23/11/2019
আল-হিজামাহ আরবী শব্দ। একে ইংলিশে cupping আর বাংলায় শিঙ্গা লাগানো বলে।
বর্তমানে সবচেয়ে বেশি দেশে বিশেষ করে মুসলিম দেশে প্রচলিত একটি চিকিৎসা পদ্ধতির নাম হিজামাহ। এর উৎপত্তি চীন দেশে। এটি একটি সুন্নাত ইলাজ/ চিকিৎসা। এটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে করিয়েছেন, তাঁর পরিবার ও সাহাবীদেরকে করতে বলেছেন।
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আমি মেরাজের রাতে যাদের মাঝখান দিয়ে গিয়েছি, তাদের সবাই আমাকে বলেছে, হে মুহাম্মদ, আপনি আপনার উম্মতকে হিজামার আদেশ করবেন।” সুনানে তিরমিযী হাদীছ নম্বর: ২০৫৩
হযরত জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় হিজামায় শিফা রয়েছে।” সহীহ মুসলিম, হাদীছ নম্বর: ২২০৫
হিজামাহ একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যা অনেক প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। এবং মিরাজের রাতের পর থেকে উম্মাতে মোহাম্মাদীরাও এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে চিকিৎসা করে থাকে। শরীর থেকে দূষিত রক্ত বের করে দেয়ার নাম হল কাপিং। যার কিছুটা আধুনিক রুপ হল রক্তদান কর্মসূচী। সকল ডাক্তারই এর গুরুত্ব নিয়ে একমত। এটি সুন্নাত চিকিৎসা পদ্ধতি সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি চিকিৎসা । এতে শরীরের মাংস পেশী সমূহের রক্ত প্রবাহ দ্রুততর হয়। এর মাধ্যমে পেশী, চামড়া, ত্বক ও শরীরের ভিতরের অরগান সমূহের কার্যকরীতা বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীর সতেজ ও বলবান হয়। হিজামা বা Wet Cupping অতি প্রাচীন মেডিক্যাল টিটমেন্ট হিসাবে আরব বিশ্বে জনপ্রিয়। নিদিষ্টস্থান থেকে ধারালো সূচের স্পর্শ দিয়ে নেগেটিভ প্রেশার সৃষ্টি করে (টেনে/চোষে) নিঃস্তেজ প্রবাহহীন দুষিত ও ব্যবহৃত রক্ত বের করে আনা হয়। এ “হিজামা থেরাপী” (Controlled Bloodletting) ৩০০০ বৎসরেরও পুরাতন চিকিৎসা পদ্ধতি। রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজামা করেছেন, করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন। “হিজামা থেরাপী” মধ্যপ্রাচ্য থেকে উৎপত্তি হলেও, চিকিৎসা পদ্ধতি হিসাবে চীন, ইন্ডিয়া ও আমেরিকায় বহু পূর্বে থেকে প্রচলিত ছিল। ১৮ শতক থেকে ইউরোপেও এর প্রচলন রয়েছে। শরীরের ব্যথ্যাযুক্ত স্থান থেকে হিজামার মাধ্যমে সামান্য পরিমাণ দুষিত ও ব্যবহৃত রক্ত বের করে আনার মাধ্যমে রোগী আরোগ্য লাভ করেন এবং ব্যথ্যা মুক্ত হন, আর শরীরের মধ্যে ব্যালেন্স প্রতিষ্ঠিত হয়।
হিজামার মাধ্যমে যে সব রোগ প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা হয়: উচ্চ রক্তচাপ ব্যাক পেইন বাতের ব্যথা অর্শ Sports Injuries মহিলাদের ইউট্রেস সমস্যা ত্বকের বর্জ্য পরিস্কার জ্ঞান এবং স্মৃতি শক্তিহীনতা থাইরড ব্যঘাত ঘুমের ব্যঘাত কালো যাদু (black magic) ঘন ঘন পস্রাব কিডনী ও লিভারের সমস্যা হেই-ফিবার গ্যাসটিক নাক দিয়ে ঘন ঘন রক্ত পড়া সিস্ট আথ্যরাইটিজ জয়েন্টে পেইন কমরে ব্যথা ঘাড়ে ব্যথা মাইগ্রেইন মাথা ব্যথা হাটুর ব্যথা পায়ে ব্যথা ফোঁড়া ইত্যাদি। পাঁচড়া অন্ডকোষ ফোলা Cupping (Hijama) therapy was reported to treat medical conditions as hypertension, neck pain, skin diseases, infectious diseases, rheumatoid arthritis, chronic osteoarthritis, and chronic non-specific neck pain, and persistent non-specific low back pain, pain of acute gouty arthritis, headache and migraine etc.
হিজামার উপকারিতা নিয়ে আরও কিছু হাদিসঃ
মাথা ব্যথায় হিজামা: সালমা (রা.) বর্ণনা করেছেন, “যখন কেউ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে মাথা ব্যথার কথা বলত, তিনি (সা.) তাদের হিজামা করার কথা বলতেন”।
জ্ঞান এবং স্মৃতি বর্ধক হিজামা: ইবনে উমার (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “খালি পেটে হিজামা লাগানো উত্তম। এতে শিফা ও বরকত রয়েছে। এতে জ্ঞান এবং সৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায়.......।”
বিষ বা ব্যথ্যায় হিজামা: আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, এক ইহুদী মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বিষ যুক্ত গোস্ত খেতে দিয়েছিল, তাই তিনি তাকে সংবাদ পাঠিয়ে বললেন “কেন তুমি তা করলে?” মহিলাটি উত্তরে বলল, “যদি তুমি সত্যিই আল্লাহর বার্তা বাহক হও তবে আল্লাহ তোমাকে জানিয়ে দিবেন এবং তুমি যদি তাঁর বার্তা বাহক না হও তবে আমি মানুষকে তোমার থেকে নিরাপদ রাখতাম”! যখন আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর যন্ত্রনা আনুভব করতে লাগলেন, তিনি হিজামা ব্যবহার করলেন। একদা ইহরাম অবস্থায় তিনি ভ্রমনে বের হলেন এবং ঐ বিষের যন্ত্রনা বোধ করলেন তখন তিনি হিজামা ব্যবহার করলেন।
কালো যাদু (black magic): ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন যাদু দ্বারা পীড়িত হন তখন তিনি মাথায় হিজামা লাগান এবং এটাই সবচেয়ে উত্তম ঔষধ যদি সঠিকভাবে করা হয়।
মহিলাদের জন্য হিজামা: জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন, উম্মে সালামা (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে হিজামা করার জন্য অনুমতি চাইলেন। তাই রাসূলুল্লাহ তাকে (উম্মে সালামাকে) হিজামা লাগিয়ে দিতে আবু তাইবা (রা.)-কে আদেশ দিলেন। জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রা.) বললেন, আমার মনে হয়, আবু তাইবা তার (উম্মে সালামার) দুধ ভাই অথবা একজন অপ্রাপ্ত বালক ছিলেন।
হিজামা সব রোগের ক্ষেত্রে কাজ করে: আবু কাবশাহ আনমারী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) মাথার মাঝখানে এবং দুই কাঁধের মাঝে হিজামা করতেন এবং বলতেন, যে ব্যক্তি নিজ শরীরের এ অংশে হিজামা করাবে, সে তার কোনো রোগের চিকিৎসা না করালেও কোনো ক্ষতি হবে না।