18/02/2023
ডোনারদের কাছে ব্লাড চাওয়ার আগে....
আজ শুক্রবার বেলা ১২.৩৫মি.।অফিসে এসে মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।এমন সময় অচেনা একটা ফোন এলো,ভাই,ফেসবুক গ্রুপ থেকে আপনার নাম্বার নিয়েছি। বি+ রক্ত লাগবে,দিবেন ?জানতে চাইলাম, নামাজের পর দিলে হবে? বলল, প্রসূতি রোগী এখন দিলে ভালো হয়। সিডি প্যাথ হাসপাতালে আছে।বললাম,আপনি আছেন,সব রেডি কিনা ?
জানাল,আছি, সব রেডি এসেই দিয়ে যাবেন। অফিস তালা না দিয়ে বাহিরে ছিটকিনি দিয়ে দ্রুত রিক্সা নিয়ে সিডি প্যাথ রওয়ানা হলাম। সামনে পেয়ে অফিসের শাহ আলমকে উঠিয়ে নিলাম।সিডিপ্যাথ গিয়ে জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে কাউকে না পেয়ে যিনি আমাকে ফোন দিয়েছেন, তাকে ফোন দিলাম।জানাল ভাই এক মিনিট,আপনাকে ফোন দিচ্ছে। তার মানে যিনি আমাকে ফোন দিয়ে আনলেন তিনি নেই।
যাই হোক, যিনি আমাকে পরে ফোন দিলেন আমি তার সামনেই ছিলাম। বললাম,ভাই চলেন।তিনি বললেন, রিক্সায় উঠেন। কেন বলতেই জানালেন এখানে না,একটি অপরিচিত হাসপাতালের নাম বললেন যা আমি প্রথম শুনলাম।বললাম,জুমা নামাজের সময় হয়ে আসছে। আপনাদের রোগী কোথায় আছে না জেনে এখানে আসতে বললেন কেন ? পেশায় এডভোকেট ঐ ব্যক্তি একটু জোরেই আমাকে বললেন,আরে আমরাও তো জানি না কোন হাসপাতালে।বললাম, ফোন করার আগে নিশ্চয়ই বলা দরকার ছিল,তাহলে সময়টা নষ্ট হতো না।হঠাৎ করে বলে উঠলেন আরে রক্ত দিলে উঠেন, না হলে নাই।
আমি বললাম,আপনারা আমাকে অনুরোধ করে আনেননি।শুধু একবার আপনাদের কে একজন ফোন করে বলেছে,সিডি প্যাথ আসতে । ভাবলাম, নামাজের আগে সময় কম লাগবে তাই আসছি।আচ্ছা চলেন।রিক্সায় উঠলাম। পরিচয় দিলেন কুমিল্লা জজকোর্টের সহকারি পিপি,নাম.. অমুক।ধন্যবাদ দিয়ে তাকে একটি আমাদের কুমিল্লা পত্রিকা দিলাম।
বললাম, ভাই, হাসপাতাল কোথায় ?জানাল ঝাউতলা।তিনি সিডিপ্যাথ থেকে রিক্সা নিয়ে হাসপাতাল খুঁজছেন।ঝাউতলা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়ি হয়ে আজাদ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এসে না পেয়ে ফোন করলেন।পরে চেয়ারম্যান গলি দিয়ে ডুকে নিরাময় হাসপাতাল হয়ে আবার মেইন রোডে এলেন। খুঁজে না পেয়ে এবার সামছুল হক সড়কে প্রবেশ করে গোল্ড সিলভার হোমস্ লি. অফিস পর্যন্ত এলেন। পরে ওনাকে ফোনে জানালেন বাদুরতলা ফয়জুন্নেছা স্কুলের রোডে আসতে। এডভোকেট সাহেব পুরো রাস্তা দেখছেন কিন্তু পাচ্ছেন না।
বাদুরতলা নকশা ফুল দোকানের সামনে এসে রিক্সা থেকে নেমে আবার ফোন দিলেন, কোথায় আসবেন ? এরই মধ্যে ঘড়িতে প্রায় একটা দশ মিনিট হয়ে গেছে।আমি বললাম, ভাইজান,জুম্মা নামাজের সময় হয়ে গেছে। আমি চলে যাই। পরে ফোন দিয়েন। এ কথা শুনে তিনি বেশ উত্তেজিত হয়ে গেলেন এবং বললেন, প্রথম থেকেই আপনার ব্যবহার আমার পছন্দ হয়নি।যান মিয়া চলে যান। আমাদের রক্তের অভাব হবে না।
কথাটি তাৎক্ষনিক হজম করতে কষ্ট হলেও চুপ করে রইলাম। আর কিছু না বলে শুধু বললাম,ঠিক আছে আমি গেলাম।
আমার এই অভিজ্ঞতাটুকু এই জন্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলাম যে, পৃথিবীতে আমার দৃষ্টিতে সকল পূণ্য(নফল)কাজের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রক্তদান করা । আল্লাহর রহমতে এই পর্যন্ত আমি ২০বার রক্ত দিয়েছি। এর মধ্যে বাবা-মা ছাড়া বাকি ১৮জনকেই আমি চিনি না। শুধু ফোন করেছে চলে গিয়েছি।
আজকের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি,
এক. ডোনারদের কাছে রক্ত চাওয়ার সময় প্রথমেই যিনি ফোন করবেন চেষ্টা করবেন তিনি যেন সেখানে থাকেন।যদি না থাকেন তাহলে অবশ্যই রিসিভকারী ব্যক্তির ফোন নাম্বারটি এসএমএস করে দিবেন এবং ঐ ব্যক্তি যেন অবশ্যই কিছুটা বিনয়ী হয়।কারণ, মনে রাখতে হবে ডোনার কিন্তু আপনাকে রক্ত দিতে বাধ্য নয়। আপনার বিপদের বন্ধু হিসেবেই তিনি এগিয়ে এসেছেন কোন কিছু পাওয়ার আশায় নয়।
দুই,আপনি ভালো করে নিশ্চিত হয়ে বলুন,ডোনার কোন হাসপাতালে আসবেন। সুযোগ থাকলে বলুন,আমি কি বাহন পাঠিয়ে দিবো না আপনি কষ্ট করে আসবেন। আমার ধারণা, যারা রক্ত দিবে তারা পারতপক্ষে আপনার বাহনের আশায় বসে থাকবে না।
তিন. ডোনার সংশ্লিষ্ট স্থানে যাওয়ার আগেই রক্ত গ্রহিতার কোন না কোন স্বজন যেন সেইখানে অবশ্যই অবস্থান করেন, যাতে ডোনারকে হয়রানি না হতে হয়।
চার. রক্ত দেওয়ার পর ডোনারকে আপনি পানি অফার করতে পারেন এবং
পাঁচ, ডোনার আসার সময় তাকে এগিয়ে দিন এবং আপনার চরম বিপদের দিনে এগিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করুন।
মনে রাখবেন, ডোনারের দেওয়া রক্তটিই হতে পারে আপনার,আমার কিংবা স্বজনদের আল্লাহর রহমতে জীবন বাঁচার একমাত্র হাতিয়ার। আপনার সংবেদনশীল ব্যবহারই বলে দিবে আল্লাহ না করুক , ভবিষ্যতে আপনার আরো বড় বিপদের দিনে আপনি দ্রুত অন্যজনের সেবা পাবেন কি না।
সবার মানবিক বিবেক মনুষ্যত্বের কল্যাণে নিবেদিত হোক এই কামনা করছি।
১৭.০২.২০২৩।