At Tibbun Nabawi

At Tibbun Nabawi .

15/01/2025

রুকইয়াহ শারইয়ার মাঝে যা কিছু পড়া হয়, সেগুলোকে আমরা তিনস্তরে ভাগ করতে পারি:

১. সর্বোত্তম

২. উত্তম

৩. বৈধ।

আমরা এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

তবে এর আগে জেনে রাখা ভালো, আপনাকে প্রতিটি ক্যাটাগরি থেকেই পড়তে হবে, এটা আবশ্যক না। আপনি চাইলে উল্লেখিত সর্ব প্রকারের আয়াত এবং দোয়া থেকে পড়তে পারেন, অথবা চাইলে যেকোন এক প্রকার যেমন, শুধু আফদ্বাল বা খায়ের রুকইয়াহ থেকে পড়তে পারেন। তবে বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, শুধুমাত্র মাসনুন রুকইয়াহগুলো বারবার পড়ে দীর্ঘক্ষণ রুকইয়াহ করলে তুলনামূলক বেশি উপকার হয়।
আরেকটি কথা, “সাধারণ আয়াতে রুকইয়াহ” বলতে যে আয়াতগুলো আমরা বুঝি, সেটা নিচে উল্লেখিত প্রথম দুই স্তরের আয়াত দিয়ে সাজানো হয়েছে।

১. আফদ্বাল ওয়া মাসনুন (সর্বোত্তম এবং সুন্নাত)

ক. রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা সাহাবায়ে কিরাম থেকে যেসব দোয়া এবং আয়াত দ্বারা রুকইয়াহ করার কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন: সুরা ফাতিহা, সুরা ফালাক, সুরা নাস। আযহিবিল বা’স রব্বান নাস….
খ. যেসব আয়াত এবং দুয়া শয়তান থেকে নিরাপদ থাকতে, বিপদ থেকে বাঁচতে, কিংবা সুস্থতার জন্য রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়েছেন অথবা পড়তে বলেছেন। যেমন: আয়াতুল কুরসি, সকাল-সন্ধ্যার কোন মাসনুন দোয়া
গ. কোরআনুল কারিম অথবা হাদিসে বর্ণিত অন্যান্য নবীদের দু’আ। যেমন: আইয়্যুব আলাইহিস সালামের দু’আ “আন্নি মাসসানিয়াদ দ্বুররু ওয়া আনতা আরহামুর রহিমীন”।

২. খইর (উত্তম)
প্রাসঙ্গিক আয়াতসমুহ। আক্রান্ত ব্যক্তির সমস্যার বিষয়ে কোরআনুল কারিমের যে আয়াতগুলোতে আলোচনা হয়েছে সেসব আয়াত। মাসনুন রুকইয়ার পর তুলনামুলকভাবে এই আয়াতগুলো অন্যান্য আয়াতের চেয়ে বেশি উপকারী।
যেমন যাদুর আক্রান্তের জন্য: সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২, সুরা ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯নং আয়াত।
জিন আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য: সুরা সফফাতের প্রথম ১০ আয়াত, সুরা জিনের প্রথম ৯ আয়াত, সুরা আর-রহমানের ৩৩ থেকে ৩৬ আয়াত।
বদনজর আক্রান্তের জন্য: সুরা কাহাফের ২৯নং আয়াত, সুরা কলামের শেষ ২ আয়াত।

৩. জায়েয (বৈধ)

এছাড়া কোরআনুল কারিমের অন্য যেকোন আয়াত, রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যেকোন দোয়া দিয়ে আপনি রুকইয়াহ করতে পারেন। এরসাথে নিজে থেকে চাইলে কোন দোয়া করতে পারেন। যেমন প্রসিদ্ধ কিছু দোয়া: হে আল্লাহ! সব যাদু ধ্বংস করে দাও (আল্লাহুম্মা ফুক্কা কুল্লা সিহর) সব রোগ থেকে আরোগ্য দাও (আল্লাহুম্মাশফি কুল্লা মারিয) আল্লাহ তোমার শিফা থেকে আমাকে তুমি আরোগ্য দাও। (আল্লাহুম্মাশফিনি বিশিফাক) আপনি এসব দোয়া আরবিতে করতে পারেন অথবা নিজের ভাষা বাংলায় করতে পারেন, কোন সমস্যা নেই!

পুর্বে উল্লেখিত শরঈ বিধানের সীমারেখা লক্ষণ না করলে উপরের সবগুলোই জায়েজ, আর সবগুলো রুকইয়াহ শারইয়ার মধ্যেই গণ্য হবে। আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন!

— আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

13/01/2025

রুকইয়াহর সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি সমূহঃ

১. (দোয়া/কোরআনের আয়াত) শুধুমাত্র তিলাওয়াত করা
২. মাথায় অথবা ব্যথার যায়গায় হাত রেখে তিলাওয়াত করা
৩. তিলাওয়াত করার পর ফুঁ দেয়া
৪. তিলাওয়াত করার পর থুতু দেয়া, হাতে থুতু নিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগানো
৫. ঔষধ, পানি, তেল ইত্যাদির ওপর ফুঁ দেয়া এবং সেটা ব্যবহার করা

রুকইয়াহ সাপ্লিমেন্টারি (Ruqyah’s supplementary)
(যেসব জিনিশ রুকইয়া দ্বারা উপশম পেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে)

১. রুকইয়ার অডিও (তবে সতর্ক থাকা, এটাকেই যেন রুকইয়ার সব মনে না করা হয়)
২. রুকইয়ার গোসল
৩. রুকইয়ার পানি
৪. হিজামা থেরাপি
৫. সাদকাহ করা
৬. মধু
৭. কালোজিরা
৮. অলিভ অয়েল (সম্ভব হলে ফিলিস্তিনি)
৯. খেজুর (সম্ভব হলে মদিনার আজওয়া খেজুর)
১০. জমজমের পানি
১১. বড়ই পাতা
১২. সোনাপাতা / রেচক তরল
১৩. (ভারতীয়/সামুদ্রিক) কস্টাস
১৪. Tuffle * (কন্দকজাতীয় ছত্রাক)
১৫. বাথ সল্ট *
১৬. Asafoetida * হিং
১৭. Rhubarb * (রেউচিনি)

* এই জিনিসগুলো কেমন জানা নাই

— আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

11/01/2025

কুফরি কাটাতে কুফরি করা লাগবে?

