17/03/2024
এই ৪৫ দিন বয়সী বাচ্চাটি নিওনেটাল কোলেস্টাসিস নিয়ে ভর্তি হয়েছিল আমাদের বিভাগে। সম্ভাব্য কারণ ছিল বিলিয়ারি এট্রেশিয়া। প্রাথমিকভাবে সন্দেহ হওয়ায় এবং নিশ্চিতকরণের টেষ্ট না থাকায় আমরা কালক্ষেপণ না করে তাকে বিএসএমএমইউএর শিশু গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগে রেফার করি। হয়তো আরও ১৫-২০ দিন বা এক মাস আগেও এটা ধরা পড়তে পারতো, যদি রোদ লাগানোর নামে অহেতুক কালক্ষেপন না করতো।
আমি নিজে যোগাযোগ করে বলে দেই যেনো রোগীর সময় বাচে, কারণ এই রোগীর প্রতিটি ঘন্টা, প্রতিটি দিন মূল্যবান। যাওয়ামাত্রই সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়, যা সাধারণত অন্য রোগীরা পায়না।
এত প্রায়োরিটি পেয়েও এবং সব বুঝিয়ে বলার পরেও এক সপ্তাহ পেরিয়ে যায়, কিন্তু অভিভাবকরা লিভার বায়োপসি এবং তৎপরবর্তী চিকিৎসা বা intervention এর জন্য রাজী হয়নি। অগত্যা কোনোরূপ রোগনিরূপণ ছাড়াই তাকে ছুটি দেয়া হয়। এখন প্রশ্ন হলো :
১. যদি পরবর্তী পরীক্ষা এবং চিকিৎসা নিতে রাজী নাই থাকে, তবে কেনো কুমিল্লা থেকে ঢাকা গিয়েছিল? (উল্লেখ্য, উভয় স্থানে তাকে সবকিছু বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল)। উল্টো তারা ঢাকায় গিয়ে মিথ্যা গল্প বলেছিল।
২. এই যে এক সপ্তাহ একটা সীট অযথাই দখল করে রাখলো, এই সীটে অন্য আরেকটা রোগীর চিকিৎসা পাওয়া কে বঞ্চিত করলোনা?
৩. এটা যদি সত্যিই বিলিয়ারি এট্রেশিয়া হয়, তবে ৬০ দিন পার হয়ে গেলে তার অপারেশন সফলতার হার অনেকটাই কমে যাবে। সেক্ষেত্রে তারা রাজী হলেও সাফল্যের হার কমে যাওয়ার জন্য দায়ী কে হবে?
৪. এই যে নিজ গরজে রোগীর জন্য তদবির করলাম, বিএসএমএমইউও আমার গরজে প্রম্পট রেসপন্স করলো কিন্তু নীট রেজাল্ট শুণ্য। এতে পরবর্তীতে যেচে কল করা বা এগিয়ে আসার প্রবণতা কমে যাবেনা?
এই যে খুটিনাটি অনেকগুলো বিষয়, এগুলো কখনো মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যমে আসেনা, কেউ জানেও না। অথচ প্রতিনিয়ত আমরা চিকিৎসকরা এগুলো ফেস করি।
সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পরেও কিছু সিস্টেম লস বা অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনা ঘটে এবং সেগুলোই ফলাও করে প্রচার হয়। আমরা কি করি, রোগী বা অভিভাবক কি করে তা শুধু আমরা জানি আর উপর থেকে একজন দেখছেন।
উল্লিখিত রোগীর যদি বিলিয়ারি এট্রেশিয়া হয়, তবে বছরখানেকের মধ্যে তার সিরোসিস ডেভোলাপ করবে এবং ৩ বছরের মধ্যে সব শেষ হয়ে যাবে, এটা অনুমেয়। একসময় জটিলতা নিয়ে সে ঠিকই আবার ভর্তি হবে, যা বলবো তাই করবে, কিন্তু শেষ রক্ষা হবেনা।
আপনাদের জন্য আরেকটা কথা বলে শেষ করছি। নবজাতক বা শিশুর জন্ডিস হলেই রোদ লাগাতে যাবেন না বা কাউকে না বুঝে উপদেশ দিতে যাবেন না। এই জন্ডিসের মাঝেই লুকিয়ে থাকে কোলেস্টাসিস, বিলিয়ারি এট্রেশিয়া, হাইপোথাইরয়েড, টর্চ ইনফেকশন, সেপসিস এবং আরো অনেক কিছু। যে জণ্ডিস শুধুমাত্র রোদ লাগালে চলে যায়, তা রোদ না লাগিয়ে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ালেই চলে যাবে৷ আর যাহা প্যাথলজিক্যাল জণ্ডিস, তা কিন্তু বাড়তেই থাকবে। তাই সামাজিক মাধ্যমে "আপু, রোদ লাগান" উপদেশ না দিয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ বা নবজাতক বিশেষজ্ঞ বা শিশু গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিশেষজ্ঞ দেখাতে বলবেন।
ডা. খন্দকার মোবাশ্বের আহমেদ
এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর
পিডিয়াট্রিক্স গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