30/12/2024
হেরে যাব কেন? হারকে নিয়তিই বা মনে করবো কেন?
হারতে চায় না কেউ, তবুও সবাই হারে।
হারের তিক্ত স্বাদ আমাদের জীবনটাকে দুর্বিসহ করে তোলে বিভিন্ন সময়। অনেকেই আছেন, যাদেরকে হারটা খুব সহজেই কাবু করে ফেলে। মনটা ভীষণ খারাপ হয়। মনে হয়, আমার সব শেষ হয়ে গেল। আমি আর ঘুরে দাড়াতে পারবো না। জীবনে কখনোই এমনটা মনে হয় হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই কষ্টকর হবে।
বাস্তব কথা হচ্ছে, মানুষ এই অবস্থা থেকেও ঘুরে দাড়ায় এবং জীবন চলতে থাকে। অনেকের মনে হতে পারে, হয়তো আগের মতো নয়। কিন্তু, হিসেব করলে দেখা যাবে, কখনো কখনো আগের চেয়েও অনেক ভালো।
আমি আসলে এসব কথা বলার জন্য এই লেখাটি শুরু করিনি। আমি একটু ভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে চাই। আর সেটা হলো-হারকে আমরা কতটুকু হার হিসেবে নেবো? জীবনে হারকে কীভাবে মূল্যায়ন করবো?
যদি কেউ মনে করেন-জ্ঞান দিচ্ছি-মনে করতে পারেন-কিন্তু আমি আসলে আমার জীবন থেকে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। আপনার অভিজ্ঞতা ভিন্ন হতে পারে। কিন্ত আপনি যদি চান তো, আমার অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃতও হতে পারেন।
জীবনে অনেক হেরেছি, অনেককে হারতে দেখেছি। এখন হার থেকে শিখতে এবং ঘুরে দাড়াতে এবং হারকে জীবন বদলে দিতে কাজে লাগাতে শিখছি।
আপনি জীবনে অনেক বড় বড় হাররে সম্মুখীন হতে পারেন। মনে করতে পারেন-আপনার জীবনটা অর্থহীন, নিষ্ফল হয়ে গেলে। কিন্তু আপনি চাইলে একটু ভিন্নভাবেও দেখতে পারেন।
দেখা যাক-হারকে আমরা সাধারণত যেভাবে নিই-সেভাবে নিলে কি হতে পারে। প্রথমত হতে পারে আপনার প্রচন্ড মন খারাপ হবে, আপনি হাল ছেড়ে দেবেন, আর চেষ্টা করতে চাইবেন না। আমি বলছি না এটা খুব খারাপ কিছু। কিন্তু আমরা এটা করি। প্রায়ই করি।
এবার দেখা যাক-এই কাজটা করা ছাড়াও আমরা আর কি করতে পারি।
প্রথমে যেটা করতে পারি সেটা হলো হারকে খেলার একটি অংশ হিসেবে নিতে পারি। (ইংরেজীতে বললে হয়তো আরেকটু ভাল হতো- স্পোর্টিংলি শব্দটা বিষয়টা আরো ভাল বোঝায়)। যাই হোক। খেলা হিসেবে নিলে কি সুবিধা? সুবিধা হলো এই যে, একটা হারই আমাদের জীবনের সব কিছুতে পরিণত হবে না। কারণ, কোন একটা খেলায় হেরে যাওয়া মানে জীবনের সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়। বরং, পরবর্তীতে আরো ভাল প্রস্তুতি নিয়ে আরো ভাল করার সুযোগ থাকে, এমনকি খেলা পরিবর্তনের সুযোগও থাকে। সুতরাং- হারকে খেলার অংশ হিসেবে নিলে ম্যানেজ করতে বা ডিল করতে সুবিধা।
আচ্ছা, এবার দেখা যাক, খেলায় ভাল করার জন্য আমরা কি করতে পারি? তিনটা জিনিস করতে পারি:
এক: আগে থেকে খুব ভাল একটা প্ল্যান করে খুব ভাল প্রস্তুতি নিতে পারি
দুই: প্ল্যানটা খুব ভাল ভাবে কাজে লাগিয়ে হার এড়াতে পারি অন্য কথায় জিততে পারি।
তিন: যদি হেরেও যাই, সেটাকে খেলার অংশ হিসেবে নিয়ে, পাকা খেলোয়ারের মতো পরবর্তী খেলার জন্য আরো ভাল করে প্রস্তুত হতে পারি।
