12/10/2020
১২ টি বায়োকেমিক হোমিওপ্যাথিক ঔষধ - কোষ লবণ বা টিস্যু লবণ
===========================================
হোমিওপ্যাথি্ ঔষধের মধ্যে যে ইনঅর্গানিক মিনারেল সল্টস আছে তা কোষ লবণ বা টিস্যু লবণ নামে পরিচিত। হোমিওপ্যাথিতে, এই কোষ লবণ কে বায়োকেমিক হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন বলা হয়। এই বারোটি টিস্যু লবণ খনিজ থেকে উদ্ভূত যা মানব টিস্যুতে পাওয়া যায়।
এই বারোটি খনিজ শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে শক্তিশালী করতে এবং নিখুঁতভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এই টিস্যু কোষ একটি সুস্থ শরীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই খনিজ থেকে ট্রাইটুরেশন পদ্ধতিতে ঔষধ শক্তিকৃত করে বায়োকেমিক ওষুধ তৈরী হয়। এটি শরীরের স্বাস্থ্য মেরামত ও সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
এই বারোটি খনিজ লবণ এর সবগুলোতেই সোডিয়াম, পটাশিয়াম, এবং ক্যালসিয়াম যৌগ আছে।
আমরা বিভিন্ন মৌলিক পার্থক্যের ভিত্তিতে এগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ করতে পারি-
১।ক্যালসিয়াম গ্রুপ (ক্যালকেরিয়া). (Calcarea)
২।সোডিয়াম গ্রুপ (নাট্রাম) (Natrum)
৩।পটাশিয়াম গ্রুপ (কালী). (Kali)
৪।ম্যাগনেসিয়াম গ্রুপ (ম্যাগ)(Mag)
৫।ফেরাম গ্রুপ (আয়রন). (Iron)
৬। সিলিকা / সিলিসিয়া/সাইলিশিয়া (Silicea)
এই ছয়টি ভাগে এগুলো শ্রেণীবদ্ধ হয়েছে বলে খুব সহজে মনে রাখা যায়।
এবার প্রথমে দেখা যাক বায়োকেমিক ওষুধের মূল উদ্দেশ্য কি?
কিভাবে এবং কে এই হোমিওপ্যাথি বায়ো-মেডিসিন আবিষ্কার করেছেন।
বায়োকেমিক সিস্টেম অব মেডিসিন, বা বায়োকেমিক মোড অব ট্রিটমেন্ট,
Bio = Biological - জীব বা প্রাণ সম্মন্ধীয়, এবং Chemic = Chemical, বা body chemistry related,
বায়োকেমিক হোমিওপ্যাথিক ওষুধ (Wilhelm Heinrich Schüßler) উইলহেল্ম হাইনরিশ শুলার নামে পরিচিত একজন জার্মান মেডিকেল ডাক্তার । ১৮২১ সালের ২১ শে আগস্ট জন্মগ্রহণকারী ডঃ শুয়েসলার হিসেবে তার নাম উচ্চারণ করা যায়।
তিনি এই ১২টি প্রাকৃতিক প্রতিকার খুঁজে পেতে বায়োকেমিক সেল বা লবণ এর উপর তার গবেষণা করেন। ১৮৭৩ সালের মার্চ মাসে জার্মান হোমিওপ্যাথিক জার্নালে তার গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয় যাতে ১২টি হোমিওপ্যাথি লবণ পাওয়া যায়। এই লবণ তাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়, যারা বিকল্প ঔষধ এ আকর্ষণ করে।
এই বারোটি বায়োকেমিক হোমিওপ্যাথিক ওষুধ হলো-
১।ক্যালসিয়া ফস (ক্যালসিয়াম ফসফরিকা) (Calcium phosphorica).
২।ফের্রাম ফস (ফেরাম ফসফরিকা) (Ferrum phosphorica)
৩।নাট্রাম ফস (নাট্রাম ফসফরিকাম) (Natrum phosphoricum).
৪।ম্যাগ ফস (ম্যাগেনিয়া ফসফরিকা) (Magnesia Phosphorica)
৫।ক্যালী ফস (কালী ফসফরিকা) (Kali phosphorica).
