Diet & Discipline

Home
Bangladesh
Dhaka
Diet & Discipline

Dietitian🥼
Expert on Diet & Nutrition👩‍⚕️
For Online Consultation Send Message 🩺

📩 Email: dietdiscipline@gmail.com

18/10/2025

ক্যান্সার ও পুষ্টি: কেমোথেরাপির সময় ও পরে খাওয়ার কৌশল

⸻

🌸 ভূমিকা

ক্যান্সারের চিকিৎসা চলাকালীন — বিশেষ করে কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপির সময় — শরীরের শক্তি, ক্ষুধা, ও স্বাদের অনুভূতিতে বড় পরিবর্তন আসে।
এই সময় খাওয়া শুধু পেট ভরানোর বিষয় নয়, বরং শরীরকে শক্ত রাখা, সংক্রমণ প্রতিরোধ করা এবং কোষ পুনর্গঠনে সহায়তা করার জন্য পুষ্টি দেওয়া জরুরি।

অনেকেই বলেন, “খাবারের গন্ধে মন খারাপ লাগে”, “কিছুই ভালো লাগে না”, “সব খাবারের স্বাদ বদলে গেছে।”
এসব একদম স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। তাই খাওয়ার ধরন ও খাবার বেছে নেওয়ার কৌশল কিছুটা বদলানো দরকার।

⸻

🍽️ স্বাদের পরিবর্তন (Taste Changes)

কেমোথেরাপির ওষুধ মুখে ও জিহ্বায় প্রভাব ফেলে। ফলে ধাতব স্বাদ, তিক্ত বা ফাঁকা স্বাদ অনুভূত হতে পারে। কারও কাছে প্রিয় খাবার হঠাৎ অপছন্দ হয়ে যেতে পারে।

👉 যা করা যেতে পারে:
• ধাতব স্বাদ এড়াতে স্টিলের বদলে প্লাস্টিক বা কাঠের চামচ ব্যবহার করা যেতে পারে।
• লেবুর রস, আদা, পুদিনা বা ভিনেগার স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে (যদি মুখে ঘা না থাকে)।
• ঠান্ডা বা হালকা গরম খাবার খেলে গন্ধ ও স্বাদ দুটোই সহনীয় হয়।
• খুব গরম বা বেশি মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলা ভালো।

⸻

🤢 বমি বমি ভাব ও বমি (Nausea & Vomiting)

কেমোথেরাপির সময় সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা হলো বমি বা বমি বমি ভাব।
এটি নিয়ন্ত্রণে খাবারের তাপমাত্রা, গন্ধ, এবং পরিমাণ অনেক ভূমিকা রাখে।

👉 যা করা যেতে পারে:
• একবারে বেশি না খেয়ে দিনে ৫–৬ বার অল্প অল্প করে খাওয়া।
• খাওয়ার আগে বা পরে গভীর শ্বাস নেওয়া ও কিছুটা বিশ্রাম নেওয়া।
• আদা চা, আদা টুকরো, বা পুদিনা পানি অনেকের ক্ষেত্রে উপকারী প্রমাণিত হয়েছে।
• তীব্র গন্ধযুক্ত রান্না (যেমন পেঁয়াজ-রসুনভাজা) এড়িয়ে চলা ভালো।
• চিকিৎসকের পরামর্শে দেওয়া অ্যান্টি-নসিয়া ওষুধ নিয়মিত নেওয়া দরকার।

⸻

💪 প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা

ক্যান্সারের চিকিৎসায় শরীরের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, পেশি ভর (muscle mass) কমে যায়। তাই প্রোটিনের চাহিদা বেড়ে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত প্রোটিন পেলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়, সংক্রমণ কমে, এবং ক্লান্তি হ্রাস পায়।

👉 যা করা যেতে পারে:
• ডিম, দুধ, দই, পনির, ডাল, মাছ, মুরগি, সয়া পণ্য ভালো প্রোটিনের উৎস।
• মুখে ঘা বা গিলতে কষ্ট থাকলে স্মুদি, মিল্কশেক বা স্যুপ আকারে নেওয়া যেতে পারে।
• প্রতিদিনের খাবারে প্রোটিন যোগ করা জরুরি—যেমন ভাতের সঙ্গে ডাল, স্যুপের সঙ্গে ডিম বা চিকেন।
• চিকিৎসক বা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শে প্রোটিন পাউডার বা সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

⸻

🍞 ক্ষুধামন্দা (Loss of Appetite)

কেমোথেরাপির সময় অনেক রোগীর ক্ষুধা সম্পূর্ণ চলে যায়। কিন্তু খাওয়া বন্ধ করলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং চিকিৎসা সহ্য করা কঠিন হয়।

👉 যা করা যেতে পারে:
• প্রিয় খাবার ছোট ছোট পরিমাণে ঘন ঘন খাওয়া।
• খাবারের সময়ের চাপ না দিয়ে ইচ্ছামতো সময়ে কিছু না কিছু খাওয়ার অভ্যাস রাখা।
• হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে (চিকিৎসকের অনুমতি সাপেক্ষে)।
• খাবারে ঘন ক্যালরি ও প্রোটিন যোগ করা — যেমন খিচুড়িতে ঘি, স্যুপে ডিম, দুধে বাদাম।
• কখনো কখনো তরল খাবার (সুপ, স্মুদি, শেক) কঠিন খাবারের চেয়ে সহজে খাওয়া যায়।

⸻

🥣 যখন খাবারে মন চায় না — তখন কী করবেন

এ সময় অনেক রোগীর মনে হয়, “খেতে ইচ্ছাই করে না।”
এ অবস্থায় লক্ষ্য হবে — শরীরকে পুষ্টি দেওয়া যেভাবেই সম্ভব।

👉 সহজ কিছু কৌশল:
• গন্ধ কমানোর জন্য খাবার ঠান্ডা বা ঘরের তাপমাত্রায় খাওয়া।
• বেশি পানি বা তরল পানীয় দিনে বারবার পান করা।
• স্মুদি বা স্যুপে প্রোটিন ও ফল সব একসাথে দেওয়া।
• খাওয়ার সময়ের বদলে খাওয়ার পরিমাণে মনোযোগ দেওয়া — অল্প অল্প করলেও যেন কিছু না কিছু পেটে যায়।
• খাওয়া একা না করে পরিবার বা বন্ধুর সঙ্গে বসে খাওয়া, এতে মানসিক চাপ কমে।

⸻

🧠 মনে রাখার বিষয়
• খাওয়া কষ্টকর হলেও শরীরের পুষ্টি ধরে রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
• মুখে ঘা বা গিলতে সমস্যা থাকলে তরল বা আধা তরল খাবার নেওয়া যেতে পারে।
• পর্যাপ্ত পানি ও তরল শরীরের টক্সিন বের করতে সহায়তা করে।
• প্রতিদিন সামান্য হলেও কিছু প্রোটিন ও ক্যালরি গ্রহণ করা উচিত।
• চিকিৎসক বা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকে সাপ্লিমেন্ট শুরু করা উচিত নয়।

⸻

🌼 উপসংহার

কেমোথেরাপি শরীরের ওপর কঠিন প্রভাব ফেলে, কিন্তু সঠিক খাবারই এই সময়ের সবচেয়ে বড় সহায়।
যখন খাবারের স্বাদ বদলে যায় বা ক্ষুধা চলে যায়, তখনও খাবারকে ওষুধের মতো মনে করে ধীরে ধীরে খাওয়া সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
পুষ্টি মানে শুধু খাবার নয় — এটি শক্তি, আশ্বাস, আর আরোগ্যের অংশ।

