Human Help

Human Help Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Human Help, Chittagong.

ভুলে যাওয়া একজন সূর্য সন্তান... আজকের এই দিনেই সাগরের বুকে চিরতরে হারিয়ে যান বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মেধাবী পাইলট ফ্লাইট ল...
01/07/2023

ভুলে যাওয়া একজন সূর্য সন্তান...

আজকের এই দিনেই সাগরের বুকে চিরতরে হারিয়ে যান বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মেধাবী পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ রুম্মান।

তার ব্যাচমেটরা যখন মজা করে বলত "ইজেকশনটা ভালো করে শিখে নে,কখন কি হয় তা তো বলা যায়না" তখন সে বারবরই একটা কথা বলত Whatever happen, I'll never abandon my aircraft। সে মনে প্রাণে বিশ্বাস করত জনগণের ঘামের টাকায় কেনা এই বিমানের কাছে তার জীবন তুচ্ছ। সে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে দেশের এই অমূল্য সম্পদ রক্ষার।

ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ রুম্মান শেষ পর্যন্ত তার কথা রেখেছিলেন। ২০১৫ সালের আজকের এই দিনে সকাল ১১টার দিকে একটি F-7 যুদ্ধবিমান নিয়ে পতেঙ্গার আকাশে উড়ছিলেন তিনি। ৪০ মিনিট উড়ার পর হঠাৎই যান্ত্রিক গোলযোগে পড়ে বিমানটি। নিতি ইজেক্ট না করে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেশের ও বিমানবাহিনীর মূল্যবান বিমানটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।

বিমানটি রক্ষার চেষ্টা করতে করতে বিমানবাহিনীর নিয়ন্ত্রণকক্ষের সাথে বিমানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরে পতেঙ্গা উপকূল থেকে মার্চেন্টশীপ টু কোস্টগার্ড টু বিমানবাহিনী জানতে পারে তার বিমানটি পতেঙ্গা উপকূলে বিধ্বস্ত হয়েছে।

সাথে সাথে উদ্ধার অভিযানে ছুটে যায় কোস্টগার্ড আর নৌবাহিনীর ৮-১০টি জাহাজ। কিন্তু পিন পয়েন্ট এক্যুরিসি কেউই জানতনা৷ পরবর্তী ১০ দিন ধরে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ রুম্মানের মৃতদেহ আর তার বিধ্বস্ত বিমানটির আর কোন সন্ধান মেলেনি।

সাগরের বুকে চিরতের হারিয়ে যায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মেধাবী অকুতোভয় পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ রুম্মান।

30/04/2022

Al-Baqarah 2:42

وَلَا تَلْبِسُوا۟ ٱلْحَقَّ بِٱلْبَٰطِلِ وَتَكْتُمُوا۟ ٱلْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ

And do not mix the truth with falsehood or conceal the truth while you know [it].

--- বান্দার উত্তর....
হে মহান আল্লাহ সোবহানাল্লাহু তা'আলা,
আমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে সংমিশ্রণ করবো না, জেনে শুনে সত্যকে গোপন করবো না।
#সত্যঃ সত্য হচ্ছে ধর্মশাস্ত্র ও দর্শনশাস্ত্রের একটি মৌলিক শক্তি যা দ্বারা বিশাল এ জগৎ সৃষ্ট হয়েছে এমন বিশ্বাস বা ধারণা যা প্রকৃত বিষয় বা ঘটনার সাথে যোগাযোগের সেতুবন্ধন গড়ে তুলে। পবিত্র ধর্মশাস্ত্রাদি একসুরে বলছে মহামহিম আল্লাহতালাই একমাত্র সত্য ।
বিশাল বিস্তৃত এ সৃষ্টি সসীম ও অসত্য , শুধু তার গহীন ইচ্ছাসমুদ্রের কোনো বন্দরে হয়তো বিদ্যমান।

#মিথ্যাঃ সত্যকে অস্বীকারকারক সকল কিছুই মিথ্যা।

মিথ্যাকে সব পাপের জননী বলা হয়। একটি মিথ্যা থেকে শতশত পাপের সূত্রপাত হয়। মিথ্যাবাদীকে আল্লাহপাক প্রচণ্ড ঘৃণা করেন। আল কোরআন ও হাদিসে মিথ্যুক এবং মিথ্যাবাদীর ভয়ানক পরিণতির কথা বলা হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সহযোগী হও। ’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১১৯)।

পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারী ও মিথ্যাবাদীকে সুপথ প্রদর্শন করেন না। ’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ২৮)

আল্লাহ আল কোরআনে হুশিয়ার করে বলেন, ‘সুতরাং পরিণামে তিনি তাদের অন্তরে নিফাক (দ্বিমুখিতা) রেখে দিলেন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তারা আল্লাহকে যে ওয়াদা দিয়েছে তা ভঙ্গ করার কারণে এবং তারা যে মিথ্যা বলেছিল তার কারণে। (সূরা তওবা, আয়াত : ৭৭)

মহান আল্লাহ আও বলেন, ‘(অনুমানভিত্তিক) মিথ্যাচারীরা ধ্বংস হোক। ’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ১০)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে কেয়ামতের দিন তুমি তাদের চেহারাগুলো কালো দেখতে পাবে। ’ (জুমার, আয়াত : ৬০)।

19/04/2021

লকডাউন বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলছে।
দুঃখ একটাই সবার হাতে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন... মনে হলো এটাকেও অপব্যবহার করছি সবাই,,,!!!
পুলিশে সার্ভিস দিয়ে জীবনে কত যে বিচিত্র দৃশ্যের অবতারণা হয় তা দেখি,,,🤣🤣🤣!!!

“যখন আমি ছোট ছিলাম, আমার মা আমাদের জন্য রান্না করতেন। তিনি সারাদিন প্রচুর পরিশ্রম করার পর রাতের খাবার তৈরি করতেন। এক রাত...
19/12/2020

“যখন আমি ছোট ছিলাম, আমার মা আমাদের জন্য রান্না করতেন। তিনি সারাদিন প্রচুর পরিশ্রম করার পর রাতের খাবার তৈরি করতেন। এক রাতে তিনি বাবাকে এক প্লেট সবজি আর একেবারে পুড়ে যাওয়া রুটি খেতে দিলেন। আমি অপেক্ষা করছিলাম বাবার প্রতিক্রিয়া কেমন হয় সেটা দেখার জন্য। কিন্তু বাবা চুপচাপ রুটিটা খেয়ে নিলেন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন স্কুলে আমার আজকের দিনটা কেমন গেছে।

আমার মনে নেই বাবাকে সেদিন আমি কি উত্তর দিয়ে ছিলাম কিন্তু এটা মনে আছে যে, মা পোড়া রুটি খেতে দেয়ার জন্য বাবার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। এর উত্তরে বাবা মা’কে যা বলেছিলেন সেটা আমি কোনদিন ভুলব না। বাবা বললেন, ‘প্রিয়তমা, পোড়া রুটিই আমার পছন্দ।’

পরবর্তীতে সেদিন রাতে আমি যখন বাবাকে শুভরাত্রি বলে চুমু খেতে গিয়েছিলাম তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে তিনি কি আসলেই পোড়া রুটিটা পছন্দ করেছিলেন কিনা।

বাবা আমাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘তোমার মা আজ সারাদিন অনেক পরিশ্রম করেছেন এবং তিনি অনেক ক্লান্ত ছিলেন। তাছাড়া একটা পোড়া রুটি খেয়ে মানুষ কষ্ট পায় না বরং মানুষ কষ্ট পায় কর্কশ ও নিষ্ঠুর কথায়। জেনে রেখো, জীবন হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ জিনিস এবং ত্রুটিপূর্ণ মানুষের সমষ্টি।

আমি কোনক্ষেত্রেই সেরা না বরং খুব কম ক্ষেত্রেই ভাল বলা যায়। আর সবার মতোই আমিও জন্মদিন এবং বিভিন্ন বার্ষিকীর তারিখ ভুলে যাই। এ জীবনে আমি যা শিখেছি সেটা হচ্ছে, আমাদের একে অপরের ভুলগুলোকে মেনে নিতে হবে এবং সম্পর্কগুলোকে উপভোগ করতে হবে।

জীবন খুবই ছোট; প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে অনুতপ্ত বোধ করার কোন মানেই হয় না। যে মানুষগুলো তোমাকে যথার্থ মূল্যায়ন করে তাদের ভালোবাসো আর যারা তোমাকে মূল্যায়ন করে না তাদের প্রতিও সহানুভূতিশীল হও।”

তখন ১৯৪১ সাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। আমরা থাকতাম রামেশ্বরম শহরে। এখানে আমাদের পরিবার বেশ কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে সময় পার করছিল।

আমার বয়স তখন মাত্র ১০ বছর। কলম্বোতে যুদ্ধের দামামা বাজছে, আমাদের রামেশ্বরমেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। খাবার থেকে শুরু করে নিত্যব্যবহার্য পণ্য, সবকিছুরই দারুণ সংকট।

আমাদের সংসারে পাঁচ ভাই, পাঁচ বোন। তাদের মধ্যে তিনজনের আবার নিজেদেরও পরিবার আছে, সব মিলিয়ে এক এলাহি কাণ্ড। আমার দাদি ও মা মিলে সুখে-দুঃখে এই বিশাল সংসার সামলে রাখতেন।

আমি প্রতিদিন ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠে অঙ্ক শিক্ষকের কাছে যেতাম। বছরে মাত্র পাঁচজন ছাত্রকে তিনি বিনা পারিশ্রমিকে পড়াতেন। আমার মা আশিয়াম্মা ঘুম থেকে উঠতেন আমারও আগে। তিনি আমাকে গোসল করিয়ে, তৈরি করে তারপর পড়তে পাঠাতেন।

পড়া শেষে সাড়ে পাঁচটার দিকে বাড়ি ফিরতাম। তারপর তিন কিলোমিটার দূরের রেলস্টেশনে যেতাম খবরের কাগজ আনতে। যুদ্ধের সময় বলে স্টেশনে ট্রেন থামত না, চলন্ত ট্রেন থেকে খবরের কাগজের বান্ডিল ছুড়ে ফেলা হত প্ল্যাটফর্মে।

আমার কাজ ছিল সেই ছুড়ে দেওয়া কাগজের বান্ডিল সারা শহরে ফেরি করা, সবার আগে গ্রাহকের হাতে কাগজ পৌঁছে দেওয়া।

কাগজ বিক্রি শেষে সকাল আটটায় ঘরে ফিরলে মা নাশতা খেতে দিতেন। অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই দিতেন, কারণ আমি একই সঙ্গে পড়া আর কাজ করতাম।

