09/11/2024
#সবার আগে সুস্থতা
প্যানিক অ্যাটাক কি? এটি হলে আপনি কি করবেন?
প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন জীবনে কোনো না কোনো সময়ে প্যানিক অ্যাটাকের শিকার হন। যে কোন সময় কোন ধরনের উপসর্গ ছাড়াই প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে, এটি যে কারোই হতে পারে।
#প্যানিক অ্যাটাক আসলে কি?
প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে সেই পরিস্থিতি যখন আমাদের শরীরে একই সাথে মানসিক এবং শারীরিক তীব্র উপসর্গের আক্রান্ত হয় এবং এর ফলে প্রচন্ড ভীত হয়ে পড়ে। প্যানিক অ্যাটাক হলে মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, সে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে এবং এই অবস্থায় অনেকের মনে হতে পারে যে তার হার্টঅ্যাটাক হচ্ছে।
#প্যানিক অ্যাটাক কেন হয়?
অন্যান্য মানসিক সমস্যার মত প্যানিক অ্যাটাকের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ এখনও বোঝা সম্ভব হয়নি, তবে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- জীবনের কোনো মারাত্মক দুঃখজনক ঘটনা বা বিয়োগাত্মক কোন ঘটনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো বস্তু বা কাছের কোন ব্যক্তিকে হারানো, পরিবারের ঘনিষ্ঠ কোন ব্যক্তি প্যানিক অ্যাটাক এ আক্রান্ত হলে মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার বা বার্তাপ্রদানকারী রাসায়নিকের ভারসাম্য নষ্ট হলে প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে।
#কিভাবে বুঝবেন প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে?
প্যানিক অ্যাটাক ভীষণ ভীতিকর এবং যন্ত্রণাময় হতে পারে। বৃটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ গুলো হচ্ছে –
• হৃদস্পন্দন হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া,
• অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হওয়া,
• প্রচন্ড ঘাম,
• বমিবমি ভাব,
• বুকে ব্যথা,
• শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হওয়া,
• শরীর কাঁপতে থাকা,
• জ্বরজ্বর অনুভব হওয়া,
• শরীর হঠাৎ করে ঠান্ডা হয়ে যাওয়া,
• হাত-পা কাঁপতে থাকা,
• মাথা ঘোরা, অসারতা বা সূঁচ বাঁধার মতো অনুভব হওয়া,
• মুখ শুকিয়ে যাওয়া,
• মলত্যাগের চাপ অনুভব হওয়া,
• কানে শব্দ হওয়া,
• মৃত্যুর ভয় হওয়া,
• পেটে অস্বস্তি হওয়া,
• মনে হবে যে শরীর নিয়ন্ত্রণে নেই।
বেশিরভাগ প্যানিক অ্যাটাক ৫ থেকে ২০ মিনিট দীর্ঘ হয়, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি একঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। কতবার হবে সেটি নির্ভর করে আপনার মানসিক অবস্থা কতটা খারাপ তার উপর। অনেকের সারা জীবনে মাত্র একবার হয়, অনেকের মাসে একবার দুইবার হয়, আবার অনেকের সপ্তাহে কয়েকবার হতে পারে।
তবে প্যানিক অ্যাটাক ভীতিকর হলেও এটি বিপদজনক নয়। প্যানিক অ্যাটাকে শারীরিক কোনো ক্ষতি হয় না, যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করারও দরকার হয়না। তবে অনেক সময় এ ধরনের উপসর্গ অন্য কোন রোগের জন্য হতে পারে, যেমন- রক্তচাপ কমে গেলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি অলাভজনক একাডেমিক মেডিকেল সেন্টার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক এর তথ্য অনুযায়ী- যদি কারো কোনো কারণ ছাড়াই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অনবরত প্যানিক অ্যাটাক হতে থাকে তাহলে সে অবস্থাকে 'প্যানিক ডিজঅর্ডার' বলা হয়। 'প্যানিক ডিজঅর্ডার' আক্রান্তদের অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ফোবিয়াতেও আক্রান্ত হতে পারেন। এক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
#কিভাবে প্যানিক এটাক হয়?
