27/06/2025
নিউইয়র্কের স্থায়ী হয়েছি। জ্যামাইকায় বিশাল বাড়ি ভাড়া করেছি। দোতলা বাড়ি
বেসমেন্ট আছে, এটিক আছে। বাড়ির পিছনে বারবিকিউ করার জায়গা আছে। নানান আসবাবে বাড়ি সাজানো হয়েছে। শোবার ঘরে কিছু যন্ত্রপাতিও বসানো হয়েছে। শাওন চেষ্টা করে যাচ্ছে জীবন যাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার। তার ধারণা, যেই মূহুর্তে আমি কাগজকলম নিয়ে বসব সেই মাহেন্দ্রক্ষনেই সব সাভাবিক হয়ে যাবে। আমার রোগের প্রকোপ কমতে শুরু করবে।
আমার মা' রও দেখি একই ধারণা। তিনি শাওনকে টেলিফোন করে প্রথমেই বলেন, বৌমা!! হুমায়ূন কি কাগজ কলম নিয়ে বসেছে? শাওন হতাশ গলায় বলে, না।
তার হাতের কাছে কাগজ কলম আছে তো?
সব আছে।সে চেয়ার - টেবিলে বসে লিখতে পারে না, মাটিতে বসে লেখে। ওর লেখার জন্য টুল কিনেছি। টুলের সামনে শ্যাগ কার্পেট বিছিয়ে রেখেছি।
মা বললেন, চেষ্টা করে দেখ ওকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে লেখার টেবিলে বসাতে পার কিনা। একবার কলম হাতে নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ। আমার সমস্যা হচ্ছে, কলম কে আমার বিষাক্ত মনে হচ্ছে।
কিছুই লিখতে ইচ্ছে করছে না, বরং মনে হচ্ছে এক জীবনে অনেক লিখেছি আর কত? প্রথম যৌবনে রাত জেগে পাতার পর পাতা লিখেছি।
সন্ধায় লেখার টেবিলে বসে ফজরের আজানের পর টেবিল ছেরে উঠেছি। এক রাতে উপন্যাস শেষ করেছি। উপন্যাসের নাম --- অচিন পুর। এখন বিশ্রাম।
শাওন আমার লেখার টুল আর শ্যাগ কার্পেট যেখানে বসিয়েছে, সেই জায়গাটাও আমার পছন্দ না
এখান থেকে জানালা দিয়ে প্রকান্ড একটা ম্যাপল ট্রি দেখা যায়।সেই বৃৃক্ষের দিকে তাকালেই কেমন যেন লাগে আসন্ন শীতের কারণে গাছ দ্রুত পত্রশূন্য হচ্ছে। আসি নিজের ছায়াই যেন ম্যাপল গাছে দেখতে পাচ্ছি।
এক সন্ধায় নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই লেখার টেবিলে বসলাম। হাতে কলম তুলে নিলাম।
সঙ্গে সঙ্গে শাওন আমার মা' কে টেলিফোন করে গলা নামিয়ে উত্তেজিত ভঙ্গিতে বলল, মা! সুসংবাদ আছে। ও লিখতে বসেছে।
মা কী বলল শুনতে পেলাম না। নিশ্চই দোয়া–দরুদ পাঠ করলেন।”
—হুমায়ূন আহমেদ (নিউইর্কের আকাশে নীল ঝকঝকে রোদ)