01/10/2020
০২.১০.২০২০ টিএ আড্ডা বিষয়: রাবারবেন্ড: সকল দুঃখ-কষ্টের কারণ। সন্ধ্যা ৭.৩০। সকলের জন্য উন্মুক্ত। লিংক TA Adda Link Sharing মেসেঞ্জার গ্রুপে
️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️
২৫.৯.২০২০ এর প্রতিবেদন। লিখেছেন কয়েকজন।
♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️
গত শুক্রবারের সেশনের ঘোষিত বিষয় ছিল নোঙর করা। তবে সঞ্চালকের অঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল ‘আমি’ থেকে ‘আমরা’ হয়ে ওঠা। সেশনে আমরা সকলে কাজ করেছি। প্রতিবেদনও আমরা অনেকে লিখেছি। পাঠক, আপনিই বলুন, যারা কাজ করেছেন, অবদান রেখেছেন, তাঁরা প্রত্যেকে ‘আমি’কে ছাড়িয়ে ‘আমরা’ হয়ে ওঠার অনুশীলন করেছেন কি-না? অভিনন্দন আমাদেরকে।
♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️
প্রতিবেদনে মারজানা Marzana Rashid লিখেছেন ♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️
কেপিকে ধন্যবাদ।
২৫.৯.২০২০ টিএ আড্ডার বিষয় ছিলো এন.এল.পি-র এনকোরিং। আড্ডার শুরুতে আমরা এনকোরিং কি এবং কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে আলোচনা করি এবং এরপর আমরা নিজেদের অতীত স্মৃতি থেকে নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য শক্তি নেয়ার জন্য এনকোরিং করি। অতীত স্মৃতিতে গিয়ে কার কি অনুভুতি হলো সেটা শেয়ারিং হয়। আমরা অনেকেই এমন অনেক কিছু অনুভব ও অনুধাবন করি যা আমরা আগে কখনো খেয়ালই করিনি।
বহু এএলপি সেশনে যোগদানের অভিজ্ঞতা থেকে আমার মনে হয়, কেপির এনএলপি সেশন ওয়ান্ডারফুল। কেপি তাঁর সেশনে মানুষকে অনেক বেশি কানেকটেড করতে পারেন। মানুষ কানেকটেড ফিল করে। কেপিকে ধন্যবাদ।
♦️♦️️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️
ডা. অসীম Ashim Kanti Roy লিখেছেন ♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️
আটকে পড়া শিশুর মুক্তির স্বাদ।
তখন জানতাম না, এমনি করে কোন এক শুক্রবারের আড্ডার ‘নোঙর করা’ সেশনে সুরমা নদীর পাড়ে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার গবিন্দনগরের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। মুক্তশিশুর অনুভূতি নিয়ে। একটি বাড়ি। সামনের উঠোন পেরোলে নদী, পেছনের উঠোন পেরোলে পুকুর, তারপর মাঠ, মাঠের যেন শেষ নেই। গাছ, ঘাস, শস্য, ফুল আর ফল। সকলে মিলেমিশে যেন এক সোনার সংসার। আমি যখন যেখানে গিয়েছি, এরা আমার সাথে সাথে রয়েছে।
কোলকাতা শহরের শীতহীন শীতের সকালে আমার বাড়ির পেছনের বারান্দায় বসে আজও গায়ে শিহরণ জাগে, গায়ের ছোট্ট নদীটি সামনে ভেসে উঠে। আবার, বর্ষাকালে আকাশ অন্ধকার করা প্রচণ্ড বৃষ্টির দিনে যখন বারান্দায় বসি তখন আম গাছটি আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। গাছটি এর ডালে বসে বৃষ্টির শব্দ শুনতে আহ্বান করে।
এদের ভালবাসার আহ্বানে প্রতিবারই আমার চোখে জল আসে। অপূর্ব এক অনুভূতিতে আমার মন ভরে ওঠে। এভাবে হাসি-কান্নার পরশ নিয়ে আমি আর আমার শৈশবস্মৃতিরা গোপন মনে নিজেদের মধ্যে ভালই ছিলাম। হঠাৎ কেপি এনকোরিং সেশনে সকলের মাঝে আমাদের রূদ্ধ দুয়ার উন্মুক্ত করে দিলেন। এই প্রথম এরা বাইরে এল। এ যেন আটকে পড়া মুক্ত শিশু নতুন করে মুক্তির স্বাদ পেল। ধন্যবাদ সেশনের সকলকে। কৃতজ্ঞতা কেপির কাছে।
♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️
হাসিনা আখতার Hasina Akter লিখেছেন ♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️
কাঁঠালচাপার নোঙর
রাতের আঁধার কেটে ভোরের আধো আধো আলো আসতেই আব্বা জানালা খুলে পর্দা সরিয়ে দিতেন। সকালের বাতাস সুস্থতার জন্য জরুরী । রাতের প্রশান্তির ঘুম শেষে দিনের প্রথম কাজ প্রকৃতি রূপ দেখা। আমরা দুই বোন বেরিয়ে পড়তাম। শিশির ভেজা রাস্তায় একচ্ছত্র আধিপত্য থাকত। ভোরের সজীব হাওয়ায় প্রথম ফোঁটা গোলাপ ও পদ্ম ফোঁটা দৃশ্য দেখার সৌন্দর্য উপভোগ করতাম। একরাশ ভালোবাসা নিয়ে দিন শুরু হত। বাড়ির পাশে ছিল এক হিন্দু ব্রাহ্মণ বাড়ি। তাদের বিশাল বাগান বাড়ির একপাশে ছিল শান বাঁধানো পুকুর পাড়। পাশেই ছিল কাঁঠাল চাপা ফুলের গাছ। ঝড়া ফুল পানিতে ভাসমান অবস্থায় অসম্ভব সুন্দর লাগতো। শৈশবের সেই ভালোলাগা যে আমার ভালো থাকার প্রেরণা হয়ে উঠবে আমি বুঝতেই পারিনি। নোঙর সেশনটি আমাকে সেই অনুভূতি আবার ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি কাঁঠালচাপার সাথে নোঙর করেছি। চোখ বন্ধ করে আমি এখন কাঁঠালচাপার গন্ধ পাই। আমি কাঁঠালচাপাকে ভালোবাসি। সকলকে কাঁঠালচাপার শুভেচ্ছা।
(এলবামে দেখুন, তাঁরই পাঠানো কাঁঠালচাপা ফুঁটেছে)।
♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️
ফাহমিদা Fahmida Yeasmin লিখেছেন ♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️
বাবাকে দেখতে পাচ্ছিলাম
অতীত শক্তির স্মৃতির সাথে নোঙর করতে গিয়ে আমি আমার বাবাকে দেখতে পাচ্ছিলাম । বাবা অফিসে যাবার সময় অর্ধেকটা ভাত খেতেন আর অর্ধেকটা আমাদের জন্য রেখে দিতেন । আমরা ভাই-বোনরা বাবার প্লেটের ভাত খাবার জন্য অস্থির হয়ে থাকতাম। বাবা আমাকে স্ংগ্ৰাম করতে শিখিয়েছেন । আমাকে সবসময় বলতেন, মেয়েদের শিক্ষিত হওয়াটা খুব জরুরি। মেয়েদের স্বাবলম্বীও হতে হবে । আমি আজ চাকরি করছি । উপার্জন করছি । শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী দুটোই হয়েছি। কিন্তু বাবা নেই । বাবা যদি বেঁচে থাকতেন অনেক খুশি হতেন।
♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️
রোকসানা Ruksana Begum লিখেছেন ♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️
আমি পারবো
০৫ মাস ১৫ দিন মা কে দেখিনা। গত শুক্রবারের এ্যানকেরিং সেশনে কেপি যখন স্মৃতি থেকে শক্তি সংগ্রহ করতে বললেন, তখনও ভালোমত বুঝতে পারিনি, আমি আসলে কী করতে যাচ্ছি। একটা সময় অনুভব করতে পারলাম মা-আব্বা দুজনেই আমার কাছে এসে বসলেন। বললেন, আমরা ভালো আছি... সেই আগের মত। স্নেহভরা চুমু দিয়ে বললেন, তুমি কেন এমন করছো, মা? তুমি সোজা হয়ে দাঁড়াও, সামনে এগিয়ে যাও, তুমি পারবে। তুমি ভালো থাকলে আমাদের শান্তি লাগবে। আগের মতই সাহস আর শক্তি দিয়ে আমাকে এগিয়ে যেতে বললেন।
