মজা দিমু

মজা দিমু �� যারা মজা লইয়া হজম করতে পারবেন শুধু তারাই পেইজটাতে লাইক দিবেন।

08/03/2023

বোনের বিয়েতে নতুন ডান্স _চন্দ্র তুই সূর্য তুই _Chandra Tui surjo Tui _ যোগাযোগ 01865234775

10/06/2020

#স্ত্রী
#পর্বঃ৪
জিনাতের কান্না শুনে রায়ান ঘুম থেকে উঠে বসলো।ওকে এভাবে কান্না করতে দেখে খুব খারাপ লাগছিলো রায়ানের।কাল রাতের জন্য খুবই অনুতপ্ত ও।কিন্তু এখন জিনাতকে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।কারণ যাই বলুক না কেনো, জিনাত আবার গালিগালাজ শুরু করবে,,আর রায়ানের আবার মাথা গরম হয়ে যাবে।রায়ান কিছুক্ষণ চিন্তা করে বিছানা থেকে উঠে, মোবাইলটা হাতে নিলো,,,
-হ্যালো মনির,,,,আমার শশুড় শাশুড়ীর সেবাযত্ন করতে কয়জনকে রেখেছিস,,,কিহ!!মাত্র ৪ জন!!না,না, ৭/৮ জন রেখে দে।আর আমি বলা মাত্রই সেবাযত্ন শুরু করে দিবি।
রায়ানকে মোবাইলে এই কথা বলতে শুনে,,জিনাত চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকালো।
-আমাকে পুরোপুরি শেষ করেও আপনার শান্তি হয়নি?আমার বাবা মায়ের পিছু ছাড়ছেন না কেনো এখনো?
-পিছু ছেড়েছিলাম বলেই তো,, কাল রাতে এতো কথা বলার সাহস পেয়েছিলে,,যার ফল তোমাকেই ভুগতে হলো। এখনো বলছি,, খবরদার আমার মাথা গরম করাবে না,,তাহলে তার ফল তোমার সাথে সাথে তোমার বাবা মাকেও ভুগতে হবে।মনে রেখো আমার লোকজন সবসময়ই তোমার বাবা মায়ের উপর নজর রাখছে।আমার একটা ইশারায় তাদের অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।আর তোমাকে সাবধান করছি,,, খবরদার, আমার মাকে কোনোরকম অসন্মাম করবে না,,যদি আমার মায়ের মনে একটু কষ্টও লাগে,,তবে আমার সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ দেখবে তুমি।
যদি ভালো চাও,, যা হয়েছে চুপচাপ মেনে নিয়ে,,ভালো মেয়ের মতো সংসার করো,এতেই সবার মঙ্গল ।
জিনাত চুপ করে এতোক্ষণ শুনলো,তারপর ঠান্ডাগলায় বললো,,,বেশ ভালো মেয়ের মতোই সংসার করবো।শুধু আমার বাবা মাকে রেহাই দিন।দয়া করুন।
--তুমি যদি ঠিকঠাক চলো,,তবে আমিও কথা দিচ্ছি আমি থাকতে তাদের কোনো অসুবিধা হবে না।
-আমি বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে চাই।তারা নিশ্চয়ই আমার চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে।
- উহুম,,এখন না,,কয়েকদিন যাক,তারপর। আগে তুমি দেখাও,,কেমন ভালো মেয়ের মতো সংসার করো,,,তারপর দেখা যাবে।
জিনাত বুঝলো কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।মাথা গরম করে কিছু বললে ওর বাবা মায়ের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।তাই ও আর কিছু না বলে, ওর ব্যাগ থেকে একটা থ্রি পিছ বের করে চুপচাপ বাথরুমে ঢুকে গেলো।
বাথরুমে আয়নার সামনে দাড়ালো জিনাত।একদিনেই কেমন বিধ্বস্ত চেহারা হয়ে গেছে তার।নিজের সর্বনাশের কথা ভেবে ঢুকরে কেদে উঠলো ও।কিছুক্ষণ কাদার পরে ওর মনে হলো, যে ওর এতোবড়ো সর্বনাশ করলো,,,তার উপর প্রতিশোধ নেবে ও।চরম প্রতিশোধ!!
বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখে ঘরে রায়ান নেই,,রুমের দরজাটা খোলা।ও রুম থেকে বের হবে কি হবে না ভাবতে লাগলো। পরক্ষণেই ওর মনে হলো ,এটা তো ওর কাছে কোন সাধারণ বিয়ে না যে,,বিয়ের পরদিন সকালে সেজেগুজে মাথায় ঘোমটা টেনে শাশুড়ী মায়ের কাছে যাবে।তাই ও মাথায় ওড়না টেনে ওখানেই বসে রইলো।বসে রুমটায় চোখ বুলাতে লাগলো ও।রুমে খুব সাধারণ কিছু ফার্নিচার। তবে সবকিছু বেশ সাজানো গোছানো।ও অবাক হয়ে গেলো, রুমে একটা বুকসেলফ দেখে।আরো অবাক হলো,বুকসেলফ টা তিন গোয়েন্দা,, কিশোর পত্রিকা,,মাসুদ রানা,,ফেলুদা,,রবিন সন ক্রুসো,, বিভিন্ন ভূতের কাহিনী এসব দিয়ে ভরা।
ও বিষ্ময় ভরা দৃষ্টিতে এসব দেখছিলো।ভাবছিলো,,একটা গুন্ডা মাস্তানের রুমে বুক সেলফ,,তাও আবার এসব দিয়ে ভরা!
কিছুক্ষণ ওসব দেখার পরে বেলকনির দিকে চোখ গেলো ওর।আস্তে উঠে দাঁড়িয়ে বেলকনির দিকে পা বাড়ালো জিনাত।