⸻

18/10/2025

গাউট ও খাদ্যাভ্যাস

⸻

🦵 গাউট কীভাবে হয়

গাউট হলো একধরনের আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্টে ব্যথা, যা শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে হয়। যখন রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বেশি হয়ে যায়, তখন এটি স্ফটিকের মতো জমে গিয়ে হঠাৎ ব্যথা, ফোলাভাব ও জ্বালাভাব তৈরি করে — বিশেষত পায়ের আঙুলে, গোড়ালিতে বা হাঁটুতে।

অনেকে মনে করেন গাউট মানেই শুধু পিউরিন-যুক্ত খাবার (যেমন মাংস বা ডাল) কমানো, কিন্তু আসলে আরও কিছু বিষয় গাউটের ঝুঁকি বাড়ায় — যেমন চিনি-যুক্ত পানীয়, অ্যালকোহল, এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার।

⸻

🧃 ফ্রুকটোজ (চিনি-যুক্ত পানীয়)

গবেষণায় দেখা গেছে, সোডা, মিষ্টি ফলের রস, ও এনার্জি ড্রিংকস–এ থাকা ফ্রুকটোজ শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়।
ফ্রুকটোজ শরীরে এমনভাবে ভেঙে যায়, যাতে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত এসব পানীয় খেলে গাউটের আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

👉 যা করা ভালো:
• চিনিযুক্ত সফট ড্রিংক বা প্যাকেটজাত রসের পরিবর্তে সাধারণ পানি, নারকেল পানি বা লেবু পানি বেছে নেওয়া উচিত।

⸻

🍺 অ্যালকোহল

অ্যালকোহল ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ায় এবং কিডনি দিয়ে সেটি বের হওয়া বাধা দেয়।
বিশেষ করে বিয়ার ও স্পিরিট জাতীয় পানীয় গাউটের ঝুঁকি অনেক বাড়ায়।

👉 যা করা ভালো:
• অ্যালকোহল না খাওয়াই সবচেয়ে ভালো।
• মাঝে মাঝে যদি খেতেই হয়, তবে পরিমাণ খুব সীমিত রাখতে হবে এবং প্রচুর পানি পান করতে হবে।

⸻

🥓 প্রক্রিয়াজাত মাংস

সসেজ, সালামি, বেকন, কাবাবের মতো প্রক্রিয়াজাত মাংসে উচ্চ পরিমাণে পিউরিন ও সংযোজক (preservatives) থাকে, যা ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়।
এগুলো নিয়মিত খেলে শুধু গাউট নয়, হৃদরোগ ও অন্যান্য বিপদও বাড়তে পারে।

👉 যা করা ভালো:
• তাজা মাছ, ডিম, শাকসবজি, ডাল, দই ইত্যাদি প্রোটিন উৎস হিসেবে নেওয়া যেতে পারে।
• রেড মিট ও প্রক্রিয়াজাত মাংস সপ্তাহে ১–২ দিন বা তারও কম রাখা ভালো।

⸻

🍒 চেরি ও চেরি এক্সট্র্যাক্ট

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, টার্ট চেরি বা চেরি এক্সট্র্যাক্ট ইউরিক অ্যাসিড কমাতে এবং গাউটের ব্যথা প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
চেরির মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ কমায়।

👉 যা করা ভালো:
• মৌসুমে তাজা চেরি খাওয়া যেতে পারে বা চেরি জুস (চিনি ছাড়া) নেওয়া যায়।
• তবে এটি কোনো ওষুধের বিকল্প নয়; চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করা উচিত।

⸻

💧 হাইড্রেশন (পর্যাপ্ত পানি পান)

পর্যাপ্ত পানি পান করলে কিডনি দিয়ে ইউরিক অ্যাসিড সহজে বের হয়ে যায়।
ডিহাইড্রেশন হলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিড ঘন হয়ে যায়, ফলে গাউটের ঝুঁকি বাড়ে।

👉 যা করা ভালো:
• দিনে কমপক্ষে ২.৫–৩ লিটার পানি পান করা উচিত (যদি কিডনির সমস্যা না থাকে)।
• সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি, এবং সারাদিনে ঘন ঘন ছোট চুমুকে পানি খাওয়া উপকারী।

⸻

🍽️ সারাংশে মনে রাখার বিষয়
• শুধুমাত্র পিউরিন নয় — চিনি-যুক্ত পানীয়, অ্যালকোহল, ও প্রক্রিয়াজাত খাবারও গাউট বাড়ায়।
• চেরি ও পর্যাপ্ত পানি সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
• ওজন নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণই সঠিক পথ।

⸻

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হঠাৎ খাদ্য বা ওষুধ পরিবর্তন করা উচিত নয়। গাউট নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন এবং নিয়মিত মনিটরিং—এই তিনটি বিষয় একসাথে কাজ করে।

⸻

15/10/2025

ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) ও লো-ফোডম্যাপ ডায়েট: একটি বিস্তারিত পর্যালোচনা

ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) একটি সাধারণ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা, যা পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটব্যথা সৃষ্টি করে। এই সমস্যা মোকাবিলায় লো-ফোডম্যাপ ডায়েট একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এই ডায়েটটি ফোডম্যাপস (Fermentable Oligosaccharides, Disaccharides, Monosaccharides, and Polyols) নামক কিছু নির্দিষ্ট কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা কমিয়ে দেয়, যা IBS-এর লক্ষণগুলোকে প্রশমিত করতে সাহায্য করে।

লো-ফোডম্যাপ ডায়েটের তিনটি পর্যায়

১. এলিমিনেশন (Elimination) ফেজ:
এই পর্যায়ে, উচ্চ ফোডম্যাপযুক্ত খাবারগুলো খাদ্যতালিকা থেকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া হয়। এই পর্যায়টি সাধারণত ২ থেকে ৪ সপ্তাহ স্থায়ী হয়। এই সময়ে, IBS-এর লক্ষণগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই পর্যায়ে ফোডম্যাপস বাদ দেওয়া IBS-এর লক্ষণগুলোর তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে।

২. রিইন্ট্রোডাকশন (Reintroduction) ফেজ:
এই পর্যায়ে, একে একে ফোডম্যাপস সমৃদ্ধ খাবারগুলো খাদ্যতালিকায় পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রতিটি খাবার একাধিক দিন ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়, যাতে কোন খাবারটি IBS-এর লক্ষণ সৃষ্টি করে তা চিহ্নিত করা যায়। এই পর্যায়টি সাধারণত ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ স্থায়ী হয়।

৩. পার্সোনালাইজেশন (Personalization) ফেজ:
এই পর্যায়ে, পূর্ববর্তী পর্যায়গুলোর ফলস্বরূপ, ব্যক্তিগত সহনশীলতার ভিত্তিতে একটি স্থায়ী খাদ্যতালিকা তৈরি করা হয়। এই খাদ্যতালিকায় শুধুমাত্র সেই সব খাবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা IBS-এর লক্ষণ সৃষ্টি করে না। এই পর্যায়টি দীর্ঘমেয়াদে IBS-এর লক্ষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

