02/07/2020
যারা হারাম থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন, ডিপ্রেশন এ ভুগছেন, নিজেকে দুর্ভাগা ভাবছেন, তাদের জন্য অবশ্যপাঠ্য। দুনিয়ার সফলতার নাম সফলতা নয়, দুনিয়ার ব্যার্থতার নামও ব্যার্থতা নয়। আসল সফলতা আল্লহর হুকুম পালনের মধ্যে। আর আল্লহকে রাজী করার জন্য যে দুনিয়ার মানুষকে নারাজ করে সেই মানুষগুলোকে আল্লহ ওই বান্দার ওপর রাজী করিয়ে দেন। আর মানুষকে রাজী করার জন্য যে আল্লহকে নারাজ করে আল্লহ সবাইকে সেই বান্দার ওপর নারাজ করে দেন।
----------------------
আল্লাহর অসংখ্য গুনবাচক নামের মাঝে একটি নাম হচ্ছে "الرَّزَّاقُ" অর্থ হচ্ছে রিযিকদাতা (The Provider), আল্লাহই একমাত্র রিযিকদাতা, তিনিই আপনার আমার এবং সকলের রিযিক নির্ধারণ করেছেন এবং তিনিই আমাদের কে তা দান করেন। যতোক্ষণ না পর্যন্ত আপনার রিযিক শেষ হচ্ছে, আপনার মৃত্যু হবে না। এটাই আমাদের বিশ্বাস।
রিযিক এর সাথে আল্লাহ আমাদের আরেকটি জিনিষ দিয়েছেন, এর দ্বারা তিনি আমাদের পরীক্ষা করেন, খুশী করেন এবং এর দ্বারা তিনি আমাদের বারাকাহ ও দান করেন। সুবহানআল্লাহি ওয়াবিহামদিহি! সেটা কি? তার নাম হচ্ছে তালাশ / অন্বেষণ যার সাথে আবার পরিশ্রম সম্পর্কযুক্ত। আপনার জীবনের ছোট্ট সময়ে রিযিক মওজুদ আছে কোথাও একে আপনার তালাশ করতে হবে তারপর আবার পরিশ্রমের মাধ্যমে বের করতে হবে। অনেককে আল্লাহ বিনা পরিশ্রমেও দান করেন, বিশেষ মার্সি। যেমন বনী ইসরাঈলিদের ৪০ বছর দান করেছেন তবে ম্যাক্সিমামই যথাযথ হক্ব আদায় করে নি, না শুকরিয়া জ্ঞাপন করেছে। উল্টো অভিযোগ করেছিলো। এমন যেন না হয়। বিলিভ মি, আপনার রিযিক যা আছে তা-ই আপনার কাছে পৌছাবে, ইদার ইন হালাল ওয়ে অর হারাম।
কোনটা আপনি চুয করবেন আপনার ব্যাপার। আপনি ভাববেন হারাম ভাবে না হলে আমি ধনী হতে পারবো না, পুরোটাই ভুলভাল ধারণা মাত্র। বারাকাহ এখানে আল্লাহর পক্ষ থেকে অপ্টিমাইজার। আপনি ২০০ টাকা কামিয়ে এতো সুখ পাবেন, আনন্দ পাবেন সাচ্ছন্দ্য হবেন যে ২ কোটি টাকা কামিয়েও অনেকে পায় না। এটাই বারাকাহ, শান্তি, রিলিফ সব।
তাহলে কি আমি রিযিকের জন্য দুআ করবো না? যেহেতু এটা ফিক্সড? উত্তর সহজ, অবশ্যই করবেন। উত্তম দুআ করবেন রিযিকের জন্য। স্বয়ং আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ভাগ্য বা তক্বদীর কেবল একভাবেই চেঞ্জ হতে পারে সেটা হচ্ছে দুআ। আল্লাহর কাছে আপনার দুআ কবুল হলে আপনার জন্য উত্তম রিযিকের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আর না হলেও আপনার জন্য আখিরাতের রিযিক হিসেবে থাকলো, মর্যাদা বৃদ্ধি হলো। আল্লাহর কাছে চাওয়া মানেই পাওয়া। হয় এই দুনিয়া আর না হয় ঐ দুনিয়া। কিন্তু পাবেন, এটাতে ভুল নেই। আজীবনের জন্য ডিপোজিটেড আপনার একাউন্টে।
জীবন নিয়ে প্রচুর হতাশায় ভুগে শেষ হয়ে যাচ্ছেন, মাথায় হাত চোখে পানি, কি করবেন কিভাবে লাইফে আগে বাড়বেন। আবার যারা বিবাহিত তারা মুখ কীভাবে দেখাবেন? ভয় পাবেন না, আপনার রিযিক তো নির্ধারিত। আপনার কাছে চলে আসবেই, বা আপনি ভাবছেন আপনার ইনকাম নেই, স্ত্রী লাগবে কিভাবে বিয়ে করবেন? ওয়াল্লাহি! এসবের চিন্তা করেও আপনি কিছুই করতে পারবেন না, স্ত্রী কে হবে, কেমন হবে সেটাও মহান রব্ব লিখেই রেখেছেন।
