01/06/2025
মায়াজম তত্ত্বের বিশ্লেষণ:
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতির জনক/প্রতিষ্ঠাতা শ্রদ্ধেয় স্যার ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণ ব্যাখ্যা করতে মায়াজম তত্ত্ব (Miasm Theory) প্রদান করেন। তাঁর মতে, বেশিরভাগ দীর্ঘস্থায়ী রোগ (Chronic Diseases) শুধুমাত্র সাময়িক লক্ষণ নয়, বরং শরীরের গভীরে লুকিয়ে থাকা কিছু মৌলিক "দোষ" বা "প্রবণতা" থেকে উদ্ভূত হয়, যা বংশানুক্রমিকভাবেও চলে আসতে থাকে। এই মৌলিক দোষগুলোকেই তিনি মায়াজম (Miasm) নাম দিয়েছেন।
শ্রদ্ধেয় স্যার ডা. হ্যানিম্যানের মায়াজম তত্ত্ব অনুসারে, প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে এক বা একাধিক মায়াজমের প্রভাব থাকতে পারে এবং এটি তাদের রোগপ্রবণতা নির্ধারণ করে। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায়, কেবল বর্তমান লক্ষণগুলির উপর ভিত্তি করে নয়, বরং রোগীর সামগ্রিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থা এবং কোন মায়াজম প্রভাবশালী, তা বিবেচনা করে ঔষধ নির্বাচন করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো শুধু বর্তমান রোগ সারানো নয়, বরং মায়াজমের গভীর প্রভাব থেকে শরীরকে মুক্ত করে দীর্ঘস্থায়ী সুস্থতা অর্জন করা।
শ্রদ্ধেয় স্যার ডা. হ্যানিম্যান তিনটি প্রধান মায়াজমের কথা উল্লেখ করেছেন:
১) Psora, ২) Sycosis, ৩) Syphilis-এর মতো মায়াজমগুলোর আধুনিক ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের উপর গভীর গবেষণা বিশ্লেষণ।
________________________________________
১. Psora সোরিক মায়াজম (Psora Miasm)
• উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য: শ্রদ্ধেয় স্যার ডা. হ্যানিম্যান মনে করতেন, সোরিক মায়াজম হলো সমস্ত দীর্ঘস্থায়ী রোগের মূল উৎস এবং এটি মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। এর উৎপত্তি মূলত ত্বকের সমস্যা, যেমন – চুলকানি, খোস-পাঁচড়া, একজিমা ইত্যাদি থেকে। যখন এই ধরনের চর্মরোগগুলোকে বাহ্যিক মলম বা লোশন দিয়ে দমন করা হয়, তখন রোগটি শরীরের গভীরে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সমস্যা সৃষ্টি করে।
• লক্ষণ ও প্রবণতা: সোরিক মায়াজমের অধীনে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে সাধারণত দুর্বলতা, এলার্জি, হজমের সমস্যা, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, চর্মরোগের প্রবণতা, শুষ্ক ত্বক, ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা, দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা, অস্থিরতা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। তাদের রোগগুলো প্রায়শই ঋতু পরিবর্তনের সাথে বাড়ে।
________________________________________
২. Sycosis সাইকোটিক মায়াজম (Sycosis Miasm)
• উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য: সাইকোটিক মায়াজম মূলত গণোরিয়া (Gonorrhea) নামক যৌনবাহিত রোগকে দমন করার ফলে উদ্ভূত হয় বলে শ্রদ্ধেয় স্যার ডা. হ্যানিম্যান মনে করতেন। এই মায়াজম শরীরের অতিরিক্ত বৃদ্ধি বা "বাড়াবাড়ি" প্রবণতার সাথে সম্পর্কিত।
• লক্ষণ ও প্রবণতা: সাইকোটিক মায়াজমের রোগীরা সাধারণত মাংসপিণ্ড (Warts), আঁচিল (Moles), টিউমার, সিস্ট, অতিরিক্ত শ্লেষ্মা, জয়েন্টে ব্যথা, মূত্রনালীর সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ঘাম, এবং স্থূলতার প্রবণতা দেখাতে পারে। মানসিক দিক থেকে এরা গোপনীয়তা, সন্দেহপ্রবণতা, ভীরুতা এবং স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা অনুভব করতে পারে। এই মায়াজমের রোগীরা সাধারণত ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় বেশি ভোগে।
________________________________________
৩. Syphilis সিফিলিটিক মায়াজম (Syphilis Miasm)
• উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য: সিফিলিটিক মায়াজম সিফিলিস (Syphilis) নামক যৌনবাহিত রোগকে দমন করার ফল। এই মায়াজম সাধারণত ধ্বংসাত্মক বা ক্ষয়কারী প্রকৃতির।
• লক্ষণ ও প্রবণতা: সিফিলিটিক মায়াজমের লক্ষণগুলো তীব্র এবং ধ্বংসাত্মক হয়। এর অন্তর্ভুক্ত রোগগুলো হলো – আলসার, হাড়ের ক্ষয়, টিস্যুর অবক্ষয়, স্নায়ুতন্ত্রের রোগ, মানসিক সমস্যা যেমন – হতাশা, আত্মহত্যার প্রবণতা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, এবং বিভিন্ন ধরনের বিকৃতি। এই মায়াজমের রোগীরা রাতের বেলায় বেশি কষ্ট পায় এবং তাদের মধ্যে ধ্বংসাত্মক প্রবৃত্তি দেখা যেতে পারে।
✍️ ডা. আবুল কালাম আজাদ
প্রভাষক : ঢাকা হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (প্রঃ)।
ডি এইচ এম এস, (ঢাকা)।
এইচ এম পি সি (হোমিও মেডিসিন কোর্স)।
হোমিও গবেষক ও চিকিৎসক।
💌 বিঃ দ্রঃ- বাংলাদেশের যেকোনো স্থানে কুরিয়ারে/পার্সেলে ঔষধ পাঠানো হয়।
🏠 চেম্বার মিরপুর ঢাকা : বাড়ি- ৪২, রোড- ২৯, ব্লক- ডি, মিরপুর ১২, পল্লবী, ঢাকা ১২১৬।
প্রতি শুক্রবার, রবিবার, মঙ্গলবার, বিকাল ০৫ ঘটিকা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত।
+8801716768210 (Whatsapp and Imo).
Call now to connect with business.