ফাইবার ও IBS: সব ফাইবার সমান নয়

ফাইবার সাধারণত IBS-এর লক্ষণগুলো কমাতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়। তবে, সব ধরনের ফাইবার IBS-এর জন্য উপকারী নয়। ফাইবার প্রধানত দুই ধরনের: সলিউবল (soluble) এবং ইনসোলিউবল (insoluble)। সলিউবল ফাইবার যেমন পেকটিন, গামস ইত্যাদি পানিতে দ্রবণীয় হয় এবং পেটের মধ্যে পানি ধারণ করে, যা মল নরম করে এবং সহজে বের হতে সাহায্য করে। ইনসোলিউবল ফাইবার যেমন সেলুলোজ, লিগনিন ইত্যাদি পানিতে অদ্রবণীয় হয় এবং মলের আয়তন বৃদ্ধি করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।

IBS রোগীদের ক্ষেত্রে, ইনসোলিউবল ফাইবার অতিরিক্ত গ্যাস উৎপাদন এবং পেট ফাঁপা সৃষ্টি করতে পারে, যা IBS-এর লক্ষণগুলোকে আরও বাড়িয়ে তোলে। অপরদিকে, সলিউবল ফাইবার IBS-এর লক্ষণগুলো কমাতে সাহায্য করে।

উপসংহার

লো-ফোডম্যাপ ডায়েট IBS-এর লক্ষণ নিয়ন্ত্রণে একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তবে, এই ডায়েটটি শুরু করার আগে একজন ডায়েটিশিয়ান এর পরামর্শ নেওয়া উচিত, যাতে সঠিকভাবে ডায়েটটি অনুসরণ করা যায় এবং পুষ্টির ঘাটতি এড়ানো যায়। এছাড়াও, ফাইবারের ধরন সম্পর্কে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সব ধরনের ফাইবার IBS রোগীদের জন্য উপকারী নয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পেশাদার পরামর্শের মাধ্যমে IBS-এর লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

14/10/2025

“হাইপারটেনশন: লবণই সবকিছু নয়”

ভূমিকা

রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) দীর্ঘমেয়াদে হার্ট (হৃদয়), মস্তিষ্ক, কিডনি ও রক্তনালীর ক্ষতির কারণ হতে পারে। সাধারণভাবে অনেকেই মনে করেন “কম লবণ খাওয়া ”— এটিই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। তবে, বৈজ্ঞানিক গবেষণা দেখায়, লবণ নিয়ন্ত্রণ করাই একমাত্র সমাধান নয়। আরও কিছু পুষ্টি উপাদান ও জীবনযাপন বিষয়ক পরিবর্তন আনতে হবে।

লবণ (সোডিয়াম ক্লোরাইড) দেহে অতিরিক্ত সোডিয়াম থাকলে দেহে পানির রক্ষণাবেক্ষণ বাড়ে, যেটি রক্তবাহী নালীতে চাপ বাড়ায়। তবে, শুধুমাত্র লবণ কমিয়ে দিলে সব ধরনের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না — কারণ অন্যান্য খারাপ অভ্যাস ও পুষ্টি ঘাটতি, যেমন কম পটাসিয়াম গ্রহণ, অপ্রচুর সবজি ও ফাইবার-উপাদান গ্রহণ, শারীরিক কার্যকলাপ কম থাকা ইত্যাদি, এগুলোরও প্রভাব রয়েছে।

লবণের বাইরে আরও যে উপায় রয়েছে — বিশেষ করে পটাসিয়াম, DASH ডায়েট ও নাইট্রেট-সমৃদ্ধ সবজি, এবং একটি “প্রাকৃতিক গুঁড়ি”— বিটরুট — যাকে কখনো কখনো একটি হালকা রক্তচাপ-নিয়ন্ত্রক ওষুধের মতো বিবেচনা করা যেতে পারে।

⸻

পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য এবং রক্তচাপে প্রভাব

পটাসিয়ামের গুরুত্ব

পটাসিয়াম (K⁺) একটি অপরিহার্য খনিজ যা কোষ , স্নায়ু উত্তেজনা ও পেশী সংকোচনে ভূমিকা রাখে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পটাসিয়াম একটি বিশেষ ভূমিকা রাখে কারণ এটি সোডিয়ামের প্রভাবকে কমাতে সহায়তা করে এবং রক্তনালীর গতি সহজ করতে সহায়ক। সুস্থ দেহে পটাসিয়াম সোডিয়াম-নিষ্কাশন বাড়িয়ে দেয়, ফলে অতিরিক্ত সোডিয়াম মূত্রের মাধ্যমে বের হয়ে যেতে পারে।

গবেষণা অনুযায়ী, পটাসিয়াম ঘাটতির ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। একটি পুরাতন গবেষণা দেখায়, মাত্র কয়েক দিনের জন্য পটাসিয়াম কম দেওয়ার ফলে সিস্টোলিক রক্তচাপ প্রায় ৫ mmHg বৃদ্ধি পায়।

একটি মেটা-অ্যানালাইসিস গবেষণা (যেখানে একাধিক পরীক্ষার ফল একত্র করা হয়) দেখায়, উচ্চ রক্তচাপযুক্ত ব্যক্তিরা অতিরিক্ত পটাসিয়াম গ্রহণ করলে গড় সিস্টোলিক রক্তচাপ প্রায় ৩.৪৯ mmHg ও ডায়াস্টলিক রক্তচাপ প্রায় ১.৯৬ mmHg কমে যেতে পারে।

আরও একটি বিশ্লেষণ দেখায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পটাসিয়ামের ভূমিকা অনেক সময় লবণ নিয়ন্ত্রণের চেয়েও বেশি হতে পারে — অর্থাৎ, যেসব মানুষের রক্তচাপ কমে না শুধু লবণ কমিয়ে, তাদের মধ্যে পটাসিয়াম বাড়ানো সবচেয়ে কার্যকর সমাধান হতে পারে।

তবে, পটাসিয়াম অতি মাত্রায় গ্রহণ করাও বিপজ্জনক হতে পারে বিশেষ করে যদি কিডনি সমস্যা থাকে — কারণ অতিরিক্ত পটাসিয়াম রক্তে জমতে পারে এবং হাইপারক্যালিমিয়া (উচ্চ ক্যালিয়াম) সৃষ্টি করতে পারে। তাই পটাসিয়াম বাড়ানোর আগে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের বা ডায়েটিশিয়ান এর পরামর্শ নেওয়া উচিত।

পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য

নিচে কিছু পটাসিয়াম সমৃদ্ধ (k-rich) খাদ্য উদাহরণ দেওয়া হলো, যেগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে:
• কলা, কাঁঠাল, আঙুর, পেঁচা (মধু), কমলা ইত্যাদি ফল
• সবুজ পাতা জাতীয় সবজি (ঢোঙা শাক, পালং শাক, মুলা পাতা)
• শসা, টমেটো, আলু (ত্বকসহ), মিষ্টি আলু
• বাদাম ও শস্য (বাদাম, চিয়া, বাদাম দানা)
• ডাল , ছোলা, মটরশুঁটি
• দুধ ও দুধজাত খাদ্য (যদি ল্যাকটোজ সহনশীলতা থাকে)

প্রচলিত খাবারে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত বা প্রস্তুত খাবার (যেমন চিপস, শুকনো নাস্তা) থাকতে পারে উচ্চ মাত্রায় সোডিয়াম এবং কম পটাসিয়াম। তাই শাক-সব্জি ও ফলকে তালিকায় অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