একটা গল্প শোনাই। দৃশ্যের প্রথম অংশ থেকেই বলি।
জাহিদ রাইহান নামের এক ভাই, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে MBA করেছিলেন তিনি, মেরিকার ইউনাইটেড হেলথ গ্রুপ ইনকরপোরেটেড লিমিটেডের নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই, উনি সেখানে জব করতো। বেতন, পার্সেন্টেজ এতো ভালো পেত যে, ভালো উন্নত ব্র্যান্ডের লেটেস্ট যেকোন ফোন বা বাইক আসলেই সেগুলো তার হাতে থাকতো, আর আগের ফোনটিকে তিনি সেল বা এক্সচেঞ্জও করতেন না বরং কোন আত্মীয় বা ফ্রেন্ডকে দিয়ে দিতেন, ২০০৮ এর মাঝামাঝি সময়ে সে তার নিজের দেশে যায়, ফয়সালাবাদ তার বাড়ি, পাকিস্তান। যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল বিয়ে, বিয়েটা ঠিক হয় আরোও ৪ মাস আগে, খানদানী ফ্যামিলির মেয়ের সাথে, ছেলে এতো উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত, পাঁচ ডিজিটের বেতন সব মিলিয়ে সোনায় সোহাগা, নিকাহ হয়ে যায় তার।
চাকচিক্যের দুনিয়ায় তাদের অভাব ছিল না কিছুই! তবে তারা তখনও ছিল ক্ষতিগ্রস্ত, কারন আল্লাহর পথ থেকে তাদের দূরত্ব ছিল অনেক। নামী মুসলমান যারা ফরজ গোসল কি তাও জানে না, এই ছিল তাদের হালত। তবে আল্লাহর পরিকল্পনা তো আমাদের চিন্তার বাইরে। এমেরিকা রিটার্ণ করার ২ দিন আগে, এলাকার পাড়ার ভাইদের সাথে দুপুরে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন জাহিদ ভাই, মাইকে একটা আওয়াজ চলে আসলো অমুকের পুত্র অমুক মারা গেছেন, আশ্চর্য সকালেও লোকটাকে দেখা গিয়েছিলো দিব্যি বাজার করতে, এইতো তারসাথে দীর্ঘসময় কথাবার্তা হলো। নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করাতে পারছেন না, তরতাজা তাগড়া মানুষ বয়স ৪০ এর ঘরে পৌঁছেছে হয়তো মাত্র, স্ট্রোকের কেইস। মন খারাপ হয়ে গেল, বাকী বন্ধুরা বললো জানাযায় আসতে, তেমন ইচ্ছে ছিল না কারন এর আগে তিনি কখনো জানাযা পড়েন নি আর সিষ্টেমও জানেন না, তবুও বাকীদের আবেদন রক্ষার্থে। ঘরে ফিরে গিয়ে টুপি খুঁজছে, জানাযায় যাবেন বলে, বাসায় জুমুআহ ছাড়া কেউ স্বলাতে যান না, তাই আপাতত সব অগোছালো খুঁজে পাচ্ছেন না, মাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, মা বললো এখন বের করতে পারবো না, টুপি ছাড়াই চলে যাও, অবাক হয়ে তিনি বললেন টুপি ছাড়া আবার মসজিদে যাওয়া যায় নাকি? নিজের বন্ধু মালেকের মাধ্যমে একটা টুপি যোগাড় করে জানাযায় গেল, জানাযার আগে একটা ছোট্ট বয়ান হলো, ইমাম সাহেব সেখানে একটা কথা বললো যা জাহিদ ভাইয়ের কানে বোমা ফাটিয়ে গেল
آپ دیکھلو صرف یہ راستہ کہا تک لیکر جاتی ہیں آپ کو ، صبح تک تھے آدمی اور مردہ بن گیا دوپہر کو، نا جانے کل کون آئے گا اس دروازے پر ، جنازہ تو ہو جاےگا لیکن کیا ہوگا قبر پر؟
আপনি দেখে নেন এই রাস্তা কোন পর্যন্ত নিয়ে যায় আপনাকে, সকালে ছিলেন সচল ব্যাক্তি আর দুপুরেই হয়ে গেলেন মুর্দা, না জানি কালকে কে আসবে এই দরজায়, জানাযা তো হয়ে যাবে তবে কি হবে কবরে?