বহুল প্রচলিত জঘন্য আকিদাগুলোর মাঝে এটা একটা। নিঃসন্দেহে এটা কোরআন বিরোধী আকিদা, বাস্তবতা পরিপন্থী আকিদা, মুর্খতাসুলভ কুফরি আকিদা। আমি কাউকে তাকফির করছি না, কিন্তু বাস্তবেই এটা ইসলাম বিরোধী বাতিল আকিদা।

কোরআন এর কথা হচ্ছে – “মন্দ প্রতিরোধ সেটা দিয়েই করুন, যা উত্তম। তারা যা বলে, আমি সে বিষয়ে সবিশেষ অবগত। আর বলুনঃ হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর হে আমার রব! তাদের উপস্থিতি থেকেও আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” [মুমিনুন, ৯৬-৯৮]

সুতরাং আপনি যদি শয়তানি যাদুতে আক্রান্ত হন, তবে আপনার কাজ হবে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কিরামও যাদুতে আক্রান্ত হয়েছে। তাঁরা তো আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছেন, শয়তানের কাছে না। সুরা ফালাকের মাঝে আল্লাহ আমাদের সেটাই শিখিয়েছেন।
“আর (আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি) গিরায় ফুঁ দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে” [আয়াত ৪]

আর বাস্তবতা এটাই, ঈমান আসবে; কুফর চলে যাবে। হক আসবে; বাতিল চলে যাবে। কোরআনের এই আয়াতটা তো সবার মুখস্ত –

وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ ۚ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا

“বলুন, সত্য এসেছে; মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।”

এর পরের আয়াতটা কি জানেন?

وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ ۙ وَلَا يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إِلَّا خَسَارًا

“আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত, গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়..। [বানি ইসরাইল, ৮১-৮২]

সুতরাং যদি ক্ষতি থেকে বাঁচতে চান আর আল্লাহর রহমত আশা করেন, তবে কুফর থেকে দূরে থাকেন, এবং কোরআন দিয়ে রুকইয়াহ করেন।

আল্লাহ আমাদেরকে জানার, বুঝার এবং মানার তাওফিক দিক, আমিন!
— আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

09/01/2025

মেয়েরা কি রুকইয়া করতে পারেনা?

অবশ্যই পারে, রাকি হওয়ার জন্য ছেলে হওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। আর স্পষ্ট হাদিস আছে এব্যাপারে। সহিহ ইবনে হিব্বানের ৬২৩২নং হাদিস –

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করলে, তখন একটা মেয়ের চিকিৎসা করা হচ্ছিল অথবা রুকইয়া করা হচ্ছিল। রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন – কোরআন দ্বারা তার চিকিৎসা করো।

রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে রুকইয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন, এথেকে বুঝা যাচ্ছে শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে মেয়েরাও অন্য মেয়েকে রুকইয়া করতে পারে।
তবে, যিনি রুকইয়া করবেন তাকে সাহসী এবং সচেতন হতে হবে। অধিকাংশ মেয়েরা একটুতেই ঘাবড়ে যায়, এরকম হলে চলবে না।

অপারেশন করতে গিয়ে চিকিৎসক নিজেই যদি ফিট হয়ে যান, তবে তার অপারেশন আবার কে করবে?
– আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

07/01/2025

বিসমিল্লাহ। রুকইয়া অর্থাৎ মন্ত্র পড়া, ঝাড়ফুঁক করা, তাবিজ-কবচ মাদুলি এসবও হয়। তবে শাব্দিক অর্থ যাইহোক, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে পারিভাষিক অর্থ, বা এই শব্দটি আরবরা কোন অর্থে ব্যবহার করে সেটা। রুকইয়া বলতে বুঝায় ঝাড়ফুঁক করা। সেটা যেমন ইসলামি পদ্ধতিতে হতে পারে, আবার শিরকি কুফরি পদ্ধতিতেও হতে পারে।
এখন কিছু কিছু হাদিসে রুকইয়ার ব্যাপারে কঠিন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যেমনটা তাবিজ-মাদুলি বা রক্ষা কবচের ক্ষেত্রে হয়েছে। তবে হাদিসের গ্রন্থসমূহ খুললে আবার আমরা এর বিপরীতও দেখতে পাই, কখনো দেখা যায় জিবরীল আমিন এসে রাসুল স.কে রুকইয়া করেছে, কখনো দেখা যায় রাসুল স. নিজেই রুকইয়া করেছেন, এক্সোরসিজম করেছেন, এমনকি কখনো সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন – “এর নজর লাগছে, কোরআন দিয়ে ঝাড়ফুঁক করো!”

এখন একজন সাধারণ মুসলিম পাঠক যখন এই দুধরনের হাদিস পাশাপাশি দেখেন, তিনি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ব্যাপারটা আসলে কি? এটা জায়েজ নাকি নাজায়েজ?

সুনানে আবু দাউদে দেখা যাচ্ছে রাসুলুল্লাহ স. বলছেন- ‘রুকইয়াহ শিরক’ আবার বুখারির হাদিসে দেখা যাচ্ছে সাহাবাদের রুকইয়া করার ঘটনা শুনে রাসুল স. হাসছেন, এর পারিশ্রমিকে নিজের জন্যও অংশ রাখতে বলছেন। মানে এখানে শুধু রুকইয়া করা না, বরং এজন্য পারিশ্রমিক নেয়ার বৈধতাও দিচ্ছেন।

বিরাট কনফিউজিং ব্যাপার তাইনা? চলুন আজ এই ব্যাপারটা পরিষ্কার হওয়া যাক।

প্রথম হাদিসটা বুখারির, সারকথা এমন- একদিন রাসুল স. কথা প্রসঙ্গে বললেন, আমার উম্মাতের মাঝে বিরাট এক জামাত কোন হিসাব-কিতাব ছাড়াই জান্নাতে যাবে, তাদের সংখ্যা ৭০,০০০! …. সাহাবা রা. মাঝে কেউ জিজ্ঞেস করল, এরা কারা হবে? রাসুল স. বললেন- “যারা আগুনের ছ্যাঁক দিয়ে চিকিৎসা করেনি, রুকইয়া করায়নি, শুভ অশুভ লক্ষণ মানেনি। বরং কেবল আল্লাহর ওপরেই ভরসা করেছে।”

এখন এই হাদিসটা দেখে অনেকে ধারনা করেন, তাহলে কাউকে দিয়ে রুকইয়া করালে কি আর জান্নাতে যাওয়া যাবেনা?

এক্ষেত্রে আলেমদের দুটি মত আছে-

প্রথমত: কেউ এই হাদিসের তাবিল করে বলেন, এখানে রুকইয়া বলতে শিরকি রুকইয়া উদ্দেশ্য। তাঁরা নিজেদের মতের পক্ষে মুসলিম শরিফের হাদিসটি উল্লেখ করেন- “রাসুলুল্লাহ স. বলেছেন, রুকইয়ার মাঝে যদি শিরক না থাকে তবে কোনও সমস্যা নেই”। প্রথমে এই মতটা আমিও মেনে নিয়েছিলাম, কিন্তু কেন যেন তৃপ্তি পাইনি… .
দ্বিতীয়ত: যারা একান্ত প্রয়োজন ছাড়া তাবিল করা অনুচিত মনে করেন, এমন মুহাদ্দিসিনদের ভিন্ন মত। আমার উস্তায জুনাইদ বাবুনগরি [হাফিযাহুল্লাহু ওয়ানাফা’না বিউলুমিহি..] আমাদের বুখারির দরসে এই হাদিস পড়ানোর সময় বলেছেন- “আলোচ্য হাদিসে ‘রুকইয়া’ শব্দটি দ্বারা জায়েজ না জায়েজ সব রুকইয়া-ই উদ্দেশ্য, রাসুল স. শুধু রুকইয়া বলেছেন, এখানে পার্থক্য আবিষ্কার করা অনুচিত। তবে…. এটা আজীমাতের কথা বলেছেন!

