27/05/2023
একজন বাবার কথা
আমার স্ত্রী যখন মারা যায় তখন ছোট ছেলেটার মাত্র বিয়ে হলো। আমার দুই ছেলে আর এক মেয়ে। সে (তার স্ত্রী) চলে যাওয়ার পর ভাবছিলাম এমনেই থাকবো, কয়দিন আর বাঁচবো! আজ প্রায় বারো বছর হতে চললো। বড় ছেলে কানাডায় সেটেল্ড, দুই ছেলে আর বউকে নিয়ে আছে। এই বারো বছরে আমাকে দেখতে একবার আসে দেশে। মেয়ে তার সংসার নিয়ে ব্যস্ত, আমাকে দেখার সময় কই? ছোট ছেলে আর ছেলের বউ সকালে তাদের দুই মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে যায়, মেয়েদেরকে ওদের নানীর কাছে রেখে চলে যায় অফিসে। অনেক রাতে তারা বাইরে থেকে খেয়ে মেয়েদের ঘুমন্ত অবস্থায় নিয়ে আসে। আবার সকালে চলে যায়। সারাদিন তিনটা বুয়া আসে রান্না করে দিয়ে যায় আমি একাই থাকি, বাড়িটাও আর আগের মতো সুন্দর নাই! নাতি নাতনিদের সাথেতো দেখা হওয়ার সুযোগই নাই! নাতনিদের আমার কাছে রেখে যাওয়ার কথা বললে বলতো আমি নাকি রাখতে পারবো না, তাই রাগ করে একটা বিয়েই করে ফেলি। ভেবেছিলাম এবার অন্তত নাতনিদের সাথে সময় কাটাতে পারবো, ওদের কে দেখার জন্য মানুষ আছে। ছেলেটা উল্টো আলাদা বাসায় চলে গেলো। যাকে বিয়ে করি ওই মহিলাও আমার টাকার লোভে আমাকে বিয়ে করে। তাকেও তার পাওনা বুঝাই দিয়ে তালাক দেই। ছোট ছেলেটাও সুইডেন চলে গেছে। আমার বাড়িটা এখন খালি। এতো বড় বাড়িতে থাকার মানুষ নাই! তাই বাড়িটাও বিক্রি করে দিলাম। দুই ছেলের নামে দুইটা ফ্ল্যাট নিলাম। একটায় নিজে থাকি। আরেকটা ভাড়া। আজ আমি কথা বলার মানুষ পাই না। একাই থাকি। মেয়ে আসে মাঝে মধ্যে, আসলেই টাকা চায়। ওর ভাগের সব ওকে দিয়ে দিয়েছি। আর বাকি সম্পত্তি দুই ছেলে আমি মরার পর পাবে। আমার ছেলে, মেয়ে, নাতিনাতনি থাকা সত্ত্বেও আজ আমি এখানে একা।
আমার সব আছে অথচ কেউ নেই! আমার অনেক কথা বলতে ইচ্ছা করে, কিন্তু কাউকে পাই না (বলতেই কেঁদে দিলেন)।
তিনি যখন আমাদের পারিশ্রমিক মিটিয়ে বিদায় দিচ্ছিলেন,
বললেন, "সে (তার স্ত্রী) যাওয়ার পর এতো বছরে কেউ আমাকে এভাবে সময় দিলো, বহু বছর পর মন খুলে কথা বললাম। আল্লাহ তোমাদের ভালো করুন।"
বলতেই আবার কেঁদে দিলেন।
সত্যিই এভাবে যারা একাকিত্বে ভুগছেন, তাদের সময় দিয়ে একাকিত্ব দূর করার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। 💝
আপনাদের একাকিত্ব, ডিপ্রেশনে পাশে থাকাতেই আমাদের আনন্দ। ❤️