এই কথাগুলোর পর কিছু সাধারণ ক্ষমা প্রার্থনা করা হয় তারপর ঋণ পরিশোধ আরোও অন্যান্য সাধারণ বিষয়াদি নিয়ে কথা বলার পর জানাযা শেষ হয়, দাফন শেষ হওয়া অবধি তিনি সেখানেই ছিলেন, সব কার্যক্রম শেষ করে ঘরে ঢুকে তিনি গোসল করে শুয়ে পড়লেন, খেতে পারছেন না আজকে। ঘুম আসলো না, চোখ ভার কি যেন মনে পড়ছে বারবার। প্রতিদিন এই টাইমে তিনি তার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে কথা বলতেন তবে আজ সেটার বিপরীত।
আজ কেন যেন কিছুই করতে পারছে না যেন অন্য জগত থেকে অন্য কেউ কল দিয়ে তাকে ডাকছে, ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলেন ১০ টা বাজে, এখনো এশার টাইম চলছে, তাই উঠে গেলেন ওযু করতে, ফিরে এসে মুসাল্লা বিছিয়ে দাঁড়ালেন কিন্তু তিনি দ্বীন থেকে এতোটাই দূরে ছিলেন যে এটাও জানতেন না ইশার সালাত কত রাকাত। এই ঘটনাটা বলার টাইমে তার চোখে পানি চিকচিক করছিলো জোব্বা থেকে দ্রুত সাদা রুমালটা বের করে চোখ মুছতে লাগলেন তিনি, পরে বললেন "ভাই সেটা আরোও প্রায় ১৩ বছর আগের কথা তখনোও ইন্টারনেট সেরকম এভেইলেবেল ছিল না, স্মার্টফোন ছিল না হাতে হাতে বা সেরকম সোর্সও ছিল না, বেশ বড় বাড়ি বানিয়েছিলেন আমার বাবা ডুপ্লেক্স বাড়ির নিচতলায় ছিল লাইব্রেরি তবে হাজারো বেদ্বীনি বই সেখানে শোভা পেলেও একটা নামাজ শিক্ষা বই সেখানে পেলাম না" পরে নিজের মায়ের কাছ থেকে একটা বইয়ের খোঁজ পেলেন তিনি। বই খুলে এনে দেখলেন যে ৪ রাকাত নামাজ ২ রাকাত সুন্নাত। কিভাবে পড়তে হবে চোখমুখ বিহীন চিত্র দ্বারা দেখানো, ৪ টা সূরা মুখস্থ ছিল আর সূরা ফাতিহা। আর কিছুই জানতেন না তেমন, সেদিনটার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন "আমি এতোই অভাগা ছিলাম যে, বিতরের কথাও জানতাম না, তাই সেদিন আর বিতর পড়ি নি৷ এখন নিজের সেই জীবনের কথা মনে পড়লে ভীষণ লজ্জা পাই, আবার অনেক গর্বও হয়। সেই জীবন ছিল নিশ্চিত কাফেরের চেয়েও খারাপ জীবন আর আমার রব্ব আমাকে ফিরিয়ে এনেছেন"
এটা ছিল তার এমেরিকা আবার রিটার্ণ করার ২ দিন আগের ঘটনা। পরেরদিন ফজরের সালাত আদায়ে ব্যর্থ হন তিনি, কারন ঘুম থেকে উঠতে পারেন নি, বাকী সালাতগুলো মসজিদে গিয়ে আদায় করেন, মুয়াজ্জিন সাহেব থেকে সিষ্টেম জেনে নিলেন সালাতের এবার বিতরও পড়া হলো, পরের দিন রাত ২ টায় ফ্লাইট, রাতে কিছুক্ষণ কথা বললেন স্ত্রীর সাথে তারপর শুতে গেলেন, একটা কথা বলা হয় নি, তার স্ত্রী বাবার বাড়ি থাকে, উঠিয়ে আনা হয় নি, কথা হয়েছিলো যে একবারে ইউএস নিয়ে যাবেন ১ বছর পর। আবার ঘটনায় ফিরে আসি, এই রাতে তার ঘুমটা ছিল পরের দিন ফজর পড়তে পারার আশা নিয়ে, আল্লাহর ইচ্ছায়, এবার তিনি কামিয়াব হলেন। এটা তার ২৬ বছরের জীবনের সেকেন্ড টাইম যেদিন তিনি ফজর পড়েছেন, মুক্তাঝড়া একটা হাসি দিয়ে বললেন কথাটা, "এর পর আমার আর ফজর মিস হয় নি, আলহামদুলিল্লাহ। তবে জামাত মিস হয়েছে, সেটার জন্য আফসোস হয়"
তো উনি ইউএস চলে গেলেন, কিন্তু কর্মক্ষেত্রে কোন রকমের ফোকাস ধরে রাখতে পারলেন না, কি যেন বারবার তাকে দূরে ঠেলে ফেলে দিচ্ছিলো এই কাজ থেকে, একিই কোম্পানিতে জব করা আরেকজন মুসলিম কলিগ ছিলেন নাম "তাহের" তার কাছে কিছু কথা শেয়ার করলেন কারন সেই ভাইকে নিয়মিত সালাতের সঙ্গী হিসেবে পান তিনি। সেই ভাই তাকে লাইটলি বললো আমাদের কাজটা হারাম তাই হয়তো এমন লাগছে, তবে অন্য উপায় নেই তাই কাজটা ছাড়তেও পারছি না, মাত্র দ্বীনের রাস্তায় নামা জাহিদ ভাই তখন শুধু এতোটুকো জানতো যে হারাম মানে গুনাহ আর হালাল মানে সওয়াব, এর ভয়াবহতা যে কুন্ডলি পাকানো আগুন তা তার মাইন্ডে সেট হয় নি তখনো! যাইহোক এভাবে কিছুদিন যেতে লাগলো তিনিও এভাবে চলতে লাগলেন, এলাকার মসজিদে যেতে লাগলেন, শুক্রবার প্রথম কাতারে পাওয়া যেত তাকে জুমুআহ তে।