বেশ চওড়া বেলকনিটা।বেলকনির সামনের দিকের দুই কোনায় দুটো করে ফুলের টব রাখা আছে।আবার বেলকনির সাম্নের অংশে কয়েকটা ছোট্ট ঝোলানো টব।একপাশে একটা ছোটো গোল কাচের টেবিল,,তার চারপাশে চারটা উচু টুল।আর অন্যপাশে একটা বেতের দোলনা ঝোলানো।
জিনাত বেলকনির গ্রিলের কাছে এসে বাইরে তাকালো।সাথে সাথে ওর চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।
বাড়ির চারপাশে অনেকটা খোলা জায়গা,,পুরো জায়গাটাই সমান কচি সবুজ ঘাসে ঢেকে আছে।বাড়ির একপাশে বিভিন্নধরনের ফুলের বাগান,আর অন্যপাশে সবজির বাগান।ফুলের বাগানের পাশেই একটা চওড়া আর লম্বা দোলনা লাগলো।
জিনাত মনে মনে ভাবলো,,, এতো সুন্দর পরিবেশ!!যে কোনো মানুষের মন ভালো করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আফসোস,,এই সৌন্দর্য পাপের টাকায় তৈরী।
হঠাৎ জিনাত দেখলো রায়ান একটা ঝাঝরি হাতে ফুলের বাগানে ঢুকলো।পরম যত্নে আস্তে আস্তে ফুলগাছগুলোয় পানি দিতে লাগলো ও।এবার জিনাত সবচেয়ে বেশি অবাক হলো,,একটা ক্রিমিনাল এভাবে ফুলের বাগানের যত্ন নিতে পারে,,তা ওর ধারনার বাইরে ছিলো।
--ভাবি,,আপনে উইঠা গেছেন,,তাইলে চলেন নাস্তা করতে।আম্মায় আপনের জন্যে বইসা আছে।(পেছন থেকে এসে বললো শিমু)
শিমুর কথায় জিনাত চমকে উঠে পেছনে তাকায়।কিছুক্ষণের জন্য চিন্তার জগতে ডুবে ছিলো ও।
--হ্যাঁ চলো,,,
--জে আসেন ভাবি।
জিনাত নাস্তার টেবিলে এসে দেখে রায়ানের মা অনেক রকমের খাবার সাজিয়ে বসে আছেন।রায়ানের মা জিনাতকে দেখেই, হাসিমুখে কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলেন,
- এসো জিনাত,বসো।কাল রাতে তো কিছুই খেলে না।এখন ভালো করে খেতেই হবে।নয়তো অসুস্থ হয়ে পরবে তো!!
রায়ানের মায়ের এই আহ্লাদ জিনাতের অসহ্য লাগছে।মনে মনে ভাবছে,ছেলেকে দিয়ে আমাকে তুলে আনিয়ে আবার আদিখ্যেতা দেখানো হচ্ছে।ইচ্ছে করছে, এই মহিলাকে কিছু উচিৎ কথা শুনিয়ে দেই।শুধু আমার বাবা মায়ের কথা ভেবেই কিছু বলতে পারছি না।নইলে যে অমানুষ, জানোয়ার ছেলে তার,,বাবার বয়সী লোকের গায়ে হাত তুলতেও তার বাধবে না।
-কি হলো বোসো,,
-হ্যা বসছি(মলিন মুখে বললো জিনাত)
এর মাঝে রায়ান এসেও বসলো নাস্তা করতে।ওকে দেখেই জিনাত মাথা নিচু করে রইলো।
রায়ানের মা জিনাতকে অনেক কিছু সাধাসাধি করতে লাগ্লেন।কিন্তু জিনাত প্লেটে তেমন কিছুই নিলো না।শুধু একটু সবজি আর একটা পরোটা নিয়ে আস্তে আস্তে মুখে দিতে লাগলো।
কোনো রকমে খাওয়া শেষ করে,আস্তে উঠে গেলো জিনাত।ও চলে যেতেই রায়ানের মা রায়ানকে বললেন,,,রায়ান,,তোর কাছ থেকে এটা আমি আশা করিনি বাবা।
-- কেন মা,, আমি আবার কি করলাম!
-জিনাতের যে অবস্থায় বিয়ে হয়েছে,তাতে যেকোনো মেয়েরই রাগারাগি,চেচামেচি করা স্বাভাবিক। তোর উচিৎ ছিলো মাথা ঠান্ডা রেখে ওর সাথে কথা বলা,,ওকে সময় দেয়া,,কিন্তু তুই কি করেছিস,,ওর সাথে রাগারাগি করে, ওকে আঘাত করেছিস!
রায়ান চিন্তায় পরে গেলো।তবে কি জিনাত ওর মাকে সব বলে দিলো,,
-কেনো মা,,জিনাত কি তোমাকে কিছু বলেছে?
-আমি তোর মা,,আমাকে কি সব বলে দিতে হবে।জিনাতের গালে পাচ আঙুলের আবছা দাগ,,ঠোটের কাটা জায়গাটা কি এমনি এমনি হয়েছে!
রায়ান মাথা নিচু করে রইলো।
-দেখ বাবা,,তুই আমার সব ইচ্ছেই পূরণ করছিস,তাই আমার ইচ্ছের জন্যে হলেও ওর সাথে সবসময় ভালো আচরণ করিস বাবা।ও খুব ভালো মেয়ে,, ওকে ভয় দেখিয়ে নয়,,,ভালোবাসা দিয়ে মানাতে হবে।আমি শুধু এই টুকুই চাই,,,আমি না থাকলেও যেনো,,,তুই অন্ধকারে তলিয়ে না যাস।কেউ একজন যেনো,,তোকে আদর দিয়ে শাসন দিয়ে,বেধে রাখে। আর আমি জানি, সেটার জন্য জিনাতই উপযুক্ত মেয়ে।ওর মূল্যায়ন করিস বাবা।
এই বলে তিনি ওখান থেকে চলে গেলেন।
আর রায়ান? ওখানে বসেই মায়ের কথাগুলো ভাবতে লাগলো,,আর নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগলো।রাগের মাথায় কতটা নিচে নেমে গেলো ও জিনাতের কাছে।(চলবে)

