23/05/2025
(ডা. জামান এর পোস্ট সংকলিত)
বছর কয়েক আগের কথা। আমি তখন সদ্য MRCP পাশ করেছি ইংল্যান্ডের প্রখ্যাত রয়্যাল কলেজের সদস্য। মনে তখন বইপত্রের ভার, ব্রেইন ঝকঝকে, আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। রোগী আসত, আমি দ্রুত রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা দিতাম। ঠিক এমন এক সময়, পঞ্চাশের কোটায় এক মহিলা আমার চেম্বারে আসলেন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে।
আমি খুঁটিনাটি বেশ কিছু বেসলাইন টেস্ট করালাম। রিপোর্টে দেখি ইউরিক অ্যাসিড অনেক দিন ধরেই বেশি, চর্বি (ট্রাইগ্লিসারাইড) মাত্রারিক্ত, প্রসাবে অ্যালবুমিন যাচ্ছে (প্রোটিন লস), ECG-তে হার্ট বড় হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে এক জটিল কিন্তু পরিচিত অবস্থা।
চিকিৎসায় আমি বেছে নিলাম Losartan (Osartil)। কারণটা পরিষ্কার:
✅ প্রেসার কমায়
✅ কিডনি থেকে প্রোটিন লস কমিয়ে ক্ষতি রোধ করে
✅ ইউরিক অ্যাসিড কমায়
✅ চর্বি কমাতে সাহায্য করে
✅ হার্টের বড় হওয়া ঠেকায়, স্ট্রোক/হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়
অর্থাৎ এক ওষুধে পাঁচটি সমস্যার সমাধান এক ঢিলে পাঁচ পাখি। এমন র্যাশনাল চয়েস খুব কমই মেলে। রোগিনীর সব সমস্যাই এতে কাভার হচ্ছিল, এবং আমি ভেবেছিলাম, এটা তার জন্য বিধাতার আশীর্বাদস্বরূপ সিদ্ধান্ত। তিনি হাসিমুখে বিদায় নিলেন।
তারপর অনেক দিন আর দেখা হয়নি। হঠাৎ কোভিডের সময় চারপাশে লকডাউন, চেম্বারে রোগী কম একদিন ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ফোনে জানালেন, দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। গিয়ে দেখি, সেই পরিচিত মুখ আমার রোগিনী বেডে অচেতন। হঠাৎ বমি করে সংজ্ঞাহীন, চোখের পিউপিল পিন-পয়েন্ট, প্রেসার প্রচণ্ড হাই।
আমি অনুমান করলাম Pontine Haemorrhage, এক প্রকার মারাত্মক ব্রেইন স্ট্রোক যার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। রোগীকে দ্রুত উন্নত হাসপাতালে রেফার করতে হলো।
রেফারের আগে রোগীর মেয়ের সাথে কথা বলে জানলাম আমার দেয়া Osartil ওষুধ বন্ধ করে তিনি স্থানীয় ফার্মেসিওয়ালার পরামর্শে Tenoloc (Atenolol) খাওয়া শুরু করেন, সেটাও কয়েকদিন ধরে বন্ধ।
আমার ব্রেইন দিয়ে ভাবা ওষুধটা বাদ দিয়ে এক ক্লাস ফাইভ পাস ফার্মেসিওয়ালার কথা বিশ্বাস করলেন।
এটা কষ্টের, কারণ Atenolol এখন হাই প্রেশারের জন্য রেগুলার চয়েস না স্টাডি প্রমাণ করেছে এটা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, হঠাৎ বন্ধ করলে রিবাউন্ড হাইপারটেনশন হয়, এমনকি খারাপ কোলেস্টেরল বাড়িয়ে ভালটা কমায়।
সব মিলেতিনি নিজেই নিজের ক্ষতি ডেকে এনেছেন, একজন অযোগ্য লোকের কথায় ভরসা করে। আগে এমন ঘটলে আমার ভেতর থেকে সহানুভূতি কাজ করত, এখন আর করে না। এখন শুধু একটা উপলব্ধি হয়
পৃথিবীতে কিছু মানুষের জন্মই হয়েছে ধ্বংস হবার জন্য।
তাদের আপনি যতই ভালো চান না কেন, তারা সেই বক্র পথেই হেঁটে যাবে।
আপনি যতই চেষ্টা করুন, তারা সরে আসবে না।
"I tried so hard, and got so far
But in the end, it doesn’t even matter…"