15/04/2025
পান্তা ভাতের জল, তিন পুরুষের বল!
কোন একদিন, কোন এক ভিডিওতে উপস্থাপককে এভাবেই বলতে শুনেছিলাম। আসলেই কি পান্তা ভাতে এত পুষ্টিগুণ রয়েছে। তাহলে চলুন পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। পান্তা ভাত খাওয়ার প্রচলন আমাদের দেশে বহুকাল ধরে চলে আসছে।
শহরের তুলনায় গ্রামে পান্তা ভাত খাওয়ার প্রচলন বেশি। শহরে নববর্ষের উৎসবে শখের বসে পান্তা ভাত খাওয়া হয়। তবে পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা যে ভাত খাই তা থেকে পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। আর তা যদি লালচাল হয় তাহলে পুষ্টিগুণের মাত্রা আরো অনেক বেড়ে যায়।
পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ সমূহ :
পান্তা ভাতে আছে বিভিন্ন মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। যেমন : আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক, ফসফরাস, ভিটামিন বি- ৬, ভিটামিন বি-১২ ইত্যাদি।
পান্তা ভাতে সাধারণ চালের চেয়ে অনেক বেশি পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যেমন : ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ চালে আয়রন থাকে ৩.৫ মিলিগ্রাম, সেখানে পান্তা ভাতে আয়রনের পরিমাণ থাকে ৭৩.৯ মিলিগ্রাম। ক্যালসিয়ামের পরিমাণ, সাধারণ ভাতে থাকে ২১ মিলিগ্রাম, পান্তা ভাতে থাকে ৮৫ মিলিগ্রাম। এছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক, ফসফরাস, ভিটামিন বি- ৬, ভিটামিন বি-১২ এ সকল উপাদান সমূহ সাধারণ ভাতের চেয়ে, পান্তা ভাতে বেশি থাকে।
পান্তা ভাতের উপকারিতা :
১. ১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে প্রায় তিন ট্রিলিয়ন ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে। যাদের প্রোবায়োটিকস বলে। এটি সংক্রমণ রোধ করে এবং শরীরে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে।
২. পান্তা ভাতে আয়রনের পরিমাণ বাড়ে ২১ গুণ। যা রক্তশূন্যতা কমাতে সাহায্য করে।
৩. পান্তা ভাতে ল্যাকটিক এসিড নামক ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাধারণত দইয়ের এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়।
৪. পান্তা ভাত খেলে শরীরে পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়ামের পরিমাণ বাড়ে।
৫. পান্তা ভাতে পানির পরিমাণ বেশি থাকে, তাই শরীরে পানির শূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
৬. পান্তা ভাত শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৭. পান্তা ভাত হজম শক্তি বাড়ায়। এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখে।
৮. পান্তা ভাত দুর্বলতা নিরাময়ের মাধ্যমে শরীরের ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরকে সতেজ রাখে।
৯. পান্তা ভাত ত্বকের জন্যেও উপকারী। এটি কোলাজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে ত্বক টানটান রাখে।
১০. অনিদ্রার সমস্যা সমাধানও বেশ উপকারী। এটি নিদ্রাহীনতাও দূর করে।
সতর্কতা :
১. বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করা।
২. ১২ ঘণ্টার বেশি ভিজিয়ে না রাখা, দীর্ঘ সময় ফার্মেন্টেড থাকলে, সেই ভাত গ্রহণে পেটের পীড়া বা ডায়রিয়া হতে পারে।
৩. যেহেতু দীর্ঘ সময় ফার্মেন্টেড থাকে তাই এটি গ্রহণে ঘুম ঘুম ভাব বা ঘুম বেশি হতে পারে।