
04/08/2025
আমাদের কাছে যখন অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (অ্যারিথমিয়া) সমস্যায় কোনো রোগী আসেন, তখন অনেক সময় আমরা হল্টার মনিটর পরীক্ষা করার পরামর্শ দিই। এই পরীক্ষায় একটি ছোট পোর্টেবল ডিভাইস ব্যবহার করে রোগীর হার্টবিট ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত নিয়মিত রেকর্ড করা হয়।
আজ চলুন জেনে নেই এই হল্টার মনিটর পরীক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত।
🤔হল্টার মনিটর কী?
হল্টার মনিটর হলো একটি ছোট ও পোর্টেবল মেডিকেল ডিভাইস, যা ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা (বা তারও বেশি সময়) ধরে হৃদয়ের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ নিয়মিত রেকর্ড করে। এটি মূলত অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (অ্যারিথমিয়া) শনাক্ত, ওষুধ বা চিকিৎসার কার্যকারিতা যাচাই এবং হার্টের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহার হয়।
🤷♂️কেন এটি দরকার?
হল্টার মনিটর এমন কিছু হার্টের সমস্যা ধরতে সাহায্য করে, যেগুলো সাধারণ ইসিজি (ECG)-তে ধরা পড়ে না। এটি দরকার হয় যখন:
🔹 হঠাৎ করে বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়ার ঘটনা ঘটে
🔹 ওষুধ বা পেসমেকার কতটা কাজ করছে সেটা যাচাই করতে হয়
🔹 দীর্ঘ সময় ধরে হার্টের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে হয়
🔹 কারো হৃৎপিণ্ডে অনিয়ম আছে বলে সন্দেহ হয়
🧐 এটি কীভাবে কাজ করে?
১️⃣ ইলেকট্রোড লাগানো হয় বুকের ওপর ছোট স্টিকারের মতো করে
২️⃣ রেকর্ডিং ডিভাইস কোমরে বা গলায় ঝুলিয়ে রাখা হয়
৩️⃣ রোগীকে ডায়েরি রাখতে বলা হয়, যাতে কখন কী উপসর্গ হয়েছে তা লেখা থাকে
৪️⃣ পরীক্ষা শেষে ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়, যাতে দেখা যায় হার্টের ছন্দ স্বাভাবিক ছিল কিনা
👉কাদের জন্য এই মনিটর দরকার?
☑️ অ্যারিথমিয়া (অনিয়মিত হার্টবিট) আছে যাদের
☑️ যাদের হঠাৎ মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়ার অভ্যাস আছে
☑️ যাদের হার্টের ওষুধ বা চিকিৎসা চলছে
☑️ যাদের পেসমেকার বসানো আছে
পরীক্ষার আগে কী করবেন?
✔️ গোসল সেরে নিন (পরীক্ষার সময় ডিভাইস ভিজানো যাবে না)
✔️ ত্বকে কোনো লোশন বা তেল লাগাবেন না
✔️ ঢিলেঢালা জামাকাপড় পরুন
✔️ যেসব ওষুধ খাচ্ছেন, সেগুলো ডাক্তারকে জানিয়ে রাখুন
পরীক্ষার সময় কী করতে হবে?
🔸 প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজ করুন
🔸 শুধু সাবান-পানি বা ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন
🔸 ধড়ফড়, মাথা ঘোরা ইত্যাদি হলে, ঠিক কতটায় কী হচ্ছিল তা লিখে রাখুন
পরীক্ষার পর কী হয়?
✅ মনিটর খুলে দেওয়া হয়
✅ রেকর্ড করা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা হয় কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না
✅ ডাক্তার ফলাফল বুঝিয়ে দেন এবং পরবর্তী করণীয় ঠিক করেন
হল্টার মনিটরের সুবিধা
🌟 হৃদয়ের কার্যকলাপ দীর্ঘসময় রেকর্ড করে
🌟 কোনো অস্ত্রোপচার লাগে না – এটা পুরোপুরি নিরাপদ
🌟 উপসর্গের সাথে হার্টবিটের সম্পর্ক বোঝা যায়
🌟 রোগ নির্ণয়ে অনেক সাহায্য করে
কিছু সীমাবদ্ধতা
⚠️ সবসময় হার্টের সমস্যা ধরা পড়ে না – কারণ সব অনিয়ম পর্যবেক্ষণের সময় নাও হতে পারে
⚠️ গোসল বা পানিতে ভেজা কাজ এড়াতে হয়
⚠️ ত্বকে হালকা জ্বালা বা অস্বস্তি হতে পারে
সাধারণ কিছু প্রশ্ন
১. এটি কেন ব্যবহার হয়?
হার্টবিট অনিয়ম, ওষুধের কাজ বা অজ্ঞান হওয়ার কারণ জানার জন্য।
২. পরা কি অস্বস্তিকর?
না, এটি হালকা এবং সহজে বহনযোগ্য।
৩. গোসল করা যাবে?
না, ডিভাইস ভেজানো যাবে না।
৪. উপসর্গের ডায়েরি কীভাবে লিখব?
যখন ধড়ফড় বা মাথা ঘোরা হবে, তখন সময় লিখে নিন এবং আপনি তখন কী করছিলেন সেটাও লিখুন।
৫. সব ধরনের হার্ট সমস্যা ধরতে পারে?
না, শুধু পরীক্ষার সময় হলে ধরা পড়ে।
৬. ব্যায়াম করা যাবে?
হালকা ব্যায়াম করা যাবে, তবে জোরে কিছু এড়িয়ে চলুন।
৭. কত দিনে রিপোর্ট পাওয়া যায়?
সাধারণত কয়েক দিন থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে।
৮. ওষুধ কি ফলাফলে প্রভাব ফেলে?
হ্যাঁ, তাই আপনি কী ওষুধ খাচ্ছেন সেটা আগেই জানান।
৯. অস্বাভাবিক ফলাফল হলে কী হবে?
ডাক্তার নতুন চিকিৎসা বা পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন।
পরিশেষে
হল্টার মনিটর একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, যা হার্টের কার্যকলাপ বিশদভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করে। যাদের হার্টের সমস্যা আছে বা উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, তাদের জন্য এই মনিটর একটি নির্ভরযোগ্য সমাধান হতে পারে।