24/10/2024
নিজের কাছে আপনি নিরাপদ তো!
তুমি মোটা, তুমি কালো, তুমি অপদার্থ, তুমি অলস, তুমি অযোগ্য, তুমি দুর্বল, তুমি পাগল, তুমি অসুন্দর, তুমি গুরুত্বহীন, তুমি ভালবাসার যোগ্য নও, তুমি ভাল কিছু পাবার যোগ্য নও, তোমাকে নিখুঁত হতেই হবে......
শৈশব কৈশোর হতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই কথাগুলো অন্যের কাছে শুনতে শুনতে কখন যেন এগুলো আমাদের নিজের কথা হয়ে যায়। এই কথাগুলোই আমরা বিশ্বাস করতে থাকি। অন্যের কণ্ঠস্বরগুলো নিজের কণ্ঠস্বর হয়ে সবগুলো "তুমি" নিজের অলক্ষেই "আমি" হয়ে যায়। আমি মোটা, আমি কালো, আমি অপদার্থ, আমি অযোগ্য, আমি গুরুত্বহীন, আমি দুর্বল, আমি অসুন্দর, আমি ভাল কিছু পাবার যোগ্য নই, আমাকে নিখুঁত হতেই হবে.....।
একসময় অন্যরা এই কথাগুলো বলা বন্ধ করলেও নিজের ভেতরের কণ্ঠস্বরগুলো থেমে থাকে না। কোন কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে ভেতরের এই কণ্ঠস্বরগুলো তীব্রতর হয়। আর আমাদের যত অশান্তি ও মানসিক পীড়নের উতস আসলে এখানেই।
যদি আপনার ভেতর থেকে এই ধরনের একটাও নেতিবাচক মন্তব্য এসে থাকে তাহলে ধরে নিতে পারেন নিজের কাছে আপনি নিরাপদ নন। আর যে নিজেই নিজের কাছে নিরাপদ নয়, সে অন্যের আবেগীয় নিপীড়ন থেকে নিজেকে কিভাবে রক্ষা করবে! ধরুন আমি নিজেই যদি সারাক্ষণ নিজেকে অযোগ্য বা দুর্বল বলি তাহলে অন্য কেউ আমাকে অযোগ্য বললে বা বিভিন্ন আচরণের মাধ্যমে ইংগিত দিলে আমি মানসিকভাবে অনেক বেশি ভেঙে পড়ব। কিন্তু আমি যদি নিজেকে দুর্বল, অযোগ্য মনে না করি তাহলে অন্যদের এই ধরনের কথায় সাময়িকভাবে মন খারাপ হলেও আমি ভেঙে যাবো না। আমি যদি নিজেকে পছন্দ করি, যোগ্য ও সুন্দর মনে করি তাহলে অন্য কেউ আমাকে মোটা, কালো, অসুন্দর, অযোগ্য বললেও আমি ভেঙে যাবো না।
তাই আপনার ভেতরের কণ্ঠস্বরকে (inner voice) বলুন আজ থেকে ইতিবাচক ও যৌক্তিক কিছু বলতে। এতদিন তো অন্যের শেখানো কথাগুলো বলে আপনাকে অনেক আঘাত দিয়েছে! আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করেছে! আর কত!
আজ এই মুহুর্ত থেকে বলতে থাকুন-
আমি গুরুত্বপূর্ণ,
আমি যোগ্য,
আমি সুন্দর।
আমি নিজেকে অন্য কারো সাথে তুলনা করি না,
আমি যেমন তেমনই নিজেকে ভালবাসি।
আমি একজন মানুষ, প্রতিটি মানুষেরই কিছু খুঁত বা ত্রুটি থাকে, এবং আমারো কিছু ত্রুটি আছে।
যেসব ভুলত্রুটি শুধরে নিজেকে পরিবর্তের সুযোগ আছে আমি চাই এবং চেষ্টা করি সেগুলো পরিবর্তনের, কিন্তু মরিয়া হয়ে উঠিনা।
যেসব ত্রুটির পরিবর্তন সম্ভব নয় সেগুলো আসলে আমার ত্রুটি নয়, বরং সেগুলোই আমাকে অনন্য করেছে।
আর সেগুলোর কারণেই আমি আমিই, আমি অন্য আরেকজন নই।
আমি গুরুত্বপূর্ণ
আমি অনন্য
আমি নিজের কাছে, নিজের ভেতরে নিরাপদ।
লিখেছেন: রাউফুন নাহার, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট, সহকারী অধ্যাপক, এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ, ঢাবি