
17/12/2024
অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওর কী ?
সম্পূর্ণরূপে সাধারণ কর্মক্ষম কিডনি কোনও কারণে হঠাৎ করে ক্ষতিগ্রস্ত হবার ফলে অল্প সময়ের জন্য কাজ বন্ধ করে দেয় , এ অবস্থাকে অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওর বলে ।
অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওর হবার কারণ কী?
অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওর হবার কারণগুলি হল : ১. অত্যধিক বমি , পায়খানা হবার ফলে শরীরে জলের মাত্রা কমে যাওয়া এবং রক্তচাপ কমে যাওয়া।
২. ফ্যালসিফেরাম ম্যালেরিয়া , লেপ্টোস্পাইরোসিস ।
৩. G6PD Deficiency হওয়া । এই রোগে রক্তের রক্তকণিকা কিছু ওষুধ ব্যবহারের ফলে ভঙ্গুর হয়ে যায় , এবং হঠাৎ কিডনি ফেলিওর হয়ে যায় ।
৪. পাথরের কারণে মূত্রমার্গে বাধা সৃষ্টি ।
এছাড়া রক্তে গভীর সংক্রমণ ( Septicemia ) , কিডনির গভীর সংক্রমণ , কিডনির বিশেষ প্রকার রোগ ( Glomerulonepritis ) মহিলাদের প্রসবের সময় অত্যধিক রক্তচাপ বা অত্যধিক রক্তক্ষয় , ঔষধের খারাপ বা বিপরীত প্রভাব , সর্পদংশন , অত্যধিক স্নায়ুচাপের ফলে উৎপন্ন বিষাক্ত পদার্থের কিডনির উপর খারাপ প্রভাব ইত্যাদি হল অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওরের মুখ্য কারণ ।
অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওরের লক্ষণ কি?
এই ধরনের কিডনি ফেলিওরে , সম্পূর্ণরূপে কার্যরত কিডনি হঠাৎ করে খারাপ হবার কারণে লক্ষণ খুবই অধিক মাত্রায় প্রকট হয় । এই লক্ষণগুলি রোগীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাত্রায় প্রকাশ পায় । অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওরে দুটি কিডনি হঠাৎ করে খারাপ হয় বলে , লক্ষণ অধিক মাত্রায় দেখা যায়।
অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওরের লক্ষণগুলি হল নিম্নরূপ : ● ক্ষুধামান্দ্য , অস্বস্তি , বমিভাব , হেঁচকি । • প্রস্রাব কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া । • মুখমণ্ডল বা শরীরে ফোলাভাব , শ্বাসকষ্ট , রক্তচাপ বৃদ্ধি । • শারীরিক দুর্বলতা , অনিদ্রা , স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া , ইত্যাদি । • রক্তবমি এবং রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রাবৃদ্ধি ( যার কারণে হৃৎপিণ্ড হঠাৎ বন্ধ হতে পারে ) কিডনি ফেলিওরের লক্ষণ ছাড়াও যে কারণে কিডনি খারাপ হয়েছে সেই রোগের লক্ষণও রোগীদের মধ্যে দেখা যায় যেমন , বিষাক্ত ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর ।
অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওরের নির্ণয় কিভাবে সম্ভব?
কোনও রোগের কারণে কিডনি ফেলিওর হবার আশঙ্কা হয় , বা রোগীর শারীরিক লক্ষণ দেখে কিডনি ফেলিওরের আশঙ্কা হয় , তাহলে তৎক্ষণাৎ রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া দরকার । রক্তে ক্রিয়েটিনিন আর ইউরিয়ার বর্ধিত মাত্রা কিডনি ফেলিওরের সংকেত দেয় । প্রস্রাব এবং রক্ত পরীক্ষা সোনোগ্রাফি ইত্যাদির দ্বারা অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওরের নির্ণয় , তার কারণ নির্ণয় এবং অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওরের কারণে উদ্ভূত অন্যান্য খারাপ প্রভাবের লক্ষণও জানা যায় ।
অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওর প্রতিরোধের উপায় কি?
বমি , পায়খানা , ম্যালেরিয়ার মতো কিডনি খারাপ হওয়ার রোগের শীঘ্র নির্ণয় এবং চিকিৎসার দ্বারা অ্যাকিউট ফেলিওর প্রতিরোধ করা সম্ভব । এই রোগের দ্বারা পীড়িত রোগীদের— • রোগের শুরুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া উচিত । পরে যদি প্রস্রাব কম হয় তাহলে শীঘ্র ডাক্তারকে জানানো দরকার , আর প্রস্রাবের মাত্রার সমান জল খাওয়া দরকার । • কিডনি - ক্ষতিকারক কোনও ওষুধ খাওয়া উচিত নয় । ( বিশেষভাবে যন্ত্রণানাশক)
অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওরে কিডনি কত সময় পরে পুনরায় কাজ করে ?
চিকিৎসা শুরুর মাত্র ১ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যেই অধিকাংশ রোগীদের অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওরে দুটি কিডনির কার্যক্ষমতা অল্প সময়ের মধ্যে অল্প দিনের জন্য কমে যায়।
পরে কিডনি পুরোপুরি কাজ করতে শুরু করে । এইসব রোগীদের চিকিৎসা পুরো হবার পরে ওষুধ খাবার বা ডায়ালিসিস করানোর দরকার হয় না । কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগ অল্প সারতে পারে বা একদম নাও সারতে পারে । তিন মাস পরে না সারলে তা ক্রনিক কিডনি ফেলিওর হয়ে যায় । ২. খাদ্য - পানীয়র নিয়ন্ত্রণ । ৩. ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা । ৪. ডায়ালিসিস । অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওরের চিকিৎসা এই রোগের চিকিৎসা রোগের কারণ , লক্ষণ আর ল্যাবরেটরি পরীক্ষার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন রোগীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয় । শীঘ্র গভীর চিকিৎসার দ্বারা রোগী যেমন পুনর্জন্ম পেতে পারে , ঠিক তেমনি বিনা চিকিৎসার ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে । অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওরের মুখ্য চিকিৎসাগুলি হল : ১. কিডনি খারাপ হওয়ার কারণের চিকিৎসা । ২. কিডনি খারাপ হওয়ার কারণের চিকিৎসা : • কিডনি ফেলিওরের মুখ্য কারণের মধ্যে বমি , পায়খানা বা ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া হতে পারে , যেগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সঠিক চিকিৎসা করানো দরকার । রক্তের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিশেষ অ্যান্টিবায়োটিক্স দ্বারা চিকিৎসা করা হয় । রক্তকণা ক্ষয় হলে রক্ত দেওয়া দরকার । • পাথরের কারণে মূত্রমার্গে অবরোধ হয়ে থাকলে , দূরবিন দ্বারা বা অপারেশন দ্বারা চিকিৎসা করা যায় । • শীঘ্র এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে কিডনিকে বেশি খারাপ হবার হাত থেকে বাঁচানো যায় এবং এর ফলে কিডনি পুনরায় সম্পূর্ণরূপে কাজ করতে শুরু করে । • কোনো কোনো কারণে অ্যাকিউট রেনাল ফেলিওর চিকিৎসা পরে সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না । তখন ক্রনিক রেনাল ফেলিওর হয়ে যায় । সাধারণত তিনমাস পরে এই অবস্থা বোঝা যায় । ২. খাদ্য পানীয়র নিয়ন্ত্রণ : এই রোগের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত কিডনি , সঠিক চিকিৎসার পরে ঠিক হয়ে পুনরায় কাজ করতে থাকে।
ডা . সৌরভ সাহা এমবিবিএস , এমডি ( নেফ্রোলজী ) ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনী ডিজিজেস এণ্ড ইরােলজি মেম্বার অব ISN,
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান , কিডনী বিভাগ ময়নামতি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল , কুমিল্লা।
কিডনী ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
চেম্বারঃ মুন হসপিটাল ঝাউতলা কুমিল্লা।
রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার
দুপুর ৪.০০টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা
বিস্তারিত জানতে : +8801737392172