29/04/2025
শিশুদের ডায়রিয়া ও করণীয়ঃ
লেখক: ডাঃ মোঃ কায়সার মাহমুদ
নবজাতক ও শিশু রোগ বিষয়ক চিকিৎসক, টাংগাইল।
যোগাযোগ: 01712050910
শিশুদের রোগসমূহের মধ্যে ডায়রিয়া অন্যতম। সাধারণত সারাদিনে (২৪ ঘন্টায়) তিনবার বা তার অধিকবার পাতলা পায়খানা হলে তাকে ডায়রিয়া বলে। এটি একটি খাদ্য এবং পানি বাহিত রোগ। শিশুরা স্বভাবতই বাহিরের খাবারের প্রতি আকৃষ্ট থাকে। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশুরা অস্বাস্থ্যকর খাবার যেমন, ফুচকা, ঝালমুড়ি, আচার, দুষিত পানিতে তৈরী আইসক্রিম, রাস্তার খোলা পরিবেশে তৈরী আখের রস, লেবুর শরবত ইত্যাদি খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এছাড়াও অধিক গরমে নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার, বাসি খাবার, মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার, মশা-মাছি সহজেই বসতে পারে এমন খোলা খাবারের মাধ্যমেও শিশুরা ডায়রিয়ার জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে রোটা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত ডায়রিয়া, কলেরা জীবানু দ্বারা আক্রান্ত ডায়রিয়া, ই-কোলাই জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত ডায়রিয়া বেশি লক্ষনীয়।
ডায়রিয়ার লক্ষণ: ঘন ঘন পানির মতো পাতলা পায়খানা হওয়া, কিছু ক্ষেত্রে রক্ত ও মিউকাস সহ পাতলা পায়খানা হওয়া, পেট ব্যাথা করা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, ধীরে ধীরে পানি শুন্যতার কারনে শরীর দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
শিশুদের ডায়রিয়ায় পানি শুন্যতার লক্ষণ: চোখ ভিতরের দিকে ঢেবে যাওয়া, তৃষ্ণা বেড়ে যাওয়া, চামড়া শুষ্ক হয়ে যাওয়া, বিরক্তির প্রকাশ, প্রস্রাব কমে যাওয়া ইত্যাদি।
চিকিৎসা: শিশুদের ডায়রিয়ায় পানি শুন্যতা রোধ করাই প্রথম লক্ষ্য। সেক্ষেত্রে ৫০০ মিলি পানিতে ১ প্যাকেট ওরাল রিহাইড্রেশন স্যালাইন (ORS-N) সম্পুর্ন অংশ গুলিয়ে অত:পর প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ২ বছরের নিচের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ৫০-১০০ মিলি করে এবং ২ বছরের উপরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১০০-২০০ মিলি করে খাওয়াতে হবে। অন্য ভাবে বলা যেতে পারে যে, শিশুর ওজন যত কেজি প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর তত চা চামচ স্যালাইন খাবে অথবা আনুমানিক যেই পরিমান পায়খানা করে সেই পরিমাণ স্যালাইন পানি খাওয়াতে হবে। সাথে অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার খাবে। এছাড়াও বমি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে বমির ঔষধ, জিংক ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করা যেতে পারে।
শিশুদের ডায়রিয়ায় কখন হাসপাতালে যাবেন : বাচ্চা যদি খেতে না পারে, যা খায় তাই যদি বমি করে ফেলে, যদি নিস্তেজ অথবা অজ্ঞান হয়ে যায়, চোখ কোটরগত এবং চামড়া অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়, প্রস্রাব কমে যায় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে অথবা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধ: ডায়রিয়া প্রতিরোধে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। বার বার হাত ধোয়া, বিশেষ করে খাওয়ার আগে হাত ধোয়া বাঞ্চনীয়। যারা শিশুদের খাইয়ে দেন, তাদেরও এই নিয়ম মেনে চলতে হবে। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি পান, প্রয়োজনে পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। খাবার ঢেকে রাখতে হবে। বাসি- পঁচা খাবার, বাহিরের খোলা খাবার শিশুদের দেয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে অবিভাবকের সচেতনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
28/04/2025
টাংগাইল প্রতিদিন