অর্থাৎ রুকইয়া করানো নিঃসন্দেহে জায়েজ! (কারণ জিবরীল আ. রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রুকইয়া করেছেন, রাসুল স. নিজে করেছেন অন্যদের, সাহাবাদের অনুমতি দিয়েছেন) অনুরূপভাবে এই হাদিসে বলা ছ্যাঁক দিয়ে চিকিৎসা করাও দরকার হলে জায়েজ, এব্যাপারে কারো দ্বিমত নাই। তবে আজিমত বা উঁচু স্তরের ঈমানের দাবী হচ্ছে, কেউ যদি এসব কিছুই না করে, বরং স্রেফ আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল করে জীবন পার করে দেয়। তবে তাদের জন্য ওঁই সৌভাগ্যবান ৭০ হাজারের মাঝে একজন হবে, যাদেরকে আল্লাহ বিনা হিসাবে জান্নাত দিবেন।”

হুজুরের মুখে এই তাওযিহ শোনার পর আমার খুব খুব বেশি খুশি লেগেছে। মনে হল যেন রূহকে শুধু খাবার নয়, বরং হাইফাই কোন রেস্তোরায় আনলিমিটেড পিজ্জা অফার করা হয়েছে!

অন্যান্য হাদিস যেখানে বলা হয়েছে রুকইয়া শিরক, সেসবের কি হবে?

এক্ষেত্রেও দুই ধরণের মতামত দেখা যায়, প্রথমত: তাবিল। উনারা বলেন ‘এখানে জাহিলি জামানার শিরকি – কুফরি রুকইয়া উদ্দেশ্য। কোরআনের আয়াত অথবা হাদিসে বর্ণিত দোয়া দিয়ে ঝাড়ফুঁক করলে শিরক হবে না।” সুন্দর তাবিল!

তবে তাবিল না করেও এটার সামঞ্জস্য বিধান করা সম্ভব। একদল মুহাদ্দিসিনের মতে, রাসুল স. প্রথমত ফিতনা একদম বন্ধ করার জন্য সবধরনের ঝাড়ফুঁক নিষিদ্ধ করেছিলেন, এসব হাদিস সেই সময়ের। পরবর্তিতে বিভিন্ন দোয়া বা আয়াত শিখিয়েছেন, আস্তে আস্তে অনুমতি দিয়েছেন। জাহেলি জামানার ঝাড়ফুঁকও পাইকারি হারে হারাম বলে দেননি, বরং বলেছেন- “তোমাদের মন্ত্রগুলো আমার কাছে পেশ করতে থাকবে, (আমি যাচাই করে দেখব) যদি রুকইয়ার মাঝে শিরক না থাকে তাহলে কোনো সমস্যা নেই” (মুসলিম শরিফের হাদিস) যাবের রাদিয়াল্লাহু আনহুর অন্যান্য হাদিসেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়।

আশা করছি এব্যাপারটাও ক্লিয়ার। আরও বিস্তারিত জানতে এই লেখাটা পড়ে নিন –

রুকইয়াহ করলে কি জান্নাতে যাওয়া যাবে না?



এখন প্রশ্ন আসে তাবিজের ব্যাপারে, ফাতওয়া যেটাই হোক! আমার দিলের কথা হচ্ছে ‘তাবিজ ব্যবহার করা উচিত না, চাই সেটা জায়েজ হোক বা শিরক’
উপরন্তু অনেক ভণ্ড কবিরাজকে দেখা যায় রুকইয়ার হাদিসগুলো শয়তানি তাবিজের দলিল হিসেবে ব্যবহার করতে। এটা কখনই সম্ভব না, হাদিস যেখান থেকে নিতে হয়, হাদিসের অর্থও সেখান থেকেই নিতে হয়।

আপনি ১০০ বার মরে আবার জিন্দা হলেও প্রমাণ করতে পারবেন না রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অথবা কোন সাহাবা রাযিয়াল্লাহু আনহু “ঘরঘর এঁকে তারমধ্যে ১২৩৪ সংখ্যা লিখে তাবিজ বানিয়েছেন, নিজে ব্যবহার করেছেন অথবা কাউকে ব্যবহার করতে দিয়েছেন”। আর অধিকাংশ (প্রোবাবলি ৯৯%) তাবিজে কুফরি-শিরকি কথাবার্তা তো থাকেই। এগুলো জায়েজ হওয়া তো কল্পনাতেও আসে না…

এরপরের কথা হচ্ছে, ভাই খুব ভালোভাবে জেনে রাখেন, কোরআনের আয়াত দিয়ে ভয়াবহতম যাদু করা যায়! আর এসব সংখ্যা দিয়ে ঘর ঘর বোঝাই করা এগুলো শুধুমাত্র যাদু; আর কিচ্ছু না!! চাই কেউ সেটা জেনে লিখুক অথবা না জেনে লিখুক।

এছাড়া কোরআন হাদিসের অন্যান্য দোয়া বা শুধু কোরআন এর আয়াত লিখে দেয়ার ব্যাপারে আলেমদের ফাতওয়া ফাতওয়া আছে সেসবে বিস্তারিত আলোচনা পাবেন। কিন্তু প্রিয় ভাই, বাস্তব কথা হচ্ছে তাবিজ যেমনই হোক, সেটা আপনার তাওয়াককুল নষ্ট করে। আর তাওয়াককুল হচ্ছে, ঈমানের অংশ
- আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

05/01/2025

বোনদের অনেকেই এই প্রশ্নটা করে থাকেন,

পিরিয়ড চলাকালীন অবস্থায় রুকইয়া করা যাবে কি?
এই বিষয়ে আমি বড়দের সাথে আলোচনা করে আরও বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। আপাতত আমার ছোট্ট জ্ঞানে পরামর্শ নিম্নরূপ –

প্রশ্নঃ পিরিয়ড চলাকালীন রুকইয়া শোনা যাবে কি?

উত্তরঃ হ্যাঁ যাবে। কোরআন শোনার জন্য পবিত্রতা শর্ত না। আয়েশা রা. এই সময়ে তিলাওয়াত শুনেছেন বলে জানা যায়। তবে যত বেশি পবিত্র থাকবেন, রুকইয়ার তত বেশি ইফেক্ট হবে। তাই সম্ভব হলে রুকইয়াহ করার আগে একবার ওযু করে নিন।


প্রশ্নঃ নিরাপত্তার যিকর বা মাসনুন দোয়াগুলো পড়া যাবে?

উত্তরঃ হ্যাঁ, নিঃসন্দেহে দোয়া ও যিকর করা যাবে। দরুদ বা তাসবিহ পড়া যাবে। তাই আপনি সকাল সন্ধ্যার হিফাজতের দোয়াগুলো নিশ্চিন্তে পড়তে পারেন। অনেকে এই সময় হিফাজতের আমলে অবহেলা করে, এটা উচিত না। এতে শয়তান ক্ষতি করার সুযোগ পেয়ে যায়।


প্রশ্নঃ এই সময় রুকইয়ার পানি খাওয়া যাবে? গোসল করা যাবে?

উত্তরঃ যদি আগে থেকে রুকইয়ার পানি বা তেল তৈরি করা থাকে (মানে পবিত্র অবস্থাতেই পানিতে দোয়া-কালাম পড়া থাকে) তাহলে সেটা ব্যবহার করতে পারবেন। খেতে পারবেন, গোসল দিতে পারবেন। কিংবা অন্য কেউ দোয়া কালাম পড়ে ফুঁ দিলে আপনি ব্যবহার করতে পারেন। সমস্যা নেই।

কিন্তু পানি/তেল/মধু প্রস্তুত করা না থাকলে, আর পড়ার মত কাউকে না পেলে আপনি রুকইয়ার দোয়াগুলো থেকে ১০-১৫টি দোয়া এবং দরুদ শরিফ কয়েকবার পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে পানি তৈরি করবেন। জিন-জাদুর সমস্যার ক্ষেত্রে একটু বেশি পরিমাণ দোয়া পড়বেন। রুকইয়ার পানি তৈরির জন্য নিজে তিলাওয়াত করবেন না। (এই প্রসঙ্গে একটা ফাতওয়া নিচে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। অনুগ্রহ করে পড়ে নিন।)


প্রশ্নঃ পিরিয়ডের সময় রুকইয়া গোসলের জন্য পানিতে হাত ডুবিয়ে ৭বার করে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস পড়া যাবে কি না?

উত্তরঃ একই কথা। রুকইয়ার গোসলের জন্য যেহেতু বেশ ভালো পরিমাণেই তিলাওয়াত করতে হয়। তাই এসব সুরা নিজে না পড়ে, অন্য কারও সহায়তা নিতে হবে। অথবা শুধু দোয়াগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে গোসল করতে হবে। ইনশাআল্লাহ, এতেই উপকার হবে।

সবশেষে নিচে দেওবন্দে‌র দারুল ইফতার ফাতওয়া যুক্ত করে দিচ্ছি। এই ফাতওয়া অনুযায়ী নারীরা সকাল-সন্ধ্যা এবং ঘুমের আগের হিফাজতের আমল হিসেবে তিনকুল এবং আয়াতুল কুরসি পড়তে পারবে। অন্য তিলাওয়াত করা যাবে না। আমার জানামতে প্রায় সব মুফতিয়ানে কিরাম এরকমই বলে থাকেন, তাই আমরাও এটা ফলো করি। (অনুগ্রহ করে এর বিপরীতে কোন বেদয়াতি কারও ফাতওয়া আনবেন না। যদি সাহাবা, তাবীঈদের এর বিপরীত ফাতওয়া দেখাতে পারেন, তাহলে আমি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করব ইনশাআল্লাহ।)

জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।

পিরিয়ড অবস্থায় আয়াতুল কুরসি এবং তিনকুল পড়ার বিধান
প্রশ্ন:

পিরিয়ড অবস্থায় ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি এবং চারকুল পড়া যাবে? এটা তো সুন্নাহ। আমি শুনেছি এ অবস্থায় কেউ একটি আয়াত পড়লেও তাকে অভিশাপ দেওয়া হয়। আমি কি এই আয়াতগুলো পড়তে পারব? নাকি না? এই অবস্থায় আয়াতে কারীম তেলাওয়াত করা যাবে?

উত্তর:

পিরিয়ডে এমন সব আয়াত পড়া যাবে যেসব দোয়ার অর্থ প্রকাশ করে। অথবা আল্লাহর জিকির, প্রশংসা, বড়ত্ব বুঝায়। এ অবস্থায় এমন কোন আয়াত পড়া যাবেনা যা দ্বারা আল্লাহর নির্দেশ এবং নিষেধাজ্ঞা, পূর্বের অথবা ভবিষ্যতের কোন ঘটনা অথবা ঘটনা সম্পর্কিত তথ্য বুঝায়। মোটকথা, এ অবস্থায় সাধারণ তেলাওয়াতের উদ্দেশ্যে কোরআন পড়া যাবেনা।

উল্লেখিত মূলনীতি অনুসারে, আপনি যদি নিয়ত রাখেন আল্লাহর প্রশংসাপূর্ণ আয়াতের মাধ্যমে জিন এবং শয়তানের ক্ষতি থেকে সুরক্ষার জন্য পিরিয়ডের সময় ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি, তিনকুল (সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস) পড়বেন, তাহলে দোয়া হিসেবে এটা পড়া যাবে। তবে আপনি সুরা কাফিরুন পড়তে পারবেন না কারণ এটা উপরের উল্লেখিত শর্ত পূরণ করে না।

আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।

দারুল ইফতা
দারুল উলুম দেওবন্দ
(Fatwa: 212/227/N=1433)
– রুকইয়াহ সাপোর্ট বিডি

03/01/2025

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

আমরা রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপের মাধ্যমে জ্বীন, যাদুর ইত্যাদি চিকিৎসায় ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক বিভিন্ন পদ্ধতির বদলে শরিয়া সম্মত রুকইয়াহ প্রচার ও প্রসারের জন্য কাজ করছি। আলহামদুলিল্লাহ, ইতোমধ্যে বিষয়টার ব্যাপারে যথেষ্ট প্রচার ও সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে যা আশাপ্রদ। তবে লক্ষ করছি অনেকে এমন সব প্রশ্ন করছেন যার সমাধান দিতে গিয়ে আমাদের বিব্রত হতে হচ্ছে। কারণ বিষয়গুলো ইসলামের বেঁধে দেয়া সীমা অতিক্রম করে।

যেমন কেউ কেউ চাইছেন হারাম সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে রুকইয়ার সমাধান। আবার কেউ প্রশ্ন করেছেন স্বামীকে ভুলে থাকতে চাওয়ার রুকইয়া। কেউ বলছেন, স্বামী মায়ের ভক্ত হয়ে আছে। সে যেন বউয়ের কথায় উঠবস করে, এক কথায় স্বামীকে বশ রুকইয়াহ কি? এরকম আরো বেশ কিছু প্রশ্ন আমরা পেয়েছি যা ইসলামের মৌলিক শিক্ষার পরিপন্থী।

সমাজে প্রচলন, মিডিয়ার অব্যাহত প্রচারণা বা দ্বীনী জ্ঞানের স্বল্পতা-যে কারণেই হোক না কেন, উনারা হয়ত বুঝতেই পারছেন না এসব কাজে আমরা সাহায্য করতে অপারগ।

কুরআনে কারীমে সুস্পষ্টভাবে আল্লাহ পুরুষ ও নারীদের মধ্যে পর্দার সীমা নির্ধারন করে দিয়েছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই সীমানাকে আরো স্পষ্ট করেছেন সাহাবাদের কাছে। তাই একজন মুসলিম বালেগ পুরুষের সাথে আরেকজন বালেগ নারীর সাথে দৃষ্টি বিনিময় হতে পারে না, বন্ধুত্ব হতে পারে না, কথা-বার্তা, হাসি-ঠাট্টা হতে পারে না। এজন্য প্রেমের নামে যেসব সম্পর্ক প্রচলিত তার সবই ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যভিচারের ভূমিকাস্বরুপ এবং পুরোপুরি নিষিদ্ধ। আপনার বিয়ের ইচ্ছা থাক বা না থাক তাতে ইসলামের কিছুই আসে যায় না। ইসলাম বলেছে হারাম, ব্যাস হারাম। সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ!

আমাদের গ্রুপ ইসলামের জন্য কাজ করছে। সুতরাং এজাতীয় হারাম বিষয়ে আমরা কখনোই সাহায্য করব না। যে কুরআনে আল্লাহ এইসব কাজের বিরুদ্ধে আমাদের নিষেধ করলেন সে কুরআন দিয়েই ঐসব কাজে সাহায্য করা কি সম্ভব? এই কাজ তো আল্লাহর সাথে বিদ্রোহের মত হয়ে যায়!

তাই মেম্বারদের অনুরোধ করছি, দয়া করে রুকইয়াহ করার আগে রুকইয়াহ কী তা জানুন। শারিরীক ও মানসিকভাবে আল্লাহকে মানার, আল্লাহর হুকুম আহকামের সামনে পূর্ণ আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। এরপরে ইসলামের বাধা নেই এমন কাজে সাহায্যের পোস্ট দিন। ইনশাআল্লাহ আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সহায়তার জন্য। কিন্তু ইসলাম-নিষিদ্ধ কাজে সাহায্য চেয়ে পোস্ট দিলে তাতে আমাদের পক্ষে সাহায্য করা সম্ভব হবে না।
– রুকইয়াহ সাপোর্ট বিডি

01/01/2025

সংক্ষেপে বিভিন্ন সমস্যার জন্য ইসলাম সম্মত ঝাড়ফুঁক

– আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

[১] অবতরণিকাঃ
রুকইয়া শারইয়াহ বিষয়ে অনেক লম্বা চওড়া লেখা আছে, ইতোমধ্যে আমাদের রুকইয়াহ শারইয়াহ সিরিজও শেষ। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই এবিষয়ে বই প্রকাশ হবে। আজ আমরা সংক্ষেপে রুকইয়া পরিচিতি এবং বিভিন্ন সমস্যার জন্য রুকইয়া করার পদ্ধতি আলোচনা করবো। বলতে পারেন এই লেখাটি অতীত ও ভবিষ্যতের পুরো রুকইয়াহ সিরিজের সারাংশ।

এর প্রথম সংস্করণ ১৭ জুন প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর কিছু সংশোধন এবং সংযোজন করা হয়েছে। এটি চতুর্থ সংস্করণ। এই লেখায় আরও কিছু যোগ করার পরামর্শ থাকলে জানাবেন, আর কোনো পুস্তক-পত্রিকা অথবা ফেসবুকের বাহিরে অন্য কোথাও প্রকাশ করতে চাইলে অনুগ্রহ পুর্বক অনুমতি নিবেন।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিফাজত করুন। আমীন!

(৭ম সংস্করণে এটি বই হিসেবে ছাপা হয়েছে, বিস্তারিত দেখুন রুকইয়াহ বই প্রাপ্তিস্থান পেজে।)

[২] প্রাথমিক ধারণাঃ
রুকইয়াহ কী? রুকইয়াহ অর্থ ঝাড়ফুঁক করা, মন্ত্র পড়া, তাবিজ-কবচ, মাদুলি ইত্যাদি। আর রুকইয়াহ শারইয়্যাহ (رقيةشرعية) মানে শরিয়াত সম্মত রুকইয়াহ, কোরআনের আয়াত অথবা হাদিসে বর্ণিত দোয়া দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা। তবে স্বাভাবিকভাবে ‘রুকইয়া’ শব্দটি দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা বুঝায়। এই ঝাড়ফুঁক সরাসরি কারো ওপর হতে পারে, অথবা কোনো পানি বা খাদ্যের ওপর করে সেটা খাওয়া অথবা ব্যাবহার করা হতে পারে। এক্ষেত্রে রুকইয়ার পানি, অথবা রুকইয়ার গোসল ইত্যাদি পরিভাষা ব্যবহার হয়। আর সবগুলোই সালাফে সালেহিন থেকে বর্নিত আছে।

রুকইয়ার বিধানঃ রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রুকইয়াতে যদি শিরক না থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৪৪)

বিশুদ্ধ আক্বিদাঃ উলামায়ে কিরামের মতে রুকইয়া করার পূর্বে এই আক্বিদা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া উচিত ‘রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁকের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতা আল্লাহ তা’আলার, আল্লাহ চাইলে শিফা হবে, নইলে নয়।’

রুকইয়া প্রকারভেদঃ বিভিন্ন ভাবে রুকইয়া করা হয়, যেমনঃ দোয়া বা আয়াত পড়ে ফুঁ দেয়া হয়, মাথায় বা আক্রান্ত স্থানে হাত রেখে দোয়া/আয়াত পড়া হয়। এছাড়া পানি, তেল, খাদ্য বা অন্য কিছুতে দোয়া অথবা আয়াত পড়ে ফুঁদিয়ে খাওয়া ও ব্যাবহার করা হয়।

পূর্বশর্তঃ রুকইয়া করে উপকার পেতে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন।

নিয়্যাত (কেন রুকইয়া করছেন, সেজন্য নির্দিষ্টভাবে নিয়াত করা)
ইয়াক্বিন (এব্যাপারে ইয়াকিন রাখা যে, আল্লাহর কালামে শিফা আছে)
মেহনত (অনেক কষ্ট হলেও, সুস্থ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে রুকইয়া চালিয়ে যাওয়া)।
লক্ষণীয়ঃ রুকইয়ার ফায়দা ঠিকমতো পাওয়ার জন্য দৈনন্দিনের ফরজ অবশ্যই পালন করতে হবে, পাশাপাশি সুন্নাতের প্রতিও যত্নবান হতে হবে। যথাসম্ভব গুনাহ থেকে বাঁচতে হবে। (মেয়েদের জন্য পর্দার বিধানও ফরজ) ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি / ভাস্কর্য রাখা যাবেনা। আর সুরক্ষার জন্য সকাল-সন্ধ্যার মাসনুন আমলগুলো অবশ্যই করতে হবে। আর ইতিমধ্যে শারীরিক ক্ষতি হয়ে গেলে, সেটা রিকোভার করার জন্য রুকইয়ার পাশাপাশি ডাক্তারের চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে হবে।