এভাবে এমেরিকা এসে ২ জুমুআহ পাড় করলেন তিনি কিন্তু ৩য় জুমুআ তে কিছু একটা ঘটে গেল, খতীব সাহেব সেদিন লেকচার দিলেন জাহান্নামের ভয়াবহতা নিয়ে কবরের আযাব নিয়ে, হারাম আর হালাল নিয়ে। আগের ২ জুমায় সাহাবাদের জীবনীর আলোচনা ছিল, তবে আজকের টপিকে নিজের হুশ খুইয়ে দিলো তিনি, ধোঁয়া বের হচ্ছিলো তার শরীর থেকে, বাসায় এসে দেখলো তার প্রেশার কন্ট্রোলের বাইরে। কাল বিলম্ব করলেন না তিনি দ্রুত ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লেন আগাগোড়া সব পড়লেন তার কোম্পানি সম্পর্কে, নেট থেকে সোর্স নামিয়ে দেখলেন এমেরিকান সাইটগুলো থেকে কারন তাহের সাহেব বলেছিলো এটা হারাম, কিন্তু এতো লাইটলি কেন বলেছিলেন উনি? সব দেখার পর, একটা রেসিগনেশন লেটার দ্রুত হাতে টাইপ করলেন, কাল নিজে গিয়ে এটা দিয়ে আসবেন আর তাহের ভাইকেও জানাতে হবে জাহান্নামের ভয়াবহতা সম্পর্কে, হয়তো তিনি জানেন না।
লেটার জমা দেওয়ার পর যখন তিনি তাহের সাহেবকে জানালেন, আর তিনি অবাক হয়ে বললেন 'এমন বোকামী কীভাবে করলেন? হারাম ছাড়া এখন আর কিই বা আছে? হারাম দেখে জব ছেড়ে দিবেন? সালাত পড়ে আল্লাহর কাছে মাফ চাইলেই তো হয়' যায়গায় দাঁড়িয়ে বোকা হয়ে গেলেন জাহিদ ভাই, 'হারাম' জেনেও সেখানে থাকবো? এটা মুসলিমের পক্ষে পসিবল? জব ছেড়ে সেখানেই ২ মাস ছিলেন তিনি, খুঁজছিলেন যদি কিছু করার মতো থাকে, তবে আর কোন কিছুই টানছিলো না তাকে, দিনের অনেকাংশ কেটে যেত তার ইসলামিক লেকচারস দেখে বা বই পড়ে, দ্বীনের পথে এই টাইমে সবচেয়ে বেশী লাভবান হয়েছিলো তিনি IslamQA থেকে, উনি বুঝতে পারলেন যে তথাকথিত দুনিয়াবি কাজ তার দ্বারা আর হবে না, ইতোমধ্যে দাড়িও ছেড়ে দিয়েছেন উনি। রিটার্ণ টিকেট কাটালেন, জাহান্নামের দার কতটা ভয়াবহ জানাবেন সবাইকে, বাড়িতে ফেরার খবরটা জানিয়ে দিলেন। আর ২ দিন পর যে এপার্টমেন্টে ভাড়া থাকতেন মেরিকায়, তার ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে রওয়ানা হয়ে গেলেন বাড়ির পথে।
বাড়িতে পৌছানোর পর সবারই নজর গেল তার দাড়ির দিকে বেশ ভুশার দিকে, কেউ মেনে নিতে পারলো না এসব। বাবা কড়া ওয়ার্নিং দিয়ে দিলেন, এমেরিকা ফিরে আবার আগের অবস্থানে ফিরে যেতে নাহলে ঘরে কোন ঠাই নেই, শশুড় বলে দিলেন এসব পাগলামি বাদ দিয়ে নরমাল লাইফ লীড করতে নাহলে মেয়েকে দেওয়া হবে না, তালাকের ব্যবস্থা করা হবে। ওনার পক্ষে আর কিছু করার ছিল না, তখন পাকিস্তানে লালবাজার এট্যাক তারপর মালালা তালেবান এগুলো ছিল হট টপিক, লাল বাজার এটাকের সাথে জড়িতদের নেটওয়ার্ক ছিল এমেরিকায়, তার কোন আত্মীয় তার বাবার কানে এসব ফুঁকে গেল। রাগে গড়গড় করতে লাগলেন তিনি প্রচুর চাপ প্রয়োগ করলেন শেষে বললেন যে, সে নিশ্চিত যে তিনি এখন একজন "টেরোরিস্ট"। একজন আতংকবাদীর তার ঘরে কোন জায়গা নেই, সে যেন ঘর ছেড়ে দেয়, সবার চোখেই সে তখন একজন ভিলেইন, তার নিজের বাবা তার শশুড় কে ফোন দিয়ে বললো এ আমার ছেলে নয়, আপনার মেয়েকে তার হাতে দিবেন না, তার লাইফও নষ্ট হবে, পরে তার শশুড় তাকে ফোন দিল আর কোনরকম ওয়ার্নিং ছাড়াই বললো যে তিনি তালাকের কাগজ পাঠিয়ে দিবেন কিছুদিনের মধ্যেই, জাহিদ ভাইও কোন শব্দ ছাড়া কেবল শুনে গেলেন।
