20/08/2024
কয়েকদিন আগেই একটা পোস্ট করেছিলাম যে স্বাস্থ্যখাতে বড়বড় পজিশনের সিন্ডিকেট মেইনটেইন করা কর্তাব্যক্তিদের না সরালে আসলে ডাক্তার/মেডিকেল স্টুডেন্টদের মুক্তি নাই।এরপর বেশ অনেক কিছুতেই পরিবর্তন এসেছে।কিন্তু কোন ফাঁকফোকর দিয়ে কিভাবে কিভাবে যেন BMDC টা পার পেয়ে গেছে!
স্বাধীন বাংলাদেশে আমার দেখা সবচেয়ে ন্যূন্জ সংগঠন হল BMDC।ডাক্তারদের কোন স্বার্থ রক্ষা না করে,কোন পজিটিভ ডিসিশন বা নিয়ে এই সংগঠন কেমনে যুগের পর যুগ টিকে আছে তা বড়ই আশ্চর্যের বিষয়।আজকালের কথা বাদই দিই,সেই ২০২০ সালে খুলনায় ডাক্তার রকিব হত্যার কিংবা পরবর্তীতে শতশত ডাক্তারের উপর ন্যাক্কারজনক আঘাতের দায় সেরেছে এই সংগঠনটা তীব্র নিন্দা জানিয়ে।মাঝেমধ্যে তো মনে হত এটা ডাক্তারদের কোন কাউন্সিল না,বরং কোন তীব্র নিন্দাভিত্তিক সংগঠন।তাছাড়া এরা পলিটিক্যাল আঘাতের তো বিচার করেই নি,কোন কোন ক্ষেত্রে এদেরই মধ্যস্থতায় সেসব আঘাত গড়িয়েছে চুপ থাকা কিংবা অসম্মানজনক নেগোসিয়েশনে।
এদের মূল কাজ কিন্তু প্রধানত ডাক্তারদের রেজিষ্ট্রেশন মেইনটেইন করা & আপডেটেড রাখা।সেক্ষেত্রেও এই সংগঠন ভয়াবহ ব্যর্থ।মৃত ডাক্তারদের রেজিষ্ট্রেশন নম্বর বিক্রি,ভুয়া রেজিষ্ট্রেশন নম্বর প্রদান,সত্যিকারের MBBS ডাক্তারদের বিএমডিসির রেজিষ্ট্রেশন নম্বর নিতে গিয়ে হয়রানি এমন হাজার রকম মিসম্যানেজমেন্ট তো আছেই।এমন চূড়ান্ত ব্যর্থ একটা সংগঠনও এতকাল টিকে ছিলো শুধু পলিটিক্যাল ব্যাকাপ আর চাটুকারিতায়।সরকার পতনের পর বাকি সব সেক্টরের মত এখানকার কর্তাব্যক্তিরাও ভালনারেবল হয়ে পড়েছে,এরই সুযোগ নিয়েছে ডিএমএফ স্যাকমো/মেডিকেল টেকনিশিয়ানরা।বিএমডিসিকে ৭২ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়ে তারা নিজেদের ডাক্তার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করে নিয়েছে!কি হাস্যকর!!!
চিন্তা করে দেখুন,প্রায় হাজারখানেক আইটেম,অসংখ্য কার্ড টার্ম আর চারটা ভয়াবহ এক্সজস্টিং প্রফ দিয়ে একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট ডাক্তার হয়।এর মধ্যে অনেক ফ্লস আছে,ট্রু।কিন্তু কমবেশি না পড়ে বা কষ্ট না করে কেউ ডাক্তার হতে পারে না।কিন্তু কিচ্ছু না করে,জাস্ট SSC পাশ করে কয়েক মাসের ট্রেনিং শেষে যদি কেউ ডাক্তার হিসেবে লিগ্যাল প্র্যাকটিসের সুযোগ পায় সেটা একই সাথে দুঃখজনক এবং হেলথ সেক্টরের জন্য ভয়াবহ খারাপ।এমনিতেই তাদের হাজার রকম ম্যালপ্র্যাক্টিস,এন্টিবায়োটিক কিংবা স্টেরয়েডের ইনডিসক্রিমিনেট ইউজ একদিকে যেমন পেশেন্টের ইরিপেয়ারেবল লস করে দিচ্ছে,একই সাথে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্টের মত গ্লোবাল প্রব্লেমও বাড়িয়ে তুলছে!তবে এতদিন বিষয়টা লিগ্যাল ছিলো না,তাতেই তাদের ম্যালপ্র্যাক্টিসের স্বীকার শতশত রোগী শেষ পর্যায়ে টারশিয়ারি হেলথ ইন্সটিটিউটগুলোতে ভর্তি হয়ে কখনো মৃত্যুবরণ করতো,কখনো বা আজীবন সেই ক্ষতি বয়ে বেড়াতো।আমি নিজেও এমন অনেক পেশেন্ট ডিল করেছি।এখন যদি বিষয়টা লিগ্যালাইজ করা হয় তাহলে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবাটা কোন পর্যায়ে পৌছাবে,একবার চিন্তা করে দেখেন!নামের আগে ডাক্তার বসিয়ে যে কেউ আপনার আমার পরিবারের মানুষের শুধু ভুল চিকিৎসাই না বরং ক্ষতিকর চিকিৎসা করবে,আমরা আপনারা বুঝতেও পারবো না।যখন বুঝবো,ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে যাবে।
একাধিক ডাক্তারের দুঃখজনক মৃত্যুর পরও যে সংগঠন "চিকিৎসক সুরক্ষা আইন" পাশ করতে পারেনি,নারী চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা দিতে পারেনি কিংবা আঘাত পেলে পাশে দাঁড়াতে পারে নি সেই সংগঠনের টিকে থাকার আসলে নৈতিক ভিত্তিই নেই।রাজনৈতিক ঠ্যাক দিয়ে যদি সংগঠন চলতে থাকে তাহলে আজ ডিএমফ/স্যাকমোদের যেমন ডাক্তার হিসেবে লিগ্যাল প্র্যাকটিসের অনুমতি দিয়েছে,কাল পরশু হয়ত চাপে পড়লে প্লে স্টোর থেকে "৩০ দিনে MBBS ডাক্তার" অ্যাপ ডাউনলোড করলেই ডাক্তার হিসেবে চেম্বারের অনুমতি দিয়ে দেবে।দেশের মানুষের স্বাস্থ্য বা ডাক্তারদের স্বার্থ তাদের কাছে ম্যাটার করবে না।এভাবে চলতে পারে না,দেশের মানুষের স্বার্থেই এই সংগঠন ঢেলে সাজাতে হবে।কাল আমরা গিয়ে আন্দোলন করলে হয়ত চাপে পড়ে ওদের রেজিষ্ট্রেশন বাতিল করবে,পরশু ওরা এসে আল্টিমেটাম দিলে আবার সব আগের জায়গায় ফিরে যাবে।এভাবে চলতে পারেনা।রুট কজে হাত দিতে হবে।স্পাইনলেস,পলিটিক্যাল কীটদের বের করে বিএমডিসি শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে,প্রতিটি মিসম্যানেজমেন্টের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।ভালো কিছু পেতে হলে সবকিছু নতুনভাবে রিফর্ম করে তবেই দাবিদাওয়া আদায়ে মনোযোগ দিতে হবে।নাহলে যার নিজের লুঙ্গিরই ঠিক নাই,তার কাছে পান্জাবী বানাতে দিয়ে সুন্দর একটা পান্জাবী পাওয়ার আশা করাটা হবে ভয়াবহ একটা বোকামি!