04/11/2021
#আসলে অনেকেই হিজামা কি তা বুঝেনি
তাই সবার অবগতির জন্য পোস্ট টি দেয়া।
হিজামা (আরবি: ﺣﺠﺎﻣﺔ অর্থ:"শোষণ") হল শিঙ্গা লাগানো নামক প্রচলিত চিকিৎসার আরবি নামকরণ, যেখানে দেহের ত্বকের ব্যথাযুক্ত কোন অংশে সামান্য কর্তন করে সেখানে কাপ আকৃতির বায়ুশূণ্যকারী ছোট পাত্র নিশ্ছিদ্রভাবে এটে দিয়ে তা বায়ুশুন্য করে কর্তনকৃত অংশ থেকে নিম্নচাপের মাধ্যমে রক্ত নিঃসৃত করা হয়। [১] কাপ আকৃতির পাত্র ব্যবহার করা হয় বলে এর আরেক নাম ওয়েট কাপিং। সাধারণত
মাথাব্যথা , শরীরব্যথার মত অসুস্থতা নিরাময়ে এই চিকিৎসা প্রয়োগ করা হয়। নবীজি হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) একে সর্বোত্তম চিকিৎসা বলে উল্লেখ করেছেন যা একাধিক বিশুদ্ধ হাদীসে পাওয়া গিয়েছে।
হিজামা কি?
#হিজামা হল এমন একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি, যাতে মানুষের সকল প্রকার শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক সুস্থতা বিদ্যামান রয়েছে। যাকে বাংলায় শিঙ্গা এবং ইংরেজিতে Cupping therapy বলা হয়।
হিজামার পদ্ধতি
------*-------
#শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশ থেকে মেশিনের সাহায্যে অথবা শিঙ্গার সাহায্যে রক্ত চুষে নেয়া বা বের করে ফেলা। এরদ্বারা ভেতরের দূষিত রক্ত দূর হয়ে যায়। যারফলে মানুষ প্রশান্তি অনুভব করে।
কেন হিজামা করাবেন?
---------*----------
#আপনার রোগ হলে যেমন ডাক্তারের কাছে যান। তারপর প্রয়োজন পড়লে অস্ত্রপোচারও করান। তেমনি আপনার রোগের জন্য হিজামা করাবেন। তাহলে ফায়দা স্বরূপ রোগ থেকে ইনশাআল্লাহ মুক্তি পাবেন এবং রাসূল সাঃ এর একটি সুন্নাতের উপরও আমল করা হলো।
হিজামা সংক্রান্ত হাদীসঃ
---------*----------
(১) হযরত আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জিবরীল আমাকে জানিয়েছেন যে, মানুষ চিকিৎসার জন্য যতসব উপায় অবলম্বন করে, তম্মধ্যে হিজামাই হল সর্বোত্তম।” আল-হাকিম, হাদীছ নম্বর: ৭৪৭০
(২) হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কেউ হিজামা করতে চাইলে সে যেন আরবী মাসের ১৭, ১৯ কিংবা ২১ তম দিনকে নির্বাচিত করে। রক্তচাপের কারণে যেন তোমাদের কারো মৃত্যু না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখবে।” সুনানে ইবনে মাজা, হাদীছ নম্বর: ৩৪৮৬
(৩) হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আমি মেরাজের রাতে যাদের মাঝখান দিয়ে গিয়েছি, তাদের সবাই আমাকে বলেছে, হে মুহাম্মদ, আপনি আপনার উম্মতকে হিজামার আদেশ করবেন।” সুনানে তিরমিযী হাদীছ নম্বর: ২০৫৩
(৪) হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “গরম বৃদ্ধি পেলে হিজামার সাহায্য নাও। কারণ, কারো রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে তার মৃত্যু হতে পারে।” আল-হাকিম, হাদীছ নম্বর : ৭৪৮২