⸻

DASH ডায়েট — রক্তচাপ বন্ধ করার পথ

DASH (Dietary Approaches to Stop Hypertension) ডায়েট হল একটি প্রমাণিত খাদ্য প্যাটার্ন যা হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। এটি মূলত নিম্নলিখিত বিষয়গুলির ওপর ভিত্তি করে:
• শস্য, সবজি ও ফল বেশি
• লবণ ও ‘‘সাধারণ’’চিনি-মিষ্টি কম
• চর্বি কম ও সুস্থ চর্বি (যেমন বাদাম, তেল উদ্ভিজ্জ উৎস)
• গরুর মাংস বা অতিরিক্ত লাল মাংস কম
• দুধ ও দুধজাত খাবার লো-ফ্যাট বা ফ্যাট-নিম্ন
• রান্নার পদ্ধতিতে কম তেল ও কম লবণ

অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে DASH ডায়েট অনুসরণ করলে রক্তচাপ (সিস্টোলিক ও ডায়াস্টলিক) গড়পড়তা ۵ থেকে ১১ mmHg পর্যন্ত কম হতে পারে। এটি শুধুমাত্র সুনির্দিষ্ট ওষুধ নয়, একটি জীবনের ধারাবাহিক খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন।

DASH ডায়েটের মূল উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম — যা রক্তনালীর সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দুধ, দই ও দুধজাত খাবার ও শস্য থেকেও কিছু খনিজ পাওয়া যায়।

DASH ডায়েটের বড় বৈশিষ্ট্য হলো: এটি শুধুমাত্র “কোনো একটি উপাদান বৃদ্ধি বা হ্রাস” বলেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি সামগ্রিক খাদ্যধারা যা একসঙ্গে লবণ কম করা, পটাসিয়াম ও সবজি-ফল বেশি রাখা এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি ব্যবহার নিশ্চিত করা।

⸻

নাইট্রেট-সমৃদ্ধ সবজি ও রক্তচাপ

নাইট্রেট (NO₃⁻) হলো একটি অর্ধ-আর্গানিক আয়ন যা কিছু সবজিতে প্রাকৃতিকভাবেই থাকে। দেহে এটি ধাপে ধাপে নাইট্রাইট (NO₂⁻) ও পরে নাইট্রিক অক্সাইড (NO) এ রূপান্তরিত হয়। নাইট্রিক অক্সাইড (NO) একটি শক্তিশালী রক্তনালীর বিস্তারণকারী (vasodilator) যা রক্তনালীর মসৃণ পেশীকে শিথিল করতে পারে ও রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন যদি একটি উপযুক্ত পরিমাণ নাইট্রেট নেওয়া যায় (যেমন বিটরুট রস), তাহলে ২৪ ঘণ্টা রক্তচাপ সিস্টোলিক ও ডায়াস্টলিক রক্তচাপ উভয়ই কমে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ৪ সপ্তাহের অনুশীলনে ৮.১ mmHg সিস্টোলিক ও ৩.৮ mmHg ডায়াস্টলিক রক্তচাপ কমে যায়।

একটি ব্যাপক সমীক্ষা (113টি গবেষণা) দেখায়, খাদ্যগত নাইট্রেট সাপ্লিমেন্টেশন ,রেস্টিং রক্তচাপ কমাতে সক্ষম।

তবে, সব অধ্যয়নে একরকম ফল পাওয়া যায়নি — কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে নাইট্রেট জাতীয় খাবার রক্তচাপ ও রক্তনালীর কার্যকারিতায় বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারেনি।

তাই, নাইট্রেট সমৃদ্ধ সবজি ব্যবহার করার সময় এটি “এক্সট্রা” হিসেবে—not ওষুধের বিকল্প—ধরা উচিত।

নাইট্রেট সমৃদ্ধ সবজি উদাহরণ:
• বিটরুট
• পালং শাক, কেল (kale)
• সেলরি
• শসা
• লাল শালগম

এই সবজি নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে যুক্ত করলে ধীরে ধীরে রক্তচাপে কমানোতে সহায়তা পাওয়া যেতে পারে।

⸻

বিটরুট: একটি “মৃদু রক্তচাপ-পিল” হিসেবে

বিটরুট (Beetroot, বা শালগম জাতীয় উদ্ভিদ) একটি বিশেষ স্থান অধিকার করেছে কারণ এটি তুলনামূলকভাবে বেশি মাত্রায় নাইট্রেট ধারণ করে। অনেক গবেষকই বলছেন, এটি এমন একটি প্রাকৃতিক সূত্র হতে পারে যা রক্তচাপ কমাতে ওষুধের সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে — যদিও ওষুধ প্রতিস্থাপক নয়।

কি বলে গবেষণা?
• কিছু রেন্ডমাইজড নিয়ন্ত্রিত গবেষণায় দেখা গেছে, বিটরুট রস সেবন করলে সিস্টোলিক রক্তচাপ ৭–১২ mmHg কমে যেতে পারে—বিশেষ করে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে।
• একটি মেটা-অ্যানালাইসিসে বলা হয়েছে, বিটরুটজাত নাইট্রেট রক্তচাপ কমাতে সক্ষম, তবে মূলত সিস্টোলিক রক্তচাপে বেশি প্রভাব ফেলে; ডায়াস্টলিক রক্তচাপে প্রভাব কম বা মাঝারি।
• একটি গবেষণায় ২৫০ mL বিটরুট রস (প্রায় ৫–৬ mmol নাইট্রেট) ৪ সপ্তাহ নেওয়ার পর ক্লিনিক ও ২৪h রক্তচাপ কমে গিয়েছিলো (সিস্টোলিক প্রায় ৮.১ mmHg ও ডায়াস্টলিক প্রায় ৩.৮ mmHg)।
• আরও সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ দেখায়, বিটরুটের নাইট্রেট মাত্রা ও রক্তচাপে প্রভাবের মধ্যে একটি ডোজ-প্রতিক্রিয়া (dose–response) সম্পর্ক পাওয়া গেছে — অর্থাৎ বেশি নাইট্রেট গ্রহণে (নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে) বেশি লাভ।
• তবে, কিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে, খুব বেশি তরুণ বা স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের মধ্যে বিটরুট রসের প্রভাব কম হতে পারে।

কাজ করার উপায়

বিটরুটে থাকা নাইট্রেটগুলি অরাল মাইক্রোবায়োম (মুখের জীবাণু) দ্বারা নাইট্রাইট ও পরে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়া সফলভাবে হলে রক্তনালীর মসৃণ পেশী শিথিল হয় এবং রক্তচাপ কমে যায়।

এই কারণেই বিটরুট রসকে কখনো কখনো “হালকা রক্তচাপ-নিয়ন্ত্রক পিলের মতো” বলা হয় — যদিও এটি ওষুধের বিকল্প নয়, বরং একটি পুষ্টি-সাহায্য।