[৩] সাধারণ অসুস্থতার জন্য রুকইয়াহ:
বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের জন্য রাসুল স. থেকে অনেক দু’আ-কালাম পাওয়া যায়, সেসব গুরুত্বের সাথে করা। এছাড়া কোরআন থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকটি রুকইয়া হচ্ছে সুরা ফাতিহা, সুরা ফালাক, সুরা নাস এবং ৬টি আয়াতে শিফা (৯/১৪, ১০/৫৭, ১৬/৬৯, ১৭/৮২, ২৬/৮০, ৪১/৪৪)

১.وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ
২. وَشِفَاء لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
৩. يخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاء لِلنَّاسِ
৪. وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
৫. وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
৬. قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاء

এছাড়া রুকইয়া হিসেবে রাসুল স. থেকে বর্ণিত অনেক দো’আ আছে, যেমন-

১. اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
২. بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
৩. بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
৪. اَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيْم، رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْم، اَنْ يَّشْفِيَكْ
৫. بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ، مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ

এসব আয়াত এবং দোয়াগুলো ৩বার করে পড়ুন, ব্যাথার যায়গায় অথবা রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়ুন, অথবা এসব পড়ার পর রুগীর ওপর ফুঁ দিন। পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করুন, অথবা অলিভ অয়েলে ফুঁ দিয়ে মালিশ করুন। মধু-কালোজিরায় ফু দিয়ে সকাল করে পানিতে গুলিয়ে খান। এসবের পাশাপাশি শাইখ হুজাইফির রুকইয়াহ, এবং সা’দ আল গামিদির আধাঘণ্টার রুকইয়া শোনা যেতে পারে।

[৪] বদনজর আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:
বদনজর আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে, এরমাঝে কয়েকটি হচ্ছে-

কোন কাজে মনোযোগ না থাকা। নামায, যিকর, পড়াশোনাতে মন না বসা।
প্রায়শই শরীর দুর্বল থাকা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব লাগা।
বুক ধড়পড় করা, দমবন্ধ অস্বস্তি লাগা। মেজাজ বিগড়ে থাকা।
মেয়েদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চুল পড়া। প্রচুর গ্যাস হওয়া।
একেরপর এক অসুখ লেগে থাকা, দীর্ঘ চিকিৎসাতেও ভালো না হওয়া।
ব্যবসায়-লেনদেনে ঝামেলা লেগেই থাকা। সব কিছুতেই লস হওয়া।
[৫] বদনজরের জন্য রুকইয়াহ:
যদি বুঝা যায় অমুকের জন্য নজর লেগেছে, তাহলে তাকে অযু করতে বলুন, এবংওযুর পানি গুলো আক্রান্তের গায়ে ঢেলে দিন। এরপর চাইলে ভালো পানি দিয়ে গোসল করুন। এতটুকুতেই নজর ভালো হয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ।

আর বদনজরের সেলফ রুকইয়া হচ্ছে, বদনজরের রুকইয়া তিলাওয়াত করবেন, অথবা একাধিকবার তিলাওয়াত শুনতে হবে (ডাউনলোড লিংক)। এর পাশাপাশি রুকইয়ার গোসল করবেন। আর এভাবে লাগাতার ৩ থেকে ৭ দিন করবেন। সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত করুন। প্রতিদিন কয়েকবার রুকইয়া শুনুন, আর একবার রুকইয়ার গোসল করুন। সমস্যা ভালো হওয়ার পরেও এরকম কয়েকদিন করা উচিত।

[৬] রুকইয়ার গোসল:
একটা বালতিতে পানি নিবেন। তারপর পানিতে দুইহাত ডুবিয়ে যেকোনো দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস, শেষে আবার কোনো দরুদ শরিফ-সব ৭বার করে পড়বেন। পড়ার পর হাত উঠাবেন এবং এই পানি দিয়ে গোসল করবেন।

(এগুলা পড়ে পানিতে ফু দিবেন না, এমনিই গোসল করবেন। যদি টয়লেট আর গোসলখানা একসাথে থাকে, তাহলে অবশ্যই এসব বাহিরে বালতি এনে পড়বেন। প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করবেন, তারপর চাইলে অন্য পানি দিয়ে ইচ্ছামত গোসল করতে পারেন। যার সমস্যা সে পড়তে না পারলে অন্যকেউ তার জন্য পড়বে, এবং অসুস্থ ব্যক্তি শুধু গোসল করবে।)

[৭] জিন আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:
জিন দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে, এরমাঝে কয়েকটি হচ্ছে-

রাতে ঠিকমত ঘুমাতে না পারা।
প্রায়শই ঘুমের মাঝে বোবা ধরা।
ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা। উঁচু থেকে পড়ে যেতে, কোন প্রাণীকে আক্রমণ করতে দেখা।
দীর্ঘ মাথাব্যথা, অথবা অন্য কোন অঙ্গে সবসময় ব্যাথা থাকা।
নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির আযকারে আগ্রহ উঠে যাওয়া।
মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা, একটুতেই রেগে যাওয়া।
আযান বা কোরআন তিলাওয়াত সহ্য না হওয়া।

[৮] জ্বিনের আসরের জন্য রুকইয়াহ:
যিনি রুকইয়া করবেন তিনি প্রথমে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে নিজের শরীরে হাত বুলিয়ে নিবেন। এরপর রুকইয়া শুরু করবেন। জ্বিনের রুগীর ক্ষেত্রে সাধারণত কথাবার্তা বলে জ্বিন বিদায় করতে হয়। এক্ষেত্রে যিনি রুকইয়া করবেন তাঁকে উপস্থিতবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে। জ্বিনের কথায় ঘাবড়ানো যাবেনা, তার কথা বিশ্বাসও করা যাবে না। হুমকিধামকি দিলে জিনকেই উল্টা ধমক দিতে হবে। রুগীর মাথায় হাত রেখে অথবা (গাইরে মাহরাম হলে) রুগীর পাশে বসে জোর আওয়াজে রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়তে থাকুন। পড়ার মাঝেমাঝে রুগীর ওপর ফুঁ দিতে পারেন, আর পানিতে ফুঁ দেয়ার পর মুখে এবং হাতে-পায়ে ছিটিয়ে দিতে পারেন।

রুকইয়ার অনেক আয়াত আছে সেগুলো শেষে বলা হবে। তবে স্বাভাবিকভাবে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ফালাক, সুরা নাস, সুরা সফফাতের প্রথম ১০ আয়াত, সুরা জিনের প্রথম ৯ আয়াত পড়তে পারেন। জ্বিন ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত রুগীর কাছে বসে উঁচু আওয়াজে এই আয়াতগুলো বারবার পড়তে হবে আর ফুঁ দিতে হবে অথবা রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়তে হবে। একদিনে না গেলে পরপর কয়েকদিন কয়েকঘন্টা করে এভাবে রুকইয়া করে যেতে হবে। ইনশাআল্লাহ এক পর্যায়ে জ্বিন পালাতে বাধ্য হবে।