৬।ক্যালী সালফ (কালী সালফিউরিকা) (Kali sulphurica)
৭।ক্যালসিয়া সালফ (ক্যালসিয়াম সালফেট) (Calcium Sulphate)
৮।নাট্রাম সালফ (নাট্রাম সালফিউরিকাম) (Natrum Sulphuricum)
৯।ক্যালী মুর (কালী মুরিয়াটিকম) (Kali Muriaticum)
১০।ন্যাট মুর (নাট্রাম মুরিয়ানিয়াম) (Natrum Muriaticum)
১১।ক্যালসিয়া ফ্লোর (ক্যালসিয়াম ফ্লোরাটাম) (Calcium Fluoratum)
১২।সাইলিশিয়া (Silicea)
কোন কোষ এ লবণের অভাবে রোগ তৈরিতে নেতৃত্ব প্রতিরোধ এর দক্ষতা কমিয়ে দেয়। যখন আমাদের শরীর একটি নির্দিষ্ট টিস্যু লবণ এর অভাব দেয় তখন সেই রোগ দেখা দেয় ।
হোমিওপ্যাথিক বায়োকেমিক ওষুধও হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মতো একইভাবে নিরাপদ। সেই কারণে যে কোন ব্যক্তি এমনকি শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্করাও এই হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রতিকারক হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।
এবার আসি কিভাবে বায়োকেমিক হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন এর ডোজ নিতে হয়?
এই ১২ টি বায়োকেমিক ঔষধ হোমিওপ্যাথিক ঔষধ এর মতো তরল হিসাবে ও পাওয়া যায়।
কিন্তু সাধারণত এর পাউডার এবং ট্যাবলেট ফর্ম 3x 6x 12x 30x 200x করা হয়।
যেহেতু অপরিশোধিত পদার্থ trituration মধ্যে বেশি, দ্রুত এবং ভাল ফলাফল প্রদর্শন করে তাই আমরা রোগীর লক্ষন ভেদে দুটি/চারটি ট্যাবলেট বা ৪-৫ ফোঁটা হিসাবে ডোজ হিসাবে দিতে পারি যা রোগীর অবস্থা এবং রোগের তীব্রতার উপর নির্ভর করে। প্রতিটি কেসই আলাদা আলাদা যেহেতু হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা প্রক্রিয়া Like Cure Like Principle উপর কাজ করে। হোমিওপ্যাথি এবং হোমিওপ্যাথিক সিস্টেম কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে বেশি বেশি পড়ুনও জানুন।
নিম্নলিখিত নির্দেশিকা গুলি আপনাকে ডোজের হিসাব খুঁজে পেতে সাহায্য করবে-
প্রতি ১০-১৫ মিনিট অন্তর ডোজ পুনরাবৃত্তি করুন, শুধুমাত্র গুরুতর এবং বেদনাদায়ক ক্ষেত্রে।
১-২ ঘন্টার মধ্যে পুনরাবৃত্তি ডোজ কিন্তু শুধুমাত্র তীব্র ক্ষেত্রে।
৩/৪ দিনে শুধুমাত্র দীর্ঘস্থায়ী অসুখে
উপযুক্ত দৈনন্দিন কেসের জন্য নিন্ম ক্ষমতা ট্রাইটুরেশন ব্যবহার করুন।
বেশির ভাগ অনুশীলনকারীরা শুধুমাত্র 3x এবং 6x , Silicea12x বায়োকেমিক ঔষধ ব্যবহার করার পরামর্শ দেন । তবে এটা রোগীর রোগের অবস্থা ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ঔষধের পাওয়ার এবং ডোজ এর সময় নির্ধারণ হয়।