সন্ধ্যাবেলা স্কুল শেষ করে আবার শহরে যেতাম লোকজনের কাছ থেকে বকেয়া আদায় করতে। সেই বয়সে আমার দিন কাটত শহরময় হেঁটে, দৌড়ে আর পড়াশোনা করে।

একদিন সব ভাইবোন মিলে খাওয়ার সময় মা আমাকে রুটি তুলে দিচ্ছিলেন, আমিও একটা একটা করে খেয়ে যাচ্ছিলাম (যদিও ভাত আমাদের প্রধান খাবার, কিন্তু রেশনে পাওয়া যেত গমের আটা)।

খাওয়া শেষে বড় ভাই আমাকে আলাদা করে ডেকে বললেন, ‘কালাম, কী হচ্ছে এসব? তুমি খেয়েই চলছিলে, মাও তোমাকে তুলে দিচ্ছিল। তার নিজের জন্য রাখা সব কটি রুটিও তোমাকে তুলে দিয়েছে। এখন অভাবের সময়, একটু দায়িত্বশীল হতে শেখো। মাকে উপোস করিয়ে রেখো না।’ শুনে আমার শিরদাঁড়া পর্যন্ত শিউরে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে মায়ের কাছে গিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরলাম।

মাত্র পঞ্চম শ্রেণিতে পড়লেও পরিবারে ছোট ছেলে হিসেবে আমার একটা বিশেষ স্থান ছিল। আমাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না। কেরোসিন দিয়ে বাতি জ্বালানো হতো; তাও শুধু সন্ধ্যা সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত।

মা আমাকে কেরোসিনের ছোট্ট একটা বাতি দিয়েছিলেন, যাতে আমি অন্তত রাত ১১টা পর্যন্ত পড়তে পারি। আমার চোখে এখনো পূর্ণিমার আলোয় মায়ের মুখ ভাসে।আমার মা ৯৩ বছর বেঁচে ছিলেন।

ভালোবাসা আর দয়ার এক স্বর্গীয় প্রতিমূর্তি ছিলেন আমার মা। মা, এখনো সেদিনের কথা মনে পড়ে,যখন আমার বয়স মোটে ১০। সব ভাইবোনের ঈর্ষাভরা চোখের সামনে তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাতাম।

সেই রাত ছিল পূর্ণিমার। আমার পৃথিবী শুধু তোমাকে জানত মা! আমার মা! এখনো মাঝরাতে ঘুম ভেঙে উঠি। চোখের জল গড়িয়ে পড়ে। তুমি জানতে ছেলের কষ্ট মা। তোমার আদরমাখা হাত আমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিত।

তোমার ভালোবাসা, তোমার স্নেহ, তোমার বিশ্বাস আমাকে শক্তি দিয়েছিল মা। সৃষ্টিকর্তার শক্তিতে ভয়কে জয় করতে শিখিয়েছিল।

[সূত্র: এ পি জে আবদুল কালামের নিজস্ব ওয়েবসাইট। ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: অঞ্জলি সরকার]

(collected)

04/07/2020

বাড়ির উপার্জনকারী নিঃসঙ্গ শেরপাদের বাঁচতে হবে, বাঁচাতে হবে।

গত কয়েক মাসে আমি বেশ কয়েকজন পরিচিতের মৃত্যর খবর পেয়েছি।
সবার তিনটি জায়গায় মিল,
১. এরা সবাই বয়সে আমার ছোট কিংবা পিঠাপিঠি, চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছর বয়শ।
২. সবাই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন।
৩. সবাই অকস্মাৎ মারা গেছে হৃদরোগে, কিন্তু এরা কেউ হৃদরোগী ছিলেন না। এদের করোনা রিপোর্টও ছিল নেগেটিভ।

প্রতিটি মৃত্যুই আমার বুকে তীরের মতো বেঁধেছে।
আমি অনেক চিন্তা করেছি, সুস্থ, সবল মানুষ, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করতেন, হাঁটতেন এমন কী শখ করে কেউ কেউ ফুটবল খেলতেন, এরা হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা যাবেন কেন?
নিজের মতো করে যে উত্তর আমি পেয়েছি তাহলো, করোনার কারণে অপ্রত্যাশিত আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে তাঁরা মারা গেছেন।
এরা সবাই বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মোটামুটি ভালো চাকুরি করতেন। স্বচ্ছল ছিলেন। ভালো ফ্লাট নিয়ে থাকতেন, বাচ্চারা ভালো স্কুলে পড়ে। কিন্তু করোনা সব ওলট-পালট করে দিয়েছে।
কেউ চাকুরি হারিয়েছেন, কারো বেতন বন্ধ, কারো তা কমে গেছে। এরা সবাই এ আকস্মিক আর্থিক পতনে ভীষণ বিপদে পড়ে গেছেন। একটি জীবন যাত্রায় অভ্যস্ত কেউ হঠাৎ আর্থিক বিপর্যয়ে পড়লে শরীর ও মনে তীব্র প্রভাব ফেলে।
এদের আয় কমে গেছে, কিন্তু খরচ কমেনি। তাই সবাই ছিলেন দিশেহারা। কেউ কেউ আবার চিন্তা করবে বলে পরিবারকে এ বিপর্যয়ের কথা বলেননি। পুরো চাপ একা নিয়েছেন। খাবার টেবিলে হেসেছেন, সে হাসির পেছনে যে রক্তবর্ণ বেদনা লুকিয়ে আছে তা কাউকে বুঝতে দেননি। শেষ পর্যন্ত এ চাপ সইতে পারেননি। ফলাফল- হার্ট অ্য্যাটাক এবং মৃত্যু।
এ মৃতুগুলো যে কী ভয়াবহ কষ্টের তা বলার দরকার নেই।
আমি এধরণের একটি মৃত্যুও দেখতে চাই না। তাই আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে কিছু পরামর্শ দিতে চাই, যদিও তা 'উদ্ভট' বা 'অসম্ভব' মনে হতে পারে।

১. দয়া করে পরিবারের সাথে সমস্যা শেয়ার করুন। তাঁরা আজ বা কাল ব্যাপারটা জানবেনই। তাই গোপন না করে তাঁদের নিয়েই পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন।
২. প্রয়োজনে নাটকীয়ভাবে জীবনযাত্রা নামিয়ে আনুন। মিডল ক্লাসের প্রচলিত 'ইগো'র কারণে আমরা অযথা অনেক খরচ বাড়িয়েছি। সেগুলো চাইলে বাদ দেয়া যায়। কম দামের বাড়িতে শিফট করুন। গাড়ি বিক্রি করে দিন। অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিন। কে কী বললো সেদিকে পাত্তা দিবেন না, এখন টিকে থাকাটাই মুখ্য।
৩. বাচ্চাদের স্কুল খরচ খুব বেশি হলে তাও বদলে ফেলুন। আমাদের মনে রাখা উচিত, স্কুলকে খ্যাতিমান করে শিক্ষার্থীরা, স্কুল কোনো শিক্ষার্থীকে খ্যাতিমান করে না। স্কুলের পরিচয়ে ছাত্রছাত্রীদের আখেরে কোনো লাভ হয় না। কাজ হয় তার রেজাল্টে। সেটা যেকোনো ধরণের স্কুল থেকেই করা যায়। এই যে প্রতিবছর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস বের হয়, এদের বেশির ভাগ সাধারণ স্কুল কলেজে পড়েছে। নামকরা প্রতিষ্ঠানে নয়।
৪. সময়টা খুব খারাপ। তাই কোনো সমস্যা না থাকলেও মাঝে মাঝে ইসিজি করিয়ে ডাক্তারের সাথে আলাপ করুন।
৫. সমস্যা ভাই-বোনের সাথে আলাপ করুন। পরিবারের যে ভাই বা বোন বিপদে পড়েছেন, তাঁকে অন্যরা আগলে রাখুন। টাকা গেলে টাকা আসবে। ভাই-বোন গেলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। এই কঠিন সময়ে সবাই এক ছাতার নিচে আশ্রয় নিন। একজনের উষ্ণতা দিয়ে আরেকজনকে রক্ষা করুন।
৬. এ দুঃসময়ে যৌথ পরিবারে ফিরে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। পরিবারের সবার সম্মিলিত আয় যদি সবার কাজে লাগানো যায় তাহলে সবাই উপকৃত হবেন। একা তো অনেক থাকলাম, এবার না হয় একটু কম্প্রোমাইজ করে সবাই মিলে থাকি। স্থায়ী বেদনাকে আমন্ত্রণ জানানোর চেয়ে এটা অনেক ভালো। মনে রাখবেন, যে মেষ শাবক পালছুট হয়, সে-ই বাঘের কবলে পড়ে। আমার এ আইডিয়া অনেকের কাছে 'অসম্ভব' মনে হতে পারে, কিন্তু আমি মনে করি, বর্তমান দুর্যোগ কাটানোর সবচে বড়ো ওষুধ এটাই। আমরা ভাইবোনরা প্রয়োজনে এরকম কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি। যদিও এখন পর্যন্ত আমরা সবাই ভালো আছি।
৭. দয়া করে সমস্যার কথা বন্ধুদের বলুন। আর যেসব বন্ধুরা ভালো আছেন, তাঁরা বিপদগ্রস্থ বন্ধুকে আগলে রাখুন। প্রয়োজনে তাঁর জন্য 'বেইল আউট' প্ল্যান করুন। সবাই হাত লাগালে বিপন্ন বন্ধুটির জন্য ছোটখাট সম্মানজনক একটি ব্যবসা দাঁড় করিয়ে দেয়া মোটেও অসম্ভব নয়। বিভিন্ন সময় আমরা এটা করে দেখেছি, সফলও হয়েছি।
৮. মধ্যবিত্তের যে ইগোর কথা বলছিলাম, তা একদম বাদ দেন। পৃথিবীর সবচে খারাপ তিন অক্ষরের শব্দ হলো EGO'.
এটা বাদ দিয়ে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ান। যেমন, ছাত্র জীবনে যিনি টিউশনি করতেন, তিনি প্রয়োজনে লকডাউনের পর তাতে ফিরে যান। যাদের বাড়িতে জায়গা আছে, তাঁরা কৃষি থেকে আয়ের ব্যবস্থা করুন। পুকুর থাকলে মাছ চাষ করুন, হাঁস-মুরগি পালন করুন। এগুলো নিজেকেই করতে হবে এমন কথা নেই। লোক লাগিয়েও।করা যায়। বাড়ির মহিলারা সেলাই কাজ, হোম মেইড ফুড এধরণের ছোট ছোট উদ্যোগ নিন।অনলাইন/অফলাইনে বিক্রি করুন। সততাকে পূঁজি করলে ক্রেতার অভাব হবে না।
এখন যুদ্ধকাল, আমাদের আগের কয়েক প্রজন্ম এমন ভয়াবহ আর্থিক দূরবাস্থায় পড়েনি, পরের প্রজন্মও সম্ভবত পড়বে না। এটা কাটিয়ে ওঠার জন্য যে যেটা জানি, যার যেটা আছে তাই আঁকড়ে ধরতে হবে। এখন ফালতু ইগোর সময় নয়।
০৯. বিগত কয়েক বছর পূণর্মিলনী/ রি-ইউনিয়নের বন্যা
আমরা দেখেছি। লাখ লাখ টাকা এসব অনুষ্ঠানে খরচ হয়েছে।
এসব অ্যালামনাই এখন প্রত্যেক সদস্যের বিপদে পাশে দাঁড়াতে পারেন। নয়তো এসব মিলন মেলা/প্রাণের বন্ধন একটি
লোক দেখানো ফালতু ব্যাপার ছিল তাই প্রমাণিত হবে। ( আমি সব সময় বলতাম, এতো টাকা শুধু খাওয়া দাওয়া আর নাচ-গানের পেছনে খরচ না করে কিছু জমান, একটা 'ফান্ড' তৈরি করেন, বিপদ যে কোনো সময় আসতে পারে, তখন কাজে লাগবে। নাউ ইট'স রেইনিং। টাকাটা হাতে রাখলে আমরা বন্ধুদের বিপদে কাজে লাগাতে পারতাম। হয়তো বাথরুমে দড়াম করে পড়ে গিয়ে তাজা বন্ধুটি লাশে পরিণত হতো না।)
১০. সবশেষে বলি, বাড়ির একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য হচ্ছেন নিঃসঙ্গ শেরপা। তাঁকে একাই লড়াই করতে হয়। এ একাকী যোদ্ধাকে বাড়ির সবাই স্বস্তি দিন, যত্ন করুন, মায়ায় ডুবিয়ে রাখুন। তিনি যাতে অযথা চাপে না পড়েন সেদিকে নজর দিন।

