30/01/2025
লিভার সিরোসিস (Liver Cirrhosis) হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যেখানে লিভারের সুস্থ টিস্যু ধ্বংস হয়ে দাগ (scar tissue) পড়ে এবং লিভারের কার্যকারিতা কমে যায়। এটি সাধারণত ধীরে ধীরে হয় এবং লিভারের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুনরায় স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না।
কেনো হয়?
লিভার সিরোসিসের কারণগুলো সাধারণত লিভারের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির সাথে সম্পর্কিত। প্রধান কারণগুলো হলো:
1. অ্যালকোহল সেবন:
দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান লিভার কোষ ধ্বংস করে এবং সিরোসিসের কারণ হয়।
2. হেপাটাইটিস:
হেপাটাইটিস বি, সি, বা ডি ভাইরাস দীর্ঘস্থায়ী লিভার প্রদাহ ঘটিয়ে সিরোসিসের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
3. ফ্যাটি লিভার ডিজিজ:
অতিরিক্ত চর্বি জমে লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি হলে তা সিরোসিসের কারণ হতে পারে। এটি অ্যালকোহল-জনিত বা অ্যালকোহল-অজনিত উভয় ধরনের হতে পারে।
4. বিলিয়ারি ডিজিজ:
পিত্তনালীর সমস্যার কারণে লিভারের ক্ষতি হলে সিরোসিস হতে পারে।
5. অটোইমিউন লিভার ডিজিজ:
লিভারের কোষগুলোতে নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার আক্রমণ।
6. জেনেটিক কারণ:
কিছু বংশগত রোগ যেমন উইলসন ডিজিজ বা হেমোক্রোমাটোসিস লিভারে সিরোসিস ঘটাতে পারে।
7. ড্রাগ ও টক্সিন:
দীর্ঘমেয়াদে কিছু ওষুধ বা বিষাক্ত পদার্থ লিভার ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
লক্ষণ:
শুরুর দিকে সিরোসিসের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা নাও যেতে পারে। তবে যখন লিভারের ক্ষতি গুরুতর হয়, তখন দেখা দিতে পারে:
ক্লান্তি ও দুর্বলতা।
ত্বক ও চোখ হলুদ হওয়া (জন্ডিস)।
পেট ফোলা (অ্যাসাইটিস)।
পা ফোলা।
প্রস্রাবে রঙ পরিবর্তন।
মল কালো বা রক্তাক্ত হওয়া।
ক্ষুধামন্দা ও ওজন কমে যাওয়া।
মানসিক বিভ্রান্তি (হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি)।
চিকিৎসা:
লিভার সিরোসিস পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব নয়। তবে সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে এর অগ্রগতি ধীর করা যায়:
1. মূল কারণ নির্ণয় ও চিকিৎসা:
হেপাটাইটিসের চিকিৎসা।
অ্যালকোহল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা।
2. ওষুধ:
প্রদাহ কমানো এবং জটিলতা প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়।
3. ডায়েট ও লাইফস্টাইল:
লবণ খাওয়া কমাতে হবে।
পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
4. শেষ পর্যায়ে লিভার প্রতিস্থাপন (Liver Transplant):
যদি লিভার সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে যায়, তখন এটি প্রয়োজন হতে পারে।