12/03/2025
আজকের প্রথম আলো তে চোখ রাখুন
রমযানে গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্যযত্ন
ডা .শারমিন আব্বাসি
বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ ও গাইনোকোলজিস্ট
রমযান মাসে গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্য যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই সময় রোজা রাখার কারণে তাদের শরীরে পরিবর্তন আসতে পারে এবং তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় শরীরের বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক এবং হরমোনাল পরিবর্তন ঘটে, তাই রমযানে রোজা রাখার আগে তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। গর্ভবতী নারীদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা ও যত্নের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিম্নরূপ:
১. চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ:
গর্ভবতী নারীদের রমযানে রোজা রাখার আগে তাদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। বিশেষত, যদি তাদের কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা গর্ভাবস্থায় কোনো জটিলতা, তাহলে রোজা রাখার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।
২. সঠিক পুষ্টি গ্রহণ:
গর্ভবতী নারীর জন্য সঠিক পুষ্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত রমযান মাসে। সেহরিতে শক্তি প্রদানকারী এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত, যেমন—ডিম, দই, বাদাম, সবজি, এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। ইফতারে ফ্যাট, প্রোটিন এবং শর্করা সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত, যেমন—সুপ, সালাদ, মাংস, ভাত, এবং ফল। এছাড়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা দরকার, কারণ রোজার সময় পানি শূন্যতা থেকে শরীর দুর্বল হতে পারে। সেহরি ও ইফতারি দুই সময়ে পানি এবং শরবত গ্রহণ করা উচিত।
৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম:
গর্ভবতী নারীরা রোজা রাখার ফলে ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন, বিশেষত দিনের বেলা। তাই তাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত। রাতে সঠিক পরিমাণে ঘুমানো এবং দিনে কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়া শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করবে। একটানা বেশি সময় না জেগে, শরীরের জন্য নিয়মিত বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ:
গর্ভবতী নারীদের শারীরিক অবস্থা খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। যদি তারা অনুভব করেন যে শরীরের কোনো অস্বস্তি বা দুর্বলতা অনুভূত হচ্ছে, যেমন—মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বা মাথা ঘোরা, তাহলে তাদের উচিত রোজা ভঙ্গ করে বিশ্রাম নেওয়া এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। যদি রোজা রাখলে মা বা সন্তানের কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে অবশ্যই রোজা না রাখাই ভাল।
৫. মানসিক চাপ থেকে মুক্তি:
গর্ভবতী নারীদের মানসিক চাপের ফলে হরমোনাল পরিবর্তন হতে পারে, যা গর্ভাবস্থার জন্য অস্বাস্থ্যকর হতে পারে। তাই রমযান মাসে তাদের উচিত মানসিক শান্তি বজায় রাখা, আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা এবং দোয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে মনকে প্রশান্ত রাখা। কোরআন তেলাওয়াত এবং অন্যান্য ধর্মীয় কার্যক্রম যেমন নামাজ পড়া, তাসবিহ, এবং দোয়া করা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
৬. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান:
গর্ভবতী নারীদের জন্য পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রোজা রাখার ফলে শরীরে পানির অভাব হতে পারে। সেহরি ও ইফতারির মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত, যাতে শরীর আর্দ্র থাকে এবং শরীরের সঠিক কার্যক্রম বজায় থাকে। পানি এবং শরবত গ্রহণ করলে শরীর সতেজ থাকে এবং ত্বকও ভালো থাকে।
৭. বাচ্চা ও মায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
রমযান মাসে গর্ভবতী নারীদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের উচিত নিয়মিত গাইনোকোলজিস্ট বা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে গর্ভস্থ শিশুর অবস্থান এবং মায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো, যাতে কোনো ধরনের ঝুঁকি এড়িয়ে চলা যায়।
৮. রোজা না রাখার বিকল্প:
যদি গর্ভবতী নারী শারীরিক কারণে রোজা রাখতে না পারেন, তবে ইসলাম ধর্ম তাকে রোজা না রাখার অনুমতি দিয়েছে। গর্ভবতী মহিলারা কফফারা বা মিসকিনদের খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে তাদের পুণ্য অর্জন করতে পারেন। ইসলাম সহজতা এবং দয়ার ধর্ম, তাই তারা দুশ্চিন্তা না করে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
গর্ভবতী নারীর রমযানে স্বাস্থ্য যত্ন অত্যন্ত জরুরি। সঠিক পুষ্টি, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, নিয়মিত চিকিৎসক পরামর্শ, মানসিক শান্তি বজায় রাখা, এবং পানি পান নিশ্চিত করা গর্ভবতী নারীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোজা রাখার জন্য যদি শারীরিক অবস্থার কারণে সমস্যা হয়, তবে ইসলামে বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে, যা গর্ভবতী নারীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিরাপদ রাখতে সহায়তা করবে।