মা শেষ সময়টাতে যখন কথা বলতে পারতেন না, শুধু প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে আমার হাতটা চেপে নিজের বুকের মধ্যে চেপে রেখে চুপ হয়ে যেতেন, সেই চাপ এখনো আমাকে শক্তি দেয়। মা-বাবা আমার শক্তি হয়েই থাকবেন আমার বাকী জীবন। আমি পারবো। এই অনুভূতি অনুভব করতে করতে সবার সামনে প্রকাশ্যে ব্যকুল হয়ে কেঁদেছি। কে দেখছে, কি ভাবছে, সেটা নিয়ে ভাবিনি। আমি নিজেকে প্রকাশ করতে পেরেছি। শক্তি নিয়েছি। উপলব্ধি করেছি, আমি পারবো।
♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️
সাজ্জাদ Md. Sazzad Hossain লিখেছেন ♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️
আমার ঘুরে দাঁড়ানোর দিনগুলো
নোঙর সেশন করতে গিয়ে আমার মনের পুঞ্জিভূত কষ্ট কান্নার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। জীবনে চলার পথে অনেক সংগ্রামের কথা ভেসে উঠেছে। এতে নিজেকে অনেক হাল্কা মনে হচ্ছে। ঢাকার রাস্তায় যখন উদাসীন মনে হাঁটতাম তখন নিজেকে বড় অসহায় মনে হতো। এমনই এক সময় আমার এক জুনিয়র ভাই বললো, কিছু একটা নিয়ে শুরু করতে। আমিও তাই করেছিলাম। সেই যে কিছু একটা করার মন্ত্র, তা আজ আমাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে এসেছে। সেই উদাসীন মনের কষ্টগুলো কখনও পুরোপুরি মনে পড়তো না। নোঙর আমাকে সেখানে নিয়ে যেতে পেরেছে। আমি আমার ঘুরে দাঁড়ানোর দিনগুলোতে আবার নোঙর করতে পেরেছি। কেপিকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️
মিলি বেগম Mili Begum লিখেছেন ♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️
“তোমরা ভুলেই গেছো মল্লিকাদির নাম।”
গানটি শোনার সাথে সাথে যে মুখটি ভেসে উঠে তিনি হলেন আমার লাভলি আপা,আমার পাড়াতুতো বড় বোন, আমার বন্ধু, আমার গাইড, আমার প্রেরণা।
ছোটবেলা সময়ে অসময়ে ছুটে যেতাম ঐ বাড়িটায় যেখানে থাকতেন আমার লাভলি আপা। যে বাড়ির বাগানে আমায় নিয়ে চড়ুইভাতির আয়োজন করতেন, চড়ুইভাতি শেষে বিকালে আপাদের উঠানেপাল্লা দিয়ে দড়ি-লাফানো (স্কিপিং), দাড়িয়া-বাঁধা, গোল্লাছুট, আরোও কত কি। তিনি ছিলেন আমার সকল খেলার সাথী।
একটু বড় হ্ওয়ার পর আপা বললেন ভাল রেজাল্ট করতে হলে পড়তে হবে। রুটিন করে পড়া, দায়িত্ব-কর্তব্য, বিপদে ধৈর্য্য ধরা সবই আমি তার কাছ থেকে শিখি। এই শিক্ষা যেমন আমায় বড় বড় সমস্যা ধৈর্য্য ধরে মোকাবেলা করতে সহায়তা করেছে তেমনি সহায়তা করছে দুই সন্তানকে ভালোভাবে মানুষ করতে ।
আমার পড়াশুনা, আমার কাজ, আমার সংসারজীবনের সর্বক্ষেত্রে যার নির্দেশনা ছিল তিনি হলেন আমার মেজভাই। জীবন চলার পথে প্রতিটি কাজে তার দিকনির্দেশনা আমায় এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। সুখ- দুঃখে সর্বক্ষেত্রে তার সহায়তার হাতটি বাড়িয়ে রাখেন সবসময়। তার কাছে গেলে উদ্বুদ্ধ হই। নতুন করে কাজ করার প্রেরণা পাই। তার নির্দেশনা না পেলে হয়ত এই সেশনেও আমার থাকা হতোনা। তার পরামর্শেই আমি টিএ-১০১ করেছিলাম।
আমার জীবনে রিসোর্স পার্সনদের মধ্যে কেপিও একজন। আমি তাঁর কাছ থেকে শিখেছি নিজের জন্য ভাবতে আর নিজেকে ভালবাসতে। শিখেছি নতুন করে স্বপ্ন দেখতে, কাজ করতে। ধন্যবাদ কেপি। আপনার নোঙর সেশনে এসে আজ আমার এতাসব কথা মনে হলো। শক্তি পেলাম।