোক রোগীর ব্রেইনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারনে হাত পা নড়াতে পারে না এটাই হল তার Impairment , এর ফলে সে হাটা চলা করে না এটা হল Activity Limitation অর্থাৎ Disability , হাটাচলা না করার কারনে সামাজিক কাজকর্ম বাধাগ্রস্ত হয় এটা Participation Restriction । এই তিনটি বিষয় মাথা রেখে এসেস করতে হয় এবং সমস্যা বের করতে হয় ।
২। স্ট্রোকের চিকিৎসা অবশ্যই টিম ওয়ার্ক হতে হবে । ফিজিওথেরাপিস্ট ওই টিমের একজন গুরুত্বপূর্ন চিকিৎসক । টিমে নিউরোলজিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পীচ থেরাপিস্ট এবং নার্স সহ আরও অনেকে থাকতে পারে ।
৩। স্ট্রোক রোগীকে রিহ্যাবিলেটেশন সেন্টার কেন্দ্রীক ফিজিওথেরাপি দেওয়া উচিত । রিহ্যাবিলিটেশন আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে হাসপাতাল গুলোতে সম্ভব না ।
৪। নিউরোপ্লাস্টিসিটি ঃ একজন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে সাধারন ব্রেইনের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়, এই ক্ষতি কোনভাবেই পুনরায় আর ভাল করা যায় না । তাই শরীরের যেকোন এক পাশের হাত পা , এমন কি মুখও অবশ হয়ে যায় অর্থাৎ প্যারালাইসিস বা চলাচলে অক্ষম হয়ে যায় । তখন ফিজিওথেরাপিস্ট ওই ব্যক্তির ব্রেইনের ক্ষতি গ্রস্ত অংশের কাজ ব্রেইনের ভাল অংশ দিয়ে শিখিয়ে দেয় অর্থাৎ ভাল অংশে তখন নতুন নিউরাল পথ তৈরি হয় । এইভাবে রোগী আবার চলাচলে সক্ষম হয় । এটাকে নিউরোপ্লাস্টিসিটি বলে । এই কাজটা একজন ফিজিওথেরাপিস্ট খুব ভাল্ভাবে স্ট্রোক রোগীদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ন করতে হয় ।
৫। ফাংশনাল মুভমেন্ট গুলো পুনরায় শিখানো হয়, যেমন বসা, শোয়া থেকে বসা, দাঁড়ানো , হাঁটা ।
৬। সেলফ ম্যানেজম্যান্ট ঃ রোগী যেন নিজে ম্যানেজ করতে পারে অনেক কিছু , সেই ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হয় ফিজিওথেরাপিস্ট কে ।
©️