ব্যবহার ও সতর্কতা
• সাধারণভাবে ১১৯–২৫০ mL (প্রায় ১ কাপ) বিটরুট রস প্রতিদিন সেবনের তথ্য গবেষণায় পাওয়া যায়।
• কিডনি রোগ, গলার সমস্যা, স্টোন (পাথর) সমস্যা থাকলে বিটরুট বেশি খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে — কারণ এটি অক্সালেট (oxalate) তৈরি করতে পারে।
• অতিরিক্ত নাইট্রেট গ্রহণ অনেক সময় বিরল হলেও দোষের কারণ হতে পারে।
• ওষুধ গ্রহণরত মানুষ (বিশেষ করে যেসব ওষুধ ন্যট্রাল বা রক্তচাপ ওষুধ) প্রথমে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বিটরুট রস বা নাইট্রেট সাপ্লিমেন্ট শুরু করা উচিত নয়।
• বিটরুট রস কখনো কখনো প্রস্রাব রঙে পরিবর্তন (গোলাপী বা লালাভ) ঘটাতে পারে — এটি সাধারণত হানিকর নয়।

⸻

“লবণই সবকিছু নয়” — শক্ত যুক্তি
1. লবণ কমালে রক্তচাপ কিছুটা কমে, কিন্তু যদি পটাসিয়াম, সবজি ও জীবনযাপন পরিবর্তন না করা হয়, অনেক সময় রক্তচাপ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে না।
2. অনেক খাদ্য (প্রস্তুত খাবার, ফাস্ট ফুড, প্যাকেজড খাবার) উচ্চ সোডিয়াম ও নিম্ন পটাসিয়াম থাকে — ফলে লবণ কম করার পাশাপাশি পটাসিয়াম বাড়ানো অপরিহার্য।
3. পটাসিয়াম ও নাইট্রেট-সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন শাক-সবজি, ফল, বিটরুট ইত্যাদি একসাথে ব্যবহার করলে পরস্পরীয় সহায়ক প্রভাব পাওয়া যেতে পারে।
4. DASH ডায়েট একটি সামগ্রিক পন্থা যা শুধু লবণ কমানোর চেয়ে খাদ্যশৈলী পরিবর্তনের ওপর জোর দেয়।
5. বিটরুট রস একটি উদাহরণ যে প্রাকৃতিক খাদ্যও “গাছগাছালি” নয় — সঠিক ব্যবহারে তা রক্তচাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে।

⸻

উপসংহার

হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে লবণ কমানো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এটি একমাত্র গল্প নয়। পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য, DASH ডায়েট অনুসরণ ও নাইট্রেট সমৃদ্ধ সবজি (যেমন বিটরুট) গ্রহণ — এসব মিলিয়ে একটি কার্যকর ও বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত পথ রচিত হতে পারে। বিটরুট রসকে “হালকা রক্তচাপ-নিয়ন্ত্রক গুঁড়ি” হিসেবে দেখলেও, সেটিকে ওষুধের বিকল্প নয় — বরং একটি সহায়ক উপাদান হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।

09/10/2025

ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD) ও প্রোটিন বিভ্রান্তি

ক্রনিক কিডনি ডিজিজ একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা, যেখানে ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। অনেক সময় রোগীরা বিভ্রান্ত হন—ডায়েটে প্রোটিন কতটা খাওয়া উচিত তা নিয়ে। কেউ কেউ মনে করেন প্রোটিন একেবারেই খাওয়া যাবে না, আবার কেউ মনে করেন বেশি প্রোটিন প্রয়োজন। বাস্তবে, গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রোটিনের মাত্রা কিডনির অবস্থাভেদে (স্টেজ অনুযায়ী) নির্ধারণ করা হয়।

⸻

প্রোটিন গ্রহণ: কম নাকি মাঝারি?

প্রাথমিক বা মাঝারি পর্যায়ের CKD (Stage 1-3):
এই পর্যায়ে খুব বেশি প্রোটিন সীমাবদ্ধ করার প্রয়োজন হয় না। বরং মধ্যম মাত্রার প্রোটিন গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ শরীরের পেশী ভর, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সার্বিক পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। সাধারণত দৈনিক শরীরের ওজন প্রতি কেজিতে 0.8-1.0 গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ নিরাপদ বলে ধরা হয়।

অগ্রসর পর্যায়ের CKD (Stage 4-5, ডায়ালাইসিস নয়):
এখানে কিডনি প্রোটিনের বিপাকজাত পদার্থ (যেমন ইউরিয়া) সহজে বের করতে পারে না। ফলে রক্তে ইউরিয়া জমে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। তাই এই পর্যায়ে লো-প্রোটিন ডায়েট (প্রতি কেজি ওজনে প্রায় 0.6-0.8 গ্রাম) সুপারিশ করা হয়। তবে খুব বেশি কমিয়ে দেওয়া উচিত নয়, কারণ তা অপুষ্টি ঘটাতে পারে।

ডায়ালাইসিস চলাকালীন:
ডায়ালাইসিসের সময় শরীর থেকে অ্যামিনো অ্যাসিড ও প্রোটিনের ক্ষতি হয়। তাই এই পর্যায়ে আবার মধ্যম থেকে বেশি প্রোটিন (প্রতি কেজি ওজনে 1.0-1.2 গ্রাম) প্রয়োজন হয়। গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ডায়ালাইসিস রোগীদের পর্যাপ্ত প্রোটিন দিলে সংক্রমণ কম হয় এবং জীবনমান উন্নত হয়।

⸻

পটাশিয়াম নিয়ন্ত্রণ

কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে (হাইপারক্যালেমিয়া), যা হৃদযন্ত্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
• উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত খাবার (যেমন কলা, কমলা, আম, টমেটো, আলু, পালং শাক) সীমিত করতে হয়।
• আলু বা সবজি সেদ্ধ করে ঝোল ফেলে দিলে পটাশিয়ামের মাত্রা কিছুটা কমানো যায়।
• ফল ও সবজি বাছাই করার সময় কম পটাশিয়ামযুক্ত বিকল্প (যেমন আপেল, নাশপাতি, শসা, করলা, লাউ) বেছে নেওয়া নিরাপদ।

⸻

ফসফরাস নিয়ন্ত্রণ

কিডনি ফসফরাস ফিল্টার করতে না পারলে রক্তে ফসফরাস বেড়ে যায়, ফলে হাড় ক্ষয় হয় ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
• দুধ, চিজ, দই, বাদাম, বীজ, ডাল, লাল মাংস ইত্যাদি ফসফরাসে সমৃদ্ধ। তাই এসব খাবার সীমিত রাখতে হয়।
• প্রসেসড ফুড ও সফট ড্রিঙ্কে থাকা ফসফেট অ্যাডিটিভস দ্রুত শোষিত হয় এবং ফসফরাস বাড়ায়, তাই এগুলো এড়ানো জরুরি।
• চিকিৎসকের পরামর্শে ফসফেট বাইন্ডার ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।

⸻

সারাংশ

প্রোটিন গ্রহণের ক্ষেত্রে একক কোনো নিয়ম নেই, বরং CKD-এর স্টেজ অনুযায়ী ডায়েট পরিবর্তন করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে মাঝারি প্রোটিন, অগ্রসর পর্যায়ে কম প্রোটিন এবং ডায়ালাইসিসে আবার বেশি প্রোটিন প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি পটাশিয়াম ও ফসফরাসের নিয়ন্ত্রণ কিডনি রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা-ভিত্তিক নির্দেশিকা অনুযায়ী সঠিক ডায়েট মানলে CKD রোগীর জীবনমান ও রোগ নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা অনেক বাড়ে।