10/06/2020

#স্ত্রী
#পর্বঃ৩

রাত ২ টা! জিনাত বাসর ঘরে বসে আছে।রুমের দেয়াল আর খাট রজনীগন্ধা আর গোলাপ দিয়ে সাজানো।রজনীগন্ধা জিনাতের প্রিয় ফুল।কিন্তু আজ এই রজনীগন্ধার ঘ্রান ওর কাছে চরম বিরক্তিকর লাগছে।ওর শুধু মনে হচ্ছে,,আজ ওর সব শেষ হয়ে যাবে একটা গুন্ডার হাতে,,সেই সাথে ওর স্বপ্ন, ওর ভবিষ্যৎও চিরতরে গহীন অন্ধকারে তলিয়ে যাবে।এই কথা ভাবছে,,আর ওর চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পরছে।
হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ হলো।কিন্তু জিনাত ফিরেও দেখলো না।আগের মতো মাথা নিচু করে খাটের এককোনে পা নামিয়ে বসে আছে।রায়ান ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।দেখলো, কাদছে জিনাত।
রায়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না।জিনাতকে তখন ওই সাজে দেখার পর থেকেই রায়ানের মাঝে কেমন যেনো একটা ঘোর লাগা কাজ করছে।কেমন একটা অচেনা অনুভূতি হচ্ছে,,যা আগে কখনো হয় নি।তাই জিনাতকে জোর করে বিয়ে করলেও,,এখন ওর সাথে কথা বলতে একটু সংকোচ হচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ ও এভাবে দাড়িয়ে রইলো।তারপর আলমারি থেকে ট্রাউজার আর টিশার্ট বের করে চেঞ্জ করে নিলো।
রায়ান দেখলো তখনও জিনাত মাথা নিচু করে নিঃশব্দে কেদেই যাচ্ছে।একবারো ওরদিকে ফিরেও চাইছে না।
-এহেম এহেম,,,,তোমার বাবা, মাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।তারা সুস্থ শরীরেই আছেন।আমার ছেলেরা ওখান থেকে চলে এসেছে।(শান্ত গলায় বললো রায়ান)
এই কথা শুনেও জিনাত রায়ানের দিকে তাকালো না।আগেই মতোই চোখের পানি ফেলতে লাগলো।
রায়ানের মেয়েদের এই কান্নাকাটি বরাবরই ফ্যাচফ্যাচানি ন্যাকামি মনে হয়।মোটকথা মেয়ে মানেই ওর ঢংগী,ন্যাকা মনে হয়।তাই ও সবসময়ই মেয়েদের থেকে দূরেই থাকতো।তাই তখন থেকে জিনাতের এই কান্নাকাটি, এখন ওর চরম বিরক্তি লাগছে।
--সেই তখন থেকেই তো কেদেই চলেছো,,,এতো চোখের পানি ফেলে কি কিছু বদলাতে পারবে?তারচেয়ে যা হয়েছে, তা মেনে নাও,এতেই সবার মঙ্গল।
রায়ানের এই কথা শুনে জিনাতের চোখমুখ শক্ত হয়ে গেলো। ও চোখের পানি মুছে রাগি চোখে রায়ানের দিকে তাকালো।
--মেনে নেবো!!আপনার মতো একটা অসভ্য, চরিত্রহীন,দাগি আসামিকে আমি মেনে নেবো,তা আপনি ভাবলেন কি করে?
--এই এই,,খবরদার অসভ্য,চরিত্রহীন বলবে না,,,আমি যা না,,আমাকে কেউ তা বললে আমি মোটেও সহ্য করি না।
--কি বললেন,,আপনি অসভ্য চরিত্রহীন না!যেই লোক একটা মেয়েকে এভাবে জোর করে,তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে, তার চরিত্র ঠিক আছে আপনি বলতে চান?
চরম অসভ্য আপনি,,লম্পট, চরিত্রহীন!!
এই শুনে রায়ানের মাথা গরম হয়ে গেলো।ও খপ করে জিনাতের চুলের মুঠি ধরে আগুন ঝরা দৃষ্টি নিয়ে বললো,,
মুখ সামলে কথা বল।আমার মটকা গরম করবি না,,নয়তো কথা বলার জন্য আর মুখটাই থাকবে না।আজ পর্যন্ত কেউ এই রায়ানকে চরিত্রহীন বলতে পারে নি।আর তুই কিনা আজ এসে আজই আমায় কথা শুনাচ্ছিস!!
-কেউ বলতে পারেনি,,কারণ আপনি সবার মুখ বন্ধ করে রেখেছেন।কিন্তু আমার মুখ বন্ধ করতে পারবেন না।আমি বারবার বলবো,,আপনি একটা চরম খারাপ দুশ্চরিত্র মাস্তান!!!
ঠাসসসসসস,,,,
রায়ান কষে একটা থাপ্পড় লাগালো জিনাতের গালে।থাপ্পড়টা জিনাতের গালের নিচের দিকে এতো জোরে লাগলো যে,,সাথে সাথে ওর ঠোঁট ফেটে রক্ত পরতে লাগলো।রায়ান ওদিকে খেয়াল না করে একহাত দিয়ে জিনাতের গাল চেপে ধরে বললো,,,,
-যদি দুশ্চরিত্রই হতাম,তবে তোকে বিয়ে করতাম না,,তুই আর তোর বাপ যা কান্ড করেছিস,,যেভাবে আমার মাকে অপমান করেছিস,,তাতে তোকে রেপ করে ছেড়ে দিতাম। বুঝেছিস!!
এই বলে রায়ান ওকে ধাক্কামেরে ছেড়ে দিলো।
থাপ্পড় খেয়ে জিনাতের মাথা ভনভন করতে লাগলো।এতে ওর রাগ আরো বেরে গেলো।
-বর্বর, জানোয়ার,অমানুষ,,, লজ্জা করেনা আমাকে এভাবে জোর করে বিয়ে করে আবার বড়ো বড়ো কথা বলছিস তুই!!তুই আমার সব শেষ করে দিলি,,আমার ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে,আমার জীবনটা নষ্ট করে এখন নিজেকে চরিত্রবান বলিস,জানোয়ার!!(কান্না করতে করতে চিৎকার করে বললো জিনাত,,রাগে,দুঃখে কি বলছে ও নিজেই জানে না।)
জিনাতের মুখে এমন,, গালিগালাজ আর তুইতোকারি শুনে রায়ানের মাথায় যেনো আগুন ধরে গেলো।এবার ও ধাক্কা দিয়ে জিনাতকে বিছানায় ফেলে ওর দুহাত চেপে ধরে বললো,,, তোর তেজ এতো সহজে কমবে না,,,অসভ্য, চরিত্রহীন বলিছিলি না আমাকে?এখন দেখ অসভ্য কাকে বলে!
এতোক্ষণে জিনাতের হুস আসলো।
-আ,আ,আমার ভুল গিয়েছে,, ক্ষমা করে দিন আমাকে,, আমি আর এভাবে বলবো না,,প্লিজ ছেড়ে দিন আমাকে,,ছেড়ে দিন।কাদতে কাদতে বললো জিনাত।কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।রাগের মাথায় রায়ানের মাঝে যে আগুন লাগিয়েছে জিনাত,,সেই আগুনে তো তাকে পুড়তে হবেই।
১ ঘন্টা পরে,,
জিনাত এলোমেলো হয়ে বিছানায় পরে আছে অজ্ঞান হয়ে।
রায়ান বেলকনিতে দাড়িয়ে সিগারেটের ধোয়া উরাচ্ছে।ভীষণ বিরক্তি লাগছে ওর,,কার উপর তাও জানে না,,নিজের উপর নাকি জিনাতের উপর। কোনোদিন কোনো মেয়েদের ধারেকাছেও যায় নি,,রায়ান।আর সেই রায়ানকে এতো বাজে কথা শোনালো জিনাত।এই ভেবে এখনো জিনাতের উপর রাগ হচ্ছে ওর।আবার রাগের মাথায় এমন অমানুষের মতো কাজ করায়, নিজের উপরেও রাগ হচ্ছে রায়ানের।বেশকিছুক্ষণ পরে রুমে ফিরে,,
রায়ান দেখে জিনাত এখনো অজ্ঞান হয়ে আছে।ও জিনাতের কাছে গিয়ে বসে।করুন দৃষ্টিতে তাকায় ওর দিকে।ঠোটের বাম পাশটা কেটে ফুলে আছে।বাম গালে পাচ আঙুলের দাগ রক্তবর্ন ধারন করে আছে।
সুন্দর মুখখানায় যন্ত্রনার ছাপ স্পষ্ট ।
এতোদিন রায়ানের ওর কোনো কাজের জন্য অনুশোচনা হয়নি,,,কিন্তু আজ হচ্ছে।কেনো মাথা গরম করে ওর উপর টর্চার করলো।ওর আরো ধৈর্য ধরা উচিত ছিলো।
এসব ভাবতে ভাবতে রায়ান জিনাতকে ঠিকভাবে শুইয়ে দিলো।রুমে এসি চলছিল। জিনাতের হাত পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।তাই ও জিনাতের গায়ে চাদর টেনে দিলো।তারপর নিজে ওর পাশে শুয়ে পরলো।খুব ক্লান্ত লাগছে ওর।