আজ আর আল্লাহ ছাড়া তার কেউ নেই, লাগেজে সামান্য কিছু কাপড় জরুরি কাগজপত্র নিয়ে ঘর ছাড়লেন, যাওয়ার টাইমে দরজা ধরে তার মা দাঁড়িয়ে ছিল তবে আটকানোর সাহস ছিল না তারও, মোটামুটি শহরের বাইরে একটা হোটেলে গিয়ে উঠলো তিনি সেখানে ৬ দিন থেকে একটা বাসা নিলেন ছোটখাটো, জমানো টাকা আগেই শেষ প্রায় এমেরিকায়, খুব অল্প কিছু টাকা এখন হাতে আছে তাও শেষের দিকে। তার একাডেমিক সার্টিফিকেট তাকে বড় বড় কাজ অফার করছে ঠিকই তবে তার সবই হারাম, ব্যাংক সুদের সাথে জড়িত। তিনি আল্লাহর কাছেই আশ্রয় চাইতেন আর কেউ নেই, পথে পথে ঘুরতেন, একটা কলেজ থেকে অফার পেয়েছিলো তবে মেয়ে আছে বলে সেখানেও জবটা করেন নি, তিনি ৩ মাসে ইসলামকে এমনভাবে আকড়ে ধরেছিলেন যেভাবে পালন করতে মানুষের বছরের পর বছর লেগে যায়, একসময় তার হাতের সব টাকাই প্রায় শেষ হয়ে যায়, হাতে থাকা দামী ঘড়িটা বিক্রি করতে গিয়েও ফিরে আসতে হয় কেননা তাকে সন্দেহ করা হচ্ছিলো।
সেদিন যুহরের সালাতের পর আর বাড়ি ফেরা হয় নি, মসজিদে বসে খুব কেঁদেছিলেন, ইমাম সাহেব জিনিষটা নোটিশ করলেন বরং অনেকদিন যাবতই নোটিশ করছেন, একটা লোক মসজিদে নতুন কিন্তু সে মসজিদে অনেক সময় কাটায়। ইমাম সাহেব তাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন যে প্রব্লেম কি?! জাহিদ ভাই সব বললেন তাকে, তার কথা শুনে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, বললেন ভাই আমিও মুসলিম আর আপনিও মুসলিম, এবং উত্তম মুসলিম। আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন তিনি আপনার জন্য অবশ্যই ব্যবস্থা রেখেছেন, আর খাবারের বা থাকার চিন্তা আপনি করবেন না, আমি একা মানুষ মাদ্রাসায় মানুষ হয়েছি আপনজন কেউ নেই, আপনি আমার খাবারের থেকে শেয়ার নিয়েন, "না না সে কি করে হয়?" জাহিদ ভাই বলেছিলেন, ইমাম সাহেব বললেন কোন কথা নেই মুসলিম হিসেবে আমাকে দায়িত্ব পালন করতে দিন, আল্লাহর পরিকল্পনা কি টের পাচ্ছেন? আল্লাহ তাকে একজন বন্ধুর ব্যবস্থা করে দিলেন যখন তার কেউ থেকেও ছিল না, তখন তিনি নিঃস্ব আর একা, আল্লাহ তখন তাকে একজন মানুষ দিলেন সঙ্গী হিসেবে, তাও দ্বীনদারদের মধ্য থেকে, আহ! রহমত, সুবহানআল্লাহ৷
এভাবে তিনি ইমাম সাহেবের সাথে খাবার শেয়ার করেছেন, একসময় ইমাম সাহেব বাড়িতে তাকে বললেন "ভাই আপনি অনেক শিক্ষিত এটার জন্য ইগো রাখবেন না, বরং কোন কাজই ছোট নয়, আপনি চাইলে আপাতত ছোটখাটো ভাবে কিছু শুরু করুন"। কি করা যায়? তার জিজ্ঞাসা ছিল, "আপনি কিতাবের ব্যাবসা দিয়ে শুরু করুন ইন শা আল্লাহ"৷ কিন্তু আমি তো এসব বুঝি না, "তাহলে আতর কেমন হয় ?" পার্ফিউম? আমার পুঁজি আসবে কোথাত্থেকে? "আমি কিছু দেই আর বাকীটা আল্লাহই জোগাড় করে দিবেন।" বাসায় ফিরে তিনি আবার ঘড়িটা হাতে নিলেন রাডো ব্র্যান্ডের ঘড়ি কয়েক লাখ টাকা দাম, তবে নামমাত্র মূল্যে সেল করে টাকা নিয়ে আসলেন। কাঠের শেল্ফ বানিয়ে, সেখানে সাজালেন আতর। দুপুর ১ টা বাজে দোকানে আসতেন ইশা পর্যন্ত, খেয়াল করুন একসময়ের কত বড় জব হোল্ডার কত শিক্ষিত ব্যাক্তি যাকে লাখ লাখ টাকা একসময় কামড়ে ধরেছিলো আজকে তিনি আল্লাহর দেওয়া এই ছোট্ট ব্যাবসায় খুশি, তাকে আল্লাহ বারাকাহও দিচ্ছেন।