⸻

06/10/2025

মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খাদ্যের প্রভাব ব্যাপকভাবে অনুসন্ধান করা হয়েছে। বিশেষ করে অবসাদ (depression) ও উদ্বেগ (anxiety) সংক্রান্ত রোগে খাদ্যগত উপাদানগুলি সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে কার্যকর হতে পারে বলে গবেষণায় দেখা গিয়েছে ।গাইডলাইনগুলো সাধারণ জনগণের জন্য উপযোগীভাবে উপস্থাপণ করা হয়েছে; তবে কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা পরিবর্তনের আগে ডায়েটিশিয়ান বা মনোবিজ্ঞানী বা চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নেওয়া উচিত।

গাট-ব্রেন অ্যাক্সিস (Gut–Brain Axis) — কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ

পাচনতন্ত্র (gut) ও মস্তিষ্কের (brain) মধ্যে দ্বিমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা — গাট-ব্রেন অ্যাক্সিস — বলে ধারণা করা হয়। এই যোগাযোগ স্নায়ুবিক (vagus nerve), ইমিউন(প্রতিরক্ষা) সিগন্যাল, এবং মাইক্রোবায়োম (gut microbiota)-এর মাধ্যমে পরিচালিত হয় ।গাট-মাইক্রোবায়োমে ভিন্নতা থাকা অবসাদ ও উদ্বেগের সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে গবেষণায় প্রমাণিত এবং মাইক্রোবায়োম-পরিবর্তনের মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রদাহ, নিউট্রান্সমিটার (যেমন সারোটোনিন, গ্যাবা) এবং স্ট্রেস-রেসপন্সে (HPA-axis) প্রভাব ফেলা সম্ভব বলে ধারণা করা হয়। এই কারণে গাট-স্বাস্থ্যকে মানসিক স্বাস্থ্যের অংশ হিসেবে বিবেচনা করার ওপর বৈজ্ঞানিক আগ্রহ বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে।

গাট-বন্ধনকে কীভাবে খাদ্য দ্বারা সমর্থন করা যেতে পারে

গাট-বায়োমাসকে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও স্থিতিশীল রাখা খাদ্য দিয়ে সম্ভব।ফাইবার-ভিত্তিক খাবার (শাক-সবজি, শস্য, বাদাম, বীজ) মাইক্রোবায়োমে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পুষ্টিতে সহযোগিতা করার জন্য গুরুত্বপূর্ন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একইভাবে প্রোবায়োটিক এবং ফারমেন্টেড খাবারগুলোর মাধ্যমে জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া মাইক্রোবায়োমে ইতিবাচক পরিবর্তন করতে দেখা গেছে; তবে মানবকেন্দ্রিক ক্লিনিক্যাল প্রমাণ সম্পূর্ণভাবে সাধারণীকরণ করার পর্যায়ে পৌঁছায়নি, ফলে ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (Omega-3s) — উদ্বেগ ও অবসাদের প্রতি প্রভাব

দীর্ঘচেইন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, বিশেষত ইপিএ (EPA) এবং ডিএইচএ (DHA), মস্তিষ্কের কোষঝিল্লি এবং নিউরোইনফ্লামেশন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। যথাযথভাবে ডিজাইন করা রেন্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল ও মেটা-অ্যানালিসিসে EPA-সমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্টসমূহে মৃদু থেকে মাঝারি আকারের অবসাদ-লক্ষণগুলোর উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে; তবে ফলাফল সমগ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সর্বজনীনভাবে প্রযোজ্য কি না তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক মতপার্থক্য বজায় রয়েছে। কিছু ট্রায়াল -এ উদ্বেগের উন্নতি রিপোর্ট করা হয়েছে, কিন্তু প্রতিক্রিয়া ডোজ, EPA:DHA অনুপাত ও রোগীর প্রাথমিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে বদল হতে দেখা গেছে। অতএব, খাদ্য থেকে নিয়মিত মাছ (বিশেষত অয়লি ফিশ: স্যামন, ম্যাকারেল, সার্ডাইন) খাওয়া এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা পরামর্শযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

ফারমেন্টেড খাবার (Fermented foods) — প্রোবায়োটিক সমর্থন ও মানসিক স্বাস্থ্যে সম্ভাব্য ভূমিকা

কিমচি, দই, মিশো, টেম্পে ইত্যাদি ফারমেন্টেড খাবারে প্রোবায়োটিক ও মাইক্রবায়াল-মেটাবোলাইট উপস্থিতি থাকা দেখা গেছে। এই খাবারগুলোর নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে গাট-মাইক্রোবায়োমে ইতিবাচক পরিবর্তন এবং প্রদাহ (inflammation) মানসিক উপকার পাওয়া যেতে পারে বলে কিছু পর্যবেক্ষণমূলক ও প্রাথমিক ক্লিনিক্যাল স্টাডিতে রিপোর্ট করা হয়েছে। তবে কিছু বড়-পপুলেশন স্টাডিতে দেখা গেছে যে উচ্চ মাত্রায় ফারমেন্টেড খাবার গ্রহণ সব সময়ই চাক্ষুষভাবে উপকারি নয়—ক্লিনিক্যাল কনটেক্সট ও ব্যক্তিগত দেহগত অবস্থার ওপর নির্ভর করে ফলাফল পরিবর্তিত হতে পারে। নিরাপদ এবং বৈচিত্র্যময় উৎস থেকে পরিমিত পরিমাণে ফারমেন্টেড খাবার অন্তর্ভুক্ত করা সাধারণত সুবিধাজনক বলে ধরা হচ্ছে।

চিনি (Sugar) ও মুড-সুইং — ঝুঁকি ও প্রক্রিয়া

উচ্চ পরিমাণে যুক্ত-চিনি (added sugars) এবং সুগার-সমৃদ্ধ পানীয়ের দীর্ঘমেয়াদি গ্রহণের সঙ্গে অবসাদের উচ্চ ঝুঁকি এবং মেজাজহীনতা (mood swings)-এর সম্পর্ক দেখা গেছে। সম্ভাব্য মেকানিজম হিসেবে প্রদাহ বৃদ্ধি, গ্লুকোজ-হোমিওস্টাসিসে ব্যাঘাত, এবং গাট-মাইক্রোবায়োমে অবাঞ্ছিত পরিবর্তন উল্লেখ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট কোহর্ট-অধিকাংশ বিশ্লেষণে উচ্চ চিনি গ্রহণে অবসাদের ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাব্যতা রিপোর্ট করা হয়েছে; তাছাড়া দ্রুত-হজমকারি কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার ওঠানামা মেজাজে স্বল্পমেয়াদি অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। অতএব অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত ও চিনি-সমৃদ্ধ খাবার সীমিত রাখা মানসিক স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক বলে সুপারিশ করা হচ্ছে।

