03/06/2025
আমাদের অনেকের প্রিয় চারটি আয়াত–‘হে প্রশান্ত আত্মা! ফিরে এসো সন্তুষ্টচিত্তে তোমার রবের দিকে, তোমার রবের সন্তুষ্টভাজন হয়ে। অতঃপর শামিল হও আমার নেক বান্দাদের মধ্যে, এবং প্রবেশ করো আমার জান্নাতে।’
এই আয়াতগুলোর সূরার নাম, আল-ফাজর। পুরো সূরাটা পড়লে নির্বাচিত নরমদিল বান্দা নিশ্চিত কান্নায় ভেঙে পড়বে। আর এই সূরার শুরুতে ওয়া লায়ালিন আশর বলে আল্লাহ শপথ করেছেন দশটি রাতের, সম্মানিত মুফাসসিরগণের ইজতিহাদে যে দশটি রাত হলো যুলহিজ্জার প্রথম দশ রাত। সূরা আত-তাওবায় যে চারটি মাসকে হারাম (পবিত্র) ঘোষণা করা হয়েছে, সহীহুল বুখারীর ৪৬৬২ নং হাদীস মোতাবেক আবু বাকর রদ্বিয়াল্লহু আনহু রসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেছেন, সেই মাসগুলো হলো, যিলক্বদ, যিলহজ্জ, মুহাররাম এবং রজব। এই চার মাসে ভালো আমলের যেমন উচ্চ মর্যাদা, খারাপ আমলের প্রতি তেমন কঠিন ধিক্কার। যেকোনো মাসের চেয়ে এই মাসগুলোতে গুনাহ গুরুতর। অর্থাৎ, ছোট গুনাহও এই সময়ে মহাপাপ হয়ে যায়। সেই সম্মানিত এবং গুরুত্বপূর্ণ মাসের মধ্যে যুলহিজ্জা বা যিলহজ্জের প্রথম দশদিনের সম্মান আবার অন্যরকম। এই দশদিনকে যে সম্মান করবে এবং এই দশদিনে যে আল্লাহর নৈকট্যলাভে সফল হবে, তার সৌভাগ্যের তুলনা নেই বলাই বাহুল্য।
আমরা আল্লাহর দেওয়া বাকি আটটা মাসে শয়তানের কেমন কঠিন গোলামি করলে, বাকি চার মাস তো নয়ই, দশটা মাত্র দিনেও আমরা নিজেদের এই জবানকেই ঠিক রাখতে পারি না! মুখে বেফাঁস কথা চলে আসে, কিন্তু যা কীবোর্ডে লেখার সময় দেখতে পাচ্ছি, পাঠানোর আগে আবার দেখার সুযোগ পাচ্ছি, স্বেচ্ছায় পাঠাচ্ছি, সেটা ভুল কীভাবে হতে পারে? গোপন পাপের সময় আল্লাহ দেখেন, আল্লাহর ফেরেশতারা দেখেন। জ্বিনরা দেখে। এসব প্রকাশ্য পাপের সময় তারাও দেখে যাদের আমি দেখতে পাই, যারা আমার ভাষাতেই কথা বলে এবং আমার আশেপাশেই বাস করে।
এক কথায়, সকলকেই সাক্ষী রেখে দিচ্ছি এই মহান মাসের মহান দিনগুলোয় আমার মহাসীমালঙ্ঘনের। কী চমৎকার! হাশরের দিন নিজের হাত-পায়ের মুখই যেখানে বন্ধ করতে পারব না, সেদিনের জন্য আরও দশ-একশো-হাজারটা মুখ উৎপন্ন করে রেখে দিচ্ছি! ইয়া নাফসীর দিনে তারা সকলে আপন প্রাণ বাঁচাতে আমার নেক আমল লুটেপুটে নিতেই ব্যস্ত থাকবে। আমার জন্য একটাও ছেড়ে যাবে না।
আজকের রাত শেষ হলে দশকের অর্ধেক শেষ হয়ে যাবে। এইবার তো ফিরি! আমি যদি বুঝমান হতাম, শেষ পারার সূরাগুলোই তো আমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যেত! কবীরা গুনাহর চিন্তা আসার সাথে সাথে সূরা তাকভীরে আঁকা ইয়াওমুদ্দীনের চিত্র আমার সামনে খাড়া হয়ে যেত!
আল্লাহ যাকে ফেরাবেন, তাকে যে করেই হোক ফেরাবেন। সেজন্য কারও ফেরার উসিলা হয় একটা আয়াত। আবার কারও ফেরার উসিলা হয় তার ওপরে আসা এমন বিপদ, যার ভয়াবহতা দেখে আশেপাশের দশজনেরও হিদায়াত হয়ে যায়। এবার কতদূর অবাধ্যতা করে কাটাব সেটা আমার ব্যাপার। আল্লাহ হয় ফেরাবেন, নাহয় দুনিয়ায় ডুবিয়ে রেখে শেষতক উল্টো করে আগুনে ছুঁড়ে মারবেন। ওটা হয়ে গেলে এরপর ফিরে আসাটাসার চিন্তা অবান্তর। ঈমানের বুঝ পাওয়া ব্যক্তি নিজের ঈমান নিয়ে এতও আত্মবিশ্বাসী হয় না, ফাঁকফোকর থেকে যাবার ভয়ে। আর ফাঁকফোকর থেকেই যায়।
এই যে আরেকটা সতর্কবাণী না চাইতেই সামনে চলে এল। এরপরে কোন রাস্তায় গিয়ে ঘাস কাটব সেটা আমার সিদ্ধান্ত।
[আমার নিজের একটা কাজের পরিপ্রেক্ষিতে লিখেছি। আমার মতো যাদের এলোপাথাড়ি ধমক-ধামক না হলে হয় না তাঁরাও ইনশাআল্লাহ উপকৃত হবেন।]
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لَنَا وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَأَلِّفْ بَيْنَ قُلُوْبِهِمْ وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ وَانْصُرْهُمْ عَلَى عَدُوِّكَ وَعَدُوِّهِمْ.
‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের ক্ষমা করুন, ক্ষমা করুন সকল মুমিন ও মুসলিম নর-নারীকে। হে আল্লাহ! আপনি মুসলিমদের অন্তরে ভ্রাতৃত্বভাব সৃষ্টি করে দিন এবং তাদের মাঝে মীমাংসা করে দিন। হে আল্লাহ! আপনার শত্রু ও মুসলিমদের শত্রুর বিরুদ্ধে আপনি মুসলিমদেরকে সাহায্য করুন।’ [আস-সুনানুল কুবরা, ২৯৬২ | সহীহ]
রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘যে ব্যক্তি মু’মিন নরনারীদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে, আল্লাহ তার জন্য সেই সমস্ত মু’মিন নরনারীর সংখ্যক নেকী লিখে দেন।’ [মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ১০/২১৩ | হাসান]
_______________________
|| ইয়াওমুদ্দীন ||
বিন্ত আহমেদ
#রৌদ্রময়ী