সকাল ৬ টা,,,
পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।সকালের প্রথম রোদের আলো জানালার কাচ ভেদ করে জিনাতের মুখে এসে পরলো।আস্তে আস্তে চোখ খুললো ও।হঠাৎ চোখ খুলে বুঝতে পারলো না, ও কোথায় আছে,,কিন্তু পাশ ফিরতেই ঘুমন্ত রায়ানকে দেখেই ধরফর করে উঠে বসলো ও।রাতের কথা মনে হতেই জোরে কান্না শুরু করলো ও।ওর শুধুই মনে হচ্ছে ওর জীবন, স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ, পড়াশোনা সব শেষ হয়ে গেলো ,, সব,,,,
এখন ওর একমাত্র পরিচয়, ও এই শহরের সবচেয়ে বড়ো গুন্ডার স্ত্রী।যার কোনো সামাজিক মর্যাদা নেই।সমাজের চোখে সেও এখন ঘৃন্য।(চলবে)

10/06/2020

#স্ত্রী
#পর্বঃ২

গাড়ি এসে একটা ছোট্ট ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে থামলো।রায়ান জিনাতকে নিয়ে ঘরের দরজার সামনে এসে দাড়ালো।
--চোখের পানি মোছো,,যার জন্য তোমায় এতো কাঠখড় পুড়িয়ে বিয়ে করে আনলাম ,,তার সামনে কি চোখের পানি নিয়ে দাঁড়াবে।চোখ মোছো জলদি!! আর খবরদার!! যদি কোনো বেয়াদবি করেছো,,তবে আমিও তোমার বাবা মার সাথে আদব বজায় রাখতে পারবো না।বুঝতে পেরেছো???(নিচু গলায় শাসিয়ে বললো রায়ান)
জিনাত মাথা নাড়লো।
রায়ান কলিং বেল চাপ দিলো।একটা মেয়ে এসে দরজা খুলে দিলো।
--আরে ভাইজান,,,এইডা কেডা?আমাগো ভাবি নি!
-- হ্যাঁ, ঠিকি ধরেছিস শিমু।মা কোথায়?(ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো রায়ান)
-আম্মা তো শুইয়া পরছে,,তয় ঘুমায় নাই মনে হয়,,ইট্টু আগেই শুইছে।
-আচ্ছা,,তুই তোর ভাবির সাথে এখানে থাক,,আমি মাকে ডেকে আনছি।

রায়ান ওর মায়ের রুমে ঢুকে দেখলো,,কলিং বেলের আওয়াজে ওর মা আগেই উঠে পরেছেন।
-কি ব্যাপার? আজ সূর্য কোন দিয়ে উঠলো যে আমার ছেলে যে ১১ টার মধ্যেই বাসায় এসে পরলো !!
-তোমার জন্য একজনকে নিয়ে এসেছি মা।
-কাকে?
-চলো দেখবে, চলো!
রায়ান ওর মায়ের হাত ধরে বসার ঘরে নিয়ে এলো।জিনাত রায়ানের মাকে দেখে সালাম দিলো। জিনাতকে দেখে রায়ানের মা একটু চমকে গেলেন,,কিন্তু অবাক হলেন না।কারন উনি জানতেন,,তার ছেলে কেমন।উনি রায়ানের কান টেনে ধরে বললেন,,,,
আমি আগেই আন্দাজ করেছিলাম,,আমার বাদর টা এমনই কিছু একটা করবে।
-কেনো করবো না বলো মা,,,যে জিনিসটা তোমার পছন্দ হয়েছে,,সেটা আনতে গিয়ে সোজা আঙুলে কাজ না হলে,,তবে আঙুল বাকাতে তো হবেই।আমার মা কিছু চেয়েছে,,আর তা আমি এনে দিতে পারি নি,এমন কি কখনো হয়েছে?
-কিন্তু তুই ওকে এভাবে বিয়ে করে ঠিক করিস নি।ওর বাবা মাকে আরো একটু বোঝানোর চেষ্টা করতে পারতি।
--কি যে বলো না মা,,ওনারা হলেন মহা ভদ্রলোক!!! গুন্ডা মাস্তান কি আর তাদের মনে ধরে!!দেখলে না,,তোমাকে কিভাবে অপমান করলো।আর জানো,, আমাদের কাছে ভেবে দেখবার জন্য সময় চেয়েছিলো,,অথচ আজ দিব্যি মেয়েকে দূরে পাঠিয়ে দেবার ফন্দি আটছিলো!কতোবড় ধোকাবাজ!!
-এভাবে বলেনা বাবা,,ওনারা তোমার মুরুব্বি না,,,
জিনাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মা ছেলের দিকে।এ কেমন মা,,ছেলে গুন্ডামী, মাস্তানি করে বেড়ায়,, আর উনি তা জেনেও কিছু বলেন না!আবার ছেলে এতোবড় একটা অপরাধ করে ঘরে এসেছে,,তারপরও উনি এতো স্বাভাবিক কিভাবে??
রায়ানের মা, জিনাতের দিকে এগিয়ে গেলেন,,জিনাতের মাথায় হাত রেখে বললেন,,আহারে,আমার মিষ্টি মেয়েটা কেদেকেটে চোখমুখের কি হাল করেছে!!মুখটা শুকিয়ে গিয়েছে।মনে হয় অনেকক্ষণ পেটে দানা পানি কিছুই পরেনি।শিমু তুই টেবিলে খাবার দে।আর জিনাত,তুমি আমার সাথে এসো মা,,,,
জিনাত অবাক হয়েই যাচ্ছে,,বার বারই শুধু ভাবছে, এ কেমন মা?প্রচন্ড রাগ হচ্ছে ওর রায়ানের মায়ের উপর।ভাবছে,, নিশ্চয়ই রায়ানের মাই ওকে এইকাজ কাজ করতে বলেছে,,শুধুমাত্র এই মহিলার জেদের জন্য আজ আমার জীবনটা অন্ধকারে ডুবে গেলো।
রায়ানের মা জিনাতকে তার রুমে নিয়ে গেলেন।উনি জিনাতকে বোরখা খুলে হাতমুখ ধুয়ে নিতে বলে, রুমের বাইরে গেলেন।
জিনাতের খুব বিরক্ত লাগছে। ও ওখানেই দাড়িয়ে রইলো।রাগে গজগজ করছে ও,,কিন্তু কিছু বলতেও পারছে না,,কারণ ওর বাবা মা রায়ানের হাতে বন্দি।
কিছুক্ষণ পরে রায়ানের মা এসে জিনাতকে ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন,,,,,
-কি হলো মা,,তুমি ওখানেই দাঁড়িয়ে আছো?ও নতুন এসেছো বলে সংকোচ হচ্ছে?সংকোচের কি আছে? এই ঘর বাড়ি সংসার সবই তো আজ থেকে তোমার।
জিনাত মনে মনে ভাবলো,,ইস!! খুব আসছে এই ঘর বাড়ি সংসার আমাকে দিতে! এই পাপের টাকার সংসার কে চায়? একটা সুযোগ পাই,,,আমার জীবনটা নষ্ট করার শোধ,,আমি আপনাদের মা,ছেলে দুজনের উপরেই তুলবো।
রায়ানের মায়ের ডাকে জিনাতের ধ্যান ভাঙলো।
-কি হলো জিনাত, যাও। বোরখা খুলে হাতমুখ ধুয়ে নাও।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও জিনাত হাতমুখ ধুতে চলে গেলো।
ও বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখে রায়ানের মা একটা লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ি আর বেশকিছু গয়না বের করে রেখেছেন।
জিনাতকে দেখেই তিনি বললেন,
-এসো মা,এসো।এখন এগুলো ঝটপট পড়ে,, একটু পরিপাটি হয়ে নাও দেখি,,,তোমাকে রাস্তায় দেখার পর থেকেই আমার শখ,,তোমাকে এই লাল টুকটুকে বেনারসিতে দেখার।তাইতো পরের দিনি এই শাড়ি গয়নাগুলো নিয়ে, তোমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম।কিন্তু তারা তো বুঝতেই চাইলো না
আমার কোনো কথা।যাক,সেসব কথা।অবশেষে তুমি আমার ঘর আলো করে এসেছো,,এই অনেক!!আমি শিমুকে পাঠিয়ে দিচ্ছি,, ও তোমাকে সাহায্য করবে।

এতোক্ষন যাও সহ্য করেছে জিনাত,,এবার ওর মেজাজ চরমে পৌছালো।
-দেখুন,,আপনার জেদ পূরন করতে গিয়ে আপনার গুনধর ছেলে এইরকম বিশ্রীভাবে আমাকে বিয়ে করেছে।আমি শুধুমাত্র আমার বাবা মায়ের মুখ চেয়ে এতক্ষণ সব সহ্য করেছি।কিন্তু এবার আমাকে ছাড়ুন।এই রাত-বিরেতে আপনার শখ পূরন করতে আমি সঙ সাজতে পারবো না।
-আচ্ছা,,, তাই নাকি সঙ সাজতে পারবে না,,,তো ঠিক আছে,,মা তো আর তোমাকে সঙ সাজতে বলেনি,,,বউ সাজতে বলেছে!!! তাই ঝটপট বউ সেজে ফেলো,,যদি ভালো চাও!!ও না না,,কথাটা ঠিক তা না,,যদি তোমার বাবা মায়ের ভালো চাও!!!(দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বললো রায়ান)
- উহ,,রায়ান! এভাবে মেয়েটাকে ভয় দেখাচ্ছিস কেনো।আর তুই এখানে কি করছিস?তোকে না বললাম তৈরী হয়ে নিতে।যা এক্ষুনি যা!
-আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিল মা,,যে এই মেয়ে তোমার সাথে বেয়াদবি করবে।তাই দেখতে এসেছিলাম।আর আমার ধারণাই সত্যি হলো।
- কিচ্ছু বেয়াদবি করেনি ও।যেভাবে বিয়েটা হয়েছে,,তাতে ওর এই আচরণ স্বাভাবিক। তুই যা,,ও ঠিক তৈরী হয়ে নেবে।
রায়ান চলে গেলো।রায়ানের মা জিনাতকে তৈরী হতে বলে শিমুকে ডাকতে গেলেন।
ওনারা চলে যেতেই জিনাত বিছানার উপর বসে ডুকরে কেঁদে উঠলো। ভাবলো,,বিয়ে একটা মেয়ের কতই না স্বপ্ন থাকে।আর আমার বিয়েটা কিনা এভাবে হলো?আজ আমাকে বউ সাজতে হবে,,,তাও কিনার একটা ক্রিমিনালের জন্য? এই ছিলো আমার ভাগ্যে?শেষ পর্যন্ত আমার পরিচয়,, আমি একটা দাগী আসামির স্ত্রী?
এর মধ্যেই শিমু এসে বললো,,ভাবি আসেন,আপনারে শাড়ি পড়াইয়া দেই।আমি কিন্তু খুব সুন্দার কইরা শাড়ি পড়াইতে পারি।মেলা পদের খোপা বানতেও জানি।তয় ভাবি,,আপ্নে মাশা আল্লাহ যা সুন্দার,,আপনার মুখে তো সোনো, পাউডার,লিবিস্টিক কিছুই লাগবো না।শাড়িডা পড়াইলেই,পাক্কা লাল টুকটুইক্কা বউ হইয়া যাইবেন। আসেন ভাবি,,,আম্মায় তড়তড়ি করতে কইছে,,মেলা রাইত হইয়া গেছে তো,,
ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও,, জিনাতকে উঠে দাড়াতে হলো,,বউ সাজার জন্য।

