06/07/2025
শুভেচ্ছা বাণী
প্রিয় দেশবাসী, শুভানুধ্যায়ী ও কল্যাণকামী সকল ভাই ও বোনেরা।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
আজ আমাদের জন্য এক আনন্দঘন, স্মরণীয় ও কৃতজ্ঞতাপূর্ণ শুকরিয়া আদায়ের দিন। আল্লাহ্ পাকের অশেষ রহমত এবং আপনাদের সকলের দোয়া ও সহযোগিতায় আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতাল তার গৌরবময় ৫ বছর পূর্ণ করল,আলহামদুলিল্লাহ্। এই পরিপূর্ণতা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের সময়ের হিসাব নয়, বরং এটি অসংখ্য অগণিত মানুষের আস্থা, ভালোবাসা ও ভরসার ফসল।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও মোবারকবাদ জানাই সমাজহিতৈষী, মহিয়সী নারী মিসেস্ নাসরীন মিল্কী'র প্রতি, যিনি মহান আল্লাহ্ তা'য়ালার বিশেষ অনুগ্রহে মানবতার সেবায়, হাসপাতালের যাবতীয় উপকরণাদি সহ ৬ তলা বিশিষ্ট স্থাপনাটি অত্র প্রতিষ্ঠানকে দান করেছেন।
আরও কৃতজ্ঞতা জানাই হালিশহরবাসীর প্রতি, যাঁরা আমাদের এই প্রতিষ্ঠানকে শুরু থেকে অগাধ বিশ্বাস ও ভালোবাসায় আগলে রেখেছেন। আপনাদের সহযোগিতা, দোয়া ও সমর্থন ছাড়া এ পথচলা সহজ ছিল না। হালিশহরের মানুষ আমাদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। আপনারাই আমাদের আত্মিক প্রেরণা।
হাসপাতাল মানে শুধু একটি বিল্ডিং নয়। এটি যেন একটি আশ্রয়, একটি নির্ভরতার ঠিকানা। আমরা শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি, সাধারণ মানুষের চিকিৎসা যেন ব্যয়বহুল না হয়ে, নাগরিক অধিকার হিসেবে পৌঁছায় সবার কাছে। আলহামদুলিল্লাহ্ আমাদের এখানে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী সূলভ মূল্যে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন।
এই সফল যাত্রার পেছনে ছিলেন আমাদের চিকিৎসকবৃন্দ, নার্স, স্টাফ, স্বেচ্ছাসেবক, দাতা ও আপনাদের মতো শুভানুধ্যায়ীরা। আমরা তাদের প্রতি জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আপনাদের ভালোবাসা ও দোয়া নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, আধুনিক যন্ত্রপাতি, ইমারজেন্সি সেবা, প্যাথলজি, দন্ত বিভাগ, প্রসূতি বিভাগ—সব কিছুই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে এই হাসপাতালে। ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, রক্তদান কর্মসূচি, স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মশালা—নিয়মিতভাবে আমরা আয়োজন করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। ইনশাআল্লাহ্ ক্রমান্বয়ে দেশের অন্যতম বৃহত্তর সেবাকেন্দ্রে পরিণত হবে আপনাদের এই প্রতিষ্ঠান।
আপনাদের অবশ্য মনে আছে, করোনাভাইরাসের মহাদুর্যোগের ভয়াবহ দিনগুলোতে যখন মানুষ চিকিৎসার জন্য দিশেহারা, যখন মানুষ চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরেছে, করোনা আক্রান্ত রোগী অনেকে গ্রহণ করছেন না, অনেকে হাসপাতালের সামনে মারা গেছেন, ঠিক তখন আমরা নির্ভয়ে এগিয়ে এসেছি। অসংখ্য রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা, অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে আমরা চেষ্টা করেছি মানবিক দায়িত্ব পালনের। আমাদের এ হাসপাতালকে কোভিড বিশেষায়িত হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়েছিল।
যখন মৃতদেহ কেউ নিতে চায়নি, আত্মীয় স্বজনরাও ভয়ে দূরে সরে গেছেন, তখন আল মানাহিল ফাউন্ডেশন বিশেষ টিম গঠন করে সারা দেশে ফ্রি কাফন-দাফনের দায়িত্ব নিয়েছে। শত শত করোনা আক্রান্ত লাশ দাফান কাফন কাজ সম্পন্ন করেছে আমাদের "টিম মানাহিল"। এই কার্যক্রম এখনো চলমান। এটি শুধু একটি কাজ নয়—বরং এটি আমাদের ঈমানি দায়িত্ব ও মানবিকতার বহিঃপ্রকাশ।
আমাদের হাসপাতাল তখন সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে মানুষের পাশে দাঁড়াতে। শুধু স্থানীয় পর্যায়ে নয়, আল মানাহিল ফাউন্ডেশন সারা দেশে নিয়মিতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে কাফন-দাফন সেবা, সূলভ মূল্যে চিকিৎসা প্রদান, এবং বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রম। আমাদের লক্ষ্য সব সময়ই ছিল মানবসেবাকে ইবাদত রূপে গ্রহণ করা।
আমরা স্বপ্ন দেখি—এই হাসপাতাল যেন একদিন একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও স্পেশালাইজড হসপিটালে রূপ নেয়। ইনশাআল্লাহ্ আমরা সারা দেশের বিশেষ করে চট্টগ্রামের প্রতিটি মানুষের জন্য মানসম্মত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
এই মহতী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ; আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আরও বিস্তৃত পরিসরে, আরও আন্তরিকতার সাথে মানবসেবা করে যাব ইনশাআল্লাহ্।
পরিশেষে, হালিশহরবাসী ও দেশের প্রতিটি মানুষের প্রতি দোয়ার আবেদন, আল্লাহ যেন আমাদের এই সেবামূলক কাজ কবুল করেন, আমাদের সকলকে তাঁর রাহে দৃঢ় রাখেন এবং এই হাসপাতালকে আশার আলো করে রাখেন মানবতার জন্য।
মহান সৃষ্টিকর্তা সর্বাবস্থায় আমাদের সকলেরই মঙ্গল করুন।
জাযাকাল্লাহ খাইরান।
শুভেচ্ছান্তে -
মাওলানা হেলাল উদ্দিন বিন জমির উদ্দিন
চেয়ারম্যান,
আল মানাহিল ফাউন্ডেশন
আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতাল