27/09/2024
বিশ্বে প্রতি তিন মিনিটে একটি শিশু cleft lip বা cleft palette-এর সমস্যা নিয়ে জন্মায়। অর্থ, পরিকাঠামো আর সুপ্রশিক্ষিত চিকিৎসকের অভাবে শিল্পোন্নত দেশের এমন কয়েক লক্ষ শিশুই স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ পায় না। শুধুমাত্র ভারতেই ক্লেফ্ট লিপ আর প্যালেটের সমস্যায় ভোগা শিশুদের একটা বড়ো অংশ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আর বিকৃত চেহারা নিয়েই সম্পূর্ণ জীবন কাটিয়ে দেয়।
ক্লেফ্ট লিপ আর ক্লেফ্ট প্যালেটের কারণঃ
কী কারণে শিশুদের মধ্যে ক্লেফ্ট লিপ আর প্যালেটের সমস্যা দেখা দেয় তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। এর পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।
জিনগত সমস্যাঃ এ ব্যাপারে জিনের ভূমিকা থাকে। পরিবারের যত বেশিজন সদস্য ক্লেফ্ট-এর সমস্যায় ভোগেন গর্ভস্থ শিশুর আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও তত বাড়ে।
খাদ্যাভ্যাসঃ ভিটামিন ডি আর ফোলিক অ্যাসিডের অভাবে গর্ভস্থ ভ্রূণের বেড়ে ওঠায় বিশেষ করে স্নায়ুর বিকাশে সমস্যা দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় ফোলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্টস খেলে শিশুর ক্লেফ্ট সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
ওষুধ ও রাসায়নিক ব্যবহারঃ বেশ কিছু ওষুধ আর রাসায়নিকের আধিক্যে ফোলিক অ্যাসিডের অভাব হয় শরীরে।
ক্লেফ্ট লিপ আর ক্লেফ্ট প্যালেটের কারণে সমস্যাসমূহঃ
শারীরিক গঠনের বিকৃতি ছাড়াও ক্লেফ্ট লিপ আর ক্লেফ্ট প্যালেটের আরও বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলি হল–
১. খাবার খাওয়ায় সমস্যাঃ ক্লেফ্ট প্যালেটের সমস্যা থাকলে শিশুদের খাবার খেতে সবথেকে বেশি সমস্যা হয়। সে কারণে ওদের পুষ্টির দিকে খুব বেশি জোর দিতে হয়। মুখের তালুর গঠন ঠিকঠাক হয় না বলে শিশুরা খাবার খেতে সমস্যায় পড়ে। অনেক সময় খাবার নাকে চলে যায়। চিবোতে বা গিলতেও সমস্যা হয়। এধরনের সমস্যাগ্রস্ত শিশুরা মায়ের দুধও খেতে পারে না। কারণ মুখ ও নাকের গঠন ঠিকঠাক থাকে না। খাবার গিলে খাওয়ার পরই তা নাক দিয়ে বেরিয়ে আসে। কথা বলতেও সমস্যা হয়।
২. হাসতে সমস্যাঃ মুখ খোলা আর বন্ধের সময় ব্যবহৃৎ পেশির গঠনে ত্রুটি থাকায় হাসতেও সমস্যা হয়।
৩. সামাজিক ও মানসিক সমস্যা
৪. অভিভাবক ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এবং বন্ধুরা শিশুটির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সমস্যায় পড়েন। এর ফলে শিশুটির ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। কখনও কখনও পরিবার আর বন্ধুদের থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
৫. কানে সংক্রমণ আর বধিরতা
৬. কানের মধ্যবর্তী অংশ আর গলার মধ্যে সংযোগসাধনকারী নালির কোনও কাজ থাকে না বলে কানে সংক্রমণ দেখা দেয়। বারবার এমন সংক্রমণ থেকে শিশুটির শ্রবণশক্তি চলে যেতে পারে।
৭. কথা বলা আর ভাষা শেখায় সমস্যা
৮. মুখের তালুর অংশ আর ঠোঁট উন্মুক্ত থাকায় পেশির কার্যকারিতা কমে যায়। এর ফলে অনেক দেরিতে কথা বলা শুরু করে শিশুরা এবং কখনও কখনও কথা বলার সময় অসঙ্গতিও দেখা দেয়।
৯. দাঁতের সমস্যা
এই ধরনের মৌখিক বিকৃতি থাকার জন্য দাঁতের গঠনও সঠিক হয় না। সেই কারণে দাঁতের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
চিকিৎসা পদ্ধতিঃ
চিকিৎসা মূলত অস্ত্রোপচার। বিকৃতির ওপর নির্ভর করে, পুরোপুরি সারিয়ে তোলাও সম্ভব কিনা। ব্যক্তিবিশেষে এক থেকে সর্বোচ্চ আটটি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে এক্ষেত্রে। সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক হতে ক্লেফ্ট সমস্যায় ভোগা শিশুর গড়ে চারটি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে যে-ধরনের অস্ত্রোপচার হয় সেগুলি হল –
প্রাথমিক ঠোঁটের মেরামতিঃ শিশুর বয়স দশ সপ্তাহ হলে এই অস্ত্রোপচার হয়।
প্যালেটের মেরামতি ৯ মাস থেকে ১২ মাস বয়সের মধ্যে এই অস্ত্রোপচার হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ের মেরামতি প্রয়োজন হলে ৪-৬ বছর বয়সে এই চিকিৎসা হয়।
অ্যালভিওলার ক্লেফট-এর চিকিৎসা ৮ থেকে ১০ বছর বয়সের মধ্যে করতে হয়।
চূড়ান্ত মেরামতির প্রয়োজন হলে ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সে করা হয়।
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ
ডাঃ মোঃ কামরুল ইসলাম মামুন
বার্ন, প্লাস্টিক & এস্থেটিক সার্জন
চেম্বারঃ কুমিল্লা পিপলস হাসপাতাল লিঃ
সিরিয়ালঃ 01713-629445