সম্মিলিত চেষ্টায় আসুন বিপদ কাটিয়ে উঠি।
দশ মিনিটের বুকে ব্যথায় যিনি মারা যাচ্ছেন, তা আসলে দশ মিনিটের ব্যথা নয়, দিনের পর দিনের ব্যথা। অনিশ্চয়তার এ দীর্ঘ ব্যথার চাপ আসলে তিনি আর নিতে পারেননি। একমাত্র স্বজনদের সম্মিলিত হাত সে বুকে রাখলেই এ ব্যথা কমবে।
#আসুনমায়াছড়াই।
কপিরাইট: বাদল সৈয়দ.

★যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের Elmhurst hospital এর নার্স হিসেবে কর্মরত আছে আমাদের ছোটবোন Ayesha Akter (Happy).★ সে আমাদের এ...
13/04/2020

★যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের Elmhurst hospital এর নার্স হিসেবে কর্মরত আছে আমাদের ছোটবোন Ayesha Akter (Happy).
★ সে আমাদের এসএসসি -১৯৯১, চবি -২৯ ব্যাচের এবংচবি লোকপ্রশাসন বিভাগের সহপাঠী Amena Begum এর ইমিডিয়েট ছোটবোন।
★এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি করোনা দ্বারা আক্রান্ত শহরের নাম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক।
★ সেখানে সে তার ছোট্ট ছোট্ট দুটো বাচ্চাকে রেখে মানবতার সেবায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এ ছোট বোনটি।
★ পারিবারিক জীবনে তার স্বামী এবং এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
★তার স্বামী আমাদের চবি লোকপ্রশাসন বিভাগের সহপাঠী এবং চবি- ২৯ এর বন্ধু S M Iqbal Faroque।
সকলের কাছে এ ছোট বোনটির জন্য দোয়া চাই। করোনা মুক্ত পৃথিবীতে মুক্তির গানে এদের অবদান একদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

28/01/2020

“করোনা” ভাইরাস -----নিয়ে একটু জানি,,,
আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে ইসলাম ধর্মে শিকারী ও মাংসাশী পশু, পাখি খাওয়া সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করা হয়েছে। অথচ চীনাদের প্রিয় খাবারের তালিকায় সব ধরনের শিকারী পশু-পাখি,বিষাক্ত সাপ,কীট পতঙ্গ সবই বিদ্যমান,,,, অার যা খাওয়ার কুফল আজ আমরা চীনে দেখতে পাচ্ছি। আবার পানির নীচে বসবাসকারী ( যা কখনো ডাঙ্গায় আসে না) সকল প্রকার জীব ইসলামে হালাল করা হয়েছে। মাংসাশী প্রাণীগুলো হারাম করার মূল কারণ হলো একমাত্র ঐ প্রাণীগুলোই বিভিন্ন ধরণের ঘাতক জীবাণু বহন করে যা মানুষের মধ্যেও মরণব্যাধি বয়ে আনতে সক্ষম। বিজ্ঞানীরা রিসার্চ করে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি খুঁজে পেয়েছেন। চীনের উহান প্রদেশের একটি মাংসের দোকানে সাপ ও বাদুড়ের মাংস বিক্রি হতো। বাদুড় ঐ ভাইরাস বহণ করে, আবার সাপও বাদুড় খায়। মানুষ ঐ দুটোই খেয়েছে যার ফলস্বরূপ মানুষের শরীরে ঐ ভাইরাস ঢুকে পড়ে এবং ক্রমান্বয়ে তা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে। বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন মাছের মধ্যে নিরীক্ষা চালিয়ে বুঝতে পেরেছে যে ঐধরণের ঘাতকজীবাণু জলের নীচে যাতায়াতে অক্ষম। তাই মাছ থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রামন হওয়া অসম্ভব। এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে ইতিমধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে এবং তাড়াতাড়ি এর প্রতিরোধক বের না করলে আগামী তিনমাসের মধ্যেই তা ব্যাপক আকার ধারণ করে পুরো পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়তে পারে। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে এই গজব হতে রক্ষা করুন। আমীন।
আল্লাহ আমদের এই আযাব থেকে হেফাযত রাখুন আমিন .....
(সংগৃহীত )

02/12/2019
বিজয়ের মাসের শুরুতে সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যদের এবং  ৩০ লক্ষ শহীদের  পরিবারবর্গকে জানাই অকৃত্রিম শুভেচ্ছা ও...
01/12/2019

বিজয়ের মাসের শুরুতে সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যদের এবং ৩০ লক্ষ শহীদের পরিবারবর্গকে জানাই অকৃত্রিম শুভেচ্ছা ও সশ্রদ্ধ সালাম। সেসাথে সকল শহীদ ও পরলোকগত মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি |
বিজয়ের মাসে অামরা তোমাদের ভুলবো না।

10/09/2019

হযরত সালেহ (আ)-এর উষ্ট্রীর মোজেযা

(আরবী*************************************পিডিএফ ৩৬৬ )

“সামুদ জাতির কাছে আমি তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। সে তাদেরকে বললো, হে আমার স্বজাতিয় ভাইয়েরা! তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর। আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোনো খোদা নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর সুস্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত। আল্লহার যমীনে বিচরণ করতে থাক। কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে তাকে স্পর্শ কর না। নইলে তোমরা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির কবলে পড়বে”।–(সূরা আ’রাফঃ ৭৩)

বাহ্যিক বাচনভঙ্গি থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, আয়াতের প্রথম অংশে সুস্পষ্ট প্রমাণ ও দ্বিতীয়াংশে নিদর্শন শব্দদ্বয় দ্বারা এ উষ্ট্রীকেই বুঝানো হয়েছে। সূরা শূয়ারার অষ্টম রুকু’তে বিশদভাবে বলা হয়েছে যে, সামুদ জাতি স্বয়ং হযরত সালেহের কাছে নিদর্শন চেয়েছিল, যাতে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, তিনি আল্লাহর নবী। সেই দাবীর জবাবেই হযরত সালেহ উষ্ট্রী হাযির করেছিলেন। সুতরাং উষ্ট্রী যে মোজেযাস্বরূপই এসেছিলেন, তা সন্দেহাতীতভাবে সত্য। অন্যান্য বহু নবী অবিশ্বাসীদের জবাবে আপন নবুয়াতের প্রমাণ হিসেবে যেসব মোজেযা দেখাতেন, এটা সে ধরনেরই একটি মোজেযা। হযরত সালেহ অবিশ্বাসীদেরকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন যে, উষ্ট্রীর বেঁচে থাকার ওপর তোমাদের জীবন নির্ভরশীল। এ হুঁশিয়ারী থেকৈ প্রমাণিত হয় যে, উষ্ট্রীর জন্ম হয়েছিল মোজেযার আকারে। তিনি আরো বলেছিলেন যে, উষ্ট্রী তোমাদের ক্ষেতে অবাধে চরে বেড়াবে। একদিন সে একাকী পানি খাবে। অপর দিন অন্য সকলের জন্তু-জানোয়ার পানি খাবে। তোমরা যদি তার কোনো ক্ষতি কর তাহলে সহসা তোমাদের ওপর খোদার আযাব নেমে আসবে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জিনিসের অলৌকিকত্ব লোকেরা স্বচক্ষে দেখতে পায়, তাকেই শুধু এমন মর্যাদার সাথে উপস্থাপিত করা যায়। উষ্ট্রীটি যেখানে খুশী চরে বেড়াত এবং একদিন সে একা আর অপর দিন সকেলর জানোয়ার পানি খেত। অবস্থা অনেক দিন চলেছে এবং তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তা বরদাশত করেছে। অবশেষে অনেক সলা-পরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করে তাকে মেরে ফেলা হলো। অথচ হযরত সালেহের এমন কোনো শক্তি ছিল না যার জন্যে তাঁকে ভয় করার কিছু ছিল। এ উষ্ট্রীর অলৌকিকত্বের আরও প্রমাণ এই যে, তারা এর জন্যে ভীত-সন্ত্রস্ত ছিল এবং জানত যে, তার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো শক্তি আছে যার বলে সে তাদের মধ্যে অমন স্পর্ধার সাথে ঘুরাফেরা করে। উষ্ট্রীটি কি ধরনের ছিল এবং কিভাবে তার আবির্ভাব ঘটলো, সে সম্পর্কে কুআন ও হাদীসে কোনো স্পষ্ট বিবরণ পাওয়া যায় না। সে জন্যে তাফসীরকারগণ এর জন্ম সম্পর্কে যেসব বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন, তা গ্রহণ করার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু কুরআন থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, উষ্ট্রীটি কোনো না কোনো দিক দিয়ে মোজেযা হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছিল।

at-tahreek.comMenu ২. হযরত নূহ (আলাইহিস সালাম) নূহ (আঃ)-এর পরিচয়তৎকালীন সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থাস্বীয় কওমের প্রতি নূহ (আঃ...
10/09/2019

at-tahreek.com

Menu



২. হযরত নূহ (আলাইহিস সালাম)



নূহ (আঃ)-এর পরিচয়তৎকালীন সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থাস্বীয় কওমের প্রতি নূহ (আঃ)-এর দাওয়াতনূহ (আঃ)-এর বিরুদ্ধে পাঁচটি আপত্তি আপত্তি সমূহের জওয়াব

নূহ (আঃ)-এর দাওয়াতের ফলশ্রুতিনূহের প্লাবন ও গযবের কুরআনী বিবরণঅন্যান্য বিবরণনৌকার আরোহীগণনূহ (আঃ)-এর জীবনী থেকে শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ



আদম (আঃ) থেকে নূহ (আঃ) পর্যন্ত দশ শতাব্দীর ব্যবধান ছিল। যার শেষদিকে ক্রমবর্ধমান মানবকুলে শিরক ও কুসংস্কারের আবির্ভাব ঘটে এবং তা বিস্তৃতি লাভ করে। ফলে তাদের সংশোধনের জন্য আল্লাহ নূহ (আঃ)-কে নবী ও রাসূল করে পাঠান। তিনি সাড়ে নয়শত বছরের দীর্ঘ বয়স লাভ করেছিলেন এবং সারা জীবন পথভোলা মানুষকে পথে আনার জন্য দাওয়াতে অতিবাহিত করেন। কিন্তু তাঁর কওম তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে। ফলে আল্লাহর গযবে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এরপরে আরও কয়েকটি কওম আল্লাহর অবাধ্যতার কারণে পরপর ধ্বংস হয়। এভাবে পৃথিবীতে আদি যুগে ধ্বংসপ্রাপ্ত ৬টি জাতির ঘটনা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে এবং কুরআনের মাধ্যমেই জগদ্বাসী তাদের খবর জানতে পেরেছে। যাতে মুসলিম উম্মাহ ও পৃথিবীবাসী তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। উক্ত ৬টি জাতি হ’ল- কওমে নূহ, ‘আদ, ছামূদ, কওমে লূত, মাদইয়ান ও কওমে ফেরাঊন। অবশ্য কুরআনে এ তালিকায় কওমে ইবরাহীমের কথাও এসেছে (তওবাহ ৯/৭০)। যদিও তারা একত্রে ধ্বংস হয়নি। তবে ইবরাহীমের ভাতিজা লূত-এর কওম একত্রে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়েছিল। আমরা এখানে প্রথমে নূহ (আঃ) ও তাঁর কওম সম্পর্কে আলোচনা করব।

নূহ (আঃ)-এর পরিচয় :

‘আবুল বাশার ছানী’ (ابوالبشرالثانى ) বা মানবজাতির দ্বিতীয় পিতা বলে খ্যাত নূহ (আলাইহিস সালাম) ছিলেন পিতা আদম (আলাইহিস সালাম)-এর দশম অথবা অষ্টম অধঃস্তন পুরুষ। তিনি ছিলেন দুনিয়াতে ১ম রাসূল।[1]

নূহ (আঃ)-এর চারটি পুত্র ছিলঃ সাম, হাম, ইয়াফিছ ও ইয়াম অথবা কেন‘আন।[2] প্রথম তিনজন ঈমান আনেন। কিন্তু শেষোক্ত জন কাফের হয়ে প্লাবনে ডুবে মারা যায়। নূহ (আঃ)-এর দাওয়াতে তাঁর কওমের হাতেগণা মাত্র কয়েকজন ঈমানদার ব্যক্তি সাড়া দেন এবং তারাই প্লাবনের সময় নৌকারোহণের মাধ্যমে নাজাত পান। নূহের কিশতীতে কয়জন ঈমানদার ব্যক্তি আরোহণ করে নাজাত পেয়েছিলেন, সে বিষয়ে কুরআনে বা হাদীছে কোন কিছুই বর্ণিত হয়নি। অমনিভাবে কিশতীটি কত বড় ছিল, কিভাবে ও কত দিনে তৈরী হয়েছিল, এসব বিষয়েও কিছু বর্ণিত হয়নি। এসব বিষয়ে যা কিছু বিভিন্ন তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে, সবকিছুর ভিত্তি হ’ল ইস্রাঈলী উপকথা সমূহ। যার সঠিক কোন ভিত্তি নেই।[3] ইমাম তিরমিযী হযরত সামুরা (রাঃ) প্রমুখাৎ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে সূরা ছাফফাত ৭৭ আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করেন যে, নূহের প্লাবন শেষে কেবল তাঁর তিন পুত্র সাম, হাম ও ইয়াফেছ-এর বংশধরগণই অবশিষ্ট ছিল।[4] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরও বলেন যে, سام أبو العرب وحام أبو الحبش و يافث أبو الروم. ‘সাম আরবের পিতা, হাম হাবশার পিতা এবং ইয়াফেছ রোমকদের (গ্রীক) পিতা’।[5]ইবনু আববাস ও ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেন, পরবর্তী মানব জাতি সবাই নূহের বংশধর’।[6]

আল্লাহ বলেন, وَجَعَلْنَا ذُرِّيَّتَهُ هُمُ الْبَاقِيْنَ. ‘আমরা তার (নূহের) বংশধরগণকেই অবশিষ্ট রেখেছি’ (ছাফফাত ৩৭/৭৭)। ফলে ইহুদী-খৃষ্টান সহ সকল ধর্মমতের লোকেরা নূহ (আঃ)-কে তাদের পিতা হিসাবে মর্যাদা দিয়ে থাকে। সাম ছিলেন তিন পুত্রের মধ্যে বড়। তিনি ছিলেনأبو العرب বা আরব জাতির পিতা। তাঁর বংশধরগণের মধ্যেই ছিলেন হযরত ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক এবং ইসমাঈলের বংশধর ছিলেন মানবজাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ)। ইসহাকের বংশধরগণের মধ্যে ছিলেন ইয়াকূব, ইউসুফ, মূসা, দাঊদ, সুলায়মান, ইউনুস, ইলিয়াস, ঈসা প্রমুখ নবী ও রাসূলগণ। হাম ও ইয়াফেছ-এর বংশধরগণের নিকটে প্রেরিত নবীগণের নাম জানা যায়নি। তবে আরবদের মধ্যকার চারজন নবী ছিলেন হূদ, ছালেহ, শু‘আয়েব ও মুহাম্মাদ (ছাঃ)।[7] অধিকাংশ ছাহাবীর মতে নূহ (আঃ) ছিলেন ইদরীস (আঃ)-এর পূর্বেকার নবী।[8] তিনিই ছিলেন জগতের প্রথম রাসূল।[9] ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, তিনি চল্লিশ বছর বয়সে নবুঅত প্রাপ্ত হন এবং মহাপ্লাবনের পর ষাট বছর জীবিত ছিলেন।[10] ফলে সুদীর্ঘকাল যাবত তিনি নবী হিসাবে শিরকে নিমজ্জিত হঠকারী কওমকে দাওয়াত দেন। প্লাবনের পর তাঁর সাথে নৌকারোহী মুমিন নর-নারীদের মাধ্যমে পৃথিবীতে নতুনভাবে আবাদ শুরু হয় এবং তাদেরকে তিনি সত্যের পথে পরিচালিত করেন। এ কারণে তাঁকে ‘মানব জাতির দ্বিতীয় পিতা’ বলা হয়।

আদম (আঃ) ৯৬০ বছর বেঁচে ছিলেন[11] এবং নূহ (আঃ) ৯৫০ বছর জীবন পেয়েছিলেন (আনকাবূত ২৯/১৪)। উল্লেখ্য যে, আদম ও নূহ (আঃ)-এর দীর্ঘ বয়স আল্লাহর বিশেষ দান ও তাঁদের মু‘জেযা স্বরূপ ছিল। নূহ (আঃ)-এর পুরুষানুক্রমিক বয়স তাঁর ন্যায় দীর্ঘ ছিল না। নূহ (আঃ) ইরাকের মূছেল নগরীতে স্বীয় সম্প্রদায়ের সাথে বসবাস করতেন। তারা বাহ্যতঃ সভ্য হ’লেও শিরকের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তিনি তাদের হেদায়াতের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন।

উল্লেখ্য যে, হযরত নূহ (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ২৮টি সূরায় ৮১টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।[12]

তৎকালীন সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থা :

আদম (আঃ)-এর সময়ে ঈমানের সাথে শিরক ও কুফরের মুকাবিলা ছিল না। তখন সবাই তওহীদের অনুসারী একই উম্মতভুক্ত ছিল (বাক্বারাহ ২/২১৩)। তাঁর শরী‘আতের অধিকাংশ বিধানই ছিল পৃথিবী আবাদকরণ ও মানবীয় প্রয়োজনাদির সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু কালের বিবর্তনে মানুষের মধ্য শিরকের অনুপ্রবেশ ঘটে। নূহের কওম ওয়াদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়াঊক্ব ও নাস্র প্রমুখ মৃত নেককার লোকদের অসীলায় আখেরাতে মুক্তি পাবার আশায় তাদের পূজা শুরু করে। এই পূজা তাদের কবরেও হ’তে পারে, কিংবা তাদের মূর্তি বানিয়েও হ’তে পারে। মুহাম্মাদ ইবনু ক্বায়েস বলেন, আদম ও নূহ (আঃ)-এর মধ্যবর্তী সময়কালের এই পাঁচজন ব্যক্তি নেককার ও সৎকর্মশীল বান্দা হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাঁদের মৃত্যুর পর ভক্ত অনুসারীগণকে শয়তান এই বলে প্ররোচনা দেয় যে, এইসব নেককার মানুষের মূর্তি সামনে থাকলে তাদের দেখে আল্লাহর প্রতি ইবাদতে অধিক আগ্রহ সৃষ্টি হবে। ফলে তারা তাদের মূর্তি বানায়। অতঃপর উক্ত লোকদের মৃত্যুর পরে তাদের পরবর্তীগণ শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ঐ মূর্তিগুলিকেই সরাসরি উপাস্য হিসাবে পূজা শুরু করে দেয়। তারা এইসব মূর্তির অসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করত’।[13] আর এভাবেই পৃথিবীতে প্রথম মূর্তিপূজার শিরকের সূচনা হয়।

ইমাম বুখারী (রহঃ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন যে, এই লোকগুলি হযরত নূহ (আঃ)-এর যুগের নেককার ব্যক্তি ছিলেন। তাদের মৃত্যুর পর শয়তান তাদের অনুসারীদের এই মর্মে ধোঁকা দিল যে, এঁদের বসার স্থানগুলিতে এক একটি মূর্তি বানাও ও তাদের নামে নামকরণ কর। লোকেরা তাই করল। ...

এই মূর্তিগুলি পরবর্তীকালে আরবদের মধ্যেও চালু ছিল। ‘ওয়াদ’ ছিল বনু কালবের জন্য দূমাতুল জান্দালে, সুওয়া‘ ছিল বনু হোযায়েলের জন্য, ইয়াগূছ ছিল বনু গুত্বায়েফ-এর জন্য জুরুফ নামক স্থানে, ইয়া‘ঊক্ব ছিল বনু হামদানের জন্য এবং নাস্র ছিল হিমইয়ার গোত্রের বনু যি-কালা এর জন্য’।[14]

ইবনু আবী হাতেম-এর বর্ণনায় এসেছে যে, ‘ওয়াদ’ ছিল এদের মধ্যে প্রথম এবং সর্বাধিক নেককার ব্যক্তি। তিনি মারা গেলে লোকেরা তার প্রতি ভক্তিতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। শয়তান এই সুযোগ গ্রহণ করে এবং লোকদেরকে তার মূর্তি বানাতে প্ররোচনা দেয়। ফলে ওয়াদ-এর মূর্তিই হ’ল পৃথিবীর সর্বপ্রথম মূর্তি, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যার পূজা শুরু হয়’।[15]

অতএব পৃথিবীর প্রাচীনতম শিরক হ’ল নেককার মানুষের কবর অথবা তাদের মূর্তিপূজা। যা আজও প্রায় সকল ধর্মীয় সমাজে চালু আছে এবং বর্তমানে যা মুসলিম সমাজে স্থানপূজা, কবর পূজা, ছবি-প্রতিকৃতি, মিনার ও ভাষ্কর্য পূজায় রূপ নিয়েছে। উক্ত পাঁচটি মূর্তির মাহাত্ম্য ও তাদের প্রতি ভক্তি লোকদের হৃদয়ে এমনভাবে প্রোথিত হয়েছিল যে, তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এবং পারস্পরিক চুক্তি সম্পাদনকালে তাদের নাম উল্লেখ করত। এতদ্ব্যতীত তারা নানাবিধ সামাজিক অনাচারে ডুবে গিয়েছিল। সম্প্রদায়ের এইরূপ পতন দশায় আল্লাহ তাদের হেদায়াতের জন্য নূহ (আঃ)-কে রাসূল হিসাবে প্রেরণ করেন (আ‘রাফ ৭/৬১)।

স্বীয় কওমের প্রতি নূহ (আঃ)-এর দাওয়াত :

আল্লাহ বলেন,

إِنَّا أَرْسَلْنَا نُوحاً إِلَى قَوْمِهِ أَنْ أَنذِرْ قَوْمَكَ مِن قَبْلِ أَن يَّأْتِيَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ، قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي لَكُمْ نَذِيرٌ مُّبِينٌ،َ أَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاتَّقُوهُ وَأَطِيعُونِ، يَغْفِرْ لَكُم مِّنْ ذُنُوْبِكُمْ وَيُؤَخِّرْكُمْ إِلَى أَجَلٍ مُّسَمًّى إِنَّ أَجَلَ اللهِ إِذَا جَاءَ لاَ يُؤَخَّرُ لَوْ كُنتُمْ تَعْلَمُونَ- (نوح ১-৪)-

‘আমরা নূহকে তার কওমের নিকটে প্রেরণ করলাম তাদের উপরে মর্মান্তিক আযাব নাযিল হওয়ার পূর্বেই তাদেরকে সতর্ক করার জন্য’। ‘নূহ তাদেরকে বলল, হে আমার জাতি! আমি তোমাদের জন্য স্পষ্ট সতর্ককারী’। ‘এ বিষয়ে যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর’। ‘তাতে আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দিবেন। তবে এটা নিশ্চিত যে, আল্লাহর নির্ধারিত সময় যখন এসে যাবে, তখন তা এতটুকুও পিছানো হবে না। যদি তোমরা তা জানতে’ (নূহ ৭১/১-৪)।

অতঃপর তিনি তাদেরকে শিরক পরিত্যাগ করে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর ইবাদতে ফিরিয়ে আনার জন্য বান্দার উপরে আল্লাহর অসংখ্য অনুগ্রহ ও অগণিত নে‘মতরাজির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন,

أَلَمْ تَرَوْا كَيْفَ خَلَقَ اللَّهُ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقا، وََجَعَلَ الْقَمَرَ فِيهِنَّ نُوراً وَّجَعَلَ الشَّمْسَ سِرَاجاً، وَاللهُ أَنبَتَكُم مِّنَ الْأَرْضِ نَبَاتاً، ثُمَّ يُعِيدُكُمْ فِيهَا وَيُخْرِجُكُمْ إِخْرَاجاً، وَالله ُجَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ بِسَاطاً، لِتَسْلُكُوا مِنْهَا سُبُلاً فِجَاجاً- (نوح ১৫-২০)-

‘তোমরা কি লক্ষ্য কর না, আল্লাহ কিভাবে সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন’। ‘সেখানে তিনি চন্দ্রকে রেখেছেন আলো রূপে এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপ রূপে’। ‘আল্লাহ তোমাদেরকে মাটি থেকে উদ্গত করেছেন’। ‘অতঃপর তাতে ফিরিয়ে নিবেন ও আবার পুনরুত্থিত করবেন’। ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য যমীনকে করেছেন বিছানা সদৃশ’। ‘যাতে তোমরা চলাফেরা করতে পার প্রশস্ত রাস্তাসমূহে’ (নূহ ৭১/১৫-২০)।

নূহ (আঃ) স্বীয় কওমকে দিন-রাত দাওয়াত দিতে থাকেন। তিনি তাদেরকে প্রকাশ্যে ও গোপনে বিভিন্ন পন্থায় ও পদ্ধতিতে দাওয়াত দেন। কিন্তু ফলাফল হয় নিতান্ত নৈরাশ্যজনক। তাঁর দাওয়াতে অতিষ্ট হয়ে তারা তাঁকে দেখলেই পালিয়ে যেত। কখনো কানে আঙ্গুল দিত। কখনো তাদের চেহারা কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেলতো। তারা তাদের হঠকারিতা ও যিদে অটল থাকত এবং চরম ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করত’ (নূহ ৭১/৬-৯)। এক সময় কওমের সর্দাররা লোকদের ডেকে বলল, وَقَالُوا لاَ تَذَرُنَّ آلِهَتَكُمْ وَلاَ تَذَرُنَّ وَدّاً وَلاَ سُوَاعاً وَّلاَ يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسْراً- (نوح ২১-২৩)- (খবরদার!) ‘তোমরা তোমাদের পূর্ব পুরুষদের পূজিত উপাস্য ওয়াদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়াঊক্ব, নাস্র-কে কখনোই পরিত্যাগ করবে না’। (এভাবে) ‘তারা বহু লোককে পথভ্রষ্ট করে এবং (তাদের ধনবল ও জনবল দিয়ে) নূহ-এর বিরুদ্ধে ভয়ানক সব চক্রান্ত শুরু করে’ (নূহ ৭১/২১-২৩)।

নূহ (আঃ)-এর বিরুদ্ধে পাঁচটি আপত্তি :

কওমের অবিশ্বাসী নেতারা জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য নূহ (আঃ)-এর বিরুদ্ধে পাঁচটি আপত্তি উত্থাপন করেছিল। যথাঃ (১) আপনি তো আমাদের মতই একজন মানুষ। নবী হ’লে তো ফেরেশতা হতেন। (২) আপনার অনুসারী হ’ল আমাদের মধ্যকার হীন ও কম বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা (৩) কওমের উপরে আপনাদের কোন প্রাধান্য পরিদৃষ্ট হয় না (হূদ ১১/২৭)। (৪) আপনার দাওয়াত আমাদের বাপ-দাদাদের রীতি বিরোধী (৫) আপনি আসলে নেতৃত্বের অভিলাষী (মুমিনূন ২৩/২৪-২৫)। অতএব আপনাকে আমরা মিথ্যাবাদী মনে করি (হূদ ১১/২৭)।

জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্য নূহ-এর দাওয়াতকে ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক আন্দোলন বলে আখ্যায়িত করে কাফের নেতারা বলল,

فَقَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ كَفَرُوْا مِنْ قَوْمِهِ مَا هَذَا إِلاَّ بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُرِيدُ أَن يَّتَفَضَّلَ عَلَيْكُمْ وَلَوْ شَآءَ الله ُلَأَنزَلَ مَلَآئِكَةً مَّا سَمِعْنَا بِهَذَا فِيْ آبَائِنَا الْأَوَّلِيْنَ- (المؤمنون ২৪-২৫)-

‘এ লোক তো তোমাদের মতই একজন মানুষ। আসলে সে তোমাদের উপরে নেতৃত্ব করতে চায়। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তো একজন ফেরেশতা পাঠাতে পারতেন। তাছাড়া এ লোক যেসব কথা বলছে, তাতো আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের কাছে কখনো শুনিনি’। ‘আসলে লোকটার মধ্যে পাগলামী রয়েছে কিংবা তার সাথে কোন জিন রয়েছে। অতএব তোমরা এ ব্যক্তির দিকে ভ্রুক্ষেপ কর না। বরং কিছুদিন অপেক্ষা কর’ (মুমিনূন ২৩/২৪-২৫)। (এভাবে) ‘তারা তাঁকে সরাসরি পাগল বলে এবং (প্রাণে মারার) হুমকি দেয়’ (ক্বামার ৫৪/৯)।

আপত্তি সমূহের জওয়াব :

(১) গোত্রের নেতাদের উপরোক্ত আপত্তি ও অপবাদ সমূহের জবাবে নূহ (আঃ) বলেন,

قَالَ يَا قَوْمِ أَرَأَيْتُمْ إِنْ كُنْتُ عَلَى بَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّيْ وَآتَانِيْ رَحْمَةً مِّنْ عِنْدِهِ فَعُمِّيَتْ عَلَيْكُمْ أَنُلْزِمُكُمُوْهَا وَأَنتُمْ لَهَا كَارِهُوْنَ- (هود ২৮)-

‘হে আমার কওম! আমি যদি আমার প্রভুর পক্ষ হ’তে স্পষ্ট দলীলের উপরে থাকি, আর তিনি যদি তাঁর পক্ষ হ’তে আমাকে রহমত দান করেন, আর সেসব থেকে যদি তোমাদের চক্ষু অন্ধ থাকে, তাহ’লে কি আমি তা তোমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোমাদের উপরে চাপিয়ে দিতে পারি? (হূদ ১১/২৮)। একথা দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, নবুওয়াত ও রিসালাত চেয়ে পাওয়া যায় না। এটা সস্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি মানুষের জন্য কোন ফেরেশতাকে নয়, বরং তাঁর মনোনীত কোন মানুষকেই নবী করে পাঠিয়ে থাকেন স্পষ্ট দলীল-প্রমাণ সহকারে। নূহ (আঃ) তাঁর কওমকে আরও বলেন,

أَوَعَجِبْتُمْ أَنْ جَاءَكُمْ ذِكْرٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَلَى رَجُلٍ مِّنكُمْ لِيُنْذِرَكُمْ وَلِتَتَّقُوا وَلَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ- (الأعراف ৬৪)-

‘তোমরা কি এ বিষয়ে আশ্চর্যবোধ করছ যে, তোমাদের পালনকর্তার পয়গাম তোমাদের মধ্য থেকেই একজনের মাধ্যমে তোমাদের কাছে এসেছে, যাতে সে তোমাদের ভীতি প্রদর্শন করে ও তার ফলে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও’ (আ‘রাফ ৭/৬৩)। আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু তারা নূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে। তখন আমরা তাকে ও তার নৌকারোহী সাথীদেরকে মুক্ত করি এবং আমাদের আয়াত সমূহে মিথ্যারোপকারীদের ডুবিয়ে মারি। বস্ত্ততঃ তারা ছিল জ্ঞানান্ধ’ (আ‘রাফ ৭/৬৪)।

মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একদল লোক শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে ‘নূরের নবী’ বলে পরোক্ষভাবে তাঁকে ‘ফেরেশতা নবী’ বানাতে চায়। এভাবে তারা বিগত যুগের কাফিরদের সন্দেহবাদের অনুসরণ করে মাত্র। অথচ আল্লাহ বলেন,

وَلَوْ جَعَلْنَاهُ مَلَكًا لَّجَعَلْنَاهُ رَجُلاً وَلَلَبَسْنَا عَلَيْهِم مَّا يَلْبِسُوْنَ- (الأنعام ৯)-

‘যদি আমরা কোন ফেরেশতাকে রাসূল করে পাঠাতাম, তবে সে মানুষের আকারেই হ’ত। কিন্তু এতেও তারা ঐ সন্দেহই প্রকাশ করত, যা এখন করছে’ (আন‘আম ৬/৯)।

(২) তাদের দ্বিতীয় আপত্তির জবাবে নূহ (আঃ) বলেন,

وَمَا أَنَا بِطَارِدِ الَّذِينَ آمَنُوْا إِنَّهُم مُّلاَقُوْ رَبِّهِمْ وَلَـكِنِّيْ أَرَاكُمْ قَوْماً تَجْهَلُوْنَ، وَيَا قَوْمِ مَن يَّنْصُرُنِيْ مِنَ اللهِ إِنْ طَرَدتُّهُمْ أَفَلاَ تَذَكَّرُوْنَ؟- (هود ২৯-৩০)-

‘আমি কোন (গরীব) ঈমানদার ব্যক্তিকে তাড়িয়ে দিতে পারি না। তারা অবশ্যই তাদের পালনকর্তার দীদার লাভে ধন্য হবে। বরং আমি তোমাদেরই মূর্খ দেখছি’। ‘হে আমার কওম! আমি যদি ঐসব লোকদের তাড়িয়ে দেই, তাহ’লে কে আমাকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষা করবে? তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না? (হূদ ১১/২৯-৩০; শো‘আরা ২৬/১১১-১১৫)।

(৩) তৃতীয় আপত্তির জবাবে তিনি বলেন,

وَلاَ أَقُولُ لِلَّذِينَ تَزْدَرِي أَعْيُنُكُمْ لَن يُؤْتِيَهُمُ الله ُخَيْراً اللّهُ أَعْلَمُ بِمَا فِي أَنفُسِهِمْ إِنِّي إِذاً لَّمِنَ الظَّالِمِينَ- (هود ৩১)-

‘তোমাদের দৃষ্টিতে যারা দীনহীন-অবাঞ্ছিত ব্যক্তি তাদেরকে আল্লাহ কোনরূপ কল্যাণ দান করবেন না। তাদের মনের কথা আল্লাহ ভাল করেই জানেন। সুতরাং এমন কথা বললে আমি অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’ (হূদ ১১/৩১)।

অতএব দুনিয়াবী প্রাধান্য মূলতঃ কোন প্রাধান্য নয়। পরকালীন উচ্চ মর্যাদাই হ’ল প্রকৃত মর্যাদা।

(৪) চতুর্থ আপত্তির জবাবে তিনি পয়গম্বরসুলভ উত্তর দিয়ে বলেন, قَالَ يَا قَوْمِ لَيْسَ بِيْ ضَلاَلَةٌ وَلَكِنِّيْ رَسُوْلٌ مِّن رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ، أُبَلِّغُكُمْ رِسَالاَتِ رَبِّيْ وَأَنْصَحُ لَكُمْ وَأَعْلَمُ مِنَ اللهِ مَا لاَ تَعْلَمُونَ (الأعراف ৬১-৬২)- ‘হে আমার কওম! আমার মধ্যে কোনই পথভ্রষ্টতা নেই। বরং আমি বিশ্বপালকের পক্ষ হ’তে প্রেরিত রাসূল’। ‘আমি তোমাদের নিকটে আমার প্রভুর রিসালাত পৌঁছে দেই এবং আমি তোমাদেরকে সদুপদেশ দিয়ে থাকি। কেননা আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন বিষয় জানি, যা তোমরা জানো না’ (আ‘রাফ ৭/৬১-৬২)।

অতএব আল্লাহ প্রদত্ত রিসালাত তথা অহী-র বিধান পালন করা ও তা জনগণের নিকটে পৌঁছে দেওয়াই আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য- পিতৃধর্ম পালন করা নয়। বস্ত্ততঃ বাপ-দাদার ধর্মের দোহাই নূহ (আঃ) থেকে শুরু করে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) পর্যন্ত সবাইকে দেওয়া হয়েছিল। আর সেকারণে প্রায় সকল নবীকেই স্ব স্ব জাতির নিকট থেকে চরম নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছিল।

(৫) অতঃপর নেতৃত্ব লাভের আশায় নূহ (আঃ) লোকদের নিকটে দাওয়াত দিচ্ছেন মর্মে তাদের পঞ্চম আপত্তির জবাবে তিনি স্পষ্টভাষায় বলে দেন যে,

وَيَا قَوْمِ لاَ أَسْئَلُكُمْ عَلَيْهِ مَالاً إِنْ أَجْرِيَ إِلاَّ عَلَى رَبِّ الْعَالَمِيْنَ- (الشعراء ১০৯)-

‘এই দাওয়াতের বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কোন মাল-দৌলত বা কোন বিনিময় কামনা করি না। আমার পুরষ্কার তো কেবল বিশ্বপালকের (আল্লাহর) নিকটেই রয়েছে’ (শো‘আরা ২৬/১০৯; ইউনুস ১০/৭২; হূদ ১১/২৯)।

বস্ত্ততঃপক্ষে সকল নবীই একথা বলেছেন। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর কাছে এসে তাঁর কওমের নেতারা যখন নেতৃত্ব গ্রহণের অথবা মাল-দৌলতের বিনিময়ে তাওহীদের দাওয়াত পরিত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছিল, তখন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, ‘যদি তোমরা আমার ডানহাতে সূর্য ও বামহাতে চন্দ্র এনে দাও, তথাপি আমি যে সত্য নিয়ে আগমন করেছি, তা পরিত্যাগ করব না’ (আর-রাহীক্ব পৃঃ ৯৭)।

বস্ত্ততঃ শিরকের মাধ্যমে দুনিয়া অর্জন সহজলভ্য হয় বিধায় যুগ যুগ ধরে দুনিয়াপূজারী এক শ্রেণীর বকধার্মিক লোক মূর্তি, কবর ও মাযার নিয়ে পড়ে আছে। লোকেরা তাদেরকে আল্লাহর অলী ভাবে। অথচ ওরা মূলতঃ শয়তানের অলী। ইবরাহীম (আঃ) এদের উদ্দেশ্যেই বলেছিলেন,

رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ فَمَنْ تَبِعَنِيْ فَإِنَّهُ مِنِّيْ وَمَنْ عَصَانِيْ فَإِنَّكَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ- (إبراهيم ৩৬)-

‘হে প্রভু! এ মূর্তিগুলি বহু লোককে পথভ্রষ্ট করেছে। এক্ষণে যারা আমার অনুগামী হয়েছে, কেবল তারাই আমার দলভুক্ত। আর যারা আমার অবাধ্যতা করেছে (তাদের ব্যাপারে আপনিই সবকিছু), নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (ইবরাহীম ১৪/৩৬)। নিঃসন্দেহে যারা শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সত্যিকারের অনুসারী হবে, কেবল তারাই আখেরাতে মুক্তি পাবে। যেহেতু ‘শিরকপন্থীদের জন্য আল্লাহ জান্নাতকে হারাম করেছেন’ (মায়েদাহ ৫/৭২), সেহেতু শিরকের মাধ্যমে দুনিয়া অর্জনকারী লোকেরা এবং মুশরিক ব্যক্তিরা মুখে আল্লাহকে স্বীকার করলেও ওরা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের অধিবাসী হবে। অতএব হে মানুষ! শিরক হ’তে সাবধান হও!!

