29/10/2025
চেম্বারে একজন মধ্যবয়সী ডায়াবেটিক মহিলা এলেন চোয়ালের নিচে ফোলাভাব নিয়ে। কথা বলার সময় কিছুটা কষ্ট হচ্ছিল, গিলতেও সমস্যা হচ্ছিল। জ্বর ও প্রচণ্ড ব্যথার কারণে মুখ খোলা যাচ্ছিল না। রোগী জানালেন, কয়েক দিন আগে নিচের একটি দাঁতে ব্যথা হয়েছিল, কিন্তু গুরুত্ব দেননি।
রোগীকে পরীক্ষা করে দেখা গেল তার জিহ্বার নিচের অংশ ফুলে আছে, চোয়ালের তলদেশ শক্ত, ফোলা ও ব্যথাযুক্ত। মুখের ভেতর পরীক্ষা করে দেখা গেল, নিচের একটা দাত নড়ছে, ব্যাথাযুক্ত ও জিহ্বার নিচে পুজ জমে আছে।
তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে অসুবিধা হলনা— এটি লুডউইগ'স এনজাইনা, চোয়ালের তলদেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এক ধরনের #বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ।
লুডউইগ'স এনজাইনা শব্দটি এসেছে, লুডউইগ নামে একজন বিজ্ঞানীর নাম থেকে, আর এনজাইনা শব্দের অর্থ হল "শ্বাসরোধ হয়ে" আসা।
⚠️ লক্ষণসমূহ
লুডউইগ এনজাইনার লক্ষণগুলো হঠাৎ দেখা দিতে পারে এবং দ্রুত খারাপের দিকে যেতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—
😮 শ্বাস নিতে কষ্ট
🥶 জ্বর বা ঠান্ডা লাগা
🤕 চোয়াল ও ঘাড়ে ব্যথা বা ফোলাভাব
🗣️ কথা বলতে অসুবিধা বা অস্পষ্ট উচ্চারণ
👅 জিহ্বার নিচে ফুলে যাওয়া বা সামনে বেরিয়ে আসা
😖 গিলতে অসুবিধা
💧 লালা পড়া
🦷 দাঁতে বা মাড়িতে তীব্র ব্যথা
👉 এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
⚠️ রোগটি কেন এত বিপজ্জনক
লুডউইগ এনজাইনা সাধারণ দাঁতের সংক্রমণ থেকে শুরু হলেও এটি দ্রুত জিহ্বা ও গলার টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে। ফোলাভাব এত দ্রুত বাড়ে যে রোগীর শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে যেতে পারে, ফলে শ্বাস নিতে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়।
অর্থাৎ, এটি কেবল মুখের সংক্রমণ নয় — এটি একপ্রকার জীবন-হুমকিপূর্ণ জরুরি অবস্থা।
🧠 চিকিৎসার ধাপ
রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে প্রথমেই তার শ্বাসনালী খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয় এবং ইনজেকশন অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। ফোলাভাব কমাতে অনেক সময় কর্টিকোস্টেরয়েড প্রয়োগ করা হয়।
পরে সংক্রমিত অংশে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুঁজ বের করে দেওয়া হয় এবং নিচের সংক্রামিত দাঁতটি তুলে ফেলা হয়।
সৌভাগ্যক্রমে, দ্রুত চিকিৎসার ফলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।
💬 কেন এমন হয়
লুডউইগ এনজাইনা সাধারণত নিচের মোলার দাঁতের ফোঁড়া বা সংক্রমণ থেকে শুরু হয়।
তবে মুখে আঘাত, আক্কেল দাঁতের চারপাশে প্রদাহ (Pericoronitis) বা মুখের অস্ত্রোপচারের পর সংক্রমণ থেকেও এটি হতে পারে।
যেসব ব্যাকটেরিয়া এ রোগ সৃষ্টি করে তারা হলো স্ট্রেপ্টোকক্কাস, স্ট্যাফাইলোকক্কাস এবং ব্যাকটেরয়েডস প্রজাতির জীবাণু।
🧍♂️ যাদের ঝুঁকি বেশি
🔹 ডায়াবেটিস রোগী
🔹 দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা
🔹 অ্যালকোহল আসক্তি বা অপুষ্টি
🔹 মুখে বা দাঁতে নিয়মিত যত্নের অভাব
🧫 চিকিৎসা না নিলে কী হতে পারে
চিকিৎসা বিলম্বিত হলে লুডউইগ এনজাইনা থেকে হতে পারে—
💨 শ্বাসরোধ (Airway obstruction)
🫁 ফুসফুসে সংক্রমণ (Aspiration pneumonia)
🩸 রক্তে সংক্রমণ বা সেপসিস
🫀 সেপটিক শক (জীবন-হুমকিপূর্ণ অবস্থা)
🪥 প্রতিরোধই শ্রেষ্ঠ উপায়
এই রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো—
🦷 দাঁতের নিয়মিত যত্ন নেওয়া
👨⚕️ সংক্রমিত দাঁতের চিকিৎসা দেরি না করা
🪞 প্রতি ছয় মাস অন্তর দাঁতের পরীক্ষা
🚫 মুখের আঘাত বা অস্ত্রোপচারের পর পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
🩻 ডাক্তারের পরামর্শ
যদি আপনার—
চোয়ালের নিচে ফোলাভাব হয়,
জিহ্বার নিচে ফুলে যায়,
গিলতে বা শ্বাস নিতে কষ্ট হয় —
তাহলে দেরি না করে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে যান।
প্রাথমিক চিকিৎসাই প্রাণ বাঁচাতে পারে।
👨⚕️ শেষ কথা
আমি প্রায়ই দেখি, অনেক রোগী দাঁতের ব্যথা বা ফোঁড়াকে গুরুত্ব দেন না। কিন্তু ছোট একটি দাঁতের সংক্রমণ কখন যে বড় বিপদে রূপ নেয়, তা বুঝতেই দেরি হয়।
লুডউইগ এনজাইনা সেই বিপদেরই একটি নাম।
তাই মুখে সংক্রমণ বা ফোলাভাবকে হালকাভাবে না নিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।