ক্যালক্যারিয়া ফ্লোর (Calcaria Flourica)
রাসায়নিক সংকেত – CaF2
ক্যালসিয়াম ফ্লোরাইড যাকে ফ্লোরস্পোর বলা হয়। ক্যালসিয়াম ফ্লোরাইডের ব্যবহার
ক্যাল- ফ্লোর অনেক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় যেমন-
ভ্যারিকোজ শিরা
পেশী চাপ
দাঁতের ক্ষয়
ফাটা চামড়া
আহত লিগামেন্ট
অস্টিওমালাসিয়া
অস্টিওপরোসিস
ক্যালক্যারিয়া ফস (Calcarea Phosphoricum)
রাসায়নিক সংকেত – Ca3(PO4)2
ক্যালসিয়াম ফসফরিকাম, ক্যালক ফস এবং ক্যালসিয়াম ফসফেট নামে পরিচিত।
এটা হাড়ের স্বাস্থ্য এবং হাড়ের পুনরুত্থানের জন্য খুবই সহায়ক।
ক্যালক ফস হোমিওপ্যাথিক ঔষধ হাড় শক্তিশালী এবং দাঁত প্রক্রিয়া সহায়তা সহ হাড় এর সঠিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
যদি হাড় দুর্বল এবং ফাটল বা ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় হয় তাহলে ক্যালক ফসফেট এই ধরনের রোগীদের জন্য উপকারী। এটা অস্টিওপরোসিস চিকিত্সাতেও সাহায্য করে।
রক্তাল্পতা রোগী, গর্ভবতী মহিলা, নবজাতক শিশু, এবং দাঁত প্রক্রিয়া শুরু করা শিশুরা এই ক্যালসিয়াম ফসফরিকাম হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার থেকে একটি সুবিধা পেতে পারে। এটি শরীরকে শক্তিশালী করতে এবং দুর্বলতা প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে সাহায্য করে।
ক্যালক্যারিয়া সালফ (Calcarea Sulphuricum)
পরিচয়ঃ ক্যালসিয়াম সালফেট। জিপসাম। প্লাস্টার অব প্যারিস। রাসায়নিক সংকেত – CaSO4H2O
প্রয়োগক্ষেত্রঃ ফোঁড়া, কার্বাঙ্কল, পুঁজযুক্ত ব্রণ, পোড়া ঘা, চুলকানি, ফিশ্চুলা, গ্রন্থিস্ফীতি, স্নায়বিক দুর্বলতা, জনন ইন্দ্রিয়ের দুর্বলতা, পরিবর্তনশীল মানসিকতা, পায়ের তালুতে জ্বলন এবং চুলকানো, অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ খাওয়ার পরে শারিরীক দুর্বলতা।
ফেরাম ফস (Ferrum Phosphoricum)
পরিচয়ঃ ফেরোসো ফেরিক ফসফেট। ফসফেট অব আয়রন। রাসায়নিক সংকেত – Fe3(PO4)2
প্রয়োগক্ষেত্রঃ অ্যানিমিয়া, রক্তপাতের ফলে রক্তাল্পতা, নাড়ির গতি দ্রুত, মাথার যন্ত্রণা, জিভের প্রদাহ, জিভ লেপাকৃত অথবা রক্তাভ, অক্ষুধা, দেহের ওজন এবং শক্তি হ্রাস পাওয়া, শিশুদের মানসিক ও দৈহিক বল হ্রাস, শীর্ণতা, ক্ষুধামান্দ্য।
ক্যালি মিউর (Kali Muriaticum)
পরিচয়ঃ পটাশিয়াম ক্লোরাইড। রাসায়নিক সংকেত – KCl
প্রয়োগ ক্ষেত্রঃ হার্টের দুর্বলতা, বুক ধড়ফড় করা, হৃদপিণ্ড বৃদ্ধি পাওয়া, পেরিকার্ডাইটিস, থ্রম্বোসিস (এম্বলিজম), গ্রন্থি বৃদ্ধি, ফুসফুস প্রদাহ, নিউমোনিয়া, পিত্ত নিঃসরণ কম হওয়ার ফলে অজীর্ণ, অক্ষুধা, গতক্ষত, লিভারের দুর্বলতা।
ক্যালি ফস (Kali Phosphoricum)
পরিচয়ঃ পটাশিয়াম ফসফেট। রাসায়নিক সংকেত – K2HPO4
প্রয়োগক্ষেত্রঃ মানসিক দুর্বলতা, মানসিক বিপর্যয়, মানসিক অবসাদ, মানসিক কারণে মাথার যন্ত্রণা, মস্তিষ্কের দুর্বলতা ও অবসাদ, পেটে বায়ু এবং সে কারণে হৃদপিণ্ডের অপক্রিয়া, দুর্গন্ধযুক্ত পায়খানা, উঠে দাড়ালে মাথা ঘোরা, সেরিব্রাল অ্যানিমিয়া, জননাঙ্গের দুর্বলতা।
ম্যাগ ফস (Magnesia Phosphoricum)
পরিচয়ঃ ম্যাগনেসিয়াম ফসফেট। রাসায়নিক সংকেত – MgHPO4, 7H2O
প্রয়োগক্ষেত্রঃ বিভিন্ন প্রকারের ব্যথা ও যন্ত্রণা, মাথা যন্ত্রণা, পেটে ব্যথা, স্নায়ু শূল, স্প্যাজমোডিক পেন, স্মৃতিশক্তিহীনতা, চিন্তাশক্তির দুর্বলতা, স্নায়বিক দুর্বলতা, দাঁড়ানো অবস্থায় এবং চলতে চলতে মলমূত্র ত্যাগের ইচ্ছা। এই ওষুধ স্নায়ুকোষে পুষ্টি জোগায়।
ন্যাট্রাম মিউর (Natrum Muriaticum)
পরিচয়ঃ সোডিয়াম ক্লোরাইড। সাধারণ লবন। রাসায়নিক সংকেত – NaCl
প্রয়োগক্ষেত্রঃ নুন বেশি খাওয়ার প্রবণতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথা যন্ত্রণা (হাঁপানি সহ), সর্দি কাশির প্রবণতা, হাঁচি, নাক দিয়ে কাঁচা জল পড়া, হিস্টিরিয়া, সংজ্ঞালোপ, টাইফয়েড, জ্বরে প্রলাপ বকা, পেটে শূল বেদনা, লিভারের গোলযোগ, বোধ শক্তির অভাব, কৃমি, মস্তিষ্কের দুর্বলতা।
ন্যাট্রাম ফস (Natrum Phosphoricum)
পরিচয়ঃ সোডিয়াম ফসফেট (Na2PO4)
প্রয়োগক্ষেত্রঃ অম্লরোগ, পাকস্থলী এবং অন্ত্রের গোলযোগ, শিশুদের অতিরিক্ত দুধ খাওয়ানোর ফলে ল্যাকটিক অ্যাসিড বৃদ্ধি পাওয়া, গণোরিয়া জিভে হালকা প্রলেপ, বুকের বাঁ দিকে ব্যথা (নিপল এর নিচে), ডান কাঁধে বাত জনিত ব্যথা, স্বপ্ন দোষ ব্যতিত ধাতুক্ষয়, অপথ্যালমিয়া, কান থেকে রস পড়া।
ন্যাট্রাম সালফ (Natrum Sulphuricum)
পরিচয়ঃ সোডিয়াম সালফেট। গ্লুবারস সল্ট (Na2SO4), (10H2O)
প্রয়োগক্ষেত্রঃ গ্যাসট্রাইটিস, পেটে বায়ু, পেটে ব্যথা, লিভারের গোলমাল, নখের গোড়ায় প্রদাহ এবং পুঁজ, অবসাদ, তন্দ্রালুতা, আঁচিল – চোখের চারপাশে, মাথায়, মুখে, বুকে ও মলদ্বারে। নেফ্রাইটিস, মেরুদন্ডে ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, সেক্রামে ব্যথা।
সাইলিশিয়া (Silicea)
পরিচয়ঃ সিলিকা। সিলিসিক অক্সাইড (SiO2)
প্রয়োগক্ষেত্রঃ রিকেট, বাতরোগ, প্রস্টেট গ্ল্যাণ্ডের বৃদ্ধি, মধ্য কর্ণের প্রদাহ, দেহের কোথাও পূঁজ, গেঁটে বাত, কোষ্ঠাকাঠিন্য, অম্ল, অজীর্ণ, পুরানো কাশি।