শিমু জিনাতকে সাজাতে শুরু করলো ।খুব সুন্দর করে শাড়ি পরালো,,সুন্দর করে খোপা বাধলো।মুখের সাজগোজ বলতে শুধু একটু পাউডার, লিপস্টিক আর কাজল।লাল বেনারসি আর হালকা গয়নায়,জিনাতকে হুরপরীর মতো সুন্দর লাগছে।কাচা সোনার মতো গায়ের রঙে লাল শাড়িটা যেনো ঝলমল করছে।
এর মাঝেই রায়ানের মা রুমে ঢুকলেন।ঢুকেই তার চোখদুটো বড়বড় হয়ে গেলো।
--মাশা আল্লাহ,, মাশা আল্লাহ!! এ কাকে দেখছি আমি,,আমার মিষটি মেয়েটা এতো সুন্দর!! আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া, এমন একটা হুরপরী আমার রায়ানের বউ করে পাঠানোর জন্য।
এই কথায় জিনাতের ভালো খারাপ কোনো অনুভূতিই হচ্ছে না।ও চুপচাপ বসে আছে,মলিন মুখে।ওর শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছে,,যে আজ থেকে ও একটা গুন্ডার স্ত্রী!!
রায়ানের মা জিনাতকে নিয়ে বসার ঘরে এলেন।রায়ান ওর মায়ের কথায় আগেই সেভ করে, হাতমুখ ধুয়ে, নতুন ধবধবে সাদা পাজামা পাঞ্জাবী পরে ওখানে বসেছিলো।ও মাথা নিচু করে মোবাইল চাপছিলো।পায়ের শব্দ পেয়ে মাথা তুলতেই ওর চোখ আটকে যায়।,,এ কাকে দেখছে ও!মনে হচ্ছে আকাশ থেকে কোনো লাল পরী নেমে এসেছে।জীবনে এই প্রথম কোনো মেয়েকে দেখে এতোটা মুগ্ধ হলো রায়ান।জিনাতকে এর আগে সবসময় কালো বোরখা হিজাবেই দেখেছে।আর মুখে কখনো কোনো সাজগোজ করেনি জিনাত।তাই ওর এই রূপ রায়ানের অচেনা।সত্যি বলতে রায়ান কখনো জিনাতকে ওভাবে খেয়ালই করেনি।শুধুমাত্র মায়ের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়েই এতোকিছু করেছে ও। কিন্তু আজ, এখন যেন ও চোখই ফেরাতে পারছে না,,জিনাতের থেকে।

ছেলেকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে,,রায়ানের মা মুচকি হাসলেন।
--এহেম,এহেম!!বাবা আমার,,একটু সরে বসো,
মায়ের আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো রায়ানের।জীবনে এই প্রথম বেশ লজ্জা লাগছে মার সামনে।তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে পাশে সরে বসলো।
জিনাত মাথা নিচু করেই আছে,,কারো দিকেই তাকাচ্ছে না।
রায়ানের মা রায়ান আর জিনাতকে পাশাপাশি বসিয়ে মিষ্টিমুখ করালেন।ফারদিন, সজীব,সুমন,মনির (রায়ানের চ্যালাপেলা) ওরা রায়ান আর জিনাতের ছবি তুলতে লাগলো।
-ভাই,,আরেকটু ক্লোজ হও না,,,
-আরে ভাই,,ভাবির কাধে হাত রাখো না,,নয়তো কি কাপল পিক হয় নাকি।
-খালাম্মা,আপনি দুইজনের কাধে হাত দেন না,,,,
জিনাত বিরক্তির চরম সীমায় পৌছে গেলো এদের কার্যকলাপে।সবচেয়ে বিরক্ত তো তখন হলো,,যখন রায়ান ছবি তোলার জন্য ওর কাধে হাত দিয়েছিলো,,সারা শরীর যেনো জিনাতের রি রি করে উঠেছিলো!অনেক কষ্টে নিজেকে সামলায় ও।
মিষ্টিমুখ আর ছবি তোলাতুলি শেষে সবাই খেতে বসলো।
জিনাত কিছুই খেতে চাইছে না।শেষে রায়ানের মায়ের জোড়াজুড়িতে দুই লোকমা খাবার খেতেই হলো।
খাবার শেষে, শিমু এসে জিনাতের কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললো,,ভাবি চলেন,,আপনারে বাসর ঘরে লইয়া যাই।জানেন,,ফারদিন ভাইরা ইট্টুখানি সময়ের মইধ্যে কি সুন্দার কইরা ভাইজানের ঘরখান সাজাইছে,,,চলেন,আপনেরে লইয়া যাই,,,,
শিমুর কথা শুনে জিনাতের বুকটা ধ্বক করে উঠলো। এতোক্ষন তো এটা ওর মাথাতেই আসেনি,,,,শেষমেষ,,ওই গুন্ডাটার সাথে বাসর!!!(চলবে)

