06/06/2025
বিয়ের আগে কেন রক্ত পরীক্ষা জরুরী?
🌸বিয়ের আগে হবু দম্পতিদের কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা ভবিষ্যতে সম্ভাব্য অনেক সমস্যা এড়াতে সাহায্য করতে পারে। যদিও বাংলাদেশে আইনগতভাবে এই পরীক্ষাগুলো বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু সুস্থ ও সুখী দাম্পত্য এবং পারিবারিক জীবনের জন্য এগুলো অত্যন্ত জরুরি।
🌹কেন বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি?
বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো:
🌲 বংশগত রোগ: কিছু রোগ বংশগতভাবে সঞ্চারিত হয়, যেমন থ্যালাসেমিয়া, সিকল সেল অ্যানিমিয়া। এসব রোগের বাহক কিনা, তা আগে থেকে জানা থাকলে অনাগত সন্তানের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
🌲 সংক্রামক রোগ: হেপাটাইটিস বি ও সি, এইচআইভি (HIV), সিফিলিস বা গনোরিয়ার মতো যৌনবাহিত রোগগুলো পরীক্ষা করে নিলে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায় এবং সঙ্গীর মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানো রোধ করা যায়।
🌲 বন্ধ্যত্ব: সন্তান ধারণের সক্ষমতা আছে কিনা, তা জেনে নিলে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সহজ হয়। কোনো সমস্যা থাকলে আগে থেকেই চিকিৎসা শুরু করা যেতে পারে।
🌲 রক্তের গ্রুপ: রক্তের RH ফ্যাক্টর (পজিটিভ-নেগেটিভ) সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে গর্ভাবস্থায় জটিলতা হতে পারে, যা আগে থেকে জানা থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
🌲 সাধারণ স্বাস্থ্য: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড সমস্যা ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে নিলে উভয়ই একে অপরের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন।
যেসব রক্ত ও অন্যান্য পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত:
🌹বিয়ের আগে হবু দম্পতিদের জন্য যে পরীক্ষাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. রক্তের গ্রুপ এবং আরএইচ (Rh) ফ্যাক্টর পরীক্ষা:
এটি সবচেয়ে মৌলিক এবং জরুরি পরীক্ষা। স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এবং RH ফ্যাক্টর জানা থাকলে বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় জটিলতা এড়ানো সম্ভব। যদি স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ Rh-নেগেটিভ হয় এবং স্বামীর Rh-পজিটিভ হয়, তবে তাদের সন্তানের ক্ষেত্রে Rh অসামঞ্জস্যজনিত (Rh Incompatibility) সমস্যা দেখা দিতে পারে। আগে থেকে জানা থাকলে সঠিক চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
২. থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং (Hemoglobin Electrophoresis):
থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। যদি স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তাহলে তাদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এই পরীক্ষাটি অনাগত সন্তানের সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩. যৌনবাহিত রোগ (STDs) পরীক্ষা:
নিম্নলিখিত যৌনবাহিত রোগগুলোর পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত:
🍁এইচআইভি (HIV): এইডস সৃষ্টিকারী ভাইরাস।
🍁হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B) ও সি (Hepatitis C): এই রোগগুলো লিভারকে আক্রান্ত করে এবং যৌন সম্পর্ক বা রক্তের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
🍁 সিফিলিস (Syphilis) ও গনোরিয়া (Gonorrhea): এগুলোও যৌনবাহিত রোগ, যা সঠিকভাবে চিকিৎসা না করালে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৪. বন্ধ্যত্ব সংক্রান্ত পরীক্ষা (Fertility Tests):
যারা ভবিষ্যতে সন্তান নিতে চান, তাদের জন্য এই পরীক্ষাগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
🍁 পুরুষদের জন্য: সিমেন অ্যানালাইসিস (Semen Analysis) বা শুক্রাণু পরীক্ষা।
🍁 নারীদের জন্য: পেলভিক আল্ট্রাসনোগ্রাম (Pelvic Ultrasonogram) এবং কিছু হরমোন পরীক্ষা (যেমন FSH, TSH, Prolactin, Estradiol)।
৫. জেনেটিক বা বংশগত রোগের স্ক্রিনিং:
থ্যালাসেমিয়া ছাড়াও কিছু জিনগত রোগ বংশানুক্রমিক হতে পারে। বিশেষ করে যদি পরিবারের ইতিহাসে কোনো নির্দিষ্ট রোগের প্রবণতা থাকে, তাহলে সেই সম্পর্কিত জিন পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।
৬. অন্যান্য সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
🍁 ডায়াবেটিস (Blood Glucose Test): রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা।
🍁 উচ্চ রক্তচাপ (Blood Pressure): রক্তচাপের মাত্রা পরিমাপ।
🍁 থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট (TSH): থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা পরীক্ষা।
🍁 সম্পূর্ণ রক্ত গণনা (Complete Blood Count - CBC): রক্তের বিভিন্ন উপাদান পরীক্ষা।
🍁 হেপাটাইটিস এ (Hepatitis A) ও রুবেলা (Rubella) অ্যান্টিবডি টেস্ট: রুবেলা (জার্মান মিজলস) গর্ভবতী মায়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তাই এর অ্যান্টিবডি আছে কিনা জেনে নেওয়া ভালো।
🌸পরামর্শ:
এই পরীক্ষাগুলো সাধারণত যেকোনো ভালো ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতালে করানো যায়। পরীক্ষা করানোর পর একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ফলাফলের বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে ডাক্তার প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা দিতে পারেন। এই ছোট একটি উদ্যোগ আপনাদের ভবিষ্যৎ দাম্পত্য জীবনকে আরও নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত করতে সাহায্য করবে।
✅ মেডিকেল সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য পেতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন 🩺🥼
#জরুরী_চিকিৎসা_সেবা