
21/08/2025
সাধারণত আমরা ভাবি, গিরায় গিরায় বা হাড়ে হাড়ে ব্যথা মানেই বাত জ্বর! কিন্তু সবসময় সেটাই হয় না। বাত জ্বর, নামটা যতটা সরল, আসলে সেটা এক ভয়ানক প্রদাহজনিত রোগ, যা একেবারে ছোট্ট একটি ব্যাকটেরিয়ার কারণে শুরু। এই ক্ষুদ্র শত্রু স্ট্রেপ থ্রোট বা স্কারলেট ফিভার থেকে ছড়ায়, আর তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে — নিজের হার্টের ভালভ, জয়েন্ট এবং স্নায়ুতন্ত্রকেও আক্রমণ করে। সঠিক চিকিৎসা না হলে এই জটিলতা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, যার প্রভাব বহু বছর পরে পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।
💡 কে সবচেয়ে ঝুঁকিতে?
বাত জ্বর সাধারণত ৫ থেকে ১৫ বছরের শিশু ও কিশোরদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে বিরল ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদেরও হতে পারে। উন্নত দেশগুলোতে দ্রুত চিকিৎসার কারণে এর প্রকোপ অনেকটাই কম, কিন্তু উন্নয়নশীল ও চিকিৎসা-সুবিধা সীমিত এলাকায় এর ঝুঁকি এখনও বিদ্যমান।
📍 ঝুঁকির প্রধান কারণগুলো হলো:
- চিকিৎসা সেবার সীমাবদ্ধতা
- দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
- ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশ
- পরিবারের কারও পূর্বে বাত জ্বরের ইতিহাস
❤️ হার্টে এর প্রভাব
সব বাত জ্বর রোগীই হার্টে সমস্যায় ভোগেন না, কিন্তু যখন হয়, তা হতে পারে জীবন-সংকটজনক। এই রোগ হার্টের ভালভে দাগ ফেলে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। সময়ের সাথে সাথে এই ক্ষতি বাড়তে বাড়তে রিউম্যাটিক হার্ট ডিজিজ বা হার্ট ফেইলিওর পর্যন্ত গড়াতে পারে। ভয়াবহ দিক হলো—এই ক্ষতি রোগ হওয়ার ১০-২০ বছর পরও প্রকাশ পেতে পারে।
⚠ উপেক্ষা না করার মতো লক্ষণ
- স্ট্রেপ থ্রোট হওয়ার ২-৪ সপ্তাহ পর বাত জ্বরের উপসর্গ দেখা দিতে পারে:
- দীর্ঘস্থায়ী জ্বর
- হাঁটু, গোড়ালি, কনুই বা কব্জিতে ব্যথা ও ফোলাভাব
- বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট
- অবসাদ ও দুর্বলতা
- ত্বকের নীচে ছোট, ব্যথাহীন গুটি
- সমতল বা উঁচু ফুসকুড়ি
- অনিয়ন্ত্রিত হাত-পা নড়াচড়া (সিডেনহ্যাম কোরিয়া)
- হঠাৎ কান্না বা হাসির প্রবণতা
🩺 প্রতিরোধ: আগেভাগে পদক্ষেপ নিন
প্রতিরোধই এখানে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র।
গলা ব্যথা, গিলতে অসুবিধা, জ্বর, মাথাব্যথা, পেটব্যথা বা বমি—এসব উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। দ্রুত পরীক্ষা ও অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা বাত জ্বর প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
💊 চিকিৎসা: ধাপে ধাপে যত্ন
বাত জ্বরের চিকিৎসা মূলত দুই ধাপে হয়—
- সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ: অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে স্ট্রেপ্টোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা।
- প্রদাহ কমানো: প্রদাহ-বিরোধী ওষুধ দিয়ে জয়েন্ট ব্যথা ও ফোলাভাব কমানো, গুরুতর ক্ষেত্রে কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার।
- প্রয়োজনে হার্ট ও জয়েন্টের বিশেষায়িত চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত হার্টের ভালভ মেরামত বা প্রতিস্থাপনও করতে হতে পারে।
🔍 দীর্ঘমেয়াদি যত্ন
বাত জ্বর একবার হলে পুনরায় হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই চিকিৎসা শেষ হলেও নিয়মিত চেকআপ অত্যন্ত জরুরি। দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য রক্ষায় ডাক্তাররা প্রায়ই প্রতিরোধমূলক অ্যান্টিবায়োটিকের পরামর্শ দেন।
📢 শেষ কথা
একটি সাধারণ গলা ব্যথা যদি অবহেলা করা হয়, তার ছায়া বহু বছর ধরে হার্ট ও শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা জরুরি, কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বেশি সংবেদনশীল। মনে রাখবেন—দ্রুত সনাক্তকরণ, সঠিক চিকিৎসা এবং নিয়মিত ফলোআপই বাত জ্বর প্রতিরোধের চাবিকাঠি।