10/06/2020

বাড়ির পেছনের বাগানটায় ঝোপের আড়ালে বোরখা পরে, ব্যাগ হাতে ঘাপটি মেরে বসে আছে জিনাত।বাড়ির মধ্যে থেকে চিৎকার, চেচামেচির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।ভয়ে থরথর করে কাপছে সে।বার বার নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে সে,,কেনো ও ওর বাবার কথা আগে শুনলো না! এখন তো পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, ও চাইলেও আর সহজে পালাতে পারবে না।নিজের গালে নিজেরই এখন চড় মারতে মনে চাচ্ছে ওর।
হঠাৎ ভাবলো,,,নাহ,এভাবে বসে থাকালে কোনো সমাধান হবে না,,,আমাকে এখান থেকে বের হতেই হবে।নয়তো বাস ছেড়ে দিলে,,দিনের আলোয় আমি পালাতে পারবো না।আমি কিছুতেই আমার জীবনটা এভাবে নষ্ট হতে দেবো না।
এই ভেবে ও আস্তে উঠে দাড়ালো।পা টিপে টিপে নিঃশব্দে এগোতে লাগলো।বড়ো আম গাছটার পেছনে দাঁড়িয়ে উকি দিয়ে দেখলো,,বাড়ির গেটের দিকটা ফাঁকা আছে।নাহ,,আর দেরী করা যাবে না,এই সুযোগ! এইভেবে ও একটা দৌড় দিলো গেটের দিকে।
এক দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে বড়ো রাস্তায় এসে দাড়ালো জিনাত।প্রচন্ড হাপাতে লাগলো ও।হাত থাকা ঘড়িটার দিকে তাকালো সে।৯ টা বাজে।দশটায় যশোরের বাস ধরতে হবে তার।তাই তাড়াতাড়ি একটা সি এন জি ডেকে উঠে বসলো ও।
সি এন জি তে উঠে ব্যাগে থাকা ঠান্ডা পানির বোতলটা বের করে,ঢকঢক করে অনেকটা পানি খেয়ে চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো সে।এই অবস্থায় মাথা ঠান্ডা রাখাটা খুব জরুরী।
কিন্তু চোখ মেলেই চিৎকার করে উঠলো জিনাত,,, একি আপনাকে আমি বাস স্ট্যান্ডে যেতে বলেছি,,,আর আপনি অন্য রাস্তায় যাচ্ছেন কেনো?
-- অন্য রাস্তা না,,,সঠিক রাস্তাতেই যাচ্ছি!! (একটা রাশভারি কন্ঠে বললো ড্রাইভার)
--মানে,কি বলছেন আপনি?গাড়ি থামান, থামান বলছি!!
গাড়িটা থেমে গেলো।ড্রাইভার ঘাড় ঘুরিয়ে জিনাতের দিকে তাকাতেই, জিনাতের চোখ কপালে উঠে গেলো!!
-আ,আ,,আপনি (ভয়ে ভয়ে বললো জিনাত)
--ক্যানো,,অন্যকারো আসার কথা ছিলো নাকি?তোর আর তোর বাপের এতো সাহস!!যে এই রায়ানকে তোরা বোকা বানাতে চাস,,যার ভয়ে এই শহর কাপে!।তোর বাপ তো আমার হবু শ্বশুর,, তাই তাকে কিছু করিনি,,কিন্তু তুই এর ফলভোগ করবি।যদি ভালো চাস,,চুপচাপ বসে থাক।
জিনাত কি করবে বুঝতে পারছে না,, বাঘের হাত থেকে বাচতে গিয়ে,, সরাসরি বাঘের গুহায় এসেই পরলো সে।
সাতপাঁচ না ভেবে জিনাত গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে দৌড় দিলো,,কিন্তু বেশিদূর যেতে পারলো না,এর মাঝেই রায়ান দৌড়ে এসে ওকে ধরে ফেললো। হিজাবের উপর দিয়েই ওর চুলের মুঠি চেপে ধরে হুংকার দিয়ে বললো,,,,এখনো এতো সাহস দেখাস তুই,,কি ভেবেছিস আমাকে ,, রাস্তার মোড়ের কোনো পাতি মাস্তান আমি, যে আমার থেকে পালানো এতোই সোজা হবে,,,এই শহরের বাপ আমি,,আমি না চাইলে এই শহর থেকে পালানোর ক্ষমতা কারোর নেই।
চল আমার সাথে,,,,,

রায়ান জিনাতের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো,,
--প্লিজ ছাড়ুন আমাকে,,,যাবো না আমি,,ছাড়ুন,,,ছাড়ুন বলছি,, (কাদতে কাদতে হাত ঝাকাতে লাগলো জিনাত)

