03/08/2023                                                                            
                                    
                                                                            
                                            Taazaj Food - طازَج Naturals Food 
 #কিসমিস উপকারিতা ও তা খাওয়ার সঠিক নিয়ম
কিসমিস মূলত শুকানো আঙুর। ইরাক, ইরান, পাকিস্তান, এবং ভারতে উৎপাদিত এই মিষ্টি খাবারটি এক কথায় পুষ্টির আধার। ভিটামিন, মিনারেলস, ফাইবার, নিউট্রিয়েন্টস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামে ভরপুর কিসমিস দেহ নিরোগ রাখতে অতুলনীয়। জেনে নিন কিসমিসের উপকারিতা ও খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে। 
কিসমিসের উপকারিতাঃ
১. কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশমঃ
কিসমিস একটি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। এটি শরীরের পরিপাক ক্রিয়া দ্রুততর করে। ফলে খাবার সহজে হজম হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য বিভিন্ন ওষুধ বা সিরাপ না খেয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়া উচিত। 
২. নিরাপদ ওজন বৃদ্ধিঃ
ওজন বৃদ্ধি করা খুব সহজ কাজ না। অল্প সময়ে মনের মতো ওজন বাড়ানোর জন্য ইচ্ছামতো খাওয়াদাওয়া করলেন। ফল হিসেবে পেলেন বেঢপ শরীর ও নানা ধরণের রোগবালাই। কাজেই নিরাপদ ভাবে ওজন বৃদ্ধি করতে চাইলে কিসমিস খেতে হবে।
৩. ক্যান্সার নিরাময়ঃ
কিসমিসে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ও ক্যাটেচিন নামক একটি পলিফেনলিক অ্যাসিড। এগুলো শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র্যাডিকেলগুলো ধ্বংস করে এবং ক্যান্সারের কোষগুলো উৎপাদন হওয়া আটকায়। আবারে কিসমিসে বিদ্যমান আঁশ কোলোরেক্টারাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। প্রতিদিন কিসমিস খেলে শরীরে ক্যাটেচিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং শরীর ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি পায়। 
৪. রক্তচাপ ও রক্তস্বল্পতা নিয়ন্ত্রণঃ
শরীরে যখন সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায় তখন ব্লাড প্রেসার হাই হয়ে যায়। কিসমিসে থাকা পটাশিয়াম সোডিয়ামের মাত্রা কমিয়ে এনে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। আবার এতে আছে আয়রন, কপার, এবং ভিটামিন বি-এর অন্তর্গত কিছু ভিটামিন। এই উপাদানগুলো নতুন রক্ত তৈরি এবং রক্তের লোহিত কণিকা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৫. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি 
ভিটামিন ও মিনারেলের পাশাপাশি কিসমিসে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং পলিফেনলসের মতো পুষ্টি উপাদান। এগুলো রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের বিরুদ্ধে লড়াই করে, বডি সেলসকে অক্সিডেটিভ ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করে। শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি কিসমিস শরীরকে দুষণমুক্ত রাখে। 
৬. হাড়ের বৃদ্ধিঃ 
একদিকে কিসমিসে ক্যালসিয়ামের কমতি নেই, অন্যদিকে এতে আছে বোরন নামক এক ধরণের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। দুয়ে মিলে হাড়ের বৃদ্ধি ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। বোরন শরীরকে ক্যালসিয়াম দ্রুত শুষে নিতে সাহায্য করে। এই মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট শরীরে খুব অল্প পরিমাণে থাকে কিন্তু এটি অস্টিওপরোসিস ও বাতের ব্যথা প্রতিরোধ এবং হাড়ের জয়েন্ট ঠিক রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
৭. মস্তিষ্কের উন্নতি ও প্রশান্তিঃ
কিসমিসে থাকা বোরন যেমন হাড়ের সুগঠন করে তেমনি মনোযোগ বাড়ায়। বাড়ন্ত শিশুদের ব্রেইন ডেভলপমেন্টের সময় কিসমিস খেতে দেয়া উচিত। এতে তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়বে। এছাড়াও কিসমিসে যে আয়রন রয়েছে তা মস্তিষ্কে প্রশান্তি আনে, মানসিক চাপ কমায়, অবসাদগ্রস্ততা কমায়, এবং মনমেজাজ প্রফুল্ল রাখে। শুধু তাই নয়, ঘুমের সমস্যা কাটাতে কিসমিস জাদুর মতো কাজ করে। 
৮. ডায়বেটিস ও ওবেসিটি প্রতিরোধঃ
