04/04/2025
⛔ কেন বাচ্চাকে মোবাইল বা গ্যাজেট দেবো না?
বাবা-মা হিসেবে আমাদের প্রথম দায়িত্ব সন্তানের সুস্থ মানসিক ও শারীরিক বিকাশ নিশ্চিত করা। আধুনিক যুগে গ্যাজেটস (স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ইত্যাদি) এই বিকাশে সহায়ক হওয়ার বদলে বাধা সৃষ্টি করছে। আমি আমার সন্তানকে কেন গ্যাজেট দেবো না? কেন তাকে নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা দেবো? এর উত্তর খুব সহজ—এই গ্যাজেটের আবিষ্কারকরাই তাঁদের সন্তানদের এসব ব্যবহার করতে দেননি। স্টিভ জবস, বিল গেটসের মতো প্রযুক্তি-নেতারা যদি তাঁদের সন্তানদের গ্যাজেট না দেন, তাহলে আমরা কেন দেবো?
গ্যাজেট ব্যবহারের ভয়ংকর বাস্তবতা
১. গ্যাজেট মানেই গেইম, সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইনে আসক্তি
স্মার্টফোন বা ট্যাব হাতে পেলে বেশিরভাগ শিশু ও কিশোর গেইম, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব বা চ্যাটিংয়েই সময় কাটায়। এগুলোর ব্রাউজিং হিস্টোরি পরীক্ষা করলেই সত্যটা বেরিয়ে আসবে। দরকারি কাজের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় কাজেই এগুলোর ব্যবহার বেশি।
২. ইন্টারনেটের খারাপ দিকগুলো সহজলভ্য
ইন্টারনেট যেমন শিক্ষার জন্য ভালো, তেমনি বিপজ্জনকও। অনলাইন দুনিয়ায় এমন অনেক কনটেন্ট রয়েছে যা একটি কোমল মনকে বিপথগামী করতে যথেষ্ট। অল্প বয়সে ভুল পথে গেলে পুরো জীবনটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৩. রাতজাগা গেইমিং ও শারীরিক ক্ষতি
অনেক শিশু-কিশোর অনলাইন গেইমে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে, যেখানে প্রতিপক্ষ থাকে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে। ফলে ঘুমের সময় নষ্ট হয়, যা ধীরে ধীরে পড়াশোনার ক্ষতি করে। ঘুম কম হওয়ায় মানসিক চাপ, হতাশা ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়।
৪. পারিবারিক সম্পর্কের দুরত্ব তৈরি হচ্ছে
বাচ্চারা এখন বাবা-মার সঙ্গে কথা বলার চেয়ে মোবাইলে ব্যস্ত থাকে। তারা মোবাইলে চোখ রেখেই কথা শুনছে, কিন্তু সত্যিকার অর্থে মনোযোগ দিচ্ছে না। এতে বাবা-মার সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা কমে যাচ্ছে।
৫. দ্বৈত ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠছে
বাচ্চারা বাস্তব জীবনে বাংলাদেশি হলেও ভার্চুয়াল জগতে তারা বিদেশি সংস্কৃতির অনুসারী হয়ে উঠছে। এতে তাদের মনে সাংস্কৃতিক বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে, যা হতাশার দিকে ঠেলে দেয়। তারা নিজেদের দেশ, সমাজ ও সংস্কৃতিকে তুচ্ছ ভাবতে শুরু করে।
৬. অর্থনৈতিক ও সামাজিক মূল্য
গ্যাজেট কেনার জন্য বাবা-মা প্রচুর টাকা ব্যয় করেন, যা আসলে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করার বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা পরিশ্রমের টাকায় তাদের জন্য শিক্ষা ও উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চাই, গ্যাজেটের মাধ্যমে বিপথে ঠেলে দিতে নয়।
বাচ্চা আমার-আপনার, কোনো এক্সপেরিমেন্টসের জিনিস না!
আমাদের সন্তান অটিজমের হোক বা অন্য কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে থাকুক, তারা কোনো পরীক্ষার বস্তু নয়। কিছুদিন পরপর স্টেম সেল থেরাপি, হোমিওপ্যাথি, ঝাড়ফুঁক, এক সেন্টার থেকে আরেক সেন্টারে দৌড়ানো—এসব না করে আগে আমাদের সন্তানকে মেনে নিতে হবে।
“অমুক আপা বলেছে এখানে গেলে ভালো হবে,” “ওই সেন্টারে একজন বাচ্চা ভালো হয়েছে”—এসব না ভেবে ধৈর্য ধরে, ভালোবাসা দিয়ে, ধাপে ধাপে কাজ করলে আমাদের সন্তানরা ইনশাআল্লাহ ম্যানেজেবল হয়ে উঠবে। সঠিক পরিচর্যা ও সাপোর্ট পেলে তারা স্বাভাবিক জীবনের অনেক কাছাকাছি যেতে পারবে।
কঠোর প্যারেন্টিংই সন্তানের ভবিষ্যৎ রক্ষা করবে
আমি গণতান্ত্রিক বাবা নই। আমার সন্তান যতদিন প্রাপ্তবয়স্ক না হবে, ততদিন তার ‘ব্যক্তিগত স্বাধীনতা’র দরকার নেই। সন্তান যদি বাবা-মাকে ছাড়িয়ে না যায়, তাহলে সেই পিতৃত্ব-মাতৃত্ব বৃথা।
আমাদের কঠিন হতেই হবে—
✅ কোনো অবস্থাতেই ছোটবেলা থেকে স্মার্টফোন বা ট্যাব দেওয়া যাবে না
✅ বাচ্চার পড়াশোনা ও অনলাইন কার্যক্রম অভিভাবকের সামনে হতে হবে
✅ রাতজাগা গেইমিং ও দরজা বন্ধ করে মোবাইল ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে দেওয়া যাবে না
✅ পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে প্রযুক্তি ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করতে হবে
আমাদের সন্তানদের প্রযুক্তির দাস বানানো যাবে না। তাদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে হলে আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে, শাসন করতে হবে, প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে।
আমাদের লোকেশন:
📍 Wonder Kids Development Centre
🏠 সেক্টর ৫, রোড ১, হাউস ৩৩, উত্তরা, ঢাকা।
📞 যোগাযোগ: +880 1757-707684 (WhatsApp)