18/05/2025
-৷৷৷৷৷৷৷ ♦মানসিক রোগের শারীরিক লক্ষণ♦৷৷৷ ৷৷
রোহান সাহেব অনেক দিন ধরেই অসুস্থ্য। দিনে দিনে অসুস্থ্যতা বেড়েই যাচ্ছে। শুরুটা বছর দুয়েক আগে মাথাব্যথা দিয়ে। প্রথমে অল্প অল্পই হতো। বাড়তে বাড়তে তা এখন অসহ্য হয়ে উঠেছে। সেইসঙ্গে চোখে ঝাপসা দেখা, পেটে অস্বস্তি, হাঁটুতে ব্যথা থেকে শুরু করে কত রকমের সমস্যা। সারাদিন শুধু অসুখ নিয়েই চিন্তা। প্রথমে নিজে নিজে ঔষধ কিনে খেতেন, তারপর ঔষধের দোকানদার,এরপর স্থানীয় এম.বি.বি.এস ডাক্তার থেকে শুরু করে শহরের নামি-দামী প্রফেসর অনেককেই দেখিয়েছেন। শুধু অ্যালোপ্যাথি নয়, যাবতীয় সবধরনের চিকিৎসাই তিনি করিয়েছেন। প্রথম কিছুদিন ভালো লাগে, তারপর আবার সেই আগের মতনই।
একবার এক ডাক্তার তাকে মানসিক রোগের ডাক্তার দেখাতে বললেন। শুনে উনার এমন রাগ হলো যে উনি তো বলেই বসলেন যে -রোগ ধরতে না পেরে উল্টো রোগীকে বলে পাগল! বন্ধু-বান্ধবরা পরামর্শ দিলেন,দেশের বাইরে যাবার জন্য।
তবে দেশে শেষ চেষ্টা হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন এক নিকট আত্মীয়ের পরামর্শে। বহির্বিভাগের বারান্দায় বসে আছেন এমন সময় এক ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় হলো। উনার সমস্যা ছিল পেটের গন্ডগোল। ভদ্রলোক বললেন, এটা এক ধরনের মানসিক সমস্যা। একমাস ঔষধ খেয়ে এখন তিনি বেশ ভালো আছেন।এবার তিনি দ্বিতীয়বার দেখাতে এসেছেন। এবার রোহান সাহেব কিছুটা আঁচ করতে পারলেন যে -কথাটা সত্যি। তার মানে তিনি এতদিন ভুল করেছেন।
এটা আবার কী ধরনের কথা-রোগটা মানসিক, কিন্তু যন্ত্রণা শারীরিক!আসলে ব্যাপারটা কী? তাহলে চলুন, কিছু সাধারণ কথা জেনে নেই আমরা।
আমরা প্রায় সবাই মন এবং দেহ -দুইটি আলাদা ব্যাপার ভাবতে অভ্যস্ত হলেও এরা আসলে একে অপরের সাথেওতপ্রোতভাবে জড়িত।শারীরিক অসুবিধার কারণে মন খারাপ হওয়াও স্বাভাবিক ব্যাপার আবার মনের কারণে যে শারীরিক অসুবিধা হতে পারে -এটাও স্বাভাবিক ব্যাপার।
সহজ একটা উদাহরণ দিয়ে শুরু করা যাক। ধরুন, আপনাকে একজন দাওয়াত দিল।দাওয়াতে বেশ ভালো ভালো খাবারের আয়োজনও করা হলো। এখন আপনি যদি ঐদিন খুব প্রফুল্ল মনে থাকেন, তাহলে নিশ্চিত যে আপনি উপভোগ করবেন খাবারগুলো। কিন্তু যদি কোনো কারণে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন কিংবা বিষন্ন অবস্থায় শুধু দাওয়াত রক্ষা করতেই যান, তবে সেই একই খাবারগুলো আর তেমনভাবে উপভোগ করতে পারবেন না।
এবার একটু গভীরে যাওয়া যাক। মানসিক রোগের শারীরিক লক্ষণাদি প্রকাশ পাওয়ার পেছনে কিছু মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা আছে। যেমন : Somatization, Dissociation, Conversion।
★Somatization:মানসিক কষ্ট বা অসুবিধা শারীরিকভাবে প্রকাশ পাওয়াকেই সাধারণভাবে Somatization বলা হয়।
★Dissociation: Dissociationবলতে এমন একটা মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতিকে বোঝায় যেখানে সচেতনতা বা সজ্ঞানতার সঙ্গে সম্পর্কিত মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয় সাধন ব্যাহত হয়।