নূহ (আঃ)-এর দাওয়াতের ফলশ্রুতি :

আল্লাহ তা‘আলা নূহ (আঃ)-কে সাড়ে নয়শত বছরের সুদীর্ঘ জীবন দান করেছিলেন। তিনি এক পুরুষের পর দ্বিতীয় পুরুষকে অতঃপর তৃতীয় পুরুষকে শুধু এই আশায় দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছিলেন যে, তারা ঈমান আনবে। কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী অক্লান্তভাবে দাওয়াত দেওয়া সত্ত্বেও তারা ঈমান আনেনি। মূলতঃ এই সময় নূহ (আঃ)-এর কওম জনবল ও অর্থবলে বিশ্বে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। সংখ্যাধিক্যের কারণে ইরাকের ভূখন্ড ও পাহাড়েও তাদের আবাস সংকুলান হচ্ছিল না। আল্লাহর চিরন্তন নীতি এই যে, তিনি অবাধ্য জাতিকে সাময়িকভাবে অবকাশ দেন (বাক্বারাহ ২/১৫)। নূহের কওম সংখ্যাশক্তি ও ধনাঢ্যতার শিখরে উপনীত হয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। তারা নূহ (আঃ)-এর দাওয়াতকে তাচ্ছিল্য ভরে প্রত্যাখ্যান করেছিল। নূহ (আঃ) তাদেরকে দিবারাত্রি দাওয়াত দেন। কখনো গোপনে কখনো প্রকাশ্যে অর্থাৎ সকল পন্থা অবলম্বন করে তিনি নিজ কওমকে দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেন (নূহ ৭১/৫-৯)। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, এই সুদীর্ঘ দাওয়াতী যিন্দেগীতে তিনি যেমন কখনো চেষ্টায় ক্ষান্ত হননি, তেমনি কখনো নিরাশও হননি। সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে নানাবিধ নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েও তিনি ছবর করেন। কওমের নেতারা বলল,

62

قَالُوْا لَئِن لَّمْ تَنْتَهِ يَا نُوْحُ لَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْمَرْجُوْمِيْنَ- (الشعراء ১১৬)-

‘হে নূহ! যদি তুমি বিরত না হও, তবে পাথর মেরে তোমার মস্তক চূর্ণ করে দেওয়া হবে’ (শো‘আরা ২৬/১১৬)। তবুও বারবার আশাবাদী হয়ে তিনি সবাইকে দাওয়াত দিতে থাকেন। আর তাদের জন্য দো‘আ করে বলতে থাকেন, رَبِّ اغْفِرْ لِقَوْمِيْ إَنَّهُمْ لاَ يَعْلَمُوْنَ- ‘হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমার কওমকে ক্ষমা কর। কেননা তারা জানে না’ (তাফসীর কুরতুবী, সূরা নূহ)।

ওদিকে তাঁর সম্প্রদায়ের অনীহা, অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য এবং ঔদ্ধত্য ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব বলেন, ولم يلق نبى من قومه من الأذى مثل نوح إلا نبى قُتل ‘নিহত কোন নবী ব্যতীত অন্য কোন নবী তার কওমের নিকট থেকে নূহের মত নির্যাতন ভোগ করেননি’ (ইবনু কাছীর, সূরা আ‘রাফ ৫৯-৬২)। বলা চলে যে, তাদের অহংকার ও অত্যাচার চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল এবং পাপ ষোলকলায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। ফলে এক পর্যায়ে নূহ (আঃ) স্বীয় কওমকে ডেকে বললেন,

يَا قَوْمِ إِنْ كَانَ كَبُرَ عَلَيْكُم مَّقَامِيْ وَتَذْكِيْرِيْ بِآيَاتِ اللّهِ فَعَلَى اللّهِ تَوَكَّلْتُ فَأَجْمِعُوْا أَمْرَكُمْ وَشُرَكَاءَكُمْ ثُمَّ لاَ يَكُنْ أَمْرُكُمْ عَلَيْكُمْ غُمَّةً ثُمَّ اقْضُواْ إِلَيَّ وَلاَ تُنْظِرُوْنِ، فَإِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَمَا سَأَلْتُكُم مِّنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ إِلاَّ عَلَى اللهِ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُوْنَ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ، فََكَذَّبُوْهُ فَنَجَّيْنَاهُ وَمَن مَّعَهُ فِي الْفُلْكِ وَجَعَلْنَاهُمْ خَلاَئِفَ وَأَغْرَقْنَا الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِآيَاتِنَا فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُنْذَرِيْنَ- (يونس ৭১-৭৩)-

‘হে আমার কওম! যদি তোমাদের মাঝে আমার অবস্থিতি ও আল্লাহর আয়াত সমূহের মাধ্যমে তোমাদের উপদেশ দেওয়া ভারি বলে মনে হয়, তবে আমি আল্লাহর উপরে ভরসা করছি। এখন তোমরা তোমাদের যাবতীয় শক্তি একত্রিত কর ও তোমাদের শরীকদের সমবেত কর, যাতে তোমাদের মধ্যে কোনরূপ দ্বিধা-সংকোচ না থাকে। অতঃপর আমার ব্যাপারে একটা ফায়ছালা করে ফেল এবং আমাকে মোটেও অবকাশ দিয়ো না’। ‘এরপরেও যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। তবে জেনে রেখ, আমি তোমাদের কাছে কোনরূপ বিনিময় কামনা করি না। আমার বিনিময় কেবলমাত্র আল্লাহর নিকটেই রয়েছে। আর আমার প্রতি নির্দেশ রয়েছে যেন আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হই’। ‘কিন্তু তারপরও তারা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল...’ (ইউনুস ১০/৭১-৭৩)। বলা বাহুল্য যে, এটা ছিল কওমের দুরাচার নেতাদের প্রতি নূহ (আঃ)-এর ছুঁড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জ, যার মুকাবিলা করা তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব ছিল না।

এ সময় আল্লাহ পাক অহী নাযিল করে বলেন,

أَنَّهُ لَن يُّؤْمِنَ مِنْ قَوْمِكَ إِلاَّ مَنْ قَدْ آمَنَ فَلاَ تَبْتَئِسْ بِمَا كَانُوْا يَفْعَلُوْنَ- (هود ৩৬)-

‘তোমার কওমের যারা ইতিমধ্যে ঈমান এনেছে, তারা ব্যতীত আর কেউ ঈমান আনবে না। অতএব তুমি ওদের কার্যকলাপে বিমর্ষ হয়ো না’ (হূদ ১১/৩৬)। এভাবে আল্লাহর অহী মারফত তিনি যখন জেনে নিলেন যে, এরা কেউ আর ঈমান আনবে না। বরং কুফর, শিরক ও পথভ্রষ্টতার উপরেই ওরা যিদ করে থাকবে, তখন নিরাশ হয়ে তিনি প্রার্থনা করলেন,

قَالَ رَبِّ انصُرْنِي بِمَا كَذَّبُوْنِ- (مؤمنون ২৬)- ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে সাহায্য কর। কেননা ওরা আমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেছে’ (মুমিনূন ২৩/২৬)। فَافْتَحْ بَيْنِيْ وَبَيْنَهُمْ فَتْحًا وَنَجِّنِيْ وَمَن مَّعِيَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ- (الشعراء ১১৮)- ‘অতএব তুমি আমার ও তাদের মাঝে চূড়ান্ত ফয়ছালা করে দাও এবং আমাকে ও আমার সাথী মুমিনদেরকে তুমি (ওদের হাত থেকে) মুক্ত কর’ (শো‘আরা ২৬/১১৮)। তিনি স্বীয় প্রভুকে আহবান করে বললেন, فَدَعَا رَبَّهُ أَنِّيْ مَغْلُوْبٌ فَانْتَصِرْ- (القمر ১০)- ‘আমি অপারগ হয়ে গেছি। এক্ষণে তুমি ওদের বদলা নাও’ (ক্বামার ৫৪/১০)। তিনি অতঃপর চূড়ান্তভাবে বদ দো‘আ করে বললেন,وَقَالَ نُوْحٌ رَّبِّ لاَ تَذَرْ عَلَى الْأَرْضِ مِنَ الْكَافِرِيْنَ دَيَّارًا، إِنَّكَ إِنْ تَذَرْهُمْ يُضِلُّوا عِبَادَكَ وَلاَ يَلِدُوْا إِلاَّ فَاجِرًا كَفَّارًا- (نوح ২৬-২৭)- ‘হে প্রভু! পৃথিবীতে একজন কাফের গৃহবাসীকেও তুমি ছেড়ে দিয়ো না’। ‘যদি তুমি ওদের রেহাই দাও, তাহ’লে ওরা তোমার বান্দাদের পথভ্রষ্ট করবে এবং ওরা কোন সন্তান জন্ম দিবে না পাপাচারী ও কাফের ব্যতীত’ (নূহ ৭১/২৬-২৭)।

বলা বাহুল্য, নূহ (আঃ)-এর এই দো‘আ আল্লাহ সাথে সাথে কবুল করেন। যার ফলে তারা ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হ’ল এবং কেবলমাত্র মুষ্টিমেয় মুমিন নর-নারী মুক্তি পেলেন। বর্তমান পৃথিবীর সবাই তাদের বংশধর। আল্লাহ বলেন, ذُرِّيَّةَ مَنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ إِنَّهُ كَانَ عَبْداً شَكُوْراً- ‘তোমরা তাদের বংশধর, যাদেরকে আমরা নূহের সাথে (নৌকায়) সওয়ার করিয়েছিলাম। বস্ত্ততঃ সে ছিল একজন কৃতজ্ঞ বান্দা’ (ইসরা ১৭/৩; ছাফফাত ৩৭/৭৭)।

গযবের কারণ : আল্লাহ বলেন, مِمَّا خَطِيئَاتِهِمْ أُغْرِقُوْا فَأُدْخِلُوْا نَاراً فَلَمْ يَجِدُوْا لَهُم مِّن دُوْنِ اللَّهِ أَنصَاراً- ‘তাদের পাপরাশির কারণে তাদেরকে (প্লাবনে) ডুবিয়ে মারা হয়েছিল। অতঃপর তাদেরকে (কবরের) অগ্নিতে প্রবেশ করানো হয়েছিল। কিন্তু নিজেদের জন্য আল্লাহর মুকাবেলায় কাউকে তারা সাহায্যকারী পায়নি’ (নূহ ৭১/২৫)। উপরোক্ত আয়াতে বুঝা যায় যে, পথভ্রষ্ট সমাজনেতাদের সাথে পুরা সমাজটাই পাপে নিমজ্জিত হয়েছিল। যেজন্য সর্বগ্রাসী প্লাবনের গযবে তাদেরকে ডুবিয়ে ধ্বংস করা হয়। এমনকি মৃত্যুর পর বরযখী জীবনে তাদেরকে কবর আযাবের অগ্নিকুন্ডে প্রবেশ করানো হয়েছে, সেকথাও আল্লাহ বলে দিয়েছেন। এতদ্ব্যতীত ক্বিয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নাম যে সুনিশ্চিত, সেকথাও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেননা তারা সেদিন মুক্তির জন্য কোন সুফারিশকারী পাবেনা।

শিক্ষণীয় বিষয় : সমাজপরিচালনার জন্য সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ব্যাপারে দল ও প্রার্থীবিহীন ইসলামী নেতৃত্ব নির্বাচন পদ্ধতি অনুসরণ করা আবশ্যক।

নূহের প্লাবন ও গযবের কুরআনী বিবরণ :

এ বিষয়ে সূরা হূদে পরপর ১২টি আয়াত নাযিল হয়েছে। যেমন, চূড়ান্ত গযব আসার পূর্বে আল্লাহ নূহ (আঃ)-কে বললেন,

