13/10/2025
হাইড্রোসেফালাস হলো একটি স্নায়ুজনিত অবস্থা, যেখানে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (CSF) জমে যায়। এই তরল স্বাভাবিকভাবে মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের চারপাশে ঘোরাফেরা করে, তবে যদি তা সঠিকভাবে নিষ্কাশন না হয়, তবে চাপ সৃষ্টি করে যা মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে। যখন এই অবস্থা জন্মের সময় থেকেই থাকে, তখন একে জন্মগত (Congenital) হাইড্রোসেফালাস বলা হয়।
🧬 কারণসমূহ (Causes)
জন্মগত হাইড্রোসেফালাস সাধারণত গর্ভাবস্থায় মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যার কারণে হয়। এর প্রধান কারণগুলো হল:
🟥 জেনেটিক বা বংশগত ত্রুটি
যেমন: একুয়েডাক্টাল স্টেনোসিস (Aqueductal stenosis) – যেখানে মস্তিষ্কের তরল বের হওয়ার পথ সংকুচিত হয়ে যায়।
🟥 জন্মের আগে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ
সাধারণত অপরিণত শিশুদের (premature babies) ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
🟥 ইনফেকশন
গর্ভাবস্থায় মা যদি টক্সোপ্লাজমোসিস, রুবেলা, সিফিলিস, সাইটোমেগালোভাইরাস বা হার্পিস এ আক্রান্ত হন, তবে শিশুর মস্তিষ্কের স্বাভাবিক গঠন ব্যাহত হতে পারে।
🟥 নিউরাল টিউব ডিফেক্ট
যেমন স্পাইনা বাইফিডা (Spina Bifida), যেখানে মেরুদণ্ডের বিকাশ অসম্পূর্ণ থাকে।
⚠️ লক্ষণসমূহ (Symptoms)
👉 নবজাতক বা শিশুদের মধ্যে হাইড্রোসেফালাসের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
👉 অস্বাভাবিকভাবে বড় মস্তিষ্কের গড়ন (Head enlargement)
👉 মাথার উপরের কোমল অংশ (Fontanel) ফুলে ওঠা
👉 ত্বকের নিচে মস্তিষ্কের শিরা স্পষ্টভাবে দেখা যাওয়া
👉 কান্নার সময় বা সাধারণত শিশুর চোখ নিচের দিকে চলে যাওয়া (setting sun sign)
👉 খাওয়ায় অনীহা, বমি করা
👉 ঝিম ধরা বা অস্বাভাবিক ঘুম
👉 দৃষ্টির সমস্যা বা খিঁচুনি
👉 বিকাশজনিত দেরি (Motor delays)
🩺 নির্ণয় (Diagnosis)
📍 আল্ট্রাসনোগ্রাফি (Ultrasound) – গর্ভকালীন বা জন্মের পর করা যায়।
📍 সিটিস্ক্যান (CT Scan) ও এমআরআই (MRI) – মস্তিষ্কে তরলের পরিমাণ ও কোন অংশে বাধা আছে তা নির্ধারণ করে।
📍 ফান্ডোস্কপি – চোখের ফান্ডাস পরীক্ষা করে মস্তিষ্কে চাপের লক্ষণ বোঝা যায়।
🧠 চিকিৎসা (Treatment)
জন্মগত হাইড্রোসেফালাসের জন্য চিকিৎসার প্রধান পদ্ধতিগুলো হলো:
১. শান্ট সার্জারি (Shunt Surgery)
সবচেয়ে প্রচলিত চিকিৎসা। এতে একটি পাতলা টিউব (shunt) মস্তিষ্ক থেকে শরীরের অন্য অংশে (সাধারণত পেটের ভেতরে) তরল নিষ্কাশনের জন্য স্থাপন করা হয়।
২. এন্ডোস্কোপিক থার্ড ভেন্ট্রিকুলোস্টমি (ETV)
একটি ছোট ছিদ্র করে তরল নির্গমন করানোর বিকল্প পদ্ধতি, কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর।
৩. সংক্রামণ প্রতিরোধ
শান্ট বসানোর পর সংক্রমণ প্রতিরোধে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে।
💡 পরবর্তী যত্ন ও সাবধানতা
👨🔬 চিকিৎসার পর শিশুর বিকাশ ও মানসিক বিকাশ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
👨🔬 সময়মত ফলো-আপ ও শান্ট কাজ করছে কি না তা নিশ্চিত করা জরুরি।
👨🔬 মাথার আকার, খিঁচুনি ও আচরণে পরিবর্তন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
জন্মগত হাইড্রোসেফালাস একটি গুরুতর কিন্তু চিকিৎসাযোগ্য রোগ। সময়মতো নির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে শিশুর জীবন রক্ষা ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করা সম্ভব। সচেতনতা ও দ্রুত পদক্ষেপ এই রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে প্রধান হাতিয়ার।
#হাইড্রোক্যাফালাসে
#অধ্যাপক_ডা_হারাধন_দেব_নাথ