প্রত্যেকটি বিষয়টি নিয়ে লিখতে গেলে বিশাল বিশাল উপন্যাস লেখা যাবে। আমি যেহেতু উপন্যাস লিখতে পারি না বা জানি না তাই ছোট করে একটু লিখে দেই।
প্রথমতঃ প্ল্যান ব্যাপারটা অনেক ব্যাপক। আপনাকে ভাবতে হবে এবং সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনি আসলেই খেলাটি খেলতে চান কিনা? যদি খেলতে চান কেন-এই খেলাতে অংশগ্রহণ করা বা জেতা আপনার জন্য কতটুকু প্রয়োজন বা গুরুত্বপূর্ণ? আপনি কি খেলাটি খেলার উপযুক্ত(কোয়ালিফায়েড)? এই খেলায় জেতার জন্য আপনার যা যা উপাদান বা উপকরণ প্রয়োজন তা কি আপনার আছে বা আপনি যথাসময়ে সংগ্রহ করতে পারবেন? এর জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নেয়ার জন্য যথেষ্ঠ সময় আপনি দিতে পারবেন কি? কি কি সমস্যা বা বাধা আসতে পারে? সেগুলো কিভাবে মোকাবেলা করবেন? এই খেলায় জেতার জন্য আপনার বিশেষ ভাল দিক কি-সেগুলো কিভাবে কাজে লাগাবেন? আপনার দুর্বলতাগুলোই বা কি -সেগুলো কিভাবে কাটিয়ে উঠবেন? আপনাকে এই বিষয়ে কে কে সঠিকভাবে সাহায্য করতে পারবে, তাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে কার্যকর প্রস্তুতিমূলক সহায়তা নেয়া বা খেলা চলাকলীন বা খেলা পরবর্তী সময়ে সহায়তা নেয়ার জন্য তাদের প্রস্তুত করা। এক্সিট প্ল্যান থাকা। জয়ী না হতে পারলে কি কি ঘটতে পারে। সেগুলো কিভাবে মোকাবেলা করা হবে।
দ্বিতীয়তঃ মাঠ পর্যায়ে অর্থাত খেলা চলাকালীন সময়ে, প্ল্যান সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা এবং যেকোন সমস্যা (ভাল শব্দ হলো চ্যালেঞ্জ) প্ল্যান মোতাবেক মোকাবেলা করা। এবং জয়ী হওয়া।
তৃতীয়ত: জয়ী হলে তো হলেন, না হলে এক্সিট প্ল্যান কাজে লাগিয়ে পরবর্তী খেলার জন্য প্রস্তুত হওয়া অথবা অন্য খেলার জন্য প্ল্যান তৈরী করা।
পুরো বিষয়টি অনেকটা হালকা ধরণে, দুষ্টুমির ধাচে লেখা। কিন্তু কেউ যদি কাজে লাগাতে চায়, সে চাইলে সারা জীবন এটা কাজে লাগাতে পারে, জীবনটাকে পরিবর্তন করে নিতে পারে।
এই লেখাটির বিষয়ে আপনার সুচিন্তিত মতামত সাদরে গৃহীত হবে। কোন কিছু বাদ পড়ে থাকলে সেটা যোগ করা হবে, কিছু ভুল থাকলে বাদ দেয়া হবে।
বি:দ্র:- বিশ্বাসীদের জন্য দু'টো কথা। যদি স্রষ্টায় বিশ্বাস করেন তাহলে মনে রাখবেন, আল্লাহ তাকেই সাহায্য করেন-যে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনে চেষ্টা করেন। আমি ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে চাইনি, ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা পদ্ধতি বলতে চেয়েছি। যদি আল্লাহ চান তো পদ্ধতিতে কাজ হবে, আল্লাহ না চাইলে আপনি যতো চেষ্টাই করেন না কেন কিছুই হবে না। তবে, চেষ্টা না করলে যে কিছু হবে না সেটাও কিন্তু সত্যি। সুতরাং চেষ্টার পাশাপাশি আল্লাহর সাহায্য প্রার্থণা করতে ভুলবেন না। আর যদি এতো কিছু করার পরেও হার না এড়াতে পারেন তাহলে মনে করবেন-এটা আল্লাহর পরীক্ষা স্বরূপ। ধৈর্য়্য ধারণ করলে এবং আল্লাহর উপর আস্থা অটুট থাকলে, আল্লাহ নিশ্চয়ই আপনাকে ইহকালে অথবা/এবং পরকালে এর চেয়ে উত্তম প্রতিদান দান করবেন।
https://www.youtube.com/watch?v=pLqCksXE47Q