প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার সময় মানুষ তার শ্বাস-প্রশ্বাস এর উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এ সময় মানুষের দ্রুত গভীর শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করে। অতিরিক্ত শ্বাস নেওয়ার প্রচেষ্টা বা হাইপারভেন্টিলেশন এর কারণে রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা অত্যন্ত কমে যায়, অন্যদিকে অক্সিজেনের মাত্রা বেশি বেড়ে যায়। এতে মাথা ঘোরার অনুভূতি হয়, অতিরিক্ত গভীর শ্বাস নেয়ার কারণে বুকে ব্যথা শুরু হতে পারে, কারণ এতে দেহের রক্তনালি সংকচিত হয়ে যায়। এসময় অ্যাড্রেনালিন হরমোন নিঃসৃত হয় যা হৃদপিন্ডের রক্ত সঞ্চালন এর কাজ বাড়িয়ে দেয়। আর এ কারণেই প্রচন্ড বুকে ব্যথা হয় বা হার্ট অ্যাটাকের মত অনুভূতি হয়। এর ফলে উদ্বেগ আরো বেশি বেড়ে যায়।
#প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে যা করবেন –
• আপনার অনুভূতির কথা আপনি কারো সাথে শেয়ার করুন, বিশেষ করে কোনো বন্ধু বা পরিবারের কোনো সদস্য কিংবা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী কোন ব্যক্তি অথবা কাউন্সিলরের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
• নিয়মিত শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন।
• নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন যেমন- হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, ইয়োগা করা ইত্যাদি। এগুলো আপনাকে স্বাভাবিক সাহায্য করবে।
• নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে।
• প্রতিদিনের খাবারের স্বাস্থ্যকর খাবার যুক্ত করতে হবে যাতে এনার্জি লেভেল ভালো থাকে।
• একই ধরনের অভিজ্ঞতায় ভাবছে অর্থাৎ প্যানিক অ্যাটাক এ আক্রান্ত অন্য মানুষদের সাথে মিশুন, তাদের অভিজ্ঞতার শুনুন।
• মানসিক প্রশান্তি আনে এমন বক্তব্য শুনতে পারেন।
#প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে যা করবেন না –
• সব টার্গেট একসাথে পূরণ করার লক্ষ্য ঠিক করবেন না বরং ছোট ছোট টার্গেট নির্ধারণ করুন যা সহজেই অর্জন করা যায়।
• যে অবস্থার পরিবর্তন আপনি করতে পারবেন না তার উপর ফোকাস করবেন না, বরং আপনি যাতে ভাল বোধ করেন সেটির উপর ফোকাস করুন।
• যে পরিস্থিতি আপনার উদ্বেগ বাড়ে এমন পরিস্থিতি পুরোপুরি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন না, বরং সেগুলোর প্রতি ধীরে ধীরে মানিয়ে নেয়ার সক্ষমতা বাড়ান।
• কখনোই নিজেকে বলবেন না যে এমন অভিজ্ঞতা শুধু আপনার হচ্ছে বরং প্রতিটা মানুষই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে উদ্বেগ বা ভীতি অনুভব করেন।
• এলকোহল, সিগারেট, জুয়া বা মাদক পরিহার করতে হবে। এর কারণে মানসিক অবস্থার অবনতি হয়।
• আপনার যদি ঘন ঘন প্যানিক অ্যাটাক হতে থাকে এবং কোন ধরনের চেষ্টাতেই কোনো উন্নতি না হয- তাহলে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
#অন্যকারো প্যানিক অ্যাটাক হলে আপনি কিভাবে সাহায্য করবেন?
• কেউ প্যানিক অ্যাটাক এ আক্রান্ত হলে তাকে সাহায্য করতে হলে তার সাথে কথা বলতে থাকতে হবে, নিশ্চিত হতে হবে যে তিনি আপনার কথা শুনতে পাচ্ছেন।
• তাকে তার শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে বলতে হবে। মুখ দিয়ে হা করে দম নিতে থাকলে তাকে মুখ বন্ধ করে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে বলতে হবে। দরকার হলে ঠোটের উপর আঙ্গুল রেখে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে বলুন।
• মনোযোগ অন্য কোন দিকে আকর্ষণ করতে বলতে পারেন, যেমন- তার নিজের পায়ের পাতার দিকে মনোনিবেশ করতে বলা যেতে পারে।
• প্যানিক অ্যাটাকের সময় কেউ যদি দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে তাকে বসিয়ে দিতে হবে। এসময় হয়তো সে বেশ ক্লান্ত থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে তাকে পানি খেতে দেয়া বা তার নিজের মতো করে থাকতে দেয়া, কিছুটা বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ দেয়া কিংবা এক কাপ চা খেতে দেওয়াটাও তাকে শান্ত রাখতে সাহায্য করতে পারে।
#সূত্র: এনএইচএস (ইংল্যান্ড)