সামনে কি আরোও কিছু চমক ছিল? হ্যাঁ ছিল।
এভাবে দিন কাটাতে কাটাতে পার হয়েছিলো প্রায় আরোও ২ মাস, একদিন তার ফোনে তার শশুড়ের ফোন থেকে একটা ম্যাসেজ এলো, জানতে চাওয়া হয়, কোথায় থাকে, তার সাথে জরুরী কথা আছে, তিনি বুঝতে পারলেন যে কাগজ পাঠানোর ব্যাপার স্যাপার। লিখে পাঠালেন তার ঠিকানা, সেদিন সন্ধ্যার দিকে তিনি যেই বাসায় থাকতেন সেখান থেকে ফোন এলো যে তার বাসায় কেউ একজন দেখা করতে এসেছেন তিনি যেন বাসায় যান, এটা অবশ্য বিজনেসের গুরুত্বপূর্ণ টাইম তবুও তিনি দোকান অফ করে সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে চলে আসলেন, এসে দেখেন আপাদমস্তক বোরখায় আর নিকাবে ঢাকা একজন মহিলা, সাথে একটা ব্যাগ, জ্বি বলুন কি চাই? তিনি প্রশ্ন করলেন, জবাবে আসলো একটা সালাম, খুব পরিচিত লাগছে ভয়েজ তিনি সালামের জবাব না নিয়েই বললেন 'আপনি কি আরুফা ?' জবাব এলো জ্বী। আরুফা তার স্ত্রীর নাম, জিজ্ঞাসা করলো কাগজ নিয়ে এসেছে কিনা! তার স্ত্রী জবাব দিলো বাসায় চলুন বলছি, বাসায় যাওয়ার পর তার স্ত্রী বললো 'কাগজ আনলেই কি তালাক হয়ে যেত, স্বামী মুখে তালাক না দিলে কি তালাক হয় নাকি? আর আমি তো আমার স্বামী থেকে তালাকপ্রাপ্তা হতে চাই না, বরং আমি তার সাথেই থাকতে এসেছি!' অবাক হয়ে গেলেন জাহিদ ভাই, এই জিনিষের কল্পনাও তো করেনি!
তার স্ত্রী তাকে বললো, সেও সবার মতোই ভুল বুঝেছিলো ভেবেছিলো যে ফিরে আসবে হয়তো ভুল বুঝতে পেরে, কিন্তু উনি আসলো না, এক টাইমে তার স্ত্রী হতাশায় ভুগতে লাগলো আল্লাহকে এটা সেটা বলতে লাগলো, তবে তার মালিক ছিল তার প্রতি দয়ালু তিনি তাকে একটা স্বপ্ন উপহার দিলেন, স্বপ্নটা আমাকে বলা হয় নি, তার স্বপ্নটাই তার দিলকে নরম আর তার মালিকের প্রতি তাকে অনুগত করে দেয়, ৭ দিনেই সে চেঞ্জ হয়ে যায়। তার বাবা তাকে চাপ প্রয়োগ করায় যোগাযোগ করতে পারছিলো না, এখন তিনি আর ফেরত যাবেন না, তিনি তার কাছেই থাকবেন যার প্রতি আল্লাহ দয়া করেছেন, তার অবস্থা যেমনই হোক না কেন, সেখানে নিশ্চয়ই বারাকাহ থাকবে। এটা ছিল জাহিদ ভাইয়ের প্রতি আল্লাহর আরেকটা দয়া, তার স্ত্রীকে তার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন তাও শরীয়তের বুঝ দিয়ে, পর্দায় আবৃত করে। আল্লাহু আকবর।
এভাবে চলতে চলতে ১ বছর হয়ে গেল, তার ব্যাবসাও এখন মোটামুটি একটু বড় হয়েছে, অবস্থাতেও পরিবর্তন এসেছে। তো কোন একদিন তিনি আসরের সালাতের জন্য মসজিদে ঢুকলেন, বা'দ আসর হালকা একটা আয়োজন আছে, মসজিদে দুজন মেহমান এসেছেন, আরবের। সভাপতি সাহেবের সাথে তাদের ভালো সম্পর্ক সেই সুবাদেই এসেছেন, সভাপতি সাহেব আবার একটা মাদ্রাসারও মুহতামীম আলেম।মানুষ, এই এলাকার নামকরা মাদ্রাসা সেটা। মেহমানগণ বা'দ আসর একটা সংক্ষিপ্ত বয়ান করলেন, আর অনুবাদ করলেন সেই ইমাম সাহেব, মেহমানদের খুব নিকটে বসে জাহিদ ভাই প্রতিটা কথা শুনলেন। বয়ান শেষে তিনি চলে যাবেন এমন টাইমে তাকে ডাক দিয়ে একজন আরব ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করলেন আপনার গায়ের আতরটার নাম কি? উনি আরবি বুঝলেন না, হাসিমুখে ইমাম সাহেব জানিয়ে দিলেন নাম, অনুবাদ শুনে উনি বললেন, "আপনি মাখবেন গায়ে? পকেট থেকে বের করে পুরো শিশিটাই দিয়ে দিলেন, নিন হাদীয়া আসার টাইমে বের করে নিয়ে এসেছি, নতুন।"
