12/04/2024
আমার এক রোগী, হার্টের জটিল রোগের অপারেশনের জন্য এসেছে। ঝুঁকি নিয়ে অপারেশন করলাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়ে গেল।ছোট্ট শিশু। মায়ের সাথে অবিরাম বায়না।
মাকে বললাম, বাচ্চার বাবা কি করে? " বিদ্যাশ থাকে।" নিশ্চুপ উত্তর।
অপারেশন করতে তো তিন লাখ টাকা লাগবে। কে দিবে?
" জানিনা স্যার।"
"ওর বাপে অপারেশনের টাকা জোগাড় করতে জমি বেইচ্যা সিরিয়া গ্যাছে। হুনছি সেখান থাইকা দালাল গো মাধ্যমে লিবিয়া গিয়া ধরা খাইছে। অহন জেল খানায় আছে। বাইচা আছে কিনা জানিনা। আমার গয়না বেইচা ৫০ হাজার টাকা জোগাইছি। আর কৈ পামু জানিনা।" ছেলেটা খুব কষ্ট পাইতাছে স্যার!!! কিছু একটা পারলে করেন।
ঘটনা শুনে আমার চোখ টল টল করে উঠল, but মহিলা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। No change of emotion. বলে অধিক শোকে পাথর।
বললাম, আপনার বাবা কি করে?
স্যার। বাপের বাড়িতেই আছিলাম। হটাৎ করে বাপ মইরা গেল। ভাইয়েরা গরীব, কখনো দ্যাখে, কখনো দেখেনা।
আমি বিমূঢ় হয়ে গেলাম।
OK.
কয়েকটা সাহায্য সংস্থার সাথে ( Muntada Aid, UK; Child Heart Trust--CHTB Bangladesh) কথা বলে একে বারে বিনা মূল্যে অপারেশন করে দিলাম সাথে যাতায়াত ভাড়াও দিয়ে দিলাম আলহামদুলিল্লাহ (যাকাত থেকে)।
আমার কর্মস্থল, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল এর CEO, Prof. Dr.M. A. Rashid স্যার অনেক discount দিলেন। সবার প্রচেষ্টায় শিশু ইয়াসিন মায়ের সাথে খুনশুটি করতে করতে বাড়ি চলে গেল। তাকিয়ে রইলাম। ওর বাবা হয়তো কোন দিন জানবে কিনা জানিনা, তার ছেলের, অপারেশন হয়েছে, ভালো আছে আর তারই অপেক্ষায় প্রহর গুনছে, বাবা কবে আসবে, বাবাকে অনেক করে বকা দিবে, কেনো তুমি পালিয়ে ছিলে? মার সাথে কোন কথা বল নাই কেন?
এর পর ও সকলে বলবে, ডাক্তার রা "কসাই"।
সবাই দোয়া করবেন, এরকম কসাই হয়ে যেন সুস্থ থেকে কাজ করতে পারি যুগ যুগ ধরে, নিরাপদে বড়দের ও ছোট দের হার্টের অপারেশন করতে পারি ইনশাআল্লাহ।
দোয়া করবেন রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বিদগ্ধ
সহধর্মিণী রা।
ভালো থাকবেন, নিরাপদ থাকবেন সবাই।
সবাইকে ঈদ মোবারক।
প্রফেসর ডা: রোকনুজ্জামান সেলিম।
মিনিমাল ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জন।
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল।