
31/12/2023
"শীতকালীন সবজি বাঁধাকপির যত গুনাগুন"
শীতকালীন সবজি গুলোর মধ্যে বাঁধাকপি একটি অতি জনপ্রিয় সবজি।
মুলত শীতের আমেজ যখন জেঁকে বসে তখন আমাদের দেশে এই সব্জির ভরা মৌসুম। এটি পাতাকপি নামেও বেশ পরিচিত। এই সময়ে প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় আমরা খুব সহজেই এই সব্জির ব্যাবহার করতে পারি। এই সব্জির রয়েছে নানা রকম গুনাগুন।
বর্তমানে বাজারে সবুজ ও লাল বর্নের বাঁধাকপি পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গিয়েছে, সবুজ বাঁধাকপির তুলনায় লাল বাধাকপিতে পুষ্টি উপাদানের পরিমান অনেকগুন বেশী থাকে।
বাঁধাকপি যে সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেগুলো হচ্ছে— ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে , বিটা কেরাটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন, লৌহ, পটাশিয়াম, ফোলেট, থায়ামিন, মিথিওনিন, পলিফেনল, গ্লুকোসিনোলেট ইত্যাদি।
এগুলো আমাদের দেহের বিভিন্ন রোগের উপশম হিসেবে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে থাকে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে বাঁধাকপির আবির্ভাবঃ
আধুনিক চিকিৎসায় বাঁধাকপির প্রবেশ ঘটে ইংরেজদের হাত ধরে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ব্রিটিশরাই সারা পৃথিবীতে বাঁধাকপির গুণগানকে ছরিয়ে দিয়েছে। এছাড়াও প্রাচীন গ্রীক দেশে একাধিক রোগের চিকিতসায় ব্যাবহার করা হতো বাঁধাকপির রস কে।
বিশেষ করে কোষ্ঠ্যকাঠিন্যতা রোগের প্রকোপ কমাতে গ্রীক চিকিৎসকেরা এই সবজিটির উপরেই ভরসা রাখতেন। এই একই চিকিৎসা পদ্ধতি আবার মিশরীয়রাও ব্যাবহার করতেন। এরা শরীরের অতিরিক্ত টক্সিনের মাত্রা কমাতে প্রতিদিনের খাবারে এই সবজি রাখতেন।
চলুন পুষ্টিগুনে ঠাসা এই সব্জির গুনাগুন গুলোকে সংক্ষেপে দেখে নেয়া যাকঃ
১. বাঁধাকপি বিভিন্ন রোগের প্রকোপ কমায়ঃ
® বাধাকপিতে থাকা বিটা-কেরাটিন, ভিটামিন- সি মেয়েদের স্তন ক্যান্সার , পাকস্থলীর ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে থাকে। সে সাথে এটি
চোখের সুরক্ষায় অনেক কার্যকরী।
® বাধাকপিতে থাকা পলিফেনল এবং গ্লুকোসিনোলেট নামক উপাদান শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি এর মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
® বাধাকপিতে বিদ্যমান এন্স মিথাইল মিথিওনিন নামক উপাদান পেপটিক আলসারের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত বাঁধাকপির রস পানে এই রোগে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
® হরমোনজনীত বিভিন্ন সমস্যায় যেমন—জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বাঁধাকপির রস অনেক উপকারি।
® ডায়াবেটিসের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে বাধাকপিতে থাকা ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং হাইপার গ্লাইসেমিক প্রপার্টিজ গুলো।
® বাঁধাকপির রস খেলে ঘা/ ফোঁড়া সারিয়ে তোলা যায়।
২. ত্বকের সুরক্ষায় বাঁধাকপিঃ
বাধাকপি ত্বকের জন্যে উপকারি ফাইটো কেমিকেলের অন্যতম উৎস। এটি শরীর ও ত্বকের কোষকে রক্ষা করে। এছাড়াও এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি ও ভিটামিন- সি। যা আমাদের চাহিদার ৪৭ ভাগ পুরন করে থাকে যা ত্বক এবং চুলের রক্ষা করে।এছাড়াও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
৩. স্মৃতিশক্তি বাড়ায় অনেকগুনঃ
প্রচুর পরিমানে ভিটামিন কে থাকে যার ফলে মস্তিষ্ক বৃদ্ধিতে ও শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও নার্ভের ক্ষতির আশংকা কমায় যার ফলে বৃদ্ধ বয়সে অ্যালঝাইমারস সহ একাধিক মস্তিষ্ক রোগের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
৪. লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়ঃ
বাঁধাকপি শরীরে পর্যাপ্ত পরিমানে গ্লুটাথায়ন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে যা লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৬. দাঁতের পায়রিয়া জনিত সমস্যার উপশম করে থাকে। এ জন্যে অনেক সময় কাঁচা বাঁধাকপির পাতা চিবিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৭. ওজোন কমাতে উপযোগীঃ
যারা ওজোন কমাতে চেষ্টা করছেন তারা এই শীতে তাদের খাদ্য তালিকায় বাধাকপিকে রাখতে পারেন নানাভাবে। কখনো সালাদ হিসেবে আবার কখনো শুধুমাত্র সিদ্ধ করেও খেতে পারেন এই সবজি। কারন এতে রয়েছে ৯৩.৩% পানি যা খেলে আমাদের অতিরিক্ত ক্যালোরী গ্রহন করা থেকে বিরত রাখবে। এছাড়াও রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, যা আমাদের শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত মেদ ঝড়াতে সাহায্য করে। ফাইবার থাকাতে এটি গ্রহনে দীর্ঘ সময় পেট ভরাভাব বজায় থাকে যা বাড়তি খাদ্য গ্রহন এর পরিমান কমায়। অন্যদিকে বাঁধাকপিতে রয়েছে অনেক কম ক্যালরি এবং কম পরিমানে কার্বোহাইড্রেট (প্রতি ১০০ গ্রাম এ ৪.৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট)থাকে। এছাড়াও আপনি পাচ্ছেন পর্যাপ্ত আমিষ, ফ্যাট ও খনিজ লবন। যারা ওজোন কমাতে চান তারা খাদ্য তালিকায় এটি রাখতে পারেন। দিনে ২ বার যদি আপনি ১০০ গ্রাম বাঁধাকপির সালাদ গ্রহন করেন তাহলে আপনি পাবেন মাত্র ৫২ ক্যালরি যা ওজোন কমাতে দারুনভাবে কার্যকরি।
বাঁধাকপির অনেক গুনাগুন থাকা সত্বেও এর কিছু অসুবিধা বা অপকারিতা রয়েছে—
১. বাধাকপি পরিপাকে অসুবিধা হলে গ্যাসট্রিটাইটিসের সমস্যা বাড়াতে পারে।
২. বাধাকপির মতো ক্রুসিফেরাস সবজিটি পেটে গ্যাসের সৃষ্টি করতে পারে।
৩. অনেক সময় অতিরিক্ত খেলে পেটে ফাঁপা ভাব হতে পারে।
জিন্নাতুন নাহার
ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান এন্ড নিউট্রিশনিস্ট
বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটাল