11/04/2025
পারকিনসনস (Parkinson's disease)
এটি একটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা স্নায়বিক রোগ (neurodegenerative disorder), যা মূলত মস্তিষ্কের এক বিশেষ অংশে ডোপামিন নামক রাসায়নিকের ঘাটতির কারণে হয়।
পারকিনসন রোগ কীভাবে হয়?
মস্তিষ্কের সাবস্ট্যানশিয়া নাইগ্রা (substantia nigra) অংশের স্নায়ুকোষগুলো ডোপামিন তৈরি করে। ডোপামিন মাংসপেশির গতি ও সমন্বয় ঠিক রাখে। এই কোষগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হলে পারকিনসনের লক্ষণ দেখা দেয়।
প্রধান লক্ষণগুলো কী?
১. কাঁপুনি (Tremor) – সাধারণত হাত, পা বা চিবুকে প্রথমে দেখা যায়
২. গতি কমে যাওয়া (Bradykinesia) – ধীর গতিতে চলাফেরা
৩. পেশির শক্ততা (Rigidity) – মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া
৪. ভারসাম্য হারানো (Postural instability) – পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে
৫. মুখে এক্সপ্রেশন কমে যাওয়া (Mask-like face)
৬. হাত না দোলানো, ছোট ছোট পা ফেলা, কথা জড়ানো ইত্যাদি
কারণ কী?
মূলত বয়সজনিত
জেনেটিক (পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেশি)
পরিবেশগত বিষ বা টক্সিনের প্রভাব
তবে অনেক সময় সঠিক কারণ জানা যায় না
চিকিৎসা কী?
ঔষধ: যেমন Levodopa, যা ডোপামিন ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে
ফিজিওথেরাপি: হাঁটা, ভারসাম্য, পেশি শক্তি বাড়াতে
স্পিচ থেরাপি: কথা বলায় সমস্যা হলে
ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন (DBS): কিছু রোগীর জন্য অস্ত্রোপচার
মনোবল ও মানসিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ
পারকিনসন রোগের গ্লোবাল হার
বিশ্বব্যাপী প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ১০০–২০০ জন পারকিনসনে আক্রান্ত।
৬০ বছরের ঊর্ধ্বে এই রোগের হার দ্রুত বাড়ে — প্রতি ১০০ জন বয়স্কের মধ্যে প্রায় ১ জন আক্রান্ত হতে পারেন।
পুরুষদের মধ্যে নারীদের তুলনায় আক্রান্তের হার কিছুটা বেশি।
বাংলাদেশে পারকিনসনের হার (আনুমানিক)
বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য ও বিস্তৃত পরিসংখ্যান তুলনামূলক কম থাকলেও ধারণা করা হয়:
৫০ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে প্রতি ১০০০ জনে ১–২ জন পারকিনসনে আক্রান্ত।
বয়স্ক জনগোষ্ঠী বাড়ার সাথে সাথে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
পারকিনসন রোগে (Parkinson's Disease) ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি রোগের উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং রোগীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে। নিচে এর গুরুত্বগুলো তুলে ধরা হলো:
১. পেশি শক্তি ও নমনীয়তা বৃদ্ধি
পারকিনসনের কারণে পেশি শক্তিহীনতা ও জড়তা দেখা দেয়। ফিজিওথেরাপি নিয়মিত করলে পেশির নমনীয়তা ও শক্তি বাড়ে।
২. সন্তুলন ও হাঁটার উন্নতি
এই রোগে অনেক সময় রোগী ভারসাম্য হারায় ও পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। ফিজিওথেরাপির ব্যালেন্স ট্রেনিং ও গেইট ট্রেনিং রোগীর হাঁটাচলা ও দেহের ভারসাম্য উন্নত করে।