(৫) হযরত জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় হিজামায় শেফা রয়েছে।” সহীহ মুসলিম, হাদীছ নম্বর: ২২০৫
(৬) হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “খালি পেটে হিজামাই সর্বোত্তম। এতে শেফা ও বরকত রয়েছে এবং এর মাধ্যমে বোধ ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়।” সুনানে ইবনে মাজা, হাদীছ নম্বর: ৩৪৮৭
(৭) হযরত আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হিজামাকারী কতইনা উত্তম লোক। সে দূষিত রক্ত বের করে মেরুদন্ড শক্ত করে ও দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে।” সুনানে তিরমিযী, হাদীছ নম্বর: ২০৫৩
#হিজামা/CUPPING) এর মাধ্যমে যে সব রোগের চিকিৎসা করা হয়ে থাকেঃ
-------------------------------------
১। মাইগ্রেন জনিত দীর্ঘমেয়াদী মাথাব্যথা (Migraine)
২। দূষিত রক্ত পরিষ্কারকরণ (Purify Blood)
৩। উচ্চরক্তচাপ (High Blood Pressure)
৪। ঘুমের ব্যাঘাত (insomnia)
৫। স্মৃতিহীনতা (Parkinson's disease)
৬। অস্থি সন্ধির ব্যাথা/গেটে বাত/বাতের ব্যথা (Arthritis/Rheumatism)
7। জয়েন্টের ব্যথা (Gout Pain)
8। পিঠে বা সারা শরীরের (Backache/scabies)
9। হাঁটু ব্যাথা (Knee Pain)
10। পায়ের তালুর ব্যথা(heel pain)
১১। সায়াটিক ব্যথা (Sciatica)
১২। মাথা ব্যথা (Head-ache)
১৩। ঘাড়ে ব্যাথা ও কাঁধে ব্যথা (Neck & Shoulder Pain)
১৪। কোমর ব্যাথা (Waist Pain)
১৫। মাংসপেশীর ব্যাথা (muscles spasm)
১৬। দীর্ঘমেয়াদী পেট ব্যথা (Adbominal Pain)
১৭। হাড়ের স্থানচ্যুতি জনিত ব্যাথা, ফ্র্যাকচার পেইন
১৮। থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা (Thyroid Problem)
১৯। রক্তসংবহন তন্ত্রের ইনফেকশন(Blood circulation system)
২০। ত্বকের বর্জ্য নিষ্কাশন (remove toxin)
২১। বিভিন্নরকম চর্মরোগ (Chronic Skin Diseses)
২২। সাইনুসাইটিস (Sinuses problem)
২৩। এজমা/হাঁপানি (asthma)
২৪। হৃদরোগ (Cardiac Disease)
২৫। টনসিলের সমস্যা (Tonsillitis )
২৬। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Low Immunity)
২৭। দাঁত,মুখ, গলা ব্যথা (Larynx, Gums and dental disease)
২৮। গ্যাস্ট্রিক পেইন, গ্যাস্ট্রিক আলসার, এসিডিটি, esophageal varices (Gastric/Ulcer)
২৯। মুটিয়ে যাওয়া (obesity)
৩০। দীর্ঘমেয়াদী চর্মরোগ (Chronic Skin Diseases)
৩১। ফোঁড়া-পাঁচড়া সহ আরো অনেক রোগ,
৩২। ডায়াবেটিস (Diabetes) ও ডায়াবেটিক ফুট,
৩৩। ভার্টিব্রাল ডিস্ক প্রোল্যাপ্স/ হারনিয়েশান,
৩৪। চুল পড়া (Hair fall),
৩৫। মানসিক সমস্যা (Psychological disorder),
