23/01/2020
ইমোশন শব্দটির সাথে আমরা কম-বেশি সবাই পরিচিত। এই ইমোশন শব্দটি ল্যাটিন শব্দ "ইমোভার" থেকে এসেছে। প্রতিটি ব্যক্তির দুই ধরণের ইমোশন থাকে! পজেটিভ এবং নেগেটিভ। হাঁসি, আনন্দ, উচ্ছ্বাস এগুলো পজেটিভ ইমোশন। আর রাগ, হিংসা, বিদ্বেষ, কান্না এগুলো নেগেটিভ ইমোশন।
আমাদের সবাইকে কম-বেশি রাগতে দেখা যায়! আবার এটি কোয়াইট ন্যাচারাল! একেক জনের এক্সপ্রেশন একেক রকম হয়.. প্রকাশের ধরণটাও ভিন্ন ভিন্ন। এটিকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, আবার কেউ পারেন না!
মাঝে মাঝে এই রাগ আবার ভয়ংকর রূপও নেয়! যারা চট করে রেগে যান তাদেরকে আমরা বলি মাথা গরম! কেউবা এতটাই রাগ করেন যে, তার তাৎক্ষনিক বহিঃপ্রকাশ না ঘটিয়ে পারিপার্শ্বিকতা থেকে নিজেকে শামুকের মতো গুটিয়ে নেন! অনেকে অতিরিক্ত রেগে যেয়ে গালাগালি, মারামারি, বিভিন্ন ধরণের জিনিস ভাংচুর করে থাকেন। বিশেষ করে হাতের কাছে থাকা জিনিস!
এই যে একেক জনের রাগ একেক রকম, তার মূলে রয়েছে:
১। জেনেটিক প্রভাব (যা কিনা বংশ থেকে প্রাপ্ত)
২। পারিবারিক বা পারিপার্শ্বিক প্রভাব
৩। সামাজিক প্রভাব
জটিলতাপূর্ণ পরিবার ও বাবা-মার অশান্তিময় দাম্পত্য জীবনের সম্পর্ক সন্তানের অন্যান্য আচরণ বৈকল্যের পাশাপাশি রাগের প্রকাশভঙ্গিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলে। যে সব কারণে রাগের প্রকাশ ভিন্নতর হতে পারে, সেগুলি যেমন: অর্থনৈতিক দূরবস্থা, পেশাগত ঝামেলা, অবজ্ঞা-অবহেলা, ডিভোর্স, অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া, বেকারত্ব, অনিদ্রা, ক্ষুধা, দীর্ঘস্থায়ী রোগ-বালাই, অসুখী দাম্পত্য জীবন, ভুল-বোঝাবুঝি, হিংসা, ইত্যাদি।
রাগের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া আমরা দেখতে পাই। হার্টের গতি বৃদ্ধি পায়, রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, শরীরে অনেক সময় কম্পনের সৃষ্টি হয়, মাথা ব্যথা করে, মস্তিষ্কের শিরা উপশিরায় চাপ পড়ে, এমনকি স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে! এভাবে নিজেকে নিজেই ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
রাগের প্রকাশের সময় আমাদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না! তাই আমাদের কন্ঠস্বর উচ্চমাত্রায় পৌঁছে যায়, সাধারণ জ্ঞান লোপ পায়, লজ্জাও কমে যায়! অনেক সময় আমরা আক্রামণাত্মকও হয়ে উঠি। খুব কাছের মানুষরা আস্তে আস্তে মনের দিক থেকে অনেক দূরে সরে যান এবং সম্পর্কও ভেঙ্গে যায়। কেননা, আমাদের কথা, আমাদের আচরণই সম্পর্ক তৈরী করে, সম্পর্কের ভিত মজবুত করে, আবার সম্পর্ক শেষও করে!!!
তবে এত কিছু হওয়ার পেছনে কিন্তু আমাদের ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটিরও ভূমিকা রয়েছে। যেমন,
সিজোরয়েড পার্সোনালিটিঃ
এরা আত্মকেন্দ্রিক, এদের লোকজনের সাথে অতো মেলামেশা বা বনিবনা নেই। আন্তরিকতার অভাবে ঘনিষ্ঠ বন্ধু তৈরী হয় না। রসবোধের অভাবে এরা সহজেই মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন! এই ধরণের ব্যক্তির অনেক রাগ থাকে, এরা সহজেই রেগে যেতে পারেন!
এন্টি-সোশ্যাল পার্সোনালিটিঃ
এরা খুব অল্প বয়স থেকেই অপরাধপ্রবণ, বদরাগী স্বভাবের, বেপরোয়া, কলহ প্রবণ, নেশা দ্রব্যের প্রতি আসক্ত হয়ে থাকেন। এরা সব সময়ই রাগের যাতনায় ভুগতে থাকেন বা সহজেই রেগে যান এবং সহজেই হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন!
আবার কিছু কিছু ব্যক্তি এমনিতেই ক্ষ্যাপাটে ধরণের হন। এরা কোন কিছুই সহজে এক্সেপ্ট বা গ্রহণ করতে পারেন না! আবার অনেক কিছুতেই ভীত হয়ে পড়েন! ছোট খাঁটো ভুলে দিশা হারিয়ে ফেলেন! আবেগ প্রবণ, রাগ প্রবণও হন!
এখন কিভাবে আমরা আমাদের রাগটা কমাবো?!
কমাবার জন্য প্রথম যে জিনিসগুলো দরকার তা হল:
প্রথমতঃ আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং আত্মসচেতনতা।
দ্বিতীয়তঃ প্রাণ খুলে সবার সাথে কথাবার্তা বলা।
তৃতীয়তঃ রেগে যাচ্ছেন, বুঝতে পারলে মনটাকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করা বা ঘুরিয়ে দেওয়া।
চতুর্থতঃ পছন্দমত সুন্দর সুন্দর জিনিস বা দৃশ্য কল্পনা করা।
পঞ্চমতঃ অন্যের সাথে তার রাগের কারণটা শেয়ার করা।
ষষ্ঠতঃ যে ব্যক্তি বা ঘটনার জন্য রাগ হচ্ছে, সে ব্যক্তির পজেটিভ জিনিসগুলো নিয়ে ভাবা এবং সেই সাথে 'ঘটনাটি ঘটার ছিল বলেই এটি ঘটেছে', সেই মুহুর্তে এটিই মনে করা এবং নিজের দোষটির দিকে ও করণীয় স্টেপগুলোর দিকে একটু তাকানো।
এই ক্ষেত্রে ব্যক্তির কাছের মানুষরা কি করবেন? ভয় পাবেন না, রাগারাগি করবেন না (যদিও সেটা অনেক কঠিন এবং কষ্টকর একটা ব্যাপার!)। বরংচ, ব্যক্তি যখন রেগে যান, তখন সবাই মাথা ঠান্ডা রেখে চুপ করে থাকুন... এরপর কিছুটা স্বাভাবিক হলে যুক্তি দিয়ে তাকে বোঝান!
তারপরও যদি ব্যক্তি অতিরিক্ত ঘন ঘন কারণ ছাড়া রেগে যান, তার সঙ্গ এড়িয়ে চলুন, কিছু সময়ের জন্য অপেক্ষা করুন। তাকে সহজ হতে সময় দিন। তারপরও যদি তিনি বারবার একইভাবে তুচ্ছ, ছোট কোন ঘটনায় অতিরিক্ত রেগে যান, তাহলে বুঝতে হবে তার কোন ধরণের মানসিক সমস্যা, রোগ বা মুড ডিজঅর্ডার থাকতে পারে। বিভিন্ন ধরণের মানসিক রোগ যেমন, সিজোফ্রেনিয়া, ক্রনিক ডিপ্রেশন, সাইকোসিস, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, ইত্যাদিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও প্রচন্ড রাগ থাকতে পারে!!
এ রকম চলতে থাকলে, দেরি না করে অভিজ্ঞ একজন সাইকো-সোশ্যাল কাউন্সিলরের কাছে যেয়ে এঙ্গার ম্যানেজমেন্ট সেশন নিয়ে আপনার রাগ দমন করতে পারেন নিমেষেই! উল্লেখ্য, আপনার রাগের মাত্রাটি অনেক শারিরীক সমস্যার সাথেও সম্পর্কিত হতে পারে, যেটি মেডিসিন এবং প্রয়োজনে ইনজেকশনে কমানো বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে সেটি ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক হওয়া চাই।
সুতরাং অহেতুক রাগ না করে বা রাগ পুষে না রেখে মনটাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিন। মন আমাদেরকে কি নিয়ন্ত্রণ করবে?!
আমরাই বরং মনটাকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করব!