৩. মোশন রেঞ্জ (সঞ্চালন ক্ষমতা) বজায় রাখা
ফিজিওথেরাপির স্ট্রেচিং ও মোবিলাইজেশন এক্সারসাইজ হাড়ের জয়েন্টগুলোকে সচল রাখতে সাহায্য করে।
৪. দৈনন্দিন কাজের দক্ষতা বাড়ানো
নিয়মিত থেরাপির মাধ্যমে রোগী নিজের কাজ যেমন হাঁটা, দাঁড়ানো, বসা ইত্যাদি সহজে করতে পারে।
৫. মনোবল ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি
শারীরিক উন্নতির পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি রোগীর মানসিক অবস্থাও ভালো রাখতে সাহায্য করে, যা পুরোপুরি পুনর্বাসনে সহায়ক।
৬. নিউরোপ্লাস্টিসিটি উন্নয়ন
বিশেষ কিছু ব্যায়াম মস্তিষ্কের নিউরোপ্লাস্টিসিটিকে (নতুনভাবে শিখে নেওয়া বা অভিযোজন ক্ষমতা) উদ্দীপিত করে, যা পারকিনসনের চিকিৎসায় উপকারী হতে পারে।
পারকিনসন রোগে উপযুক্ত কিছু ঘরে করার মতো ফিজিওথেরাপির এক্সারসাইজ নিচে তালিকাভুক্ত করা হলো। এগুলো নিয়মিত করলে গতি, শক্তি, ভারসাম্য ও দৈনন্দিন কাজের ক্ষমতা উন্নত হয়।
---
১. স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ (Stretching Exercises):
পেশি ও জয়েন্ট নমনীয় রাখতে সহায়তা করে।
নেক স্ট্রেচ: মাথা ধীরে ধীরে ডান-বামে ঘোরান এবং উপরে-নিচে করুন।
শোল্ডার রোল: কাঁধকে ঘড়ির কাঁটার মতো ও বিপরীত দিকে ঘোরান।
হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ: চেয়ারে বসে এক পা সামনে সোজা রেখে ধীরে ধীরে সামনের দিকে ঝুঁকুন।
---
২. ব্যালেন্স ও ভেস্টিবুলার এক্সারসাইজ:
পড়ার ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
হিল-টু ওয়াকিং: এক পায়ের গোড়ালি অন্য পায়ের আঙুলের সামনে রেখে হাঁটুন।
ওয়ান লেগ স্ট্যান্ড: দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে এক পা তুলে ৫–১০ সেকেন্ড দাঁড়ান।
সুই উইংস (Swaying exercise): দুই পা কাঁধসমান রেখে দাঁড়িয়ে, শরীর ডানে-বামে দোলান।
---
৩. গেইট ট্রেনিং (Walking Exercises):
হাঁটার গতি ও ছন্দ উন্নত করে।
বড় পদক্ষেপে হাঁটা (Big Steps Walking)
হাত দুলিয়ে হাঁটা (Arm Swinging with Walking)
মেট্রোনোম বা বিটে হাঁটা (Rhythmic Walking) – একঘেয়ে ছন্দে হাঁটা, যাতে গতি ধরে রাখা যায়।
---
৪. স্ট্রেন্থ এক্সারসাইজ (Strengthening Exercises):
চেয়ার স্কোয়াট: চেয়ারে বসে দাঁড়ান, আবার বসুন – ১০ বার করুন।
ওয়াল পুশ আপ: দেয়ালে ঠেস দিয়ে পুশ আপ করুন।
রেসিস্ট্যান্স ব্যান্ড এক্সারসাইজ: সহজ ব্যান্ড দিয়ে হাত-পা টানার ব্যায়াম।
---
৫. ফেসিয়াল এক্সারসাইজ (Facial Exercises):
মুখের এক্সপ্রেশন ও কথা বলার স্পষ্টতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
জোরে হাসুন, মুখ খুলুন
ঠোঁট গোল করে শিস বাজানোর ভঙ্গি করুন
জিহ্বা বের করে ডান-বামে নড়ান
---
৬. রিল্যাক্সেশন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম (Breathing & Relaxation):
ডিপ ব্রিদিং (Deep Breathing): নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়ুন।
মাইন্ডফুল ব্রিদিং: চোখ বন্ধ করে শ্বাস-প্রশ্বাসে মনোযোগ দিন।
পরকিনসনে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা আপনার ঠিকানায় পেতে, আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।