প্রাকটিক্যাল খাদ্যগত সুপারিশ
1. পূর্ণ-আহার (whole foods)-কেন্দ্রিক ডায়েট অনুসরণ করা উচিত; প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত চিনি সীমিত করা।
2. সপ্তাহে অন্তত 2–3 বার অয়লি ফিশ (স্যামন, ম্যাকারেল, সার্ডাইন) খাওয়ার চেষ্টা করা বা চিকিৎসকের পরামর্শে EPA-সমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্ট বিবেচনা করা যেতে পারে।
3. প্রতিদিন খাদ্যে ফাইবার-সমৃদ্ধ শাক-সবজি, কলা, বীজ, বাদাম ও সম্পূর্ণ শস্য রাখা — এতে গাট-মাইক্রোবায়োম সহায়ক।
4. দই, মিশো, টেম্পে ও অন্যান্য ফারমেন্টেড খাবার পরিমিতভাবে যুক্ত করা ; দীর্ঘমেয়াদি অপ্রতিরোধ্য ডোজ দ্রুত শুরু করা উচিত নয় এবং প্রদাহ বা হজমজনিত সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হবে।
5. চিনি-সমৃদ্ধ নাস্তা এবং সুগার-ড্রিঙ্ক কমিয়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বিকল্প হিসেবে পুরো ফল ও প্রোটিন-সমৃদ্ধ স্ন্যাক্স নেওয়া।

সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ গবেষণার প্রয়োজন

উল্লেখ্য, বর্তমানে পাওয়া অনেক গবেষণা পর্যবেক্ষণমূলক বা ছোট-স্কেল ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস থেকে এসেছে; তাই কারণ-প্রভাব সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গাট-মাইক্রোবায়োম এবং মেন্টাল হেলথ সংযোগে জনসংখ্যাভিত্তিক বৈচিত্র্য, ডায়েটের গুণগত ও পরিমাণগত পার্থক্য, এবং জেনেটিক ও পরিবেশগত কনফাউন্ডারগুলোর প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে আরও বৃহৎ, দীর্ঘমেয়াদি রেন্ডমাইজড কন্ট্রোল গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করা হয় । কিছু সাম্প্রতিক মেটা-অ্যানালাইসিসে আশাব্যঞ্জক ফল দেখা গেলেও ডোজ, উপাদান অনুপাত ও রোগীর রোগ-গুরুত্ব অনুসারে নির্দেশনা নির্দিষ্ট করা শোধনীয় রয়ে গেছে।

⸻

উপসংহার: খাদ্য ও মেজাজের সম্পর্ক জটিল হলেও গাট-ব্রেন অ্যাক্সিস, ওমেগা-৩, ফারমেন্টেড খাবার এবং চিনি-সীমাবদ্ধতা—এই চারটি দিক থেকে প্রমাণসাপেক্ষ পন্থা অবলম্বন করলে অবসাদ ও উদ্বেগ সম্পর্কিত ঝুঁকি ও লক্ষণগুলো হ্রাসে সহায়তা করতে পারে । ব্যক্তিগত চিকিৎসা ও ঔষধ পরিবর্তনের আগে পেশাদার ক্লিনিকাল এর অবশ্যই পরামর্শ নেওয়া উচিত।

01/10/2025

☕️আন্তর্জাতিক কফি দিবসে কফি ও স্বাস্থ্যের বৈজ্ঞানিক দিক

আজ আন্তর্জাতিক কফি দিবস। কফি শুধু একটি জনপ্রিয় পানীয় নয়, এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত অনেক স্বাস্থ্য উপকারও করে থাকে । সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে, সঠিক পরিমাণে কফি গ্রহণ শরীরের নানা শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে সক্ষম। তবে এর সময়, পরিমাণ ও গ্রহণের ধরন সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।

কফির পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

কফির মধ্যে ক্যাফেইন, পলিফেনলস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ উপস্থিত থাকে। এসব উপাদান শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে প্রদাহ হ্রাস করতে সহায়ক হয়।
• মানসিক সতর্কতা ও মনোযোগ বৃদ্ধি: ক্যাফেইন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে ক্লান্তি কমায় এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করে।
• হৃদ্‌স্বাস্থ্য: নিয়ন্ত্রিত কফি সেবন রক্তচাপকে সামান্য বাড়ালেও দীর্ঘমেয়াদে হার্ট ফেইলিউর ও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
• টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ: গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, নিয়মিত মাঝারি পরিমাণ কফি গ্রহণ ইনসুলিন সেনসিটিভিটি উন্নত করে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে।
• লিভারের সুরক্ষা: লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কফি কার্যকর হতে পারে।
• স্নায়বিক রোগ প্রতিরোধ: অ্যালঝাইমারস ও পারকিনসন্স ডিজিজ প্রতিরোধে কফির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

কফি ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার সঠিক পদ্ধতি

কফি ডায়েটে সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হলে এটি স্বাস্থ্যকর হতে পারে।
• চিনি, ক্রিম বা অতিরিক্ত দুধ ছাড়া ব্ল্যাক কফি সবচেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত।
• প্রোটিন বা হালকা নাস্তার সঙ্গে কফি সেবন করলে রক্তে শর্করার তারতম্য কম হয়।
• অতিরিক্ত ক্যালোরি যুক্ত কফি (যেমন ফ্রাপ্পে বা বেশি চিনি মিশ্রিত কফি) ডায়েটের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

কফি গ্রহণের সঠিক সময়
• সকালে: ঘুম থেকে ওঠার অন্তত এক ঘণ্টা পর কফি সেবন সবচেয়ে উপকারী, কারণ এ সময় শরীরে কর্টিসল হরমোন স্বাভাবিকভাবে কমতে শুরু করে এবং ক্যাফেইনের কার্যকারিতা বাড়ে।
• ব্যায়ামের আগে: ব্যায়ামের ৩০–৬০ মিনিট আগে কফি সেবনে শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়ে।
• রাতে এড়ানো: সন্ধ্যার পর কফি গ্রহণ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, তাই শোবার অন্তত ৬ ঘণ্টা আগে কফি সেবন এড়ানো উচিত।

কতটা কফি নিরাপদ

গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে দৈনিক ৩–৪ কাপ কফি (প্রায় ৩০০–৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন) অধিকাংশ সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কের জন্য নিরাপদ। তবে গর্ভবতী নারী, স্তন্যদানকারী মা ও হৃদরোগী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কফি গ্রহণ সীমিত রাখা প্রয়োজন।

উপসংহার

কফি কেবলমাত্র এক কাপ উষ্ণ পানীয় নয়, বরং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত একটি স্বাস্থ্যকর উপাদান, যদি তা সঠিক পরিমাণে ও সঠিক সময়ে গ্রহণ করা হয়। সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হলে কফি মন ও শরীর উভয়ের জন্যই উপকারী হতে পারে।

29/09/2025

আজ ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে (World Heart Day) – একটি দিন, যা আমাদের সবাইকে হৃদপিণ্ডের সুস্থতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়। হৃদযন্ত্র শুধু একটি অঙ্গ নয়, এটি আমাদের শরীরের ইঞ্জিন, প্রতিদিন রক্ত, অক্সিজেন ও পুষ্টি শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে দেয়। তবুও আধুনিক জীবনযাত্রা, ব্যস্ততা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও কম শারীরিক পরিশ্রমের কারণে হৃদরোগ আজকের দিনে বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ।

💙 কেন এই দিনটি গুরুত্বপূর্ণ?
ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে পালিত হয় মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করার জন্য—যাতে আমরা বুঝতে পারি, ছোট ছোট জীবনধারার পরিবর্তনও হৃদয়ের জন্য বড় উপকার বয়ে আনতে পারে। হৃদরোগ প্রতিরোধযোগ্য, কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন সঠিক তথ্য, সচেতনতা ও শৃঙ্খলা।

