28/11/2025
এই শীতে ভেজানো কিশমিশ না খেলে মিস করবেন দারুণ ৭টি উপকার!
কিশমিশ আমাদের সবারই পরিচিত একটি সুস্বাদু শুকনো ফল। তবে অনেকেই জানেন না, সাধারণভাবে কিশমিশ খাওয়ার তুলনায় ভিজিয়ে খাওয়া কিশমিশ শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। বিশেষ করে শীতকালে, যখন শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায় এবং হজম প্রক্রিয়া ধীর হয় সেক্ষেত্রে ভেজানো কিশমিশ হতে পারে এক অসাধারণ পুষ্টির উৎস। এতে রয়েছে আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফাইবারসহ আরও বহু অপরিহার্য উপাদান, যা শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
পুষ্টিবিদ কবিতা দেবগণের মতে, “রাতে কিশমিশ ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে তার পুষ্টিগুণ দ্বিগুণ হয়, বিশেষ করে শীতকালে এর উপকার আরও বেশি।” কেন ভেজানো কিশমিশ এত উপকারী এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা জানালেন ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
হজমে অসাধারণভাবে সাহায্য করে
শীতকালে ভারী ও তৈলাক্ত খাবারের প্রবণতা বাড়ে, যার ফলে হজমক্রিয়া ধীর হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। পুষ্টিবিদ বলেন, “ঠান্ডায় হজমের গতি কমে যায়, ফলে অনেকেই নিয়মিত পেট পরিষ্কার না হওয়ার সমস্যায় ভোগেন।”
ভেজানো কিশমিশে থাকা প্রচুর ফাইবার এক ধরনের প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভের মতো কাজ করে, যা হজম প্রক্রিয়া চালু রাখতে সাহায্য করে। জার্নাল অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড হেলথ-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত মলত্যাগে কার্যকর ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সকালে গরম জল ও একমুঠো ভেজানো কিশমিশ দিয়ে দিন শুরু করলে হজম শক্তি উন্নত হয়।
হাড়কে আরও শক্তিশালী রাখে
শীতে অনেকেই হাড়ে কাঠিন্য বা ব্যথা অনুভব করেন, তাই এই সময়ে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ বিশেষভাবে জরুরি। পুষ্টিবিদ জানান, ভেজানো কিশমিশ ক্যালসিয়ামের দারুণ উৎস, যা হাড়কে মজবুত রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। নিউট্রিয়েন্টস জার্নালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কিশমিশ হাড়ের গঠনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া ইফোর্ট ওপেন রিভিউস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভেজানো কিশমিশ বয়সজনিত হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। প্রতিদিন মাত্র এক টেবিল চামচ ভেজানো কিশমিশ হাড়কে শক্ত রাখার জন্য যথেষ্ট।
শরীরের এনার্জি বৃদ্ধি করে
শীতকালে ক্লান্তি ও অলসতা সাধারণ বিষয়। দিনের আলোর ঘাটতি, ঠান্ডা বাতাস এবং ভারী খাবার শরীরের শক্তি কমিয়ে দেয়। এই সময় ভেজানো কিশমিশ হতে পারে আদর্শ ‘ন্যাচারাল এনার্জি বুস্টার’।
এতে থাকা প্রাকৃতিক ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ দ্রুত শক্তি জোগায়। ফুড রিভিউস ইন্টারন্যাশনাল এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ভেজানো কিশমিশ দীর্ঘসময় শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ কফির বদলে দুপুরে একমুঠো ভেজানো কিশমিশ খেলে তা মিষ্টি, পেটভরা এবং শক্তিবর্ধক স্ন্যাকস হিসেবে কাজ করে।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়
শীতকালেই সবচেয়ে বেশি সর্দি-কাশি ও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই এই সময় ইমিউনিটি শক্তিশালী রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভেজানো কিশমিশে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অপরিহার্য। নিউট্রিশন রিসার্চ এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই দুই ভিটামিন শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন অল্প পরিমাণ ভেজানো কিশমিশ খেলে সর্দি-কাশি বা ফ্লুর ঝুঁকি কমে।
লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে
শীতের অনুষ্ঠান-উৎসব মানেই বাড়তি খাবার। ফলে লিভারের ওপর বৃদ্ধি পায় অতিরিক্ত চাপ, কমে যায় শরীরের স্বাভাবিক ডিটক্স প্রক্রিয়া।পুষ্টিবিদের মতে, ভেজানো কিশমিশ লিভার কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, কিশমিশ শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সহায়তা করে এবং লিভারের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াকে আরও সক্রিয় করে।
রক্তাল্পতা প্রতিরোধে কার্যকর
শীতকালে অস্বাভাবিক ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট বা মাথা ঘোরা আয়রনের ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে। ভেজানো কিশমিশ প্রাকৃতিক আয়রনের অন্যতম সমৃদ্ধ উৎস, যা লাল রক্তকণিকা তৈরিতে অপরিহার্য। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সামান্য ভেজানো কিশমিশ রক্তাল্পতা প্রতিরোধে দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে।
শীতকালে শরীর তরতাজা রাখতে, হজম ভালো রাখতে, শক্তি বাড়াতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে ভেজানো কিশমিশ হতে পারে সহজ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায়। নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করলে তা আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে আরও উন্নত করে তুলতে পারে।
Dr. Md Najrul Islam ©