18/01/2025
কুকুর, বিড়াল বা বেজি কামড়ানোর পর র্যাবিস রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে। যদি উক্ত কুকুর বা বিড়াল র্যাবিসে আক্রান্ত থাকে এবং আপনাকে কামড়ায় তবে আপনিও অবশ্যই র্যাবিসে আক্রান্ত হবেন।
র্যাবিস এমন এক রোগ, এ রোগে আপনি একবার আক্রান্ত হলে দুনিয়ায় এমন কোনো চিকিৎসক নেই, এমন কোনো ওষুধ নেই, যা আপনাকে বাঁচাতে পারে। অর্থাৎ র্যাবিসে মৃত্যুর হার শতভাগ, র্যাবিসে আক্রান্ত হলে আপনি মারা যাবেনই।
শুধু মারা গেলেও একটা কথা ছিল। র্যাবিসের মৃত্যুটা খুব কষ্টের (কতটা কষ্টের, ইউটিউবে Hydrophobia in Rabies লিখে সার্চ দিয়ে দেখুন, ভয় পেয়ে যাবেন)। শুরুতেই আপনার গায়ে ব্যাথা, জ্বর, সর্দিকাশি ইত্যাদি দিয়ে শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে এই ভাইরাস আপনার পুরো নার্ভাস সিস্টেমকে আক্রমন করে বসে। তখন আপনার শরীরের মাংসপেশিগুলোর প্রতি আপনার মস্তিষ্কের আর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। ফলে এসব মাংসপেশি উল্টাপাল্টা আচরণ শুরু করে দেয়।
র্যাবিসে আক্রান্ত রোগীরা পানি দেখলে আতংকিত হয়ে পড়ে। এর কারণ হলো, পূর্বেই বলেছি, শরীরের মাংসপেশিগুলো এ রোগে উল্টাপাল্টা আচরণ করে থাকে। সাধারণত পানি পান করার সময় আমাদের গলার, খাদ্যনালীর মাংশপেশিগুলো শিথিল হয়ে যায়, ফলে অনায়াসেই আমরা পানি পান করতে পারি। কিন্তু র্যাবিসে আক্রান্ত হলে, গলা ও খাদ্যনালীর মাংশপেশিগুলো উলটো আচরণে, শিথিল হবার পরিবর্তে প্রবলভাবে সংকুচিত হয়। ফলে এক ফোঁটা পানি ভেতরে ঢুকতে পারে না। সেই সাথে অনুভূত হয় তীব্র ব্যাথা। ফলে পানি দেখামাত্রই রোগী ভয়াবহ রকমের আতংকিত হয়ে পড়ে।
এভাবে একে একে শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলোও উল্টাপাল্টা আচরণ করতে শুরু করে। একে একে ডায়াফ্রাম, অন্ত্র, প্রশ্রাবের থলি এবং ফুসফুসও আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এবং শেষে ভয়াবহ কষ্টের মাধ্যমে একজন র্যাবিসে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত হয়।
কোন কোন প্রাণীর কামড়ে র্যাবিস হয়ঃ
র্যাবিসে আক্রান্ত সমস্ত প্রাণীর কামড়েই র্যাবিস হতে পারে৷ এমনকি কোনো র্যাবিসে আক্রান্ত মানুষের লালাও যদি আপনার কোনো ক্ষতস্থানে লেগে যায়, আপনি তখন র্যাবিসে আক্রান্ত হতে পারেন।
যেসব প্রাণীর কামড়ে র্যাবিস হতে পারে এবং অবশ্যই ভ্যাক্সিন নিতে হবেঃ
১. কুকুর
২. বিড়াল
৩. শেয়াল
৪. বেজি
৫. বানর
৬. বাদুড়
যেসব প্রাণী কামড়ালে সাধারণত র্যাবিস হয় না এবং ভ্যাক্সিন নিতে হয় নাঃ
১. ইঁদুর
২. খরগোশ
৩. কাঠবিড়ালি
৪. গুঁইসাপ
৫. মানুষ
আপনি যেহেতু জানেন না, আপনাকে কামড়ানো প্রাণীটি র্যাবিসে আক্রান্ত কি না, সেহেতু আপনাকে ভ্যাক্সিন নিতেই হবে। কামড়ে রক্ত বের হোক, না হোক, ভ্যাক্সিন নেয়া উত্তম। এমনকি আপনার কোনো ক্ষতস্থান কোনো প্রাণী চাটলেও ভ্যাক্সিন নেয়া ভালো।
র্যাবিসের ভ্যাক্সিন ৫ টি ডোজে দেয়া হয়।
প্রথমটি যেদিন কামড়িয়েছে, সেদিন অথবা যত দ্রুত সম্ভব। এরপরেরগুলো ৩, ৭, ১৪ এবং ২৮ তম দিনে (1-1-1-1-1 রেজিমে দিলে পাঁচটি ডোজ, 2-1-1 রেজিমেন তিনটি, তখন শিডিউল হয়- ০, ৭, ২১ তম দিন)।
কোন কোন অবস্থায় ভ্যাক্সিন নিলেও কোনো সমস্যা নেইঃ
১. গর্ভাবস্থায়
২. মায়ের দুগ্ধ দানকালে
৩. অন্য যেকোনো অসুস্থতায়
৪. ছোট বাচ্চা
৫. বৃদ্ধ
যেহেতু একবার র্যাবিস হলে মৃত্যু অবধারিত, সেহেতু হেলা না করে র্যাবিস ছড়াতে পারে এমন কোনো প্রাণী কামড়ানো মাত্রই উক্ত স্থান ১৫-২০ মিনিট ধরে কাপড় কাঁচা সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং দ্রুত ভ্যাক্সিন নিন।
মহাখালী সংক্রামক ব্যধি হাসপাতালে র্যাবিসের ভ্যাক্সিন ফ্রি দেয়া হয়, এছাড়া কিছু সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও ফ্রিতে পাওয়া যায়।