🥦 হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখার কিছু অভ্যাস:
• সুষম খাদ্যাভ্যাস: বেশি করে শাকসবজি, ফল, পূর্ণ শস্য, বাদাম ও ডাল খাওয়া উচিত। ভাজা-তেলে ভরা, ট্রান্স ফ্যাট ও অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার কমাতে হবে।
• নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম হৃদয়ের জন্য খুবই উপকারী।
• ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: অতিরিক্ত ওজন হৃদযন্ত্রের উপর চাপ ফেলে এবং উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
• ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়ানো: এগুলো হৃদযন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
• স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: অতিরিক্ত মানসিক চাপ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। মেডিটেশন, পর্যাপ্ত ঘুম ও ইতিবাচক জীবনযাত্রা স্ট্রেস কমায়।
• নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ব্লাড সুগার নিয়মিত পরীক্ষা করলে ঝুঁকি আগেভাগেই ধরা যায়।

❤️ আজকের প্রতিজ্ঞা:
এই বিশেষ দিনে আমরা সবাই নিজেদের ও প্রিয়জনদের জন্য একটি প্রতিজ্ঞা করি—হৃদয়ের যত্ন নেবো। কারণ, একটি সুস্থ হৃদয় মানেই একটি প্রাণবন্ত, দীর্ঘ ও সুন্দর জীবন।

⸻

👉 আপনার Diet & Discipline যাত্রা শুরু হোক আজ থেকেই—একটি স্বাস্থ্যকর প্লেট, কিছু নিয়মিত ব্যায়াম এবং মন ভরা ইতিবাচকতা দিয়ে। 🌿

26/09/2025

সিলিয়াক ডিজিজ বনাম গ্লুটেন সেনসিটিভিটি

আমাদের দেশে আজকাল অনেকেই গ্লুটেনের নাম শুনে ভয় পান। কেউ বলেন, “গ্লুটেন খেলেই অসুস্থ হয়ে যাই”, আবার কারও সত্যিই গুরুতর শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এখানে সবচেয়ে বড় বিভ্রান্তি তৈরি হয় সিলিয়াক ডিজিজ (Celiac Disease) এবং নন-সিলিয়াক গ্লুটেন সেনসিটিভিটি (Gluten Sensitivity)–এর মধ্যে। দুটো সমস্যা একই রকম মনে হলেও, আসলে এরা সম্পূর্ণ আলাদা অবস্থা।

⸻

সিলিয়াক ডিজিজ: একটি অটোইমিউন রোগ

সিলিয়াক ডিজিজ হলো একটি অটোইমিউন (autoimmune) প্রতিক্রিয়া। অর্থাৎ, শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্লুটেনকে শত্রু ভেবে ক্ষুদ্রান্ত্রের (small intestine) আস্তরণ আক্রমণ করে। এর ফলে অন্ত্রের ভিলাই (villi) বা শোষণক্ষম ক্ষুদ্র অংশগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
ফলে শরীর যথাযথভাবে পুষ্টি শোষণ করতে পারে না এবং দেখা দেয় –
• দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
• পেট ফাঁপা, গ্যাস
• ওজন হ্রাস বা শিশুদের বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া
• রক্তসল্পতা(iron deficiency anemia)
• দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতা ও হাড়ের ক্ষয়

সিলিয়াক ডিজিজ প্রমাণ করতে সাধারণত রক্ত পরীক্ষা ও বায়োপসি করা হয়। এখানে গ্লুটেনের অল্প পরিমাণও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে। তাই রোগ নির্ণয় হলে আজীবন শতভাগ গ্লুটেনমুক্ত খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক।

⸻

গ্লুটেন সেনসিটিভিটি: নন-সিলিয়াক অসহিষ্ণুতা

অন্যদিকে, নন-সিলিয়াক গ্লুটেন সেনসিটিভিটি–তে অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া ঘটে না, অন্ত্রের ভিলাইও নষ্ট হয় না। তবে গ্লুটেন খাওয়ার পর অনেকেরই হজমজনিত অস্বস্তি, পেট ফাঁপা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি বা মেজাজ খিটখিটে হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

এখানে বিষয়টি মূলত ইনটলারেন্স বা অসহিষ্ণুতা। তাই এটিকে অটোইমিউন রোগ ধরা হয় না। চিকিৎসকরা প্রায়ই ডায়াগনোসিসের জন্য অন্যান্য রোগ (যেমন সিলিয়াক ডিজিজ বা গমের অ্যালার্জি) বাদ দিয়ে তারপর “গ্লুটেন সেনসিটিভিটি” বলে থাকেন। এই অবস্থায় গ্লুটেন কম খাওয়া বা সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, তবে ছোট পরিমাণে অনেকের সহনশীলতা থাকতে পারে।

⸻

প্রসেসড খাবারে লুকানো গ্লুটেন

গ্লুটেন মানেই কেবল গম, বার্লি বা রাই নয়। বাজারের অনেক প্রসেসড খাবারে লুকানো গ্লুটেন থেকে যায়, যা রোগীরা না জেনেই খেয়ে ফেলেন। উদাহরণস্বরূপ:
• সস, কেচাপ, স্যুপ পাউডার
• সয়া সস বা ভিনেগার ভিত্তিক ড্রেসিং
• বিস্কুট, কুকিজ বা চিপস
• প্রক্রিয়াজাত মাংস, সসেজ
• আইসক্রিম বা চকোলেট বার

তাই খাবার কেনার সময় “gluten-free” লেবেল আছে কি না তা ভালোভাবে পরীক্ষা করা জরুরি।

⸻

নিরাপদ শস্যের তালিকা

গ্লুটেন এড়িয়ে চলার সময় অনেকেই ভাবেন শস্য মানেই শুধু গম, চাল বা ভুট্টা। আসলে আরও অনেক গ্লুটেন-মুক্ত শস্য রয়েছে, যেগুলো পুষ্টিকর এবং নিরাপদ:
• বাজরা (Millet)
• জোয়ার/সোর্গাম (Sorghum)
• আমারান্থ (Amaranth)
• কুইনোয়া (Quinoa)
• বাকহুইট (Buckwheat)
• চাল ও ভুট্টা (Rice, Corn)
• টেফ (Teff)

এই শস্যগুলো প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন, ক্যালসিয়ামসহ নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং গ্লুটেন এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে সাহায্য করে।

⸻

উপসংহার

সিলিয়াক ডিজিজ হলো একটি গুরুতর অটোইমিউন রোগ, যেখানে গ্লুটেন একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যদিকে, গ্লুটেন সেনসিটিভিটি হলো হজমজনিত অসহিষ্ণুতা, যা অনেকের জীবনযাত্রায় অস্বস্তি তৈরি করে। সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। আর মনে রাখতে হবে, লুকানো গ্লুটেন থেকে বাঁচতে সচেতনভাবে খাবারের লেবেল পড়া এবং বিকল্প নিরাপদ শস্য বেছে নেওয়াই হলো সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।

⸻

Address

Dhaka
1212

Website

https://sites.google.com/view/www-diet-discipline-com/home

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Diet & Discipline posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Practice

Send a message to Diet & Discipline:

Shortcuts

Want your practice to be the top-listed Clinic in Dhaka?

Diet & Discipline

18/10/2025

18/10/2025

15/10/2025

14/10/2025

09/10/2025

06/10/2025

01/10/2025

29/09/2025

26/09/2025

Address

Website

Alerts

Contact The Practice

Shortcuts

Share

Category