★Conversion:মানসিক চাপ বা যন্ত্রণা যখন শারীরিক অসুবিধা বা লক্ষণে পরিবর্তিত হয়ে যায় তখন সেই পরিবর্তিত হওয়ার পদ্ধতিকে Conversion বলা হয়ে থাকে।
এই সম্ভাব্য পদ্ধতিগুলোর কার্যকরী হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন :
★কারো কারো মানসিক চাপ মোকাবেলা করার ক্ষমতা কম।
★কারো মেনে নেয়ার ক্ষমতা কম।
★ কেউ কেউ মানসিক চাপ মোকাবেলার বা মানসিক চাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভুল পদ্ধতি বেছে নেন।
★কেউ কেউ সমস্যায় পড়লে সহায়তা পাওয়ার বা সমাধানের পথ খুঁজে পান না।
আমাদের সমাজে মন খারাপ বা ভালো না লাগা বা দুশ্চিন্তায় ভোগাটাকে কোনো সমস্যা হিসেবেই ধরা হয় না। উল্টোদিকে শারীরিক কোনো সমস্যাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। সেটা যদি ব্যথা হয়, দুর্বলতা হয় বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, তবে তা আরো বেশি গুরুত্ব পায়।
যেহেতু মানসিক সমস্যায় শারীরিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে এবং শারীরিক সমস্যায় ও মানসিক রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে,তাই প্রতিটা বিষয়কেই যথাযথভাবে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। কোনো শারীরিক লক্ষণ নিয়ে আসা রোগীকে চিকিৎসক যদি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাতে চান, তবে তাতে আতঙ্কিত না হয়ে বা অবজ্ঞা না করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্দিষ্ট পথে এগোনোর মাধ্যমেই শুধু মিলতে পারে সমাধানের পথ।
-------ফৌজিয়া শারমীন হোসেন
বি.এসসি (সাইকোলজি)
এম.এস (এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি,ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা)
এস.এফ.এস.সি (লন্ডন)
সাইকোথেরাপি, ইন্টার্নশিপ এবং উচ্চতর প্রশিক্ষণ:
১)ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
২)জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
৩) মানসিক হাসপাতাল পাবনা
৪)ঢাকা শিশু হাসপাতাল
৫) প্রাক্তন প্রশিক্ষণার্থী কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট (টি.এস.সি), ঢাকা ইউনিভার্সিটি
৬) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন প্রশিক্ষণার্থী কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ও সাইকোথেরাপিস্ট.
৭) প্রাক্তন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট এবং সাইকোথেরাপিস্ট,শমরিতা হাসপাতাল লিমিটেড
৮)কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ও সাইকোথেরাপিস্ট,মাইন্ডসেট সাইকোথেরাপি ও কাউন্সেলিং সেন্টার
৯)ফ্যামিলি থেরাপি (লন্ডন)
১০)ব্যবস্হাপনা পরিচালক, মাইন্ডসেট সাইকোথেরাপি ও কাউন্সেলিং সেন্টার
★★★ঢাকা শাখার ঠিকানা ঃ
৬৯/বি গ্রীন রোড, পান্থপথ (মনোয়ারা প্লাজা, ৪র্থ তলা), ঢাকা-১২০৫
★★★ময়মনসিংহ শাখার ঠিকানা ঃ
৫১ এফ হামিদ উদ্দিন রোড (কলেজ রোড), কাচিজুলি, ময়মনসিংহ।
অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য কল করুন:
01991333503,01405757678