09/10/2025
আমার পাশে যে মানুষটিকে দেখতে পাচ্ছেন তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন গলার এক অজানা রোগে।যেই রোগের শেষ পরিণতি মৃত্যু। রোগী জেনে গিয়েছে সে আর বাঁচবে না। যদিও সে জানতো জন্ম মৃত্যু সম্পূর্ণ সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় হয়, তারপরও সে ভাবতো সুন্দর এই পৃথিবী সে আর দেখতে পারবে না বেশি দিন..হাতে একদম সময় নেই।আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছিলো তার প্রতিটি স্বপ্ন...প্রিয়জন কে ছেড়ে চলে যাবে অজানা জগতে.. তাইতো ভিতর থেকে তিল তিল করে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছিল। স্বামীর মুখের পানে তাকিয়ে নিঃশব্দে চোখের পানি ঝড়িয়েছে...প্রিয় সন্তানের কপালে চুমু খেয়ে গোপনে অশ্রু সিক্ত হয়েছে কত বার তার হিসেব নেই।জীবনের ক্রান্তি কালে এসে বুঝা যায় প্রিয় মানুষের গুরুত্ব। বুঝা যায় প্রিয় মানুষ কে হারানোর কষ্ট।
একটা মানুষ যখন জানতে পারে তার শরীরে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে তখন সে মানুষটি বেঁচে থাকার আশাটাই ছেড়ে দেয়। এমনটাই বেশীরভাগ মানুষের মনে হয়। তবে এটা সবসময় ঠিক নয়, রোগ আছে চিকিৎসাও আছে। রোগ নিয়ে ঘরে বসে থাকা যাবে না, চিকিৎসা নিতে দেরী করা যাবে না। তাহলে সহজে সুস্থ হওয়া যাবে।
বোনটির গলায় একটা ফোলা নিয়ে যখন চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন, কিছুদিন ঔষধ খাওয়ার পর সুস্থও হয়ে গেলেন। এক বছর পর যখন তার গলার সামনে আবার ফুলা দেখতে পেল তখন থেকেই তার দুশ্চিন্তা শুরু হলো। কিন্তু চিকিৎসা নিতে থেমে থাকেননি তিনি। প্রথমে মাগুরা তারপর ফরিদপুর, তারপর ঢাকায় এসে দফায় দয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে থাকেন তিনি। কিন্তু ভাগ্য যেন তাকে ভালোর পক্ষে সাড়া দিতে পারছিল না একেবারেই।একই পরীক্ষা ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে করার পরে ভিন্ন ভিন্ন রিপোর্ট আসাতে অনেকটা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল পুরো পরিবার। রিপোর্ট কখনো নরমাল কখনো টিবি কখনো ক্যান্সার!
অনেকটা দিশেহারা হয়ে বোনটি যখন আমার কাছে আসেন নতুন করে আমি তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখি পুরো উল্টো চিত্র। আমি গলার সামনের টিউমারটির চুলচেরা বিশ্লেষণ করলাম।মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম তার অপারেশন করার।আমার কথায় আশ্বস্ত হয়ে তারা অপারেশনের সম্মতি প্রদান করলেন।
টিউমার টির সফল অপারেশন শেষে মাংস পরীক্ষার রিপোর্টে সম্পূর্ণ নতুন একটি রোগের নাম আসে। যেটি মোটেই কোন ক্যান্সার টিউমার না।চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে বলে Lymphadenitis followed by Myositis.
কিছুদিন আগে তাকে দেখার জন্য আমি তাদের গ্রামের বাড়ি মাগুরাতে গিয়েছিলাম 'পেশেন্ট ফলোআপ ইন হাউজে' এ।কেমন আছে বোনটি? পুরো বিষয় টি জানাবো একটি ভিডিওর মাধ্যমে।দেখবেন আগামীকাল সকাল ১০:০০ টায়। জানতে পারবেন তার রোগ এবং তার দুঃখ সুখের গল্প ।
শেষ কিছু কথাঃ আপনারা কখোনই জটিল রোগের চিকিৎসা বা অপারেশনের সিদ্ধান্ত একটি রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে নিবেন না। প্রয়োজনে পুনরায় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা বা অপারেশন করাবেন। আপনার সচেতনতাই ভালো রাখতে পারে আপনাকে। ধন্যবাদ সবাইকে।