[৯] বাড়িতে জ্বিনের উৎপাত থাকলে:
বাড়িতে জ্বিনের কোনো সমস্যা থাকলে পরপর তিনদিন পূর্ন সুরা বাক্বারা তিলাওয়াত করুন, এরপর আযান দিন। তাহলে ইনশাআল্লাহ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। তিলাওয়াত না করে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কয়েকবার যদি সুরা বাক্বারা প্লে করা হয় তাহলেও ফায়দা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে সবচেয়ে ভালো ফল পেলে তিলাওয়াত করা উচিত। এরপর প্রতিমাসে অন্তত এক দুইদিন সুরা বাকারা পড়বেন। আর ঘরে প্রবেশের সময়, বের হবার সময়, দরজা-জানালা বন্ধের সময় বিসমিল্লাহ বলবেন। ঘুমের আগে সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াত পড়বেন। তাহলে ইনশাআল্লাহ আর কোন সমস্যা হবে না।

[১০] ওয়াসওয়াসা রোগের জন্য রুকইয়া:
এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। প্রতি নামাজের আগে-পরে, অন্যন্য ইবাদতের সময়, কোন গুনাহের জন্য ওয়াসওয়াসা অনুভব করলে এটা পড়া –
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ، مِنْ غَضَبِهٖ وَعِقَابِهِ، وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ، وَأَنْ يَّحْضُرُوْنِ

ওয়াসওয়াসা অনুভব করলে বলা (সুরা হাদীদ, আয়াত নং ৩)
هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْم

[বিশেষতঃ ঈমান নিয়ে সংশয় উদিত হলে এটা পড়া উচিত। আর সকাল-সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস পড়া]

আয়াতুল হারক (আযাব এবং জাহান্নাম সংক্রান্ত আয়াত) বেশি বেশি তিলাওয়াত করা। এবং প্রতিদিন ৩-৪বার এসবের তিলাওয়াত শোনা। (ডাউনলোড লিংক)
নাপাক থেকে বেচে থাকা, বিশেষত প্রসাবের ছিটা থেকে বাচা। যথাসম্ভব সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকা।
পুরুষ হলে জামাআতের সাথে নামাজ পড়া, মুত্তাকী পরহেজগারদের সাথে উঠাবসা করা।
সকাল-সন্ধ্যায় ও ঘুমের আগের আমলগুলো গুরুত্বের সাথে করা। টয়লেটে প্রবেশের দোয়া পড়া।
আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকা। যথাসম্ভবত ওয়াসওয়াসা পাত্তা না দেয়া; ইগনোর করা, এমনকি মুখে বিরক্তির ভাবও প্রকাশ না করা।

[১১] যাদু আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:
যাদু করতে জ্বিনের সাহায্য নেয়া হয়, তাই যাদুগ্রস্থ রোগীর মাঝে জিন আক্রান্তের কিছু লক্ষণগুলো পাওয়া যায়। তবে এছাড়াও যাদুগ্রস্থ রোগীর মাঝে কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখা যেতে পারে। যেমনঃ

হঠাৎ কারও প্রতি বা কোন কিছুর প্রতি তীব্র ভালবাসা অথবা ঘৃণা তৈরি হওয়া, যা আগে ছিল না।
বিশেষ কোন কারন ছাড়াই জটিল-কঠিন রোগে ভোগা। যার চিকিৎসা করলেও সুস্থ না হওয়া।
পরিবারের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি লেগেই থাকা। বিশেষতঃ স্বামীস্ত্রীর মাঝে।
দৃষ্টিভঙ্গি বা ব্যক্তিত্বে ব্যাপক পরিবর্তন। যাতে নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়, চারপাশের মানুষও কষ্ট পায়।
অদ্ভুত আচরণ করা। যেমন, কোন কাজ একদমই করতে না চাওয়া। কিংবা দিন-রাতের নির্দিষ্ট কোন সময়ে ঘরের বাইরে যেতে না চাওয়া।
মেরুদণ্ডের নিচের দিকে ব্যাথা করা
বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মেজাজ খারাপ, মাথা ব্যথা অথবা অসুস্থ থাকা।
আর যাদু আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়লে, অথবা অডিও শুনলে অস্বাভাবিক অনুভূতি হয়। যেমন, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, বমি আসা, বুক ধড়ফড় করা, ইত্যাদি।

[১২] যাদু / ব্ল্যাক ম্যাজিক / বান মারার জন্য রুকইয়া:
যাদুর প্রকারভেদ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার রুকইয়া করা হয়। তবে কমন সেলফ রুকইয়া হচ্ছে-
প্রথমে সমস্যার জন্য নিয়াত ঠিক করে, ইস্তিগফার দরুদ শরিফ পড়ে শুরু করুন। তারপর কোন রুকইয়া শুনে নিশ্চিত হয়ে নিন আসলেই সমস্যা আছে কি না! শাইখ সুদাইসের অথবা লুহাইদানের রুকইয়া শুনতে পারেন (ডাউনলোড লিংক)। সবশেষে একটি বোতলে পানি নিন, এরপর- ক. সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২ খ. ইউনুস ৮১-৮২ গ. সুরা ত্বহা ৬৯নং আয়াত পড়ে ফুঁ দিন।

[১] وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُوْنَ – فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُونَ – فَغُلِبُوْا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوْا صَاغِرِيْنَ – وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِيْنَ -قَالُوْا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ – رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُوْنَ –
[২]فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُۖ إِنَّ اللّٰهَ سَيُبْطِلُهُۖ إِنَّ اللّٰهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِيْنَ – وَيُحِقُّ اللّٰهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْكَرِهَ الْمُجْرِمُونَ –
[৩] وَأَلْقِ مَافِي يَمِيْنِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوْاۖ إِنَّمَا صَنَعُوْا كَيْدُ سَاحِرٍۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتٰى

ঘ. এরপর সুরা ফালাক্ব, সুরা নাস সব ৩বার করে পড়ে ফুঁ দিন।

তিন থেকে সাতদিন সকাল-বিকাল এই পানি খেতে হবে, এবং গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে হবে। আর মাসখানেক প্রতিদিন দেড়-দুইঘণ্টা রুকইয়া শুনতে হবে। সাধারণ কোন রুকইয়া, আর সুরা ইখলাস, ফালাক, নাসের রুকইয়াহ। এর পাশাপাশি আল্লাহর কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া করতে হবে।

এভাবে একদম সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রুকইয়া করে যাবেন, সমস্যা বেড়ে গেলেও বাদ দিবেন না। তাহলে ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুতই পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন।

[১৩] যাদুর কোন জিনিশ অথবা তাবিজ খুঁজে পেলে:
কি দিয়ে যাদু করেছে যদি পাওয়া যায়, অথবা সন্দেহজনক কোন তাবিজ পেলে উপরে বলা আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিন, এরপর তাবিজ অথবা যাদুর জিনিশগুলো ডুবিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ, তাহলে ইনশাআল্লাহ যাদু নষ্ট হয়ে যাবে। পরে সেগুলো পুড়িয়ে বা নষ্ট করে দিন।



