30/09/2025
নবজাত থেকে বার বছরের শিশু: কীভাবে বড় করব?
বাদল সৈয়দ
১। ভুলেও শিশুর সামনে মোবাইলে ভিডিও দেখবেন না। তাকেও দেখাবেন না। আজকাল দেখি এক-দুই বছরের শিশুরাও মোবাইলে ভিডিও দেখা ছাড়া খেতে চায় না। এটার অভ্যাস হলে তাদের মস্তিষ্ক বিকাশে যেমন সমস্যা হয়, ঠিক তেমনি কথা বলতে শিখতে দেরি হয়।একইভাবে টিভি বা কম্পিউটার মনিটরেও তাদের ভিডিও দেখার অভ্যাস করবেন না। কান্না বন্ধ করা, খাওয়ানো ইত্যাদি কারণে আমরা ভিডিওয়ের আশ্রয় নিয়ে তাদের বরবাদ করে দিচ্ছি। যারা এ ফাঁদে পা দিয়েছেন তারা চরমভাবে ভুগছেন।
২। যতদিন সম্ভব ওকে বুকে নিয়ে ঘুমান। এতে যে বন্ধন তৈরি হয় তা আজীবন থাকে। মা-বাবার বুকের সুগন্ধ স্বর্গীয়।
৩। ঘুমানোর সময় ওকে ছড়া বা গান শুনান। এটা করলে ওর কল্পনা শক্তি বাড়বে, নতুন শব্দ শিখবে, স্মৃতি শক্তি বাড়বে। সবচে বড় কথা, এটি তার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্মৃতি হয়ে থাকবে। সে স্মৃতি তাকে উপহার দিন।
৪। এমনকি বাচ্চারা যখন অক্ষর চিনে না তখন থেকেই তার চারপাশে বই ছড়িয়ে রাখুন। বিশেষ করে ছবির বই। এতে তার কল্পনার জগত বড় হবে। পড়ার প্রতি আগ্রহ জন্মাবে। সবচে বড় কথা বইয়ের প্রতি যে ভালোবাসা জন্মাবে তা সারাজীবন তার কাজে লাগবে। বইয়ের মতো 'আলো' পৃথিবীতে আর নেই।
৫। পারতপক্ষে ওকে একা রেখে বা গৃহকর্মীর কাছে রেখে কোথাও না যাওয়াই ভালো। বাড়িতে আপনার অবর্তমানে ওকে দেখবে এমন আপন কাউকে রাখুন।কর্মজীবী মা-বাবারা সিসি ক্যামেরা দিয়ে সারাক্ষণ ওর দিকে নজর রাখুন।
৬। শিশুর প্রথম মানসিক বৈকল্য শুরু হয় মা-বাবার ঝগড়া দেখলে। দয়া করে ওর সামনে ঝগড়া, চেঁচামেচি করবেন না। করতেই যদি হয় আড়ালে করুন।
৭। একইভাবে ওদের সামনে কারো সাথেই রাগারাগি করবেন না। এতে শিশুমনে যে ভীতি তৈরি হবে সেটির বৃত্ত থেকে ও কখনোই বের হতে পারবে না।
৮। রুটিন মেনে ওকে খাওয়ান। একেকদিন একেক সময় খাওয়ালে ওদের খাবারের রুটিন নষ্ট হয়। ওরা ক্ষুধামন্দা ও পুষ্টিহীনতায় ভুগে, হজম সমস্যা হয়।
৯।প্রয়োজনীয় টিকাগুলো অবশ্যই দেবেন। ওর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এগুলো জরুরি।
১০। ওর খেলার ব্যবস্থা করুন। ভারসাম্যপূর্ণ বেড়ে ওঠার জন্য খেলাধুলা জরুরি। বাচ্চাদের ইনডোর খেলার প্রচুর সুযোগ আছে।
১১। স্কুলে যাওয়া শুরু করলে মা-বাবা যেকোনো একজন সাথে যান। ফেরার সময়ও পারলে যান। এসময় পড়ালেখা নিয়ে চাপ দেবেন না। ও খেলতে খেলতে শিখুক। চাপ দিলে পড়া ভীতি তৈরি হবে, যা খুব ক্ষতিকর
১২। দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস করান। এটা ওর ক্লান্তি দূর করবে।মেজাজ, স্মৃতিশক্তি, কর্মক্ষমতা বাড়াবে।
১৩। এসময় ভুলেও মারবেন না। শাসনের মাধ্যম হবে 'আদর'। বেশি আদর, কম আদর। ও ভুল করলে বা কথা না শুনলে কিছুক্ষণের জন্য কম আদর করুন। দেখবেন ঠিক হয়ে গেছে। মারধোরের এফেক্ট সর্বনাশা।
১৪। একটু বড় হলে (তিন বছরের পর) বাচ্চারা চকোলেট, জাংক ফুড খেতে চায়। কোল্ড ড্রিংক পছন্দ করে। এগুলোর অভ্যাস করাবেন না। শিশু স্বাস্থ্যের জন্য এগুলো।
১৫। রাত জাগতে দেবেন না। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে পাঠান। এসময় নিদ্রাহীনতা ওর শারিরীক ও মানসিক বিকাশকে ঝড়ের গতিতে বাধা দেবে।
আমি দেখতে পাচ্ছি, চমৎকারভাবে সাজানো একটি মঞ্চ। তার সামনে হাজারো দর্শক। তাদের করতালির মাঝে একটি তরুণ বা তরুণীকে দুনিয়ার সেরা মেডলটি পরানো হচ্ছে।
বাচ্চাটি আপনার।
ছবির বাচ্চাটি ক্যান্সারের রুগী। কপাল খারাপ।