وَاصْنَعِ الْفُلْكَ بِأَعْيُنِنَا وَوَحْيِنَا وَلاَ تُخَاطِبْنِيْ فِي الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا إِنَّهُم مُّغْرَقُوْنَ، وَيَصْنَعُ الْفُلْكَ وَكُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ مَلأٌ مِّن قَوْمِهِ سَخِرُواْ مِنْهُ قَالَ إِن تَسْخَرُوْا مِنَّا فَإِنَّا نَسْخَرُ مِنكُمْ كَمَا تَسْخَرُونَ، فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ مَن يَّأْتِيهِ عَذَابٌ يُخْزِيْهِ وَيَحِلُّ عَلَيْهِ عَذَابٌ مُّقِيمٌ، حَتَّى إِذَا جَاءَ أَمْرُنَا وَفَارَ التَّنُّورُ قُلْنَا احْمِلْ فِيهَا مِن كُلٍّ زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ وَأَهْلَكَ إِلاَّ مَن سَبَقَ عَلَيْهِ الْقَوْلُ وَمَنْ آمَنَ وَمَا آمَنَ مَعَهُ إِلاَّ قَلِيلٌ، وَقَالَ ارْكَبُوْا فِيهَا بِسْمِ اللهِ مَجْرِيهَا وَمُرْسَاهَا إِنَّ رَبِّي لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ، وَهِيَ تَجْرِي بِهِمْ فِيْ مَوْجٍ كَالْجِبَالِ وَنَادَى نُوحٌ ابْنَهُ وَكَانَ فِي مَعْزِلٍ يَا بُنَيَّ ارْكَب مَّعَنَا وَلاَ تَكُن مَّعَ الْكَافِرِينَ، قَالَ سَآوِي إِلَى جَبَلٍ يَعْصِمُنِي مِنَ الْمَاء قَالَ لاَ عَاصِمَ الْيَوْمَ مِنْ أَمْرِ اللهِ إِلاَّ مَن رَّحِمَ وَحَالَ بَيْنَهُمَا الْمَوْجُ فَكَانَ مِنَ الْمُغْرَقِينَ، وَقِيلَ يَا أَرْضُ ابْلَعِي مَاءَكِ وَيَا سَمَاء أَقْلِعِي وَغِيْضَ الْمَاء وَقُضِيَ الأَمْرُ وَاسْتَوَتْ عَلَى الْجُودِيِّ وَقِيلَ بُعْداً لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ، وَنَادَى نُوحٌ رَّبَّهُ فَقَالَ رَبِّ إِنَّ ابُنِي مِنْ أَهْلِي وَإِنَّ وَعْدَكَ الْحَقُّ وَأَنتَ أَحْكَمُ الْحَاكِمِينَ، قَالَ يَا نُوْحُ إِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ إِنَّهُ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ فَلاَ تَسْأَلْنِ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنِّي أَعِظُكَ أَن تَكُونَ مِنَ الْجَاهِلِينَ، قَالَ رَبِّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَسْأَلَكَ مَا لَيْسَ لِي بِهِ عِلْمٌ وَإِلاَّ تَغْفِرْ لِي وَتَرْحَمْنِي أَكُن مِّنَ الْخَاسِرِينَ، قِيلَ يَا نُوحُ اهْبِطْ بِسَلاَمٍ مِّنَّا وَبَركَاتٍ عَلَيْكَ وَعَلَى أُمَمٍ مِّمَّن مَّعَكَ وَأُمَمٌ سَنُمَتِّعُهُمْ ثُمَّ يَمَسُّهُمْ مِّنَّا عَذَابٌ أَلِيمٌ- (هود ৩৭-৪৮)-

‘তুমি আমার সম্মুখে আমারই নির্দেশনা মোতাবেক একটা নৌকা তৈরী কর এবং (স্বজাতির প্রতি দয়া পরবশ হয়ে) যালেমদের ব্যাপারে আমাকে কোন কথা বলো না। অবশ্যই ওরা ডুবে মরবে’ (হূদ ১১/৩৭)। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর নূহ নৌকা তৈরী শুরু করল। তার কওমের নেতারা যখন পাশ দিয়ে যেত, তখন তারা তাকে বিদ্রুপ করত। নূহ তাদের বলল, তোমরা যদি আমাদের উপহাস করে থাক, তবে জেনে রেখো তোমরা যেমন আমাদের উপহাস করছ, আমরাও তেমনি তোমাদের উপহাস করছি’ (৩৮)। ‘অচিরেই তোমরা জানতে পারবে লাঞ্ছনাকর আযাব কাদের উপরে আসে এবং কাদের উপরে নেমে আসে চিরস্থায়ী গযব’ (৩৯)। আল্লাহ বলেন, ‘অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে গেল এবং চুলা উদ্বেলিত হয়ে উঠল, (অর্থাৎ রান্নার চুলা হ’তে পানি উথলে উঠলো), তখন আমি বললাম, সর্বপ্রকার জোড়ার দু’টি করে এবং যাদের উপরে পূর্বেই হুকুম নির্ধারিত হয়ে গেছে, তাদের বাদ দিয়ে তোমার পরিবারবর্গ ও সকল ঈমানদারগণকে নৌকায় তুলে নাও। বলা বাহুল্য, অতি অল্প সংখ্যক লোকই তার সাথে ঈমান এনেছিল’ (৪০)। ‘নূহ তাঁদের বলল, তোমরা এতে আরোহণ কর। আল্লাহর নামেই এর গতি ও স্থিতি। নিশ্চয়ই আমার প্রভু অতীব ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (৪১)। ‘অতঃপর নৌকাখানি তাদের বহন করে নিয়ে চলল পর্বতপ্রমাণ তরঙ্গমালার মাঝ দিয়ে। এ সময় নূহ তার পুত্রকে (ইয়ামকে) ডাক দিল- যখন সে দূরে ছিল, হে বৎস! আমাদের সাথে আরোহণ কর, কাফেরদের সাথে থেকো না’ (৪২)। ‘সে বলল, অচিরেই আমি কোন পাহাড়ে আশ্রয় নেব। যা আমাকে প্লাবনের পানি হ’তে রক্ষা করবে’। নূহ বলল, ‘আজকের দিনে আল্লাহর হুকুম থেকে কারু রক্ষা নেই, একমাত্র তিনি যাকে দয়া করবেন সে ব্যতীত। এমন সময় পিতা-পুত্র উভয়ের মাঝে বড় একটা ঢেউ এসে আড়াল করল এবং সে ডুবে গেল’ (৪৩)। অতঃপর নির্দেশ দেওয়া হ’ল, হে পৃথিবী! তোমার পানি গিলে ফেল (অর্থাৎ হে প্লাবনের পানি! নেমে যাও)। হে আকাশ! ক্ষান্ত হও (অর্থাৎ তোমার বিরামহীন বৃষ্টি বন্ধ কর)। অতঃপর পানি হরাস পেল ও গযব শেষ হ’ল। ওদিকে জূদী পাহাড়ে গিয়ে নৌকা ভিড়ল এবং ঘোষণা করা হ’ল, যালেমরা নিপাত যাও’ (৪৪)। ‘এ সময় নূহ তার প্রভুকে ডেকে বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমার পুত্র তো আমার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, আর তোমার ওয়াদাও নিঃসন্দেহে সত্য, আর তুমিই সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ ফায়ছালাকারী (৪৫)। ‘আল্লাহ বললেন, হে নূহ! নিশ্চয়ই সে তোমার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চয়ই সে দুরাচার। তুমি আমার নিকটে এমন বিষয়ে আবেদন কর না, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই। আমি তোমাকে সতর্ক করে দিচ্ছি যেন জাহিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (৪৬)। ‘নূহ বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমার অজানা বিষয়ে আবেদন করা হ’তে আমি তোমার নিকটে পানাহ চাচ্ছি। তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না কর ও অনুগ্রহ না কর, তাহ’লে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’ (৪৭)। ‘বলা হ’ল, হে নূহ! এখন (নৌকা থেকে) অবতরণ কর আমাদের পক্ষ হ’তে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি সহকারে তোমার উপর ও তোমার সঙ্গী দলগুলির উপর এবং সেই (ভবিষ্যৎ) সম্প্রদায়গুলির উপর- যাদেরকে আমরা সত্বর সম্পদরাজি দান করব। অতঃপর তাদের উপরে আমাদের পক্ষ হ’তে মর্মান্তিক আযাব স্পর্শ করবে’ (হূদ ১১/৩৭-৪৮)।

মাক্কী জীবনের চরম আতংক ও উৎকণ্ঠার মধ্যে সূরা হূদ নাযিল করে সেখানে যথাক্রমে নূহ, হূদ, ছালেহ, ইব্রাহীম, লূত, শু‘আয়েব ও মূসা প্রমুখ বিগত নবী ও রাসূলগণের ও তাদের সম্প্রদায়ের কাহিনী সংক্ষেপে বর্ণনার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও তাঁর সাথীদেরকে আল্লাহ সান্ত্বনা দিয়েছেন। যেমন প্রথমে নূহ (আঃ)-এর কাহিনী বর্ণনা শেষে আল্লাহ বলেন, تِلْكَ مِنْ أَنبَاءِ الْغَيْبِ نُوْحِيْهَا إِلَيْكَ مَا كُنْتَ تَعْلَمُهَا أَنْتَ وَلاَ قَوْمُكَ مِنْ قَبْلِ هَـذَا فَاصْبِرْ إِنَّ الْعَاقِبَةَ لِلْمُتَّقِيْنَ- (هود ৪৯)- ‘এটি গায়েবের খবর যা আমরা আপনার নিকটে অহী করেছি। যা ইতিপূর্বে আপনি বা আপনার সম্প্রদায় জানতো না। অতএব আপনি ধৈর্য ধারণ করুন। নিশ্চয়ই শুভ পরিণাম কেবল আল্লাহভীরুদের জন্যই’ (হূদ ১১/৪৯)। বস্ত্ততঃ কুরআনের মাধ্যমেই পৃথিবীবাসী সর্বপ্রথম বিগত যুগের এই সব ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির খবর জানতে পেরেছে।

অন্যান্য বিবরণ :

সূরা হূ

Monthly AT-TAHREEK, which is running from Rajshahi is an extra-ordinary Islamic Research Journal of Bangladesh is directed to Salafi Path, based on pure Tawheed and Saheeh Sunnah. It is enriched with valuable writings of renowned columnists and writers of home and abroad, aming to establishing a pur...

Address

Chittagong

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Human Help posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Share on Facebook Share on Twitter Share on LinkedIn
Share on Pinterest Share on Reddit Share via Email
Share on WhatsApp Share on Instagram Share on Telegram