আরবরা কিন্তু খুব মিশুক, আমি দীর্ঘটাইম তাদের সাথে ছিলাম, অনেক বন্ধুও আছে আরবি, ওনাকে এক আরব জানালেন যে আতরটা খুব পছন্দ হয়েছে, ইমাম সাহেব আরবিতে তাদের সংক্ষেপে তার শিক্ষা আর আল্লাহর দিকে ফেরার কাহিনী জানালেন, তখন জ্বলজ্বল চোখে সেই আরব জাহিদ ভাইয়ের কাধে হাত রেখে বললেন, "আমিও আতরের বিজনেস করি, এই আতরটার উপাদান কি আপনি আমাকে সাপ্লাই দিতে পারবেন? আমি অগ্রীম পে করবো!" তিনি কথাটা বুঝে নেওয়ার পর বললেন যে হ্যা অবশ্যই পারবো, এগুলো আগর কাঠের আতর আর মিক্স আমি নিজেই করি, তিনি বললেন ঠিক আছে আপনি আমাকে তাহলে আতরই বানিয়ে পাঠাবেন, তিনি তাকে ২০০০ ওমানি রিয়েল দিয়ে গেলেন আর দিলেন তার ঠিকানা।
জাহিদ ভাই তার ব্যাবসার ফুল ফোকাস দিলেন আগর কাঠের আতরের উপর, এই আতর সবচেয়ে দামী আতরগুলোর একটি। এবং তিনি নিজেই আতরের মিক্স করতেন তার পার্ফিউম সেন্স কে কাজে লাগিয়ে, তার অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে বেশী সময় নিলো না, মাত্র ৫ মাসে তাকে আল্লাহ এতোটা ধনী বানিয়ে দিলেন যে তার উপর যাকাত ফরজ হয়ে গিয়েছিলো আর সেই যাকাতের এমাউন্ট ছিল প্রায় ৩ হাজার ৩০০ ডলারের মতো। তিনি যাকে আতর সাপ্লাই দিয়েছিলেন তারও পরিবর্তন আসলো, ওমানের বিখ্যাত আতর বদর আল গোল্ড কিন্তু জাহিদ ভাইয়েরই মিক্স। ঐ ব্যাবসায়ী তাকে ওমান ইনভাইট করলো সেখানে তিনি এককভাবে এই আতরের উপর চুক্তি করলেন তার সাথে আজীবনের আর তাকেও একটি লাইন দিয়ে দিলেন আতরের, যেটার নাম তিনি দিয়েছেন 'আত তাজিরু' জাহিদ ভাইয়ের নিজস্ব আতর ব্র্যান্ড। তার নিজস্ব সিগ্নেচার হচ্ছে শাজা ই ওমান, যেটা আবার দুবাইয়ে অন্যতম বিখ্যাত হারামাইনের আতরের পরেই।
এখন তিনি স্বপরিবারে ওমানে বসবাস করেন, এছাড়াও আজমান আর বাহরাইনেও তার প্রোপার্টি আছে, আল্লাহ তার ঘরে ৩ জন সন্তান দিয়েছেন, সবার বড় মেয়ে, তারপর দুজন ছেলে। তিনি ওমান শিফট হওয়ার পর হাত বাড়িয়েছিলেন তার পুরোনো বন্ধু সেই ইমাম সাহেবের প্রতিও। যেই মসজিদে বসে আমি কাহিনীটা শুনেছি সেখানের ইমাম ও খতিবের দায়িত্বে এখন নিয়োজিত তিনি, জাহিদ ভাই যখন কাহিনীটা বলছিলো তখন তিনি এটা উল্লেখ করেছিলেন যে এটা তারই ঘটনা, যদিও তাকে দেখে বুঝার উপায় নেই যে একটা টাইমে কোন অবস্থানে ছিলেন তিনি কেমন লাইফ লীড করেছেন, অহংকারের লেশ মাত্র নেই, শেষে গিয়ে যখন তিনি বললেন যে এই জাহিদ তো আমিই আগেই বললাম, আর ইনি হলো আমার পুরোনো বন্ধু সেই ইমাম সাহেব, তখন সম্পর্ক ধরে রাখার নমুনা শিখতে পেরেছিলাম। উনি হেঁটে মসজিদে আসেন, বাড়ি থেকে প্রায় ২০ মিনিটের রাস্তা, অযথা যানবাহন ইউজ করেন না, কোন দাম্ভিকতা তো নেই ই, অথচ ওনার প্রোডাক্ট ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে, অথচ আজকাল কিছু লোক সামান্য ধন সম্পদ হলেই নিজেকে খোদা ভাবতে থাকে।
পরবর্তীতে আমি তার সাথে তার অফিসেও দেখা করেছি ২ বার, সেখানেও তার বিনয় দেখতে পেয়েছি এমনকি আমাকে সাথে নিয়ে খাবারও খেয়েছেন তিনি, দস্তরখানায়, এই উপলব্ধীটা হয়ে গেছে আমার যে উনি কোন নামধারী বা পীর সুফি তরীকার মুসলিম নন, বরং হক্বের পথেই রয়েছেন, নির্ভিকভাবে জিহাদের আলোচনা করেছেন। এর দরকার কতটা তা বলেছেন, আফসোস করেছেন, তিনি নিজেও বর্তমানে একজন তালেবে ইলম। স্থানীয় একটা ইন্সটিউটে তিনি পড়াশোনা করছেন এবং কুরআনের ১৪ টি অধ্যায় হিফজ করেছেন, ইনি সেই ব্যাক্তিই যিনি ৪ টার বেশী সূরা জানতো না। এবার একটু অনুধাবন করতে পারছেন আল্লাহর সেই আয়াতটা?
فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبٰنِ
সবটা কিন্তু তার মুখ থেকেই শুনে লেখা আর সাক্ষীও সেখানে উপস্থিত ছিল, এবার আপনি ভাবুন তো আল্লাহ তাকে কোন অবস্থান থেকে তুলে এনেছেন, তাকে দিয়ে পরিশ্রম করিয়েছেন আর সে সব অবস্থাতেই আল্লাহর অনুগত ছিল, আল্লাহ আজ তাকে এই সম্মান আর মর্যাদা দিয়েছেন। সবকিছু আল্লাহর জন্য ত্যাগ করনেওয়ালারা কখনোই ঠকে না, আল্লাহ তাদের মহাপ্রাচুর্য দান করেন তার অফুরন্ত ধন ভান্ডার থেকে।
অথচ আমি কত নামাজী দেখেছি যারা কাজ ছাড়া আর কি কাজ করবো বলে এখনো হারামে ডুবে আছেন, তারা কি ভাবে আল্লাহ তাদের হালাল কাজ পাইয়ে দিতে অক্ষম? নাউযুবিল্লাহ। আসলে তারা নিজেরাই হারামে আসক্ত৷
এটা দেখে শিখুন, আল্লাহ কোথাত্থেকে কোথায় নিয়ে যায়, আল্লাহু আকবর। অথচ মানুষ কত গাফিলতির মধ্যে ডুবে থাকে, রিযক নিয়ে টেনশন করে, অথচ এটা তার হাতে না। সে তো কেবল হাত নাড়বে। আপনি বিয়ে করবেন? করুন। আপনার স্ত্রী তার রিযক নিয়েই আসবে আপনার কাছে, আপনার সন্তান তার রিযক নিয়েই আসবে। তবে নিজের দায়িত্ববোধ বলে একটা জিনিষ আছে, সেটা থেকেই আপনাকে স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হবে, মহরের ইন্তেজাম করা লাগবে। তাদের রিযকই তো আপনার আয়ে বারাকাহ দেয়। দুনিয়ার মানুষ সাময়িক কষ্ট ভুলে না সারাজীবনেও আর আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতগুলো অস্বীকার করে, হয়তো সবাই জাহিদ ভাই হতে পারে না, এই কাহিনী গুলো আনোখা বটে! তবে আপনি আপনার জীবনের কোন জিনিষটাকে অস্বীকার করবেন? চশমা খুলে দেখুন আপনাকে আপনার রব্ব কতটা নিয়ামত দিয়েছেন, আপনার চোখ নিজে থেকেই প্লাবিত হবে, শুকরিয়ার জন্য আপনার কপাল ঝুকে মাটিতে ঠেকে যাবে। আল্লাহ আপনাকে দ্বীন দিয়েছেন, রাস্তা দেখিয়েছেন অথচ আপনি কি ভাবেন আপনি এর।যোগ্য ছিলেন? বা আমিই কি এর যোগ্য ছিলাম? কক্ষনো নয়। বরং, এটাতো কেবল রব্বের দয়াই। আবারোও ৪ টি শব্দ মনে করিয়ে দেই। লা তাহযান, লা তাখাফ, লা তাগদ্বাব আর লা তাসখাত।
পয়েন্ট টু বি নোটেড যে, সর্বদা এমন হয় না বরং মুদ্রার অপর পিঠও আছে, আল্লাহ যেখানে দ্বীন দিয়ে দ্বীন নিয়ে নেয়, প্রাচুর্যতা দিয়ে আবার ধ্বংস করে দেয়। কারন তখন আপনি নফসের গোলাম হয়ে যান, আপনি আর ওয়ার্দি থাকেন না।
দ্বীনের খিয়ানতকারী রা অন্য সকল কিছুর চেয়ে হিংস্র।
আমার নিজের দেখা এরকম ঘটনাও আছে, যেখানে আল্লাহ কাউকে সম্পদ দিয়েছিলো আর তাকে তা দিয়েই লাঞ্চিত করেছে এবং সব কেড়ে নিয়েছে, আর তার মৃত্যুও ঘটেছে অল্প বয়সে নানান ফরজ কাজ তার কাধে বহন করে। ইন শা আল্লাহ, আরেকদিন এটাও লিখবো, যেন রিমাইন্ডার হিসেবে মনে থাকে। সেটা লিখবো Truth and Salvation টাইটেলে।
- নিজওয়া, ওমান। ২০১৭।
- রহমতে ভেজা গল্পগুলো।
Taemin Muqassam