লাঞ্চ বা ডিনারের পরে শরীরে ইনসুলিনের যে ফ্লাকচুয়েশন হয়, কিসমিস খেলে সেটা প্রতিরোধ করা সম্ভব। ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে ডায়বেটিস হওয়ার আশঙ্কাও থাকে না। কিসমিস শরীরে লেপটিন এবং ঘ্রেলিন নামক দুটি হরমোন রিলিজ করতে সাহায্য করে। এই হরমোনগুলো শরীরে সিগনাল পাঠায় খাওয়ার রুটিন ও পরিমাণ সম্পর্কে। ফলে যখন তখন ইচ্ছামতো খাওয়ার তাগিদ থাকে না এবং ওজন বাড়ে না। তবে আপনার আগে থেকে ডায়বেটিস থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কিসমিস খাবেন না। কারণ এর ন্যাচারাল সুগার ডায়বেটিস মাত্রা ছাড়া করে তুলতে পারে। 
৯. দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষাঃ 
ক্যালসিয়াম এবং অলিওনেলিক অ্যাসিডে পরিপূর্ণ কিসমিস দাঁত শক্ত ও সুগঠিত করে, এনামেল গঠন করে, দাঁতের ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা রোধ করে। মুখের ভেতরে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ঘাঁটি গাড়তে পারে না। ছোট বাচ্চারা চকোলেট খেতে বেশি পছন্দ করে, তাই তাদের দাঁত ও মাড়ি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদেরকে নিয়মিত কিসমিস খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে। 
১০. দৃষ্টিশক্তির উন্নতিঃ 
কিসমিসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, এ-বিটা ক্যারোটিন, এবং এ-ক্যারোটিনয়েড চোখের ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংস করে। ফলে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায় না, চোখে ছানি পড়ে না, এবং চোখের চারপাশে বলিরেখা তৈরি হয় না। এক কথায়, কিসমিস চোখের জন্য একটি আদর্শ খাবার।
১২. জ্বরের নিরাময়ঃ 
কিসমিসে আছে প্রচুর পরিমাণে ফেনল ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস। এগুলো ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সাথে যুদ্ধ করে। ফলে ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন থেকে হওয়া জ্বর দেহে বাসা বাঁধতে পারে না। 
১৩. ইনফেকশন প্রতিরোধঃ 
কিসমিসে বিদ্যমান পলিফেনলস, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, এবং অ্যান্টিইনফ্লেমেটরী উপাদান ক্ষত থেকে ইনফেকশন হওয়া আটকায়। 
১৪. কোলেস্টেরল প্রতিরোধঃ
কিসমিস একটি অ্যান্টি-কোলেস্টেরল উপাদান সমৃদ্ধ খাবার। এটি লিভার ও রক্ত থেকে কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে। শরীরে কোলেস্টেরল শোষণকারী এনজাইম সক্রিয় থাকলে দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যধিক বেড়ে যায়। কিসমিসের পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই এনজাইমের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে পারে না। 
১৫. এসিডোসিস নিয়ন্ত্রণঃ 
রক্তে অ্যাসিড ও টক্সিক এলিমেন্টের পরিমাণ বেড়ে গেলে এসিডোসিস হয়। বাত, চর্মরোগ, হৃদরোগ, ক্যান্সারের জন্য প্রধানত দায়ী হচ্ছে এসিডোসিস। এসিডোসিস নিয়ন্ত্রণের জন্য কিসমিসের চাইতে উপকারী খাবার আর দ্বিতীয়টি নেই।
কিসমিস খাওয়ার সঠিক নিয়মঃ
শুকনো কিসমিস খাওয়ার চাইতে ভেজানো কিসমিস খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। তাই বলে শুকনো অবস্থায় একেবারে যে খাওয়া যাবে না তা কিন্তু না। বাজার থেকে কিনে এনে ভালো করে ধুয়ে ৫-৬টি কিসমিস খেতে পারবেন নিশ্চিন্তে। প্রতিবার খাওয়ার আগে অবশ্যই ধুয়ে নিবেন। 
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিসমিসের পুষ্টিগুণ ষোল আনা পেতে চাইলে সারারাত ভিজিয়ে রেখে খাওয়া উচিত। ১ কাপ জলে ৮-১০ টি কিসমিস ভালো করে ধুয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। বেশিক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে এর রং অনেক গাঢ় দেখাবে। যত গাঢ় হবে তত ভালো পুষ্টি উপাদান কাজ করবে। সকালে খালি পেটে ভেজানো কিসমিসগুলো খাবেন। 
কিসমিসের জলটা কিন্তু ফেলবেন না৷ সারারাত ভিজিয়ে রাখার ফলে জলেও কিসমিসের বেশ কিছু পুষ্টিগুণ মিশে গেছে। জলটা হালকা আঁচে একটু গরম করে খালি পেটে খেয়ে নিন। কিসমিস ও এর জল খাওয়ার আধা ঘন্টা পরে অন্য খাবার খাবেন।
পোলাও, ফিরনি, সেমাই, পায়েস, জর্দা, কোরমা ইত্যাদি খাবার মুখরোচক করতে কিসমিসের জুড়ি নেই। এসব খাবারে কিসমিস দিয়ে রান্না করতে পারেন। তাতে স্বাদটাও বাড়বে আবার দেহও পুষ্টি পাবে।