ওদের সামনে একটা জীপ এসে থামলো।জীপে রায়ানের কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গ ছিলো।রায়ান জোর করে জিনাতকে গাড়িতে উঠিয়ে বসালো।গাড়িতে উঠে জিনাত সমানে চিৎকার চেচামেচি আর হাত পা ছুড়তে লাগলো।তাই রায়ান,,দড়ি দিয়ে জিনাতের হাত পা বেধে, মুখে টেপ লাগিয়ে দিলো।
এবার আর জিনাতের কিছুই করার থাকলো না।বসে বসে শুধু চোখের পানি ফেলতে লাগলো।
গাড়ি চলতে শুরু করলো,,,,
- ভাই,কোনদিকে যাবো?(গাড়ি চালাতে থাকা ছেলেটা জিজ্ঞেস করলো)
-সোজা কাজি অফিস!(হাসিমুখে বললো রায়ান)
কাজি অফিসের কথা শুনেই জিনাতের চোখদুটো বড়বড় হয়ে গেলো। ও আকুতি ভরা দৃষ্টি নিয়ে রায়ানের দিকে তাকালো,,মাথা নাড়িয়ে না,না করতে লাগলো।ওর চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছিলো।
কিন্তু রায়ান এগুলো আমলে নিলো না।
-ভাই,,তোমার বিয়ে এভাবে হবে?কত্ত স্বপ্ন ছিলো আমাদের তোমার বিয়ে নিয়ে,,আমরা অনেক বড়ো করে অনুষ্ঠান করবো,নাচগান হবে,বিশাল ভোজ হবে,,,,এখন তো দেখি কিছুই হবে না(রায়ানের সবচেয়ে ক্লোজ চ্যালা ফারদিন)
--এহ,,তাইলে আর কেম্নে হবে,,গুন্ডামাস্তানের সাথে কি আর ভদ্রলোকে মেয়ে বিয়ে দিতে চায়,,গুন্ডামাস্তানরা জোর করেই বিয়ে করে,,আর জোর করে করা বিয়ের কোনো অনুষ্ঠান হয় না বুঝলি!!
- তবুও ভাই,,ভাললাগে না!!
-আচ্ছা যা,, তোদের ভাবি টাকা দিয়ে দিবো নে,,তোরা নিজেদের মতো ফূর্তি করিস।
এই কথা শোনার সাথে সাথে জীপে থাকা সবগুলো ছেলে একসাথে হইহই করে উঠলো।
গাড়ি এসে কাজি অফিসের সামনে থামলো।রায়ান জিনাতকে হাত পা খুলে দিয়ে টানতে টানতে কাজি অফিসের ভিতরে নিয়ে গেলো।
বিয়ের যাবতীয় কাগজ পত্র আগেই রেডি করে রাখতে বলা হয়েছিলো।তাই ওরা আসার সাথে সাথেই কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।
--আমি এই বিয়ে করবোনা,,কিছুতেই না,,এভাবে জোর করে কি বিয়ে হয় নাকি?কাজি সাহেব প্লিজ এসব বন্ধ করুন।আমি রাজি না এই বিয়েতে,,আমার পরিবারের কেউ রাজি না।(কাদতে কাদতে বলছে জিনাত)
এবার রায়ানের মেজাজ চড়ে গেলো।ও একহাত দিয়ে জিনাতের দু গাল চেপে ধরে বললো,,,অনেক বকবক করেছি তুই,,আর না,!!আর একটা বাজে কথা বললে,,তোর বাপ মাকে আর জিন্দা দেখতে পাবি না,,বুঝলি,,
-মানে,,কি করেছেন আপনি তাদের সাথে?
-তেমন কিছুই করিনি,, শুধু বেধে রেখেছি,,তুই এমন তেরিবেরি করলে অনেক কিছুই করতে হবে।আর দ্যাখ,,চাইলেও তোরা কিছু করতে পারবি না,,আর পালাতেও পারবি না।তাই যা হচ্ছে চুপচাপ মেনে নে।আমাকে বেশি রাগাস না,,,আমার রাগ কিন্তু বড্ড ভয়ানক!!
জিনাত মাথা নিচু করে চুপচাপ চোখের পানি ফেলছে।এই মুহূর্তে নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে তার।এমন একটা দাগী আসামিকে বিয়ে করার চাইতে মরে যাওয়াটাও ভালো মনে হচ্ছে।কিন্তু ওর বাবা মায়ের জন্য,,, রায়ানের কথা মানা ছাড়া জিনাতের আর কোনো উপায় নেই।

কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন। কবুল বলার সময়, জিনাতের বুকটা যেনো ফেটে যাচ্ছিলো।চোখের সামনে নিজের স্বপ্নে দেখা ভবিষ্যৎ টা ভেসে উঠলো।কতো স্বপ্ন ছিলো ওর,,ভালোভাবে পড়াশোনা করে প্রশাসনিক পর্যায়ে কাজ করার।ওর বাবার খুব আশা মেয়েকে প্রশাসনিক পর্যায়ে দেখার।কারন তার কোনো ছেলে নেই।জিনাত হবার পরে, ওর মা,চিরদিনের মতো মা হবার ক্ষমতা হারায়।অনেকেই তাকে বলেছিলো,,আবার বিয়ে করার জন্য, কারণ মেয়ে দিয়ে ভবিষ্যৎ হয় না।কিন্তু জিনাতের বাবা বলেছিলো,,আমার মেয়ে একদিন এমন পর্যায়ে যাবে যে, তোমাদের ধারণা ভুল প্রমাণ করবে। তাই জিনাত বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে সেই ভাবেই নিজেকে তৈরী করছিলো ।ছোটো বেলা থেকেই খুব মেধাবী ছাত্রী জিনাত।বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্স এর প্রথম বর্ষে পড়ছে ও।কিন্তু এক ঝটকায় সব শেষ হয়ে গেলো।ওর পড়াশোনা, ওর স্বপ্ন, ওর ভবিষ্যৎ সব যেন অন্ধকারে তলিয়ে গেল।

রায়ান জিনাতের হাত ধরে টান দিতেই জিনাতের ভাবনার ছেদ পরলো।
-চলো,, আমাদের যেতে হবে(রায়ান)
জিনাত আর কিছুই বললো না,,চুপচাপ রায়ানের সাথে গিয়ে গাড়িতে উঠলো।

চলবে?
#গল্পঃস্ত্রী
#পর্বঃ১
#চলবে

26/04/2020

সাবান দিয়ে হাত ধুবেন, তারপর ইনবক্সে নক দিবেন 😷

❤
26/04/2020

কাউকে অনুভব করার জন্য যদি তাকে স্পর্শ করার প্রয়োজন পড়ে, তবে হতে পারে সেখানে ভালোবাসা নেই। জীবনে কারো উপস্থিতি বিশ্বাস করার জন্য যদি তাকে স্ব-চোখে দেখার প্রয়োজন পড়ে, হতে পারে সেখানে বিশ্বাস নেই। ❌✋

স্পর্শহীন অনুভব পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুভব। অদেখা বিশ্বাস পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিশ্বাস।যে বিশ্বাস,যে অনুভব তুমি তোমার সৃষ্টিকর্তাকে করো।ঠিক সেই রকম পবিত্র অনুভব যদি কোনো মানুষের প্রতি চলে আসে,তবে বুঝে নিও ওটা ভালোবাসা। ❤❤

যাকে অনুভব করতে ছুঁয়ে দেখতে হবে না,যার উপস্থিতি টের পেতে চোখ মেলে দেখতে হবে না। দুরত্বটা হাজার হাজার কিলোমিটারের হলেও, মন দুটো কখনো আলাদা হবে না 💕
❤❤

24/04/2019

😂

22/04/2019

Address

Chittagong

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when মজা দিমু posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Share on Facebook Share on Twitter Share on LinkedIn
Share on Pinterest Share on Reddit Share via Email
Share on WhatsApp Share on Instagram Share on Telegram