৩৬। পারকিনসন্স ডিজিজ
৩৭। কিডনির সমস্যা (Kidney Disease)
৩৮। স্পোর্টস ইঞ্জুরি (খেলোয়াড়, আর্মি, কনট্যাক্ট স্পোর্টস)
৩৯। কানের সমস্যা
৪০। ক্যান্সারের ব্যাথা নিয়ন্ত্রন,
৪১। লিভার ডিজিজ, পোর্টাল হাইপারটেনশান,
৪২। হরমোনাল সমস্যা,
৪৩। ব্রেইন ডিজিজ ও ডিজঅর্ডার,
৪৪। ক্রনিক কফ/ফুসফুসের রোগ (Chronic Chugh/Lung Disease)
৪৫। Erectile Dysfunction (ED)
৪৬। ব্রন,
৪৭। সিস্টেমিক লুপাস ইরাইথেমেটোসাস (SLE),
৪৮। অনিয়মিত মাসিক, মেয়েদের অন্যান্য সমস্যা,
৪৯। এডিকশান/ ডিপেন্ডেন্সি (স্লিপিং পিল, ড্রাগস, কফ সিরাপ, জর্দা, সিগারেট, এলকোহল ও অন্যান্য নেশাদ্রব্য)
৫০। TMJ Dysfunction Syndrome
৫১। প্যারালাইসিস (স্ট্রোক, মেরুদন্ডে আঘাত, গিয়েন বারে সিন্ড্রোম, ফেসিয়াল প্যারালাইসিস বা বেল’স পলসি প্রভৃতি)
৫২। অস্টিওপোরোসিস (হাড়ের ক্ষয়)
৫৩। Post menopsusal hot flush
৫০। Vaginismus
৫১। vertigo (মাথা ঘোরা)
৫২। আইবিএস (কোলন ক্যানসার)
৫৪। অর্শ্বরোগ (Piles)
৫৫। ভগন্দর (Fistula, A**l Fissure)
৫৬। দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য (Chroic Constipation)
৫৭। বিষন্নতা ও স্নায়বিক চাপ (Depression & Nervous Stress)
৫৮। শ্বেত রোগ (ধবল, চামড়া সাদা হয়ে যাওয়া)
…..............................................এবং আরও অনেক রোগ
#
আরব দেশ সমূহ এবং ভারত পাকিস্তানে হিজামার বহুল প্রচলন থাকলেও আমাদের দেশে হিজামা/শিঙ্গা লাগানোর খুব একটা প্রচলন নেই। জাপান, আমেরিকা, চীনেও আধুনিক পদ্ধতিতে হিজামা/শিঙ্গা/
cupping চিকিৎসা গ্রহন করা হচ্ছে। রাসূল সাঃ এর যুগে এই চিকিৎসা খুব বেশি প্রচলিত ছিলো। রাসূল সাঃ একদিন ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে সাথে সাথে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে হিজামা করিয়েছেন। যেহেতু আল্লাহ তায়ালার রাসূল হিজামা নিজে করেছেন এবং অন্যদের করতে উৎসাহ প্রদান করেছেন তাহলে নিশ্চয়ই এরমধ্যে বহু উপকার রয়েছে। যার কিছু নমুনা উপরেও পেশ করা হয়েছে। তাই হিজামা করুন, অন্যকে করতে উৎসাহ দিন। একটা সুন্নাতকে জিন্দা রাখুন। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই চিকিৎসা গ্রহন করার এবং ইখলাসের সাথে একটি সুন্নাতকে জীবিত করার তাউফিক দান করুন। আমীন।
হিজামা থেরাপী নেয়ার জন্য ইনবক্স করুন।
-----------------*-------------------
#বিঃ দ্রঃ আরবী মাসের ১৭, ১৯, ২১ তারিখ হলো হিজামার জন্য উত্তম সময়। আর দিন হিসেবে সোম, মঙ্গল আর বৃহঃবার উত্তম। তবে অন্য দিনেও হিজামা করানো যাবে। বুধবার হিজামা না করাই উত্তম।
#হিজামা একটি ফরগটেন সুন্নাহ। নিশ্চয়ই এর মধ্যে উপকার রয়েছে। হিজামা করুন, একটা সুন্নাহকে রিভাইভ করুন।