[১৪] যাদু, জ্বিন, বদনজর সম্পর্কিত একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে:
একসাথে একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে প্রথমে বদনজরের জন্য রুকইয়া করতে হবে, এরপর জ্বিনের জন্য এবং যাদুর জন্য রুকইয়া করতে হবে।

[১৫] রুকইয়ার আয়াত:
কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা রুকইয়া করা হয়, তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কিছু আয়াত হচ্ছে-
সুরা ফাতিহা
সুরা বাকারা ১-৫
সুরা বাকারাহ ১০২
সুরা বাকারাহ ১৬৩-১৬৪
সুরা বাকারাহ ২৫৫
সুরা বাকারাহ ২৮৫-২৮৬
সুরা আলে ইমরান ১৮-১৯
সুরা আ’রাফ ৫৪-৫৬
সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২
সুরা ইউনুস ৮১-৮২
সুরা ত্বহা ৬৯
সুরা মু’মিনুন ১১৫-১১৮
সুরা সফফাত ১-১০
সুরা আহকাফ ২৯-৩২
সুরা আর-রাহমান ৩৩-৩৬
সুরা হাশর ২১-২৪
সুরা জিন ১-৯
সুরা ইখলাস
সুরা ফালাক
সুরা নাস

[১৬] যাদু, জিন, শয়তান ইত্যাদির ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়:
১. বিষ, যাদু এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাঁচতে সকাল-সন্ধ্যায় এই দোয়া তিনবার পড়াঃ

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি, মিং-শাররি মা-খলাক্ব। (জামে তিরমিযী, ৩৫৫৯)

২. সব ধরনের ক্ষতি এবং বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকতে এই দোয়া সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়াঃ

بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ

বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াদ্বুররু মা‘আসমিহী, শাইউং ফিলআরদ্বী ওয়ালা- ফিসসামা-ই, ওয়াহুওয়াস সামি’উল ‘আলীম। (জামে তিরমিযী, ৩৩৩৫)

৩. প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস তিনবার করে পড়া। এবং এটা বিশেষ গুরুত্বের সাথে করা। (সুনানে আবি দাউদ)

৪. ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি পড়া এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া। সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফু দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নেয়া। (বুখারী)

৫. টয়লেটে ঢোকার পূর্বে দোয়া পড়া-

اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ

আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা, মিনাল খুবসি ওয়াল খবা-ইছ। (মুসলিম, ৩৭৫)

৬. তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। প্রতিদিনের অন্যান্য মাসনুন আমল করতে থাকা। এবং আল্লাহর কাছে সবসময় দোয়া করতে থাকা।

সর্বশেষ আপডেটঃ (৪.৩) চতুর্থ সংস্করণ, ০১ – ডিসম্বর – ২০১৭

30/12/2024

“রুকইয়াহ” একটা চিকিৎসা পদ্ধতি, এই পদ্ধতিতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে শরিয়তের নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন না হলেই এটা জায়েজ। এজন্য প্রতিটা প্রেসক্রিপশনের সাথে সাথে রেফারেন্স দিতে হবে এটার প্রয়োজন নাই।

রুকইয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ মূলনীতি হল – কোন হারাম বা শিরকি বিষয় থাকা যাবে না। কোন অস্পষ্ট বিষয় থাকা যাবে না।

প্রসিদ্ধ হাদিসগুলোতে সাহাবাদের থেকে কোরআন এর যেসব সুরা এবং আয়াত দিয়ে রুকইয়ার কথা পাওয়া যায়, “একটাও” সাধারণত রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি, মানে রাসুলুল্লাহর থেকে পাওয়া যায় না। আবার রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে জ্বিনের রুগীদের জন্য রুকইয়াহ করেছেন, কোন সাহাবি সেভাবে করেছেন বলে পাইনি।
যেমন, সুরা ফাতিহা। রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা দিয়ে রুকইয়াহ করেছেন, সাধারণত এরকম দেখা যায় না। অন্তত এখন পর্যন্ত আমি পাইনি। অথচ সাহাবাদের মধ্যে এটা ছিল সবচেয়ে পপুলার। একেকজন সাহাবি সুরা ফাতিহা দিয়ে একেক স্টাইলে রুকইয়াহ করেছেন। অন্যান্য সুরা দিয়েও করেছেন। কখনও কখনও সাহাবারা রুকইয়াহ করার পর এসে রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছেন, রাসুল্লাহ কোরআন দিয়ে রুকইয়ার কথা শুনে প্রতিবারই সমর্থন করেছেন, কখনও খুশি হয়েছে। অথচ উনাদের নিয়মগুলো তো রাসুলুল্লাহ শিখায়নি। কখনও তো এরকম বলেছেন – তুমি কিভাবে জানলে যে এটা রুকইয়াহ!! (সহিহ বুখারির হাদিস)
তাই আমাদের ক্ষেত্রেও শরিয়তের সীমারেখা অতিক্রম না করলেই রুকইয়াহ বৈধ। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত না যে, প্রতিদিনের ইবাদতগুলো মত এর নির্দেশনা হুবহু হাদিসে উল্লেখ থাকা লাগবে।

রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এব্যাপারে বলেছেন- “রুকইয়াতে যদি শিরক না থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৪৪)

শিরকের সম্ভাবনাও যেন না থাকে এজন্য উলামায়ে কিরাম সতর্কতা হিসেবে আরও কিছু শর্তারোপ করেন, যেমন- অস্পষ্ট কিছু না থাকা, দুর্বোধ্য কোন ভাষার না হওয়া, ইত্যাদি। কেউ কেউ “আরবি ব্যতীত অন্য ভাষায় না হওয়া” এই কথাও বলেছেন।

(রুকইয়াহ সহিহ হওয়ার এই শর্তগুলো ফাতহুল বারিতে ইবনে হাজার রহ. বর্ণনা করেছেন ইমাম নববী রহ. থেকে, এবং তিনি বলেছেন এব্যাপারে আলেমদের ইজমা রয়েছে)

উদাহরণস্বরূপঃ কেউ যদি বলে “৮৩বার ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে খাইলে যাদুর সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।” তখন আপনি যদি নির্দিষ্টভাবে এই আমলের রেফারেন্স চাইতে যান, তাহলে ভুল করবেন। কারণ যেহেতু এটা রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এবং পরবর্তি সালাফের নির্ধারিত শর্ত লঙ্ঘন করছে না, সুতরাং এটা জায়েজ। এজন্য স্পেসিফিক রেফারেন্সের প্রয়োজন নাই।

– আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

Address

Chittagong

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when At Tibbun Nabawi posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Share on Facebook Share on Twitter Share on LinkedIn
Share on Pinterest Share on Reddit Share via Email
Share on WhatsApp Share on Instagram Share on Telegram