20/07/2025
#রোগীকথনঃ
#জরায়ু_ফেটে_মা_বাচ্চার_মৃত্যুর_পূর্বাপর
আপনারা জরায়ু ফেটে যাওয়ার কথা শুনেছেন কখনো? শুনেছেন জরায়ু ফেটে বাচ্চা মারা যাওয়ার কথা? কখনো কখনো মা ছা দুজনেই মিলেমিশে মরে যাওয়ার কথা? না শুনলে নাই এখন শোনেন। জেনে রাখা ভালো। কে জানে কখন কার কাজে লেগে যাবে! মূল গল্পে যাওয়ার আগে একটু গপসপ হলে মন্দ হয় না, কী বলেন?
এক.
আমার তখন কিছু মনে না রাখার বয়স। এই ধরেন চার পাঁচ। সেই সময়ের কোনো কিছুই মনে নেই একটি ব্যপার ছাড়া। উঠোন ভর্তি মানুষ গিজগিজ করছে। সবার চোখেমুখে কান্না। নানা বাড়িতে যাচ্ছিলাম। পথে মধ্যে যে বাড়িটা পড়ে, যেখানে মা মাঝেমধ্যে থামেন, রহিমা নানীর সাথে গল্প করেন। দেখলাম সেই নানীর মেয়ে, যার থুতনিতে একটা বড় তিল ছিলো, তিনি উঠোনে গিজগিজ মানুষের বলয়ের মধ্যে শুয়ে আছেন। কাপড় চোপড় রক্তে ভেজা। চোখ বন্ধ। আমি মায়ের আঁচল শক্ত করে ধরলাম। ওমা, এমুন কইরা কেউ শোয়? কী হইসে?
মইরা গেছে। বাচ্চা হইতে যাইয়া। আয় বাইত যাইগা। মা সারাক্ষণ মন খারাপ করে থাকলেন। আমাদের আর নানির বাড়িতে যাওয়া হইল না। নানী বাড়ি আর আমাদের বাড়ি পাঁচ মিনিটের পথ। চাইলে যে কোনো সময় যেতে পারবো। আমি জানি আমার মায়ের মন খারাপ ছিলো বাচ্চা জন্ম দিতে যেয়ে মরে যাওয়া সেই মেয়েটার জন্য। যার নাম আমার মনে নাই। ইনফ্যাক্ট সেই সময়ের কিছুই আমার মনে নেই। তবে আশ্চর্য রকম মনে আছে গিজগিজ মানুষের মাঝে উঠোনে শুয়ে থাকা একজন রক্তমাখা নারী, তার আধবোজা চোখ আর সূর্যমূখীর মতো একটা তিল! তখন না জানলেও এখন জানি তিনি প্রসব বেদনায় মারা যাননি। মারা গিয়েছিলেন জরায়ু ফেটে গিয়ে। বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত প্রসবে ( Obstructed labour) বাচ্চাসহ মা মারা যাওয়ার ইতিহাস এই উপমহাদেশের বহু পুরনো এবং সয়ে যাওয়া একটা মামুলি ব্যপার। এই জন্য একটা প্রবাদও চালু আছে; ভাগ্যবানের বউ মরে, অভাগার গরু মরে। ব্যাখ্যার প্রয়োজন মনে করছি না। তবে সময় বদলেছে। কতোটা বদলেছে সেটা একটা প্রশ্ন।
দুই.
মাহিনূর( ছদ্মনাম)। স্কুল টিচার। আমার অনলাইন কনসাল্টেশনের পেসেন্ট। হিস্ট্রি দেওয়ার বলল, ম্যাডাম, আমি সুস্থ সবল মানুষ। স্কুলে গেছি। হঠাৎ মনেহলো আমার পেট দুই ভাগ হয়ে ঝুলে গেলো। তেমন ব্যথা বেদনা নাই। কিন্তু আমি নড়তে পারছিলাম না। কলিগরা ধরে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলো। এরমধ্যে শুরু হলো ঢালাঢালি রক্ত। আমার আর কিছু মনে নাই। যখন জ্ঞান ফিরলো, শুনলাম আমার জরায়ু ফেটে গিয়েছিলো। বাচ্চাটা পেটের ভিতরই মারা গেছে। জরায়ু রাখা গেছে তবে সাত ব্যাগ রক্ত লেগেছে!
ম্যাডাম, কোনো কারণ ছাড়া জরায়ু ফেটে যেতে পারে? আমার বাচ্চাটা মরে গেলো! যারে আমি আট মাস পেটে রেখেছিলাম। কতো গল্প যে করতাম ওর সাথে! কেনো এমন হলো? কেনো? প্রশ্ন করে মেয়েটি কাঁদতে থাকে। উত্তরের আশা না করেই। আমার মনখারাপ হয়ে যায়। গত এক সপ্তাহ ব্যপারটা নিয়ে আমি ভেবেছি। অতঃপর লিখতে বসলাম। শুধু মাহিনূর নয় আপনাদের ও জানা উচিত সেই লক্ষ্যে।
দুই ধরনের জরায়ু ফাটা কন্ডিশন আমরা পাই। পুরোপুরি ফেটে বাচ্চা জরায়ু থেকে বের হয়ে গেলে আমরা বলে রাপচার, সব ফেটে গেছে কিন্তু উপরের পাতলা পর্দাটা রয়ে গেছে তাকে বলে স্কার ডেহিসেন্স। স্কার ডেহিসেন্সে কোন সিম্পটম থাকে না। শুধুমাত্র শেলাইয়ে জায়গায় হাল্কা ব্যথা অনুভব হয়।
প্রথম ঘটনায় মা প্রসব বেদনায় ভুগেছেন অবর্ণনীয়। হয় বাচ্চা বড় ছিলো, না হয় জন্মপথ ছোটো ছিলো ফলে বাচ্চা বের হতে পারে নাই। ক্রমাগত বাচ্চা বের করার চাপে জরায়ু ফেটে গিয়েছিলো। রক্তপাত, শক, পেটের বাচ্চা পেটে নিয়েই মায়ের অন্তিম যাত্রা।
দ্বিতীয় ঘটনায় মা নিয়মিত চেকআপে ছিলেন। আগের বাচ্চা সিজারিয়ান তাই অপেক্ষা এ বাচ্চাও সিজার হবে। কিন্তু তীরে এসে তরী ডুবে গেলো কোনো রকম পূর্বাভাস না দিয়েই। এরকম হয়! হতে পারে!
হ্যাঁ হতে পারে। মাল্টিগ্রাভিড মা মানে পাঁচ সাতটা বাচ্চার মা। যাদের জরায়ুর নমনীয়তা কমে গেছে। কিংবা এক দুই বাচ্চার মা, যাদের আগে সিজারিয়ান ডেলিভারিতে সমস্যা হয়েছে, টি ইনসিশন মানে জরায়ু লম্বালম্বি কাটতে হয়েছে কিংবা যাদের অপারেশনের পর সেলাই ঠিকঠাক মতো জোড়া লাগে নাই, যাদের ইমার্জেন্সি সিজারিয়ান সেকশন লেগেছে কিংবা যাদের ফুল নিচে ছিলো সেজন্য সিজারিয়ান লেগেছে ইত্যাদি। কতো বলবো? তাদের জরায়ু ফেটে যেতে পারে। ভয়ংকর কথা হচ্ছে, দ্বিতীয় গ্রুপের জরায়ু ফাটার প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যথা বেদনা লাগে না। আস্তে আস্তে খাদের কিনারে আগায়। তারপর টুস করে ঢড়খাদে পড়ে যায়। এইতো।
তবে নিয়মিত চেকআপে থাকলে, প্রপার হিস্ট্রি নিলে, আল্ট্রাসাউন্ড করে স্কারের থিকনেস মানে সেলাইয়ের জায়গায় ঘনত্ব জেনে নিলে এবং অতি অবশ্যই হাসপাতালে ডেলিভারি করলে এই মৃত্যুগুলো রোধ করা সম্ভব। মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু আমার কাছে ক্রাইম মনে হয়। এই ক্রাইমের জন্য দায়ী সবাই। সবারই এগিয়ে আসা উচিত দায়মুক্ত হতে।
একটা আনন্দের খবর দিয়ে শেষ করছি। কিছুদিন আগেই এমন একটা কেইস করলাম। বাচ্চা ও মা খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভাগ্যিস একটা আল্ট্রাসাউন্ড করেছিলাম। গাইনী বিশেষজ্ঞদের আল্ট্রাসাউন্ড জানা আশীর্বাদ। রোগীদের জন্য তো বটেই তার নিজের জন্যও।
©
ডা. ছাবিকুন নাহার
এমবিবিএস (ঢাকা), বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এফসিপিএস (অবস.& গাইনী)
স্পেশাল ট্রেইনড ইন ইনফার্টিলিটি, আলট্রাসাউন্ড।
গর্ভবতী, প্রসূতি, স্ত্রী ও গাইনীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন,
আর এস, কেজিএইচ,
ঢাকা।
#চেম্বারঃ
কনকর্ড ডায়াগনস্টিক এন্ড মলিকুলার ল্যাব, নাভানা নিউবাড়ি প্যালেস, সোবহানবাগ, ঢাকা - ১২০৭
(ধানমন্ডি সাতাইশ এর সিগনাল এবং রাপাপ্লাজা সংলগ্ন, বাংলাদেশ ইএনটি হাসপাতাল এবং এম কে ইলেকট্রনিকস এর বিল্ডিং, লিফটের ৭)
#সময়- শনিবার, সোম, মঙ্গল ও বুধবার
বিকাল #চারটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত।
#সিরিয়ালের জন্য #হটলাইন_নাম্বার_10649
সিরিয়াল দেওয়ার সময়- সকাল সাড়ে আটটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত।
#বিঃদ্রঃ-
অনলাইন কনসাল্টেশন ও করা হয়। অনলাইন কনসাল্টেশনের জন্য #হোয়াটসঅ্যাপ 01974-808200 নাম্বার।
হোয়াটসঅ্যাপে কল নয়, মেসেজ করলে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
#পুনশ্চ
শুক্রবার সকাল দশটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত গ্রামের বাড়ি গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জের #শুকরিয়া হাসপাতালে রোগী দেখা হয়। শুকরিয়া হাসপাতালের সিরিয়াল- 01776077780