13/03/2022
( আমার আশে পাশে এসব মানুষ ভরপুর একটু বদলান,)
সীমার বাচ্চা ৬ মাসে বসেছে, ১১মাসে হেঁটেছে, ১৮ মাসে টুকটুক করে কথা বলে। খুবই আনন্দের কথা। এদিকে পাশের বাসার তুতুল ১৩ মাসে হাঁটে নি এখনও। তার মাকে গিয়ে "কি ব্যাপার ভাবী, তুতুল হাঁটে না এখনও? আমার ছেলেতো ১০ মাস হতেই একপা দুপা করে হেঁটেছে। তুতুলের সমস্যা নেইতো কোনো?" এসব বলে খুবই তৃপ্তি পেলো সীমা।
কিন্তু সীমার এই গায়ে পড়ে অহংকার দেখানো তুতুলের মায়ের বিরক্তি আর হতাশার উদ্রেক ছাড়া আর কিছুই করলো না। এমন নয় যে, সীমা একথা বলে আসার পরপরই তুতুল হাটা শুরু করে দিল। তাহলে এই অবান্তর কথা বলার কারণ কি?
যে বাচ্চার অনেক রাগ বা জেদ, অনেক চেচামেচি করে, তার মাকে গিয়ে "কই আমাদের বাচ্চারা তো এতো জেদ করে না, অনেক শান্ত ওরা" এসব বললে ওই মায়ের কোনো উপকার হয়না। সে ইতিমধ্যেই তার এই জেদী, চিৎকার চেচামেচি করা বাচ্চা নিয়ে বিব্রত ও অশান্তিতে আছে। তার বাচ্চার দোষ ধরে তাকে আরো মানসিক অশান্তিতে না ফেলাটাই তার জন্য স্বস্তির।
যে মায়ের বাচ্চা আড়াই বছরেও পুরোপুরি কথা বলে না, তাকে গিয়ে "আমার মেয়ে তো ১৮ মাস হতেই ছড়া বলে, সব কথা বলতে পারে" এসব বলে শোনানোর মাঝে কোনো বাহাদুরি নেই, ওই মাকে কষ্ট দেয়া ছাড়া। ওই মা একেবারেই জানতে আগ্রহী নয় আপনার বাচ্চা কথায় কত পটু। সে নিজের সন্তানকে নিয়ে এমনিতেই চিন্তায় আছে।
আপনার সন্তান সুপার ব্রিলিয়ান্ট, সব বিষয়ে এডভান্স, খুবই ভালো কথা। কিন্তু তা অন্য মায়েদের (যাদের সন্তান পিছিয়ে আছে) শুনিয়ে অহংকার দেখানোর প্রয়োজন নেইতো!
এমন কিন্তু নয় যে ১ম বাচ্চাটি কখনওই হাঁটবে না। দ্বিতীয় বাচ্চাটিও হয়তো একদিন শান্ত হয়ে আসবে, কমে আসবে জেদ। ৩য় বাচ্চাটি হয়তো ৩ বছর হতে এতোই কথা বলবে যে মা-বাবা তার সাথে পাল্লা দিয়ে কথা বলে কূল পাবে না।
আপনার সন্তানের রোল ১ বলে যেই দাপট দেখিয়ে চলেন, সেই দাপট হয়তো থাকবে না যখন দেখবেন তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা ক্লাস টু/থ্রি এর পেছনের সারির ছেলেটি বড় হয়ে আজ ইউনিভার্সিটির টিচার।
আপনার বাচ্চা নিজের হাতেই সব খেতে পারে, পাশের বাসার বাচ্চাটিকে মা ৬/৭ বছর পর্যন্ত খাইয়ে দিচ্ছে, তাই টিটকারি মারেন আপনি। অথচ ওই বাচ্চাটি কিন্তু সারাজীবন মায়ের হাতে খাবে না। একসময় গিয়ে নিজের হাতেই খাবে। তখন কিন্তু ওই মায়ের আপনার করা টিটকারিটুকুই মনে থাকবে, নিজেই ছোট হয়ে গিয়েছেন তার কাছে এই অহংকারের জন্য।
গর্ব হতেই পারে নিজের সন্তানকে নিয়ে, কিন্তু তা নিজের মাঝেই রাখা ভালো। ভবিষ্যতে কি হবে আমরা কেউ জানি না। আপনার যেমন আপনার সন্তানকে নিয়ে অনেক গর্ব, অন্য মা- টিরও তার সন্তানকে নিয়ে গর্ব। নিজের সন্তানকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত অহংকার করতে গিয়ে অন্য মায়েদের সেই গর্বকে আহত করার মাঝে কোনো কৃতিত্ব নেই।
আমার অহংকার যেন অন্য মায়েদের মানসিক নির্যাতনের